কিছু কিছু সিরিয়াস ব্যাপারও অনেক সময় পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় হয়ে উঠে রম্য। তেমনই কিছু ঘটনা।
২০০৫ সালের ডিসেম্বর। তখন এসএসসি পরীক্ষার পূর্বে টেস্ট পরীক্ষা দিতেছিলাম। আমার পরদিন গণিত পরীক্ষা ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই অংক করতেছিলাম। ঘুম থেকে উঠার পর বাথরুম হয়নি। দুইটা বজ্রগুনন করতে গিয়ে চাপল বাথরুম। অংক ফেলে রেখেই বাথরুমে ছুটলাম। কত আরাম করে কাম সারতেছিলাম, তখন অংকের চিন্তা বাদ। এমনিতে অংক করতে গেলেই আমার মাথা ঘুরায়। ক্লাশ নাইনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় অংকে তিন পাইছিলাম। এরপর অংকের স্যার বলেছিল, "রোল সাতে কেমনে তিন পায়? তোর রোলের চেয়েও তো কম মার্কস।"
যাই হোক, কাম সারতেছিলাম আরামে বইসা। হঠাৎ শুরু হইল দোলা। আমি দুলতাছি। বসে বসেই দুলতাছি। বালতিতে রাখা আধা বালতি পানি উপচে পড়া শুরু করছে! খাইছে! কি করি? মাত্র কাম শুরু করলাম। বাইরে থেকে আম্মু দিতেছে দরজায় নক, "ঐ তাড়াতাড়ি বাইর হ। আমরা নিচে যাইতেছি। ভূমিকম্প হইতেছে।"
ওটা ছিল সুনামি। তখনো নাম জানতাম না। এটা হওয়ার পর আবহাওয়াবিদরা নাম দিছিল সুনামি। আমি দুলতেছিলাম আর টেনশন হইতেছিল। মনে হইতেছিল চলন্ত নৌকায় কাম সারতাছি! সে থেকে হইছে এক অভ্যাস বাথরুমে গেলেই দ্রুত কাম সারার ট্রাই করি।
আরেকবার ২০০৭ সালের ঘটনা। দুপুরবেলা। কাউরে না জানায়া হঠাৎ শুরু হইল ভূমিকম্প।
আমি মাত্র কলেজ থিকা আসলাম। আমরা থাকতাম পাঁচতলা বাসার একদম উপরের তলায়। মানে পাঁচতলায়। আমাদের উপরে ছাদ সেটা তো বুঝতেই পারতেছেন। নিচে নামতে নামতে অনেক কিছু হইয়া যাইতে পারে ভেবে, আমরা পাঁচতলায় বাসা নেয়ার সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ভূমিকম্প হলে ছাদে উঠে মোটা কোন পিলার দেখে দাঁড়িয়ে যাব। এতে বিল্ডিং ধ্বসে পড়লেও বড় পিলার আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা সম্ভব অথবা অন্তত বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পড়ার কোন সম্ভাবনা নাই। এ ধরণের একটা ধারণা ছিল। জানি না ব্যাপারটা কতটুকু ঠিক।
তো আমরা সবাই দুপুরবেলা ভূমিকম্প টের পেয়ে ছাদে উঠা শুরু করলাম। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকত এক দম্পতি। যাদের দুইটা পুত্র সন্তান ছিল তাদের বয়স ছিল তখন একজনের ১৬ এর মত, অন্যজনের ১৩। ছাদে উঠে দেখলাম দরজা ছাদের ভিতর থেকে বন্ধ। জোরে জোরে দুই তিন বার ধাক্কা দিলাম। দেখলাম পাশের বাসার আন্টি দরজা খুলে দিল। কি ব্যাপার দরজা বন্ধ ছিল ক্যান? ঐ দুই ছেলে আর তার মা আগেই উঠে এসেছে আর দুইটা ছেলেই দেখলাম নেংটো। আমাকে দেখে দু'জনেই মায়ের পেছনে লুকাইল। কি ব্যাপার? ভূমিকম্প দেখে কি কাপড় চোপড় ফালাইয়া দৌড় মারল নাকি?? জিজ্ঞেস করে জানা গেল, দু'জনেই গোসল করতে ঢুকেছিল। তাদের মা জোড় করে ধরে নিয়ে আসছে। কাপড় পরারও সময় দেয় নাই। আর ছাদে উঠে দরজা লাগায়া দিছে যাতে কেউ না আসে।
পরে চিন্তা করলাম। আল্লাহ্ বাঁচাইছে যে, আন্টির দুইটা কন্যা সন্তান না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:৪৯