somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুকান্ত ভট্টাচার্য্য।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হে-মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা—
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি॥




বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। ১৯২৬ সালের ১৬ অগাস্ট বাংলা সাহিত্যের ক্ষণজন্মা এই প্রতিভা কলকাতার ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটে তার নানার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার(বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে)।

তার বাবার নাম নিবারন ভট্টাচার্য আর মা সুনীতি দেবী। ১৯৪৫ সালে সুকান্ত প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু তার আগেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে যান। ফলে প্রবেশিকা পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। সুকান্তের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার অবসান হয় সেখানেই।

সুকান্তের সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে তার ছোটবেলা থেকেই। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল কমলা বিদ্যামন্দিরে পড়ার সময় সেখানকার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্ররা মিলে একটি হাতে লিখা পত্রিকা বের করে। সুকান্ত এই পত্রিকার নাম দেন “সঞ্চয়” , এতে তিনি নিজেও একটি হাসির গল্প লিখেন। সেই ছেলেবেলাতেই সুকান্ত অভিনয়েও পারদর্শীতা দেখান। স্কুলের নাটক “ধ্রুব”তে তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

সুকান্তর প্রথম মুদ্রিত লেখা প্রকাশিত হয় বিজন কুমার গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘শিখা’ পত্রিকায়- বিবেকানন্দের জীবনী। ১৯৪১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সুকান্ত রেডিওতে গল্পদাদুর আসর নামে এক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করে প্রশংসা লাভ করেন সবার। আগে থেকেই সাম্যবাদে বিশ্বাসী সুকান্ত ১৯৪২ সালে যোগ দেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। বিশ্ব জুড়ে তখন ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে। এদিকে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে একদিকে ছড়িয়ে পড়েছে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আরেকদিকে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ। সুকান্ত এসব কিছুকেই করে তোলেন তার কবিতার উপজীব্য।

তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কবি লিখেছেন “আকাল” শিরোনামে কবিতা সংকলন। গোলাম কুদ্দুস সম্পাদিত ‘একসূত্রে’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল সুকান্তের ‘জনযুদ্ধের গান’।

স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক প্রাক্কালে পুরো উপমহাদেশ জুড়ে যখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল , ঠিক সেই সময় সুকান্ত তার কবিতায় লিখে গিয়েছেন জীবনের জয়গান আর অন্যায় – বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বাণী। ১৯৪৪ সালে সুকান্ত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।

মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। এছাড়াও তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন।

পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় যাদবপুর টি বি হাসপাতাল মৃত্যুবরণ করেন। কবির বয়স তখন মাত্র ২১।

কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র। ©
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১৬
২২টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×