somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিহ্ন ০০৪

২৫ শে মে, ২০০৭ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনসুর ফৌজদার অস্বস্তিভরে তাকালেন শারমিনের দিকে, বুকে শক্ত করে লানাকে জড়িয়ে ধরে আছেন তিনি। কান্নার দমকে লানার পিঠ কেঁপে কেঁপে উঠছে, অস্পষ্ট গোঙানির শব্দ বেরিয়ে আসছে তার মুখ থেকে।

শারমিন এগিয়ে গিয়ে লানার কাঁধে হাত রাখলো। "লক্ষ্মী মেয়ে লানা ... চলো আমার সাথে নিচে ...।"

লানার ছোটখাটো শরীরটা একটা বিস্ফোরণের মতো বেরিয়ে এলো মনসুর ফৌজদারের আলিঙ্গন ছিঁড়ে। "আমাকে ছোঁবে না!" তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো সে। "যাও তুমি এখান থেকে!"

শারমিন বিব্রত মুখে তাকালো মনসুর ফৌজদারের মুখের দিকে। লানা শারমিনকে পছন্দ করে না একেবারেই।

মনসুর মেয়েকে আবার হাত বাড়িয়ে কাছে টানলেন। "শারমিন, একটু দেখবে আসমা কোথায়?"

শারমিনকে কষ্ট করে দেখতে হলো না আর, আসমা, লানার দেখভালের কাজে নিয়োজিত বুয়া রকেটের মতো ছুটে ঘরে ঢুকলো।

"কী হইছে? হইছে কী?" হাঁপাতে হাঁপাতে বললো আসমা। প্রায় সাথে সাথেই দিলনাজের নগ্ন মৃতদেহ চোখে পড়লো তার। "আস্তাগফিরুল্লাহ! ঐ ম্যাডামের কী হইছে?" মুখে হাত চাপা দিলো আসমা।

মনসুর ফৌজদার শক্ত হাতে লানাকে ঠেলে দিলেন আসমার দিকে। "আসমা, মামণিকে একটু নিচে নিয়ে যাও। একটু ঠান্ডা শরবত খেতে দাও ওকে।"

নিরুপমা ফৌজদার ওদিকে সোফায় উঠে বসেছেন, তিনি জড়ানো গলায় বললেন, "উহ!"

মনসুর ফৌজদার নিরুপমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, "রহমানকে বোলো ব্র্যান্ডি নিয়ে ওপরে আসতে। আমরা তিনজন।"

কায়েস মনে মনে ভাবলো, কী ব্যাপার, মনসুর সাহেব মদের ব্যাপারে এমন লৈঙ্গিক কেন? নিরুপমা আর শারমিন বাদ পড়লো কেন?

মালিক মিনমিন করে বললো, "আসমা, আমি একটু পানি খাবো।"

কায়েসের মনে পড়ে গেলো, মালিক অ্যালকোহল স্পর্শ করে না। শারমিনও না। মনসুর ফৌজদারের ওপর শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো তার। এমন একটা ঘটনার পরও কে কী খায় না খায় সেটার হিসেব রাখা সহজ নার্ভের কথা নয়। সাধে কি ব্যাটা এত উন্নতি করেছে জীবনে? কায়েস মনে মনে শপথ নেয়, সে-ও কাল থেকে লোকের মদ খাওয়ার হিসেব রেখে চলবে।

শারমিন মৃদু কিন্তু স্পষ্ট গলায় বললো, "দিলনাজ বিষ খাবে কেন?"

কথাটা ধাক্কার মতো লাগলো সবার গায়ে। মনসুর ফৌজদারের মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেল, নিরুপমা ফৌজদার মুখে আঁচল চাপা দিলেন, মালিক রুমাল দিয়ে ঘাড় মুছতে লাগলো মুখ নিচু করে। কায়েস এই প্রথমবারের মতো ঘটনাটার পেছনে একটা স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাব বোধ করলো। দিলনাজ দুররানি, এখনকার সেরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের একজন, কোন দুঃখে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলো?

কায়েস ওয়াইনের ঘোরেই হয়তো শারমিনের কথার লেজ ধরলো, "জামা খুলেই বা কেন দিলনাজ বিষ খাবে?"

শারমিন কড়া চোখে তাকালো কায়েসের দিকে, তার চোখ বলছে, তুমি এর মধ্যে কিছু বলতে এসো না। কিন্তু কায়েস পরোয়া করলো না, সে জানে তার কথাটা নেহায়েত ফ্যালনা হয়নি। বিষ যদি খেতেই হয়, তাহলে পর্দাপুশিদা সামলেই খাওয়া যেতো। ওরকম দিগম্বরী হয়ে কে কবে বিষ খেয়ে মরেছে?

শারমিন এবার আরো শক্ত বোমা ফাটালো, "এই বাড়িতে, আজকের দিনে, এই ঘরে কেন বিষ খাবে দিলনাজ?"

মনসুর ফৌজদার বসে পড়লেন সোফায়।

মালিক ঘড়ঘড়ে গলায় বললো, "মিস খান, আপনি কী বলতে চাইছেন প্লিজ?"

শারমিনের চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেলো। সে এবার আরেকটু জোরে বললো, "আমার মনে হয় আমাদের উচিত পুলিশকে খবর দেয়া।"

মনসুর ফৌজদার ক্লান্ত গলায় বললেন, "শারমিন, তুমি কি একটু কষ্ট করে ফোন করবে থানায়? আই ডোন্ট ফিল ভেরি ওয়েল ...।" নিজের মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে দিলেন তিনি। "ও.সি. ইকবালের নাম্বার সেভ করা আছে এটাতে।"

শারমিন মোবাইল নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। শারমিনের পাশ ঘেঁষে নিঃশব্দে ঘরে ঢুকলো এক যুবক।

"কোন সমস্যা স্যার?" বিছানায় পড়ে থাকা দিলনাজ দুররানির দিকে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো সে।

মনসুর ফৌজদার তার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না। কায়েস একটু অবাক হয়ে তাকালো মুস্তাফার দিকে। কোন ভাবের লেশ নেই তার চেহারায়, যেন খবর পড়তে এসেছে এখানে।

মুস্তাফা দিলনাজের দিকে চোখ না সরিয়ে কায়েসকে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "কায়েস ভাই, ঘটনা কী? দিলনাজের কী হয়েছে?"

কায়েস এদিক ওদিক তাকিয়ে চেয়ার খুঁজতে লাগলো। তার হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে। মুস্তাফার সুদর্শন বেওকুফ চেহারার দিকে তাকিয়ে তার মেজাজ আরো এক পর্দা চড়লো। একটা মেয়ে খাটের ওপর ন্যাংটা হয়ে মুখ ভেটকে পড়ে আছে কলাগাছের মতো, তার আশেপাশে লোকজন বসে আছে বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে, আর মুস্তাফা ঘটনা বুঝতে পারছে না। ছাগল কোথাকার।

রহমান নিঃশব্দে ঘরের ভেতরে ঢুকলো, হাতে একটা ট্রে। তার ওপর তিনটা গ্লাস, বরফের টাম্বলার আর একটা পেটমোটা বোতল। কায়েসের ভেতরে পিপাসা বেড়ে গেলো হঠাৎ।


(চলবে ...)

৩২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিমকে বিভিন্ন নিয়মে ইবাদত করতে কে বলেছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৭



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×