somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্তিকার শিল্পীরা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সন্ধ্যারাতে 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' দেখছিলাম। শাইখ সিরাজ স্যারের এ অনুষ্ঠানটা যতবার দেখি মনের ভেতর একটা সূক্ষ ব্যথা অনুভব করি।আমাদের কৃষকরা শত দুঃখ-কষ্ট-বঞ্চনার মধ্য দিয়েও নিশ্চুপ থেকে কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আর তারা এ কাজটা যেন করছেন অনেকটা অদৃশ্যভাবে।এদিকে আমরা অনেকটা এমনভাব করি যেন সবকিছু নিজ থেকে আপনা আপনি হয়ে যাচ্ছে।ঠিক যেমন সূর্য ওঠে, সূর্য ডোবে ।
ছোটবেলায় ক্লাস সিক্সে বাংলা ২য় পত্রে রচনা মুখস্ত করেছিলাম- কৃষিকাজে বিজ্ঞান । শহরে থাকা আমি তখন প্রথম জেনেছিলাম লাঙল ছাড়াও নাকি জমি চাষ হয় । কতরকম অদ্ভুত সব কৃষি যন্ত্রের নাম যে শিখেছিলাম। তবে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম এটা জেনে, বিদেশি গ্রামগুলোতে নাকি আছে এক অদ্ভুত গাড়ি, যেটা চলার সময় যেমন একদিকে ধান/শস্য কেটে নেয় অন্যদিকে মাড়াই করে একেবারে রীতিমত চারকোণা প্যাকেটের মত বেঁধেও ফেলে! অবশ্য তখন বুঝতে পারিনি যে, তৃতীয় বিশ্বের বইয়ের পাতা আর এখানকার বাস্তবতার মাঝে এক আকাশ ব্যবধান থাকে।
একপলকেই এতখানি উন্নতি আশা করি না। তবে আধুনিক চাষ-পদ্ধতি,উন্নত বীজ ব্যবহার, উদ্ভাবিত বিজ্ঞানের প্রয়োগ,শিক্ষা, বাজেট,সিস্টেম- এই শব্দগুলো কি চিরকাল কৃষকের কাছে স্বপ্নই হয়ে থাকবে?
অবাক লাগে দেখতে যখন অশিক্ষিত ( শিক্ষিত কৃষক যে আছে তা অস্বীকার করছিনা) চাষারা যতটা সহজ-সরল ততটাই ভাষায় সাবলীল। এদের কন্ঠে যে অসহায়ত্ব, দারিদ্র দাসত্বের যে করুণ সুর শুনি তা আমার মত একজন নগন্যের হৃদয় নাড়া দিলেও কৃষি/শিল্প সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষেরা কেন জানি বিন্দুমাত্র বিচলিত হন না।
টুকরো টুকরো কয়েকটা উদাহরণ দিলে না হয় ব্যাপারটা পরিস্কার হবে অনেকের কাছেই। প্রথমেই বলি প্রান্তিক লবণচাষীদের কথা।বেশিরভাগেরই যেখানে জমি লীজ প্রয়োজন। সরকারও জমি লীজ দিচ্ছে না তা নয়,দিচ্ছে। বর্গা প্রতি ১৫০০ টাকা।কিন্তু তারা পাচ্ছেন বর্গা প্রতি ৫০০০-১৫০০০টাকায়! কারণ মাঝে দাঁড়িয়েছে মধ্যম ফরিয়ারা।
এবার দেখুন আউটপুটটা কেমন। লবণের বর্তমান মূল্য ২০০টাকা।সেখানে প্রান্তিক কৃষকরা পাচ্ছেন ১২০-১৪০টাকা। শুধু তাই নয়,মণের হিসাব যেখানে (চাষীদের ভাষ্যমতে) ৩৭.৫ কেজি তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৫০কেজি হিসেবে।
বলছি এক টমেটো চাষীর করুণ কাহিনী । টমেটোর ভাল ফলন ভাল হয়েছে।তবু তার মুখে জমাট মেঘ। তুলে নেয়ার সময়ও পেরিয়ে গেলেও তা ক্ষেতেই আছে।কারণ ক্ষেত থেকে যে পরিমান মজুরি দিয়ে কুলি বয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয়, সেই মজুরির টাকাও যে তার হাতে আসছে না।
এবার চলুন সারের বাজারে। বিএডিসি থেকে সরবরাহকৃত সার অত্যন্ত ভালো মানের,প্রথম দিকে চাষীরা আগ্রহী হলেও
এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে- এটা স্বয়ং বিএডিসির এক কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি।কেন জানতে চান? সারের সাথে ভেজালও যে উপরিপাওনা।
যেখানে সারের পেছনে ব্যয় হওয়া উচিত ১৩০০টাকা সেখানে এখন প্রাইভেট ভাবে সার কিনতে হচ্ছে ১৮০০-২২০০ টাকা হারে।
এরকমভাবে পোল্ট্রি,হ্যাচারী,ফিশারিয,ডেইরী- প্রতিটি সেক্টরই চরম্ভাবে হুমকির সন্মুখে।কেননা যতটুকু সরকারি বা প্রশাসনিক সহযোগিতা তাদের পাওয়ার কথা,তারা পাচ্ছে না যথাযথভাবে। বেশিরভাগ সরকারি কর্মকর্তারা(সবাই না) এখন দুর্নীতিগ্রস্থ।
প্রত্যেকবারই চাষীরা আশা রাখেন এবার নিশ্চয়ই তাদের সুযোগ-সুবিধা অন্তত সমস্যাগুলোকে কেন্দ্র করে বাজেট ঘোষণা হবে।এবং অতঃপর উদ্যোগ। কিন্তু কোনটাই আর হয় না। যে লাউ সে কদুই থেকে যায়। এবং এ সমস্যা চিরদিনের।তা না হলে কি বেগম রোকেয়ার 'চাষার দুক্ষু' প্রবন্ধে দেখি-
" এ কঠোর মহীতে
চাষা এসেছে শুধু সহিতে;
আর মরমের ব্যাথা লুকায়ে মরমে
জঠর-অনলে দহিতে! "

শেষটায় একটু নিজের প্রসঙ্গে আসি। খুব ছোটবেলা থেকে 'চাষা' শব্দটিকে গালি হিসেবে বলতে শুনেছি,এমনকি অনেক শিক্ষিত লোকের মুখেও। একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করতেই বাবা বলেন - " এটাকে গালি নয়, আশীর্বাদ হিসেবে জেনো মা ।" একারনেই লেখার অনেক স্থানে কৃষকের বদলে চাষা শব্দটি ব্যবহার করলাম। যারা এখনও চাষা বলে গালি দেন তাদের বলি, যে কোন ধরনের খাবার খেতে বিরত থাকুন। ভাত,শাক-সব্জি, ফলমূল থেকে তামাক দেয়া সিগারেট পর্যন্ত।


৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ এক অন্যরকম প্রতিবাদ!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৫

মার্চ ফর গা'জা কে কেন্দ্র করে সব বিবাদ বিভেদ ভুলে পুরো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েতের রেকর্ড এখন বাংলাদেশের। লাখো লাখো জনতার স্লোগানে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে। পুরো বিশ্বের চোখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×