ক্যাডেটদের প্রেম নিয়ে আমি বেশ কয়েকদিন আগে একটি গল্প লিখেছিলাম। আজকে ওইরকমই আরেকটি গল্প লিখছি। গল্প বললে ভুল হবে।ক্যাডেটদের প্রেম কাহিনী গুলো এমন যেন মনে হয় গল্পের মত।কাহিনীটি আমাদেরই এক বন্ধুর।
কলেজে কিছু কিছু ছেলে ছিল যারা শোনাত যে তাদের ১০/১৫ টা প্রেম করা ইতিমধ্যে শেষ। কিন্তু ওরা কোনদিন যে প্রেম করতে পারেনি তা আমরা ওদের কথাবার্তা শুনেই বুঝতাম।
ওইরকমই এক বন্ধু ছিল আমাদের। কয়দিন পর পর দেখা যেত তার নতুন নতুন প্রেমিকা।আর কিভাবে কিভাবে যে প্রেমে পড়ত, ঐ কাহিনীগুলোও অদ্ভুত। যেমন একবার গ্রামান্তর দৌড় প্রতিযোগিতায় তার বক্ষ নাম্বারের সাথে এক গার্লস ক্যাডেটের ক্যাডেট নাম্বার মিলেছিল। তার প্রেম শুরু হয়ে গিয়েছিল। অথচ মেয়ে কিছু জানেই না। এইসব প্রেমিকের কিন্তু ছ্যাকাও কম খেতে হত না!!! ও জানত যে কিছুই হবে না। ওকে সবসময় দেখা যেত ক্লাসে জানালার পাশে বাহিরের দিকে চেয়ে। যেন বউ মারা গেছে। আমাদের তো দেখাতে হবে তাই না!! দেখাতে গিয়ে অবশ্য একবার ভিটামিনের ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছিল। ওইটা নাকি সুইসাইড এটেম্পট ছিল আবার,ভিটামিনের ট্যাবলেট খেয়ে।এটাই অবশ্য আমরা জানতাম।
মেয়ের নাম পুরোটা যোগাড় হল। এখন তো কথা বলা দরকার। ওইরকমই চলছে। আমরা গার্লস ক্যাডেট কলেজের মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করছি। জানা গেল মেয়েটি ছেলের থেকে লম্বা। ছেলে বলে তাতে কি!! প্রেম তাকে করতেই হবে।
তখন শুরু হল কাহিনী। আমাদের বই পত্রে শুধু ওই মেয়ের নাম দেখি। ছেলে এতই পাগল যে সবার বইতেই মেয়ের নাম লিখে বেড়াচ্ছে।
ছুটি এসেছে। কাহিনী হবে। কাহিনী হলো। ছেলেকে মেয়েটা রিফিউজ করল। কিন্তু প্রেমের পরবর্তী পার্ট বলে একটা কথা আছে না!!! ছেলেতো হাট কেটে শেষ।শুনেছি অবস্থা ততোটা খারাপ হয় নাই। কারন ছেলে দোকানদার এর কাছে গিয়ে বলেছিল ভোতা ব্লেড আছে কিনা!!! ছেলে কেমন জিনিস বোঝাই যাচ্ছে।
এই কাহিনী কোনমতে শেষ হল এখানে। কলেজে আবার গেলাম। ওর আবার প্রেম করতে হবে। ভাল কথা। মেয়েও পেল। এইবার একটু সিনিয়র হয়েছি। কলেজে লুকিয়ে মোবাইল ফোন ও আনল। প্রেম চলছে। এইবার মনে হচ্ছে, আসলেই প্রেম করছে। এতদিন তো খালি ফাপড় মেরে চলত। এইবার প্রেমিক পুরুষের আসল চেহারা দেখতে পারছি। ক্যাডেট কলেজের প্রেম বলতে যা বুঝায় আর কি।
অপশনাল গেমস বাদ। ছেলে হাউসের মোবাইল রুমে।
ক্লাস বাদ। প্রেপ বাদ। ছেলে টয়লেটে।
রাতে টিভি দেখা বাদ। ছেলে খাটের নিচে। এই সময় স্যাররা একটু ঘোরাঘুরি করে তো!!!!
পিটিতে লেইট। খাইতে লেইট। সবকিছুতেই লেইট। হাওয়া লেগেছে মনে!!!
এর ফল কিন্তু সুখকর হল না। মোবাইল নিয়ে ধরা খেল স্যারের কাছে। কাহিনী শুনল পুরো কলেজ। জরিমানা হল।
কিন্তু প্রেমিকরা কি এত সহজেই হাল ছেড়ে দেয়। শুরু হয় ক্যান্টিনের খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে কোনমতে টাকা তুলে আরেকটা মোবাইল যোগাড় করা। তাও হয়ে গেল। একেই বলে প্রেম। কিন্তু কিভাবে যেন এই মেয়েটিও কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেল। মানে ছ্যাকা খাইছে আরকি ছেলেটা।
এইবার ছেলেটা অনেক বড় ধাক্কা খেল।
প্রতিজ্ঞা করল প্রেম করলে ক্যাডেট মেয়ের সাথেই প্রেম করবে। বাইরের কেও তার কষ্ট বুঝে না।
ছেলেটি এখন মেয়ে খুজছে..........
কলেজে অনেক ফুটবল ম্যাচ হত। সিংগেলস বনাম ডাবলস!!!!!! ওই ছেলে যদিও ছ্যাকার উপর থাকত তাও ওকে কখনো সিংগেলস টিমে দেখা যেত না।
মেয়ে তো পাবেই,ছেলেটার ধারনা।
এবং আবার পেল। এইবার আরেক গার্লস ক্যাডেট। এইবার সবাই সিরিয়াস। জগৎবিখ্যাত এই বন্ধুকে আর ছ্যাকা খেতে দেওয়া যাবে না। আমরা নিজেরাই সব খোজখবর নিলাম।
ক্যাডেট কলেজ তো। বন্ধুর জন্য সব কিছু করতে পারি। বন্ধুর প্রেমটাও করে দিতে পারি। না এটা অবশ্য বেশি হয়ে যায়!!!!!!
শুরু হয় আবার প্রেম। দিন রাত কথা চলছে। আগের প্রেমের মত।
কলেজে প্রেমিক পার্টির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল দিন দিন। অনেকেই তখন দেখাদেখি প্রেম জিনিসটা শিখে গেছিল। কলেজে কিছুদিন পর নতুন স্টাফ আসল। নতুন স্টাফ তো পুরাই খেপা। কলেজের সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছিল। কত কিছু নিয়া ধরা খাইলাম তার নাই ঠিক।কিছুই করা যায় না। এইবার কিন্তু ধরা খাওয়ার সিজন চলছিল।
একে একে সব প্রেমিক পার্টি ধরা খাওয়া শুরু করল। ছেলেটিও খেল।
স্টাফ পরে প্রেমিক পার্টির উপর কড়া নজরদাড়ি লাগিয়ে দিল। কারণ জানে এই পার্টিতো মোবাইল আনবেই।আর যার কথা বলছিলাম। এই প্রেমে পরপর কয়েকবার মোবাইল নিয়ে ধরা খেল ছেলেটি।
কলেজ অথরিটিও ব্যাপক জিনিস।সবাই ওকে পেলেই খোচায়। আর মুচকি মুচকি হাসে কিছু স্যার। মনে হয় স্যাররাও মনে মনে বলে "প্রেম কি জিনিস বুঝ নাই তো!!! এইবার লও ঠেলা। "
পুরো কলেজ ছড়িয়ে যাচ্ছে ছেলেটির নামে। আর তা বিশ্বপ্রেমিক নামে...
এক ম্যাডামরা ডেকে বলে"প্রেম তো আমরাও করছি। এমন পাগল তো দেখি নাই।এতবার ধরা খাওয়ার পরেও।"
কিভাবে বলি ম্যাডামকে যে, ম্যাডাম ওর মত টানা ছ্যাকা খাইতেন বুঝতেন।লজিকটা অবশ্য খুব খারাপ। ছ্যাকা খাইলে সবাই এইগুলা থেকে দূরে যায়। কিন্তু এই পাগল তো কিছুই বুঝে না।
আমাদের এই বন্ধুটির কলেজ জীবন এইভাবেই কেটে যায়। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি। ছেলেটা খেয়েই গেল। এখন শুনেছি বন্ধুটির নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। মানে নতুন কোন মেয়ে পেয়েছে। কখন যে খেয়ে যায় ঠিক নাই।