আমার পরিচয় যে কি তা আমি নিজেই জানি না। তবে এর মাঝেও যে আমার একটা পরিচয় লুকিয়ে আছে।তা হচ্ছে আমি কোন কোম্পানির।আমি ব্ল্যাক সিগারেট। আমার জন্ম কোথায় আমি জানি না। কোথায় এতদিন ছিলাম তাও জানি না। শুধু জানি আমি একটা প্যাকেটের ভিতর ছিলাম। আমার সাথে আরো ১৯ জন ছিল।কেও আমার সাথে কোন কথা বলত না। বড়ই একাকী জীবন আমার।হঠাৎ একদিন আমার প্যাকেটটা খোলা হয়।আমি দেখলাম আমার পাশ থেকে ওদেরকে আস্তে আস্তে নিয়ে যাচ্ছে।ভাবলাম ওরা বোধহয় মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমাকে তো কেও নিচ্ছে না।
আমিও যে মুক্তি পেতে চাই। একটা কিম্ভুতকিমাকার দেহি, আমার থেকে অনেক বড় মাঝে মাঝে আমার সাথিদের নিয়ে যায়।আমি কত ডাকি আমাকেও নিয়ে যাবার জন্য কিন্তু আমার কথা মনে হয় ওই ভূতটা শোনে না। ভূত বলছি কেন!! যাই হোক ভূতের মতই, আমার থেকে কত বড়। হঠাৎ একদিন আমাকে তুলল।আমি তো মহাখুশি।না জানি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। দেখলাম ওই ভুতটা আরেকটার কাছে আমাকে দিল। কি চেহারা রে বাপ।ওমা আমার সামনে পিছনে কি দেখছে। ওকে বললাম তোর থেকে আমি অনেক সুন্দর। তোর চেহারার মাঝে ওইগুলা কি। আমাকে দেখ। সোজা,সুন্দর।কোন দাগ নেই তোর মত।
ওমা শুনেছে নাকি!!! নাহলে আমার শরীরে ওটা কি লাগালো?আমার তো ব্যাথা করছে।আমি দেখলাম আমি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও কি যেন ভাবছে।আর আমাকে কি যেন বলছে।কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি প্রায় ছোট হয়ে এসেছি। আমি বললাম আমার এই মুক্তি চাই না। আমি আগেই ভাল ছিলাম।প্যাকেটেই ভাল।যে জিনিসটা আমাকে ছোট করে দিচ্ছিল,তা একসময় বন্ধ করল ওই ভূতের মত না জানি কি বলে ওইটা। আমাকে ওর কাছে নিল। বলা শুরু করল অনেক কিছু। আমি তো এবার সব বুঝতে পারছি।আমাকে বলছে
"তোকে আমি কেন কিনলাম।কেনই বা খেলাম।তুই জানিস আমার মনে কত কষ্ট?তোর মত একটাকে আমি মাঝে মাঝে খাই আর খাওয়া শেষে ভাবি কেন খেলাম"
এবার বুঝলাম ওটা ভূত না রাক্ষস।
আবার বলতে লাগল
"আসলে সে যদি আমার সাথে দেখা করত,আমার সাথে রাগ না করত,আমাকে না গালি দিত,আর আমি যে কিছু করতে পারলাম না জীবনে।বউ,বাচ্চা কেও জানে না আমি সিগারেট খাই।"
এতক্ষনে আমি বুঝলাম আমাকে সিগারেট বলে ডাকা হয়। তবে এর মাঝেও যে আমার একটা পরিচয় লুকিয়ে আছে।তা হচ্ছে আমি কোন কোম্পানির।আমি ব্ল্যাক সিগারেট।ওইটাও আমাকে বলল।
আমি ধন্যবাদ দিলাম আমাকে আমার পরিচয় জানানোর জন্য।কিন্তু আমাকে পাত্তাই দিল না। নিজের মনে বলে যেতে লাগল "এই যে দেখছিস রেললাইন এখানে যে আমি কতগুলো সিগারেট টেনেছি"আমি তাকালাম চারপাশে দেখি রাক্ষসের অভাব নেই।সবাই আমার মত সিগারেটকে খাচ্ছে।
আমাকে বলছে"জানিস,সেদিন যদি সে একবার দেখা করত!আমি সারারাত তার অপেক্ষায় ছিলাম। পরের দিনও ছিলাম।কিন্তু সে আসে নি। এখন আমি নষ্ট হয়ে গেছি, আমি আর আগের আমি নেই। এই দেখনা আমি পাগল হয়ে গেছি।তোর সাথে কথা বলছি।কিন্তু তুই যখন শেষ হয়ে যাবি আমি হয়ত আবার হাহুতাশ করব। বলব,কেন খেলাম?"
অনেক দুঃখী রাক্ষসটা বুঝলাম।আমার খুব মায়া হচ্ছে ওর জন্য।কিন্তু কি করার।
হঠাৎ আমাকে বলল ওই যে ট্রেন আসছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম,"কি আসছে?" কিন্তু কোন উত্তর পেলাম না।
আবার বললাম আমার তোর প্রতি খুব মায়া হচ্ছে।
আমাকে চমকে দিয়ে উত্তর দিল
"তোর খুব মায়া হচ্ছে আমার জন্য? কি করব! আমাকে যে মরতে হবে,আমার জীবনে যে কোন শান্তি নেই"
বলে সে আবার আমাকে ছোট করা শুরু,সেই প্রথমভাবে ব্যাথা দিয়ে।
আমি দেখলাম আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ....
আর কিছু বলতে পারি না। ওই যে ট্রেন না কি যেন আসছিল ওইটা আমার উপর দিয়ে চলে গেল।
আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছি। আমি কোথায় যেন চলে যাচ্ছি।
পরক্ষনেই আমি ওই রাক্ষস লোকটাকে দেখতে পেলাম আমায় ডাকছে, অনেক দূর থেকে।কিন্তু আমি কিভাবে যাব। আমার যে আর কিছুই নেই।
*গল্পটা পুরোই আমার নিজের কল্পনা, কারো সাথে মিললে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখীত।