শেষ পর্যন্ত পুলিশও যাচ্ছে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে।
এমন কোন বিভাগ বা মন্ত্রণালয় নেই যারা বিদেশে যেতে চায় না। পুলিশের আর কি দোষ। তবে শোনা যাচ্ছে- আনসার বাহিনীও নাকি বিদেশে দূতাবাসে পোস্টিং চাওয়ার ব্যাাপারে প্রস্তুুতি নিতে শুরু করেছে।
এক খবরে প্রকাশ- "নিয়ম না থাকলেও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোর জন্য পুলিশ এখন পৃৃথক একটি ইউনিট চায়। এ জন্য পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে ১৪১টি পদ নিয়ে ইউনিট গঠনের একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। গত মাসে পাঠানো ওই প্রস্তাবনা সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী দেশের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর কর্মক্ষেত্র হচ্ছে শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
তাছাড়া বিশ্বের কোনো দেশের কোনো পুলিশ বাহিনীর বিদেশি দূতাবাসগুলোর জন্য আলাদা ইউনিট রয়েছে এমন নজিরও নেই। এ বিষয়ে সরকারের সাবেক আমলা ও কূটনীতিকরা বলছেন, বিদেশি মিশনগুলোতে পুলিশি তৎপরতার কোনো সুযোগ নেই। কোনো কিছু করতে গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতায় করতে হবে।
বাংলাদেশ যদি বিশ্বের কোনো দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, জনশক্তি রপ্তানি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা চিহ্নিত অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় বা অন্য কোনো কিছু পরিচালনা করতে চায়, তা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে করতে হবে। প্রস্তাবটি পুলিশের রুলস, রেগুলেশনের একেবারেই বাইরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে গত ২৫ মার্চ প্রস্তাবনাটি পাঠানো হয়েছে বিদেশে বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসগুলোর জন্য পুলিশের একটি পৃথক ইউনিট গঠনের জন্য। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রস্তাব করেছে বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশে তারা এই ইউনিটের কার্যক্রম চায়। এসব দূতাবাসে পুলিশ সুপার বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগ দিতে এই ইউনিট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইউনিট গঠনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অন্তত ছয়টি যুক্তি দেখিয়েছে। তার একটি হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, যুদ্ধাপরাধী মামলা, জেলহত্যা মামলাসহ যেসব চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিরা বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশে অবস্থান করছে তাদের গ্রেফতার ও দেশে ফিরিয়ে আনতে সুবিধা হবে। কিন্তু কোনো দেশ থেকে আসামি আনতে হলে ওই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দীবিনিময় চুক্তি থাকতে হয়। অন্যথায় তা সম্ভব নয়। পুলিশের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, বিশ্বের ৫১টি দেশের ৬৫টি পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
এ জন্য বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দূতাবাসে পুলিশের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা থাকলে কোনো রকম মাধ্যম ছাড়া সরাসরি স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে পাঠিয়ে ভেরিফিকেশন করা সম্ভব। এ ছাড়া সঙ্গবদ্ধ অপরাধ, সাইবার অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, মানব পাচার, চোরাচালান, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের বীজ সমূলে নির্মূল করার লক্ষ্যে দূতাবাসগুলোতে একজন পুলিশ লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আবশ্যক বলে মনে করছে পুলিশ সদর দফতর। অপর যুক্তিতে পুলিশ বলছে, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি দেশের বাইরে এমন কোনো কার্য করলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার এখতিয়ার তদন্তকারী কর্মকর্তার রয়েছে। এ ধরনের অপরাধীদের সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে দূতাবাসে পুলিশের একজন লিয়াজোঁ অফিসার দরকার। পুলিশের প্রস্তাবনায় দূতাবাস ও মিশনগুলোতে পুলিশের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজি), দুজন ডিআইজি, ৪০ জন পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন পদে সহায়ক স্টাফ হিসেবে ৯৮টি পদসহ ১৪১টি পদ সৃজন ও তিনটি যানবাহন দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। এ খাতে বছরে ব্যয় হবে নয় কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫২ টাকা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, কোনো মিশনে বা দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তার পোস্টিং দরকার বা করতে হবে, প্রয়োজনে সেটা করবে সরকার। এ জন্য পুলিশের আলাদা ইউনিট করার প্রয়োজন নেই। তবে তারা প্রেষণে কিছু কর্মকর্তাকে দূতাবাসগুলোতে নিয়োগের জন্য দাবি জানাতে পারে। সরকার যদি সেটির প্রয়োজন মনে করে তাহলে বিবেচনা করতে পারে। তিনি বলেন, যখনই আমরা বিদেশে কিছু করতে যাব তখন সেই দেশের সরকার বা পুলিশের সঙ্গে আলাদা করে কিছু করার সুযোগ নেই। সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, কূটনৈতিক কর্মকান্ডে র জন্য সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলো আছে। যদি সরকার মনে করে কোনো কাজে সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা দফতরের সহযোগিতা প্রয়োজন তাহলে সরকার তা বিবেচনায় নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের ওই প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এরকম কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে আমার জানা নেই। পুলিশ হয়তো তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আমাদের কাছে এলে প্রস্তাবটি দেখে যাচাই-বাছাই করে মতামত দেব।"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১৮