somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবর্ণ এক্সপ্রেস : সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তখন খুব সম্ভবত টিউব মেহেদীর শুরুর লগ্ন ছিল। তবে মেহেদী শিল্পীদের শুরুটা বোধ হয় আরো বেশ খানিকটা পরে। তাই ঘাস ফুল লতা পাতা দিয়েই কাজ সেরে নিত সবাই। দুই ঈদের মৌসুম ছাড়া যদি কারো হাতে মেহেদী উঠতো তাহলেই বোঝা যেত ঘটনাটা নতুন কিছুর ইংগিত দিচ্ছে। বয়সটা আমার তখন নয় ছুঁইছুঁই। তাও বেশ বুঝলাম, দু'টো মাঝারী আকারের ব্যাগের কোনটা নিচে রাখবে, আর কোনটা উপরে সেটা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ভুগে যেই দম্পতি পুরো বগিতে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করে রেখেছে তারা নব দম্পতি। তবে আরও নিশ্চিত হলাম অল্প বয়সী মেয়েটার সাথে থাকা অল্প বয়সী পুরুষ মানুষের কমলা রঙের নখ দেখে। ‘ছিইইইই ‘। পাশে বসে থাকা আপুর প্রশ্ন বোধক চেহারার দিকে তাকিয়ে বললাম ‘ ছেলে মানুষ হাতে মেহেদী দিয়েছে।‘
আমরা বসেছিলাম বগির একদম মাঝখানে, মুখোমুখি। এদিকে আমরা দু'বোন অপরদিকে আম্মু আব্বু। আমাদের ঠিক পাশেই বসেছে আরেকটি পরিবার। বাবা, মা মাঝবয়সী আর ছেলে মেয়ে তরুণ তরুণী বলা যায় বোধ হয়। ট্রেন ছাড়ার শুরু থেকেই বাবাটা বসে 'প্রথম আলো' পড়ছে আর মায়ের হাতে একটা সানন্দা ম্যাগাজিন। ছেলেটার হাতে খবরের কাগজের ভিতরের খেলার পাতাটা আর মেয়েটার হাতে গল্পের বই(নামটা মনে নেই)।
আমাদের ঠিক পিছে বসেছিল এক নব্য পিতা মাতা, পুরো ভ্রমণটার জন্যে তাদের ঠিক যতটা এনার্জির প্রয়োজন ছিল প্রথম আধা ঘন্টায় মোটামুটি তার অর্ধেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি মাঝে কয়েকবার দুই হাতের মধ্যমা দিয়ে নিচের কান দুটো বন্ধ করার চেষ্টা করে দেখলাম পিচ্চির কান্নার আওয়াজ কিছুটা কম আসে কিনা। দেখি কোন লাভ হলো না, উলটো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমার হাত দুটোর জন্যে কিছুটা ক্ষতিকারক হয়ে যাচ্ছে। পাশ দিয়ে ট্রেনের স্টাফরা খাবারের ট্রলি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন যাত্রীর মধ্যে খাবারের মেনু নিয়ে বেশ অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। আপু বললো, ‘মাত্র তো উঠলো, এখনই খাবার কিনছে? আব্বু বত্রিশ দাঁত বের করে বললো, আরে দেখই না, যাত্রার পুরো ছয় ঘন্টা জুড়েই এরা খাবে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘কিভাবে বুঝলে? ‘ ‘অভিজ্ঞতা মা অভিজ্ঞতা ‘ আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ বাবা অভিজ্ঞতাযুক্ত অভিব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
আমার সেটা প্রথম ট্রেন জার্নি ছিল, জীবনের প্রথম। গন্তব্যস্থান চট্টগ্রাম মাধ্যম সুবর্ণ এক্সপ্রেস।
মাসটা ডিসেম্বর, বছরের শেষ সপ্তাহ। ঠান্ডাটা প্রচন্ড ছিল তাই জানালা খোলার ব্যাপারে বাবা মার কঠোর নিষেধাজ্ঞা। ৪.৩০ এর ট্রেন, ততক্ষণে মাগরিবের আজান হয়ে চারদিক অন্ধকার। এর মাঝেই বোন আমার জানালায় মাথা রেখে গালের দুইদিকে হাত দিয়ে বাইরে ঠিক কি দেখতে চাচ্ছিল সে জানে।
আমি আমাদের সিটের পিছনের ফাঁক দিয়ে ক্রন্দনরত পিচ্চির গতিবিধি লক্ষ্য করছিলাম বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সে কিছুক্ষণের জন্যে কান্না থামিয়েছিল, আমাকে দেখে আবার কান্না আরম্ভ করলো । ট্রেনের গতি ভালোই , ঝমঝম একটা শব্দ, নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না , আমি একবার উঠে নিজের নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষার চেষ্টা করছিলাম, আব্বু ধরে ফেলেছিল ভাগ্যিস, নাহলে ততক্ষণে নির্ঘাত মেঝেতে গড়াগড়ি খেতাম। এর মাঝেই পিচ্চির বাবা বাচ্চার কান্না থামাতে বগির এ'পাশ ও'পাশ চক্কর লাগাতে থাকলেন । আর মা সিটে বসেই নব্বই ডিগ্রী কোণাকুণি হয়ে একবার ডানে একবার বামে তার বাচ্চা এবং তার পিতার গতিবিধির দিকে নজর রাখছেন। এসব তামাশা দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম, আম্মু একজন ম্যাগাজিন বিক্রেতাকে দাঁড় করিয়েছেন । এত এত 'সানন্দা' 'বিচিত্রা' ম্যাগাজিনের মাঝে 'চাচা চৌধুরী'কে খুঁজে নিতে এতটুকু সময় লাগে নি আমার।
আধ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি কমিকস বই শেষ করে আমি আবার অলস সময় পাড় করছি । এর মধ্যে দেখি পুরো বগি মোটামুটি ঘুমিয়ে পরেছে, শুধু সেই নব্য পিতা মাতা আর তাদের নব্য সন্তান বাদে। অবশ্য যাদের মধ্যে ট্রেনে উঠতেই খাবার নিয়ে হুটোপুটি দেখেছিলাম তাদের দেখলাম তখনো খাওয়া দাওয়া করে যাচ্ছে । আমি আসন বদলে ততক্ষণে বাবার পাশে এসে বসেছি। তার বা' কানের কাছে মুখ রেখে চিৎকার করে ট্রেন জার্নি নিয়ে তার আরো অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে খুব একটা ভাব নিয়ে বললেন ,' শুনো ছোট , এই দেখছো না কত যাত্রী ! এদের প্রত্যেকেরই একটা ধরণ আছে।' আজকে দেখি তুমি কয়টা ধরণ বের করতে পারো ।
অদ্ভুত কথা ! প্রত্যেক যাত্রীরই ধরণ আছে? আচ্ছে আমিও তো যাত্রী । আমারও কি তাহলে ধরণ আছে? আর যদি থাকেই।। তাহলে আমার ধরণটাই বা কি??? ধুরু আব্বুর এই অভিজ্ঞতা ভরা অভিজ্ঞ জীবনের কাহিনী শুনতে গিয়ে আমার বড় মুশকিল হয়ে গেল।
(চলবে)



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×