somewhere in... blog

এজেন্ট রায়ান - হাফ মেজার

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত আটটা ঊনষাট মিনিট। হিথ্রো এয়ারপোর্ট, লন্ডন।
এয়ারপোর্ট ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করছে জেসন স্ট্যালিয়ন। দুমিনিট পরেই ল্যান্ড করবে অ্যামস্টারডাম থেকে আগত ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটা বোয়িং ৭৩৭। হঠাৎ সেলফোন বেজে উঠল জেসনের। রিসিভ করে কথা শুনে ফোন রাখতেই ল্যান্ড করল প্লেন। আরোহীদের মাঝে খুঁজতেই পেয়ে গেল বিজনেস স্যুট পরা দীর্ঘদেহী, সুদর্শন এক ব্যাক্তিকে। মৃদু হাসিমুখে দুজন লোকের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। একজন সাবেক মার্কিন সিনেটর, অপরজন লন্ডনের নামকরা এক বিজনেসম্যান। দীর্ঘদেহী ব্যাক্তিকে দেখে আন্দাজ করা মুশকিল যে এই সেই দুর্ধর্ষ এজেন্ট রায়ান। পারিবারিকভাবে বেশ বড় এক বিজনেস এম্পায়ার পেয়েছে রায়ান। সেটাকে নিজের শ্রম আর বুদ্ধি খাঁটিয়ে পৃথিবীর প্রথম সারির একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বেশ কয়েকবছর সেখানে প্রায় সময় দিতে পারেনি অন্যান্য কাজের চাপে। এখন হাতে কিছু সময় পাওয়া মাত্রই বেরিয়ে পরেছিল। প্রায় ছয়মাস ছুটে বেরিয়েছে দুনিয়াময় নিজের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এতদিনে সব ঠিকঠাক করে ফিরে এসেছে লন্ডনে। এজেন্সির দায়িত্ব এতদিন জেসনের হাতেই ছিল। ফিনিক্স সিকিউরিটিজ এন্ড ইনভেস্টিগেশন ফার্মের খসরা প্ল্যানটা কেবল তুলে দিয়েছিল রায়ান ওর হাতে। ছয়মাসে ফেলিক্স আর জেসন মিলে প্রতিষ্ঠানটাকে তৈরি করেছে। আজ সেই প্রতিষ্ঠানের লঞ্চিং পার্টি। এত কাজের মাঝেও ফুসরত করে জেসন নিজেই চলে এসেছে বসকে নিয়ে যেতে। বাহিরে বেরিয়ে বসের সামনে এসে দাঁড়াল জেসন। ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বের হবার ইঙ্গিত দিল রায়ান। জেসন সামনে এগোতেই সংগীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাকে অনুসরন করল রায়ান।
গাড়ির পেছনের সিটে একটা ফাইল ফোল্ডার পেল রায়ান। পিএসআইএফ এর খুঁটিনাটি যেসব ব্যাপার রায়ানের জানা নেই তা ফাইলে করে নিয়ে এসেছে জেসন। মাঝেমাঝে কিছু ব্যাপারে আলাপ করে বুঝে নিল রায়ান। কি কি করতে হবে পরে তাও ঠিক করে নিল। ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল লন্ডনের ইনার সিটি এরিয়ায় প্রবেশ করল গাড়ি। ল্যামবেথের ভক্সহলে অফিস খোলা হয়েছে পিএসআইএফ এর। রায়ান বলল,
-জায়গা ভালোই বেছে নিয়েছ দেখছি।
-ইয়েস স্যার। হেডকোয়ার্টার হিসেবে এর চেয়ে ভাল আর হয় না।
-কাঠখড়ও বেশ পোড়াতে হয়েছে। তবে আমি সন্তুষ্ট।
-ইটস মাই প্লেজার স্যার।
বিশাল এক দালানের সামনে গাড়ি রাখল জেসন। ছুটে এসে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল এক যুবক। গাড়ি থেকে নেমে ঋজু পদক্ষেপে এগিয়ে গেল রায়ান। জেসন ফলো করল। অপরিচিত যুবক গাড়ি নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পারকিং এর দিকে এগোল। ভেতরে ঢুকে লিফটের দিকে এগিয়ে গেল ওরা। সোজা ছাদে এসে থামল লিফট। লিফট থেকে বের হতেই পার্টির কোলাহল যেন ওদেরকে ধাক্কা দিল। জেসনকে এগিয়ে যেতে ইশারা করে চারদিকে নজ বুলাল রায়ান। বেশ কিছু পরিচিত মুখ দেখতে পেল। অতিথিদের বেশ বাছাই করে নেমন্তন্ন করেছে জেসন। ঘুরে ঘুরে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলল রায়ান। সবাই ওকে অভিনন্দন জানাল। হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলল রায়ান। এসব কাজ ওর কাছে বিরক্তিকর লাগলেও কাউকেই এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বেশ কিছুক্ষন পর ফুসরত পেয়ে বারের দিকে এগুলো। পেছন থেকে দেখেই বারে বসা লোকটাকে চিনে ফেলল। পাশে বসে ড্রাই মার্টিনির অর্ডার করে তার দিকে ফিরল,
-হাতে তাহলে বিশেষ কোন কাজ নেই তোমার।
-থাকলেও তোমার পার্টি মিস করি কিভাবে?
-তুমি এসেছ দেখে ভাল লাগল জেমস।
জবাব না দিয়ে হাসল কিংবদন্তীর নায়ক। আবার বলল রায়ান,
-তবে পার্টি কিন্তু আমার না। লিটারেরি পার্টিটা জেসন আর ফেলিক্সের।
-হুম। ভাল কিছু লোক সবসময়ই হাতে আছে তোমার।
-নিজেদের কাজ বোঝে ওরা।
গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল জেমস,
-তোমার জন্য একটা গিফট নিয়ে এসেছি বন্ধু। নতুন প্রতিষ্ঠানের স্টার্টিং প্রাইজ বলতে পার।
-তাই নাকি? তোমার কাজ?
-নট রিয়েলি মাইন। আমার বসের তরফ থেকে।
-কি কাজ শুনি।
-আমি তোমার অফিসে ডিটেইল পাঠিয়ে দিয়েছি। কাল সকালেই হাতে পেয়ে যাবে। আমার সময় ফুরিয়েছে আজকের মত।
ভদকা মার্টিনির গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে উঠল জেমস। যেতে যেতে বলল,
-এনজয় অ্যাটেনন্ডিং ইওর গেস্টস রায়ান অ্যান্ড গুড লাক।
গেস্টদের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রায়ান। গ্লাস নামিয়ে রেখে এগুলো সেদিকে। বিড়বিড় করল,
-ইটস গনা বি আ লং নাইট আই গেস।
পরদিন সকাল। পিএসআইএফ এর প্রথম কর্ম দিবস।
সামনে বসা জেসনকে বলল রায়ান,
-পার্টির কারনে কাজ ভালোই পাওয়া গেছে কি বল?
-সব মিলিয়ে লন্ডনে ছিয়াত্তরটা কেস স্যার।
-আমি আশা করছি সেসব তোমরাই সামলাতে পারবে। আচ্ছা ফেলিক্সকে দেখতে পাচ্ছি না আসার পর থেকে। সে কোথায়?
-নিউ ইয়র্ক শাখায় আছে আপাতত স্যার। ওখানেও কাজ কম আসেনি। সেগুলো সামলাচ্ছে।
-আচ্ছা। এমআইসিক্স থেকে একটা ফাইল আসার কথা। পেয়েছ?
-ইয়েস স্যার। এই যে এটা।
ডেস্ক থেকে একটা কনফিডেনশিয়াল লেবেল সাঁটা ফাইল এগিয়ে দিল জেসন।
ফাইলটা খুলে জেসনকে ওঠার ইঙ্গিত দিল রায়ান। প্রায় দু ঘণ্টা ধরে ফাইলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করল। এরপর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো অন্য একটা ডকুমেন্ট এ লিখে নিল। আলাদা কিছু নোটসও লিখল। এরপর ইন্টারকমে জেসনকে আসতে বলল। জেসন আসার পর ওকে বসতে ইঙ্গিত করে কেসটা সম্পর্কে জানাল রায়ান,
-ওদের রয়্যাল নেভির একটা এক্সপেরিমেন্টাল নিউক্লিয়ার সাবমেরিন গায়েব হয়ে গেছে। তিনটে আনডিটেক্টেবল নিউক্লিয়ার মিসাইল ছিল সেটাতে। সেগুলো উদ্ধারের ভার এমআইসিক্স এর উপর পড়েছে। এমআইসিক্স যততুকু জানতে পেরেছে মিসাইলগুলো রাশিয়ান এক ক্ষ্যাপা এক্স জেনারেল হাত করেছে। ব্যাটা বিশ্বাস করে এখনও বিশ্বযুদ্ধ চলছে। লোকটা কেমন ক্ষ্যাপা তা বুঝাতে এরচেয়ে বেশি আর কিছু বলতে হয় না। এমআইসিক্স মিসাইল উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই জেনারেল হুমকি দিয়েছে এমআইসিক্স হাত গুঁটিয়ে না নিলে সে প্রথমে একটা মিসাইল লঞ্চ করবে লন্ডনকে টার্গেট করে। রাশিয়ান সরকার ব্রিটিশ সরকারকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। তারা এটাও প্রমাণ করেছে যে জেনারেল ভ্লাদিমভিচ এখন কোনভাবেই তাদের সাথে যুক্ত না। এমআইসিক্স চাচ্ছে আমরা রাশিয়ায় তাদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কাজ করি। মিশনটা টপ সিক্রেট। যত কম লোক জানবে ততই ভাল। এমআইসিক্স নিজেদের মাঝে লিক আছে সন্দেহ করে এই মিশনের ভার আমাদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। তোমার কি মনে হয়, কেসটা নেয়া উচিত?
-আপনি যা ভাল মনে করেন স্যার। তবে এটা নিলে আমাদের এমআইসিক্স এর সাথে একটা ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার সুযোগ আছে। আর ফার্মের শুরুতেই এমন কাজ হাতে পেয়েও ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
-অল রাইট। আমার আরও ডিটেইল চাই। কিভাবে কোন সুত্র ধরে এগুতে হবে, কি কি লাগবে আমি মোটামুটি তার সবকিছু নোট করে নিয়েছি। এই নাও।
বলে নিজের কাগজগুলো জেসনের হাতে দিল রায়ান। এমআইসিক্স এর ফাইলটাও দিয়ে বলল,
-যা যা বলেছি সেসব কাজ শেষ হলে তুমি আবার ফাইলে নজর দিয়ে দেখ আমি কোন কিছু মিস করেছি কিনা। আমি আপাতত আমাদের স্কটল্যান্ডের বাড়িতে যাচ্ছি। তোমার কাজ শেষ হলে ওখানেই আমাকে পাবে।
-ইয়েস স্যার।
বলে উঠল জেসন। রায়ানও বাকি কাজ গুছিয়ে রেখে বেরিয়ে পড়ল। অনেক দৌড়োদৌড়ি হয়েছে। এবার একটু বিশ্রামের পালা।


রাত দশটা, স্কটল্যান্ড। রায়ান এস্টেট।
ড্রাইভওয়েতে ঢুকল রায়ানের গাড়ি। গাড়ির দরজা খুলে বের হতেই বড় একটা দেহ ঝাপিয়ে পড়ল ওর উপর। মুখে গরম নিঃশ্বাস আর ভেজা জিভের ছোঁয়া পেল সে। ওর পোষা কুকুর, হাউন্ড। জার্মান শেফার্ড আর বুনো নেকড়ের মিশ্র রক্ত বইছে ওর শরীরে। রায়ানের পিছু পিছু ঘরে এসে ঢুকল। নিজের ঘরে ব্যাগ রেখে এসে লিভিংরুমের সোফায় গা এলিয়ে দিল রায়ান।
-আ বিট লেট।
মুখ না ফিরিয়েই জবাব দিল রায়ান,
-লং ড্রাইভ ব্রাদারমাইন, নাইন আওয়ার স্ট্রেইট। কথা বলার মত শক্তিও নেই।
-আরেকজন এসেই সোজা বিছানায়। এখনও ঘুমে বোধহয়।
দরজায় হাজির হল শায়খ,
-আমরা তো তোর মতো দু’ঘণ্টায় উড়ে আসিনি, টায়ার্ড হওয়াটাই স্বাভাবিক।
-তারমানে তুই বলতে চাচ্ছিস প্লেন চালাতে কোন পরিশ্রম করতে হয় না?
-ড্রাইভ করার মতো এত বেশি না।
কিছু না বলে হাসল তুষার। রায়ান জানতে চাইল,
-তোদের মধ্যে কে আমাকে এখন কফি বানিয়ে খাওয়াবে?
-কেউ না।
একসাথে বলল শায়খ আর তুষার। তুষার মাথা নেড়ে বলল,
-আগে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নাও। পরে কফি হবে।
রায়ান আর কথা না বাড়িয়ে মাস্টার বেডরুমের দিকে রওনা দিল। পেছন থেকে শুনতে পেল দুই ভাই আবার কি নিয়ে যেন তর্কে মেতেছে। ভাবল রায়ান,
-হোম, সুইট হোম।
মুচকি হেসে কাপড় না পাল্টেই শুয়ে পড়ল ও। মুহূর্তের মধ্যেই তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।
দু’দিন পরের রাত। হাউন্ডের ভারী গলার মৃদু গড়গড় শব্দে ঘুম ভাঙল রায়ানের। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত তিনটে বাজে। রায়ান উঠেছে দেখে গড়গড় থামিয়ে দিয়েছে হাউন্ড, কিন্তু সব পেশী টানটান হয়ে আছে। বিপদের আভাস টের পেয়েছে সে। বিছানার নিচে হাত দিয়ে মেঝে থেকে লোডেড জি-৩৬ টা তুলে নিল রায়ান। জুতো পায়ে গলিয়ে, বেডসাইড টেবিল থেকে ওয়াকি তুলে নিয়ে নিঃশব্দে চলে এল দরজার কাছে। তিন ভাইয়ের রুম এক করিডোরেই। রায়ানের মাঝখানে আর দু’পাশে শায়খ আর তুষারের। দরজায় দাঁড়িয়ে মৃদু টোকা দিয়ে সংকেত দিতেই জবাব পেল। ওরাও উঠে পড়েছে। তুষার ওর স্নাইপার রাইফেল নিয়ে ছাদে রওনা হল। শায়খ আর রায়ান রওনা হল বাড়ির সামনের আর পিছনের দিকে। জানালায় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল রায়ান। ওর হাতে দুপ করে একটা ফ্লেয়ার জ্বলে উঠে ছুটে গেল সামনের মাঠের দিকে। কেউ নেই। গ্যারেজের দিকে আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকাল রায়ান। একজন লোক হেঁটে আসছে। আরেকটু কাছে আসতেই চিনতে পারল রায়ান। জেসন। ওয়াকিতে বলল,
-অল ক্লিয়ার।
জেসন দরজায় এসে দাঁড়াতেই খুলে দিল রায়ান। রাইফেল হাতে রায়ানকে দেখে ভ্রুকুটি করল জেসন। এমন সময় হাজির হল শায়খ। জেসনকে দেখে রাইফেল নামাল। শায়খের হাতে জেসনকে ছেড়ে বাহিরে এসে দাঁড়াল রায়ান। জেসনই মুখ খুলল প্রথমে,
-ব্যাপার কি হে? এমন যুদ্ধংদেহী ভাব কেন সবার?
-নতুন অ্যালার্ম সিস্টেম সম্পর্কে তোমাকে জানানো হয়নি। ভুলে ট্রিগার করে দিয়েছিলে।
শায়খ জবাব দিল।
-তা এত রাতে? কি ব্যাপার?
-কেসের ব্যাপারে জরুরি কিছু আলাপ ছিল স্যারের সাথে।
-অ্যালার্ম বাজিয়ে ভড়কে দিয়েছিলে। এসো দেখি ভাইয়া কি বলে।
অ্যালার্মের ব্যাপারটা রায়ানের মাথায় আছে। তবে ওর ঘরে হাউন্ড থাকায় অ্যালার্মের রিসিভার রাখেনা। ও মনে মনে সেটাই ভাবছে। অ্যালার্ম ভুল করতে পারে তাই বলে হাউন্ডও! ওরা বাহিরে আসতে ফিরে তাকাল রায়ান। তুষারকে না দেখে মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু দূরে কিছু একটা দেখতে পেয়ে ঝট করে তাকাল। পরমুহূর্তে সাইলেন্সড গুলির আওয়াজ পেতেই জমে গেল।
জঙ্গলের মধ্যে চুপ করে বসে দেখছিল এতক্ষণ লোকটা। বেশ কিছুটা দূরে রেখে এসেছে তার গাড়ি। লং রেঞ্জ রেডিওটা খুলে রিপোর্ট জানাল,
-টার্গেট রায়ান্স এস্টেট এ পৌঁছেছে।
অপর প্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হল,
-তুমি শিওর?
-পজেটিভ। আই হ্যাভ মাই আইজ অন রায়ান্স, ফার্স্ট এন্ড সেকেন্ড।
ক্ষণিকের নীরবতার পর অপর প্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হল,
-ক্যান ইউ টেক আ কিল শট?
-অ্যাফারমেটিভ।
-প্রাইমারি টার্গেট চেঞ্জড। গো ফর ফার্স্ট রায়ান। আন্ডারস্টুড?
-অ্যাকনলেজড।
ট্রিগারে চেপে বসল তার আঙ্গুল। সাইটের লাল বিন্দু ঝুলছে রায়ানের মুখের একটু উপরে। একটু নামাল সে রাইফেলের নল। সাথে সাথেই ঝট করে তার দিকে চাইল নতুন টার্গেট। মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করল সে ট্রিগার টানতে। আর সেই মুহূর্তেই তার কপাল ফুটো করল তুষারের বুলেট।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। লাশটা বয়ে এনেছে ওরা পেছনের আস্তাবলে। লোকটা রাশিয়ান এতটুকু চেহারা দেখে বুঝা যায়। সাথে আইডি যা পাওয়া গেল তা ওদের অভিজ্ঞ চোখে জাল হিসেবে ধরা পড়ল। একটা চাদর দিয়ে লাশটা ঢেকে রেখে ঘরে চলে এল ওরা।
লিভিং রুমে সবাই বসতে জেসনকে জিগ্যেস করল রায়ান,
-কি জানতে পারলে?
-রাশিয়া, ইউক্রেন সহ আরও কিছু দেশে খোঁজখবর করেছি। ভ্যালিড লিড কিছুই পাওয়া যায়নি। শত্রু পক্ষের ছায়াও দেখতে পাইনি।
-কিন্তু ওরা তোমাকে ঠিকই খুঁজে পেয়েছে।
মাথা ঝাঁকাল জেসন। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতে উঠে গিয়ে ধরল শায়খ। ওপাশের কথা শুনে জেসনকে বলল,
-তোমার কল।
জেসন উঠে গিয়ে ধরল। কথা শুনতে শুনতে ওর মুখের ভাব পাল্টে গেল। কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে দিয়ে এসে বসল। বলল,
-অবশেষে আমার একজন ইনফরমার একটা লিড দিল। লিডটা নিরেট, তবে আমাদের পছন্দের কিছু না।
সবাই ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইতে বলল,
-ট্যাডমোর প্রিজন। প্রিজনার ১০১৭।
শ্বাস চাপল শায়খ, মেঝেতে পায়ের ঠোকাঠুকি বন্ধ করল তুষার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রায়ান, বলল,
-লেটস সি হোয়াট মাই ওল্ড ফ্রেন্ড নোজ।



ট্যাডমোর প্রিজন, পালমিরা, সিরিয়া।
জেলারের অফিস। জেলারের আসনে বসে আছে কর্নেল আযম, ওরফে এজেন্ট রায়ান। সামনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেলার। রুটিন চেকের মত জেলখানার যাবতীয় ফাইলে চোখ বুলাচ্ছে রায়ান। কাজ শেষ করে জেলারের দিকে চাইল ও,
-প্রিজনার ১০১১ থেকে ১০৩০। এদের কি অবস্থায় রাখা হয়েছে?
-সলিটারি ইঙ্কারসারেটেড স্যার। অফ দ্যা রেকর্ড অবশ্যই।
-হুম। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক কারা?
-১০২৪, ১০১৩, ১০৩০ স্যার।
-১০১৭ কে তুমি বিপদজনক মনে কর না?
এক মুহূর্ত মুখ কুঁচকে ভাবল জেলার। তারপর বলল,
-ওর রেকর্ডের কনফিডেনশিয়াল লেভেল আমার ক্লিয়ারেন্স এর উপরে স্যার। তবে সাজেশন এ বলা হয়েছে প্রিজনার ইজ হাইলি ডেঞ্জারাস। কিন্তু স্যার অফ দ্যা রেকর্ডের সিরিজে একে রাখা হলেও আমার দায়িত্ব পালনকালে সবচেয়ে নিরীহ বন্দী ১০১৭ কেই দেখেছি। আমার আগের জেলারও একই কথা বলে গেছেন। ১০১৭ কারও সাথে ঝামেলায় জড়ায় না, কথাও বলে না, পালাবার চেষ্টাও করেনি এখনও। আদর্শ বন্দী স্যার।
কিছুক্ষন শীতল দৃষ্টিতে জেলারের দিকে তাকিয়ে থাকল রায়ান। আর্মি ইন্টেলিজেন্সের একজন কর্নেল এই দৃষ্টিতে কোন জেনারেলের দিকে তাকালেও তার অন্তরের অন্তঃস্থলেও ভয় জেগে ওঠার কথা। এই লেফটেন্যান্ট কর্নেলেরও তার ব্যাতিক্রম হল না। ভয়টাকে আরেকটু বাড়তে সময় দিয়ে মুখ খুলল রায়ান,
-চল তোমার এই আদর্শ বন্দীর সাথে দেখা করা যাক।
রায়ান উঠতে চাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচল জেলার। সলিটারি সেকশনের দিকে রওনা হয়ে মনে মনে ভাবল সে রায়ানকে নিয়ে। মাঝেমধ্যেই আর্মি ইন্টেলিজেন্সের সারপ্রাইজ ইন্সপেকশনে অভ্যস্ত সে। কিন্তু এই কর্নেলের দিকে তাকালেই কেমন যেন একটা অস্বস্তি জাগে মনে। চোখে চোখ পড়লেই মনে ভয় ঢুকে যায়। এ অন্য ধাতু দিয়ে গড়া, ভাবল জেলার। একে ভয় না পাওয়া অসম্ভব।
সলিটারি সেল ০৮ এর সামনে এসে তালা খুলল জেলার। হাতের ঝাঁপটায় মাছি তাড়াবার মত তাকে চলে যাওয়ার ইংগিত দিল রায়ান। জেলারের যাওয়ার ভঙ্গি দেখে মনে হল পালিয়ে বাঁচল। সেলের ভিতরে ঢুকল রায়ান। একটা শোয়ার বেঞ্চি, একটা কমোড আর তিন মানুষ দাঁড়ানোর পরিমান মত খালি জায়গা ভেতরে। স্যাঁতসেঁতে গন্ধ জায়গাটায়। দেয়ালে নানান রকমের আঁকিবুঁকি। তারই মাঝে দক্ষ হাতের তৈরি একটা দৃশ্য চিনতে পারল রায়ান। মেয়েটার চেহারা ওর ভারি পরিচিত। বেঞ্চিতে ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে বন্দী। রায়ান ওর দিকে তাকাতেই জানতে চাইল,
-আগের চেয়ে ভাল হচ্ছে হাতের কাজ, তাই না?
-আসলেই হচ্ছে। চাইলে আরও অনেক আগেই ভাল করতে পারতি।
-কি করব বল, আগে অফুরন্ত সময় পাইনি। শত্রু মারতেই ব্যাস্ত ছিলাম বেশি। সে কথা বললে বলা যায় ওই কাজেও শৈল্পিক ছোঁয়া কম পরেনি।
-তার পরিণতিই কি আজকে ভোগ করছিস না?
-হয়ত। জেলের ভেতরে বন্দী আছি আমি। কিন্তু বাহিরে থেকেও যেন মনে হচ্ছে সাজা পাচ্ছিস তুই। ব্যাপার কি হে?
-তুই যা করেছিস তা থেকে ফিরতে পারতি, শুধু আমার ভুলে এখন বন্দী তুই, সাজা না পেয়ে থাকি কিভাবে?
-তা ঠিক। একটা ভুলই আমাদের জীবন শেষ করার জন্যে যথেষ্ট।
-আই অ্যাম সরি ফর হোয়াট হ্যাপেন্ড, সাঈদ।
-ফরগেট ইট। এত বছর পর নিশ্চয়ই তুই ক্ষমা চাইতে আসিস নি।
-না।
-কি জানতে চাস বল।
-জেনারেল ভ্লাদিমভিচ আজিমভ।
-ক্ষ্যাপা, ফ্যানাটিক সহ আরও কিছু সম্বোধন যোগ হবে।
-সে ইংল্যান্ডের একটা নিউক্লিয়ার সাব হাতিয়ে নিয়েছে। সাথে তিনটে আন্ডিটেক্টেবল নুক।
-এবং ইংল্যান্ড সরাসরি তাঁর ব্যাপারে অ্যাকশন নিতে না পেরে স্যার রায়ান এর শরণাপন্ন হয়েছে। টেল মি রায়ান, আমার নাইটহুড এখনও আছে না পচে গেছে?
-আছে।
-আচ্ছা! তাহলে দুই বিশ্বস্ত নাইট এখন গ্রেট ব্রিটেন রক্ষা করতে ক্ষ্যাপা জেনারেলের পেছনে লাগবে। ইজ দ্যাট ইট?
-প্রিটি মাচ।
-আর তুই ভেবেছিস আমি জাস্ট তোর কথায় রাজি হয়ে যাব?
-হ্যাঁ।
-আমার এই অফুরন্ত সময়ের গোঁড়ায় পানি ঢালা বন্ধ করে আমি কেন তোকে সাহায্য করব?
-কারণ তুই, আমি এখনও সেই একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী।
থেমে থেমে উচ্চারণ করল সাঈদ,
-ইভিল মাস্ট বি ইরেডিকেটেড ইমিডিয়েটলি।
-দ্যাটস রাইট। আজিমভ ইভিল। দুনিয়ায় ওর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কেজিবির হেড হিসেবে ও যা যা ঘটিয়েছিল, ওকে শেষ করার জন্য তাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কেউ সেই কাজটা করেনি তাই এখন পুরো দুনিয়াকে সে থ্রেট করছে নিউক্লিয়ার বম্ব ফাটাবে বলে। আর কি কারণ চাস তুই?
চুপচাপ কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল সাঈদ। চেহারা দেখে ওর মনে কি চলছে কিছুই বুঝা যায় না। এরইমাঝে জেলার একবার ঘুরে গেছে বাহির থেকে। রায়ান কটমট করে চাইতেই ছুটে পালিয়েছে। হঠাৎ মুখ খুলল রায়ান,
-আরেকটা কারণ তোকে আমি দিতে পারি।
কিছু না বলে চাইল সাঈদ।
-মিরাকে এখানে আজিমভই পাঠিয়েছিল।
চেহারা দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ওর চোখে আগুন দেখতে পেল রায়ান। বুঝল কাজ হয়ে গেছে। কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়াল হ্যান্ডশেকের জন্য। সাঈদ দীর্ঘ বিরতির পর হাতটা ধরতে রায়ান বলল,
-পারলে ক্ষমা করিস আমাকে।
হাতটা ধরে রেখেই বলল সাঈদ,
-তুই আজীবন আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে যেতে পারিস সৌরভ, কিন্তু আমি কখনও তোর ওই ভুলটা ক্ষমা করব না। কখনও না।
হাতটা ছেড়ে দিয়ে বেঞ্চিতে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল সাঈদ। ধীর পায়ে বেড়িয়ে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিল রায়ান। রওনা হল জেলারের ঘরের দিকে।
সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ ট্যাডমোর প্রিজনের পাগলা ঘণ্টি বেজে উঠল। অফ দ্যা রেকর্ড প্রিজনারদের সেকশনে রাতের রুটিন চেক করতে গিয়ে দেরী করছিল জেলার আর তার তিন সহকারী। এক ঘণ্টা পরে মৃত অবস্থায় তাদের আবিস্কার করে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেলার। জেলারের গায়ের ইউনিফর্ম গায়েব। পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে প্রিজন গেটে ফোন করল অ্যাসিস্ট্যান্ট জেলার। গেটের গার্ড জানাল মাত্র জেলার তাঁর গাড়ি নিয়ে শহরে তাঁর বাড়ির দিকে গেছেন। শহরের পুলিশ একটা সাইডরোডে পেল জেলারের গাড়ি আর গাড়ির ভিতর তাঁর ইউনিফর্ম। পুরো শহরে রোডব্লক বসিয়ে আর পুলিশ চেকিং করেও কোন লাভ হল না। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে প্রিজনার ১০১৭ ওরফে এক্স কর্নেল সাঈদ আহসান।



ডমোডেডোভ এয়ারপোর্টের বাইরে রেঞ্জ রোভারে বসে অপেক্ষা করছে জেসন আর শায়খ। হঠাৎ জিগ্যেস করল শায়খ,
-এই সাইদ আহসান আর ভাইয়ার মাঝে কি হয়েছিল বলতে পারবে?
-হুম। লম্বা কাহিনি।
-ফ্লাইট ল্যান্ড করতে আরও আধঘণ্টা বাকি আছে।
এক মুহূর্ত চুপ করে রইল জেসন। তারপর ঘটনাটা বলল।
যুদ্ধ তখন প্রায় শেষের দিকে। সব জায়গা যুদ্ধ বিধ্বস্ত। অ্যালাইয়েন্স যুদ্ধ জিতলেও অনেক সৈনিক হারিয়েছে তারাও। অনেকে এখনও বন্দি হয়ে আছে বিভিন্ন জায়গায় হিটলারের গোপন কিছু কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। দ্রুত সেসব জায়গায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে সঙ্গীদের মুক্ত করা হচ্ছে। এরকমই এক ক্যাম্পের হদিশ হঠাৎ এসএএস পায়। ক্যাম্পে বেশ কিছু এসএএস অফিসার বন্দি ছিল। ওরা সেখানে হামলা করার প্ল্যান করে। ক্যাম্পের পাশের গ্রামে অ্যালাইড ফোর্স এর একটা অ্যাসল্ট টিম নামে। কিন্তু টের পেয়ে যায় জার্মানরা। যুদ্ধে জিততে পারবে না বুঝতে পেরে ওরা সব বন্দিদের খুন করার নির্দেশ পাঠায় রেডিও করে ক্যাম্পে। বিপদ বুঝতে পারে এসএএস। অ্যালাইড ফোর্স এর টিম ক্যাম্পে পৌঁছবার আগেই সব বন্দি সাফ হয়ে যাবে। এসএএস তখন ব্যাকআপ প্ল্যান এ চলে যায়। আকাশেই চক্কর দিচ্ছিল ওদের প্লেন। ক্যাম্পের অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গানগুলোকে এড়িয়ে ম্যান ড্রপ করা হয় সরাসরি ক্যাম্পে। বেশি না, মাত্র দুজন। বেশি না, যথেষ্ট। কর্নেল আহসান আর কর্নেল রায়ান। এসএএস এর দুই বাঙালি অফিসার। ওঁরা দুজন ছিলেন এসএএস এর বেস্ট অফিসার। যুদ্ধে দুটো ওয়ারমেশিনে পরিণত হয়েছিলেন তারা। জার্মানরা বেশ বেশ পরিচিত ছিল ওদের কাজের সাথে। ওরা ওঁদের নাম দিয়েছিল এঞ্জেল ডেস টডেস, এঞ্জেলস অফ ডেথ।
একজন নাৎসি সৈন্যও জীবিত বের হয়নি সেদিন ওই ক্যাম্প থেকে। সাঈদ সীমা অতিক্রম করেছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেশিরভাগ বন্দি খুন হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়।
যুদ্ধ প্রায় প্রতিটি যোদ্ধাকে পাল্টে দেয় কোন না কোনভাবে। কেউ উন্মাদ হয়ে যায়, কেউ নিজেকে ঘৃণা করে, কেউ পালায় আর কেউ খুন করতে ভালবাসতে শুরু করে। কর্নেল সাঈদের শেষেরটাই হয়েছিল। তখন পর্যন্ত এত লাশ ওরা পেছনে ফেলেছে যে তা কোন ছোট দেশের জনসংখ্যার সমান হতে পারে। রায়ানও সমান অংশীদার ছিল এসবের। কিন্তু অজানা কোন এক উপায়ে সে সবসময় নিজেকে ঠিক রেখেছিল, যুদ্ধ তাকে পাল্টাতে পারেনি। সেদিনের বেশ আগে থেকেই সাঈদের পরিবর্তন লক্ষ করছিল রায়ান। কিন্তু কিছু বলেনি। হয়ত ভেবেছিল যুদ্ধই তো, এখানে মোটামুটি সবই চলে। তাই কয়েকবার সাঈদের কারনে মিশন, এমনকি নিজেদের প্রাণ বিপন্ন হলেও চুপ ছিল রায়ান। কিন্তু সেদিন সাঈদ আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল। এমনকি ক্যাম্পের বন্দিরাও সাঈদের মূর্তি দেখে ভড়কে গিয়েছিল। ওয়ার্ল্ডওয়ার এর পর কোল্ডওয়ার এর মধ্যেও সাঈদের কোন উন্নতি হল না, দিনকে দিন ও অন্ধকারের দিকেই ঝুঁকছে। রায়ান বুঝতে পারছিল আর এভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সেদিন বেসে ফিরে আসার পর নিজের ঘরে বসে বসে এসব নিয়েই ভাবছিল রায়ান। কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছিল না। সমাধান নিজেই হাজির হল রেডিওতে। এক ইনফরমার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাল। সাঈদের অবস্থার একটা সমাধান পেয়ে ওর ঘরে ছুটল রায়ান। নক করে সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা খুলে ঢুকল। লিভিংরুমের কাউচে শুয়ে শুয়ে হুইস্কি গিলছে সাঈদ। চুপ করে একটা সোফায় বসল রায়ান। চোখ খুলে রায়ানকে দেখে বলল সাঈদ,
-আমার দ্বারা আর হবে না রে। আমি ভেঙ্গে পরেছি।
-ওয়ার গট টু ইউ।
-এর থেকে ফেরার উপায় নেই।
-উপায় আছে, তুই ফিরতে চাস কিনা সেটা বল।
সোজা হয়ে বসল সাঈদ,
-চাই। কি উপায়?
-ভ্লাদিমভিচ। মিরা ভ্লাদিমভিচ।
-ইউ আর জোকিং।
-আই অ্যাম নট। আই নো ইউ হ্যাভ ফিলিংস ফর হার। ইউ ক্যান হ্যাভ আ ফিউচার উইথ হার। এসব কিছু থেকে দূরে।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সাঈদ। তারপর জানতে চাইল,
-কোথায় সে?
-ট্যাডমোর।
ওর চোখে চুপ করে তাকিয়ে রইল সাঈদ। বলল,
-চল তাহলে।
-নাহ, এটা তোর নিজেকেই করতে হবে। আই হ্যাভ নিউ অ্যাসাইনমেন্ট।
-আর ইউ শিওর?
উঠে বের হয়ে যেতে যেতে বলল রায়ান,
-আই অ্যাম। আই ট্রাস্ট ইউ।
বের হয়ে গেল রায়ান।
এর পরদিন ট্যাডমোর প্রিজনে হামলা করল সাঈদ। গার্ডদের চোখ এড়িয়ে মিরাকে মুক্ত করে যখন সে বের হয়ে আসবে ঠিক তখনই কিভাবে যেন গার্ডরা টের পেয়ে যায়। হামলা চালায় ওদের উপর। কোণঠাসা হয়ে খুনে হয়ে পরে সাঈদ। খুনের নেশায় মিরার দিকে খেয়াল রাখার কথাও ভুলে যায়। টনক নড়ে মিরার আর্তচিৎকারে। গার্ডদের ছোঁড়া একটা বুলেট মিরার হার্টে লেগেছে। সাঈদের কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মিরা। সাঈদ বন্দি হয়। রায়ান সব জানতে পেরে বেশ কয়েকবার সাঈদকে মুক্ত করে নিতে আসে, কিন্তু সাঈদ সায় দেয়নি। মুক্ত পৃথিবী ওর কাছে বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। রায়ানকে ফিরিয়ে দেয় ও। সেদিন ওকে একা ছাড়ার জন্য রায়ানকে ও দোষী করে। কখনও ওকে ক্ষমা করে না।

ঘটনা বলা শেষ করে জেসন। আর কিছু বলে না শায়খ। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে যেতে হকচকিয়ে পেছন ফেরে দুজনে। সাঈদ উঠে বসে পেছনের সিট এ। কথা না বলে ড্রাইভিং এ মন দেয় জেসন। পিএসআইএফ এর একটা সেফ হাউসে এ নিয়ে আসা হয় সাঈদ কে। একের পর এক ফোন করতে থাকে সাঈদ, ওর পুরনো কন্টাক্টদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। জেসন আর শায়খ অসহায়ের মত বসে বসে ওর কাজ দেখছে। রায়ান সাঈদ এর কাজের অসুবিধা না করে ওর সাথে থাকতে বলেছে ওদের দুজনকে। কিছুক্ষণ পর অফিসের কাজে বের হয়ে গেল জেসন। শায়খ বসে রইল একা। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে ও বসে বসে টেরই পায়নি। ঘুম ভাঙ্গলো প্রবল ঝাকুনি খেয়ে।
-হেই জুনিয়র, উঠে পড়।
চোখ রগড়ে জানতে চাইল শায়খ,
-"কি হয়েছে?"
-একটা লিড পেয়েছি। আমি চেক করতে যাচ্ছি। যাবে তুমি?
-নিশ্চয়, চলুন।
নিজের ল্যান্ড রোভারটা গ্যারাজ থেকে বের করে নিল শায়খ। পথ বাতলে দিতে লাগলো সাঈদ। কিছুক্ষনের মধ্যেই অফিসার্স ক্লাব এর সামনে গাড়ি থামাল ওরা। ক্লাব এ ঢুকে শায়খ কে সামনে আসতে নিষেধ করলো সাঈদ। ভিতরে ঢুকে একটা টেবিল এর দিকে এগিয়ে গেল ও। টেবিল এর লোকটার সাথে বেশ খানিক্ষন কথা বললো। এরপর উঠে বের হল। গাড়িতে উঠে শায়খ কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বললো সাঈদ,
-সিনিয়র এর সাথে দেখা করতে হবে। কোথায় সে?
-ভাইয়া তো অন্য একটা লিড নিয়ে কাজ করছে।
-কি লিড?
-সেদিন আমাদের উপর হামলা হয়েছিল। হামলাকারি মারা পরে। ওর ছবি কিছু যায়গায় পাঠিয়েছিল ভাইয়া। লোকাল পুলিশ চিফ কনফার্ম করেছে আইডেন্টিটি। কন্ট্রাক্ট কিলার। কে ভাড়া করেছিল সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করছে ভাইয়া।
-হুম।
চিন্তিত দেখা গেল সাঈদকে কিন্তু আর কিছু বললো না। গাড়ি ছাড়লো শায়খ।

মস্কোর একটি প্রাইভেট ব্যাংক এ প্রবেশ করলো রায়ান। সেই ভাড়াটে খুনির একাউন্টে লাস্ট ট্রানজেকশন এই ব্যাংক থেকেই পাঠানো হয়েছিল। একাউন্ট ডিটেইলস জানার জন্যই রায়ান এসেছে ব্যাংক এ। এপয়েন্টমেন্ট নেওয়াই ছিল। তা রিসেপশন এ বলতেই ওকে পৌঁছে দিল ম্যানেজার এর রুমে। চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এল ম্যানেজার হাত মেলাতে। রায়ানকে বসতে বলে নিজেও ফিরে গিয়ে বসলো নিজের আসনে। জানতে চাইল,
-ড্রিংক অর কফি মি. রায়ান?
-নাথিং, থ্যাংক ইয়ু।
-এজ ইয়ু উইশ। কিভাবে আমি আপনার সাহায্যে আসতে পারি?
-দেখুন, সম্প্রতি আমার একজন এমপ্লয়ী এবং আমার উপর এসাসিনেশন এটেম্পট নেয়া হয়েছে। আমি আমার সোর্স থেকে জানতে পেরেছি এসাসিন এর পেমেন্ট করা হয়েছে আপনার এই ব্যাংক থেকে।
-দেট’স আনফরচুনেট।
-আমার সেই একাউন্ট হোল্ডার এর সাথে আলাপ করা প্রয়োজন।
-দেখুন আমাদের ব্যাংক সিক্রেটলি কাজ করে, ক্লায়েন্ট প্রাইভেসি রক্ষায় আমরা খুবই গুরুত্ব দেই। আমার পক্ষে ক্লায়েন্ট এর পরিচয় জানানো সম্ভব না।
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো রায়ান। শান্ত গলায় বললো,
-আমি চাইলে আরো অনেকভাবে আপনার ক্লায়েন্ট এর পরিচয় বের করতে পারি, কিন্তু আপনাকে জিজ্ঞেস করাই আমার কাছে সবচেয়ে ভদ্রোচিত আচরণ মনে হয়েছে। এখন আপনি যদি কো-অপারেট না করেন তাহলে আমাকে আমার রাশিয়ান বন্ধুদের সাহায্য নিতে হতে পারে। এবং তারা মোটেও আমার মত গোপনে, ভদ্রভাবে আপনার সাথে আলাপ করতে আসবে না। সেটা মনে হয় না আপনার ব্যাংকের এর সুনাম এর ক্ষেত্রে খুব ভাল হবে।
এক মুহুর্ত চুপ করে রায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো ম্যানেজার। তারপর তার হাতটা টেবিল এর নিচে নেমে গেল। বললো
-ইফ ইয়ু ইনসিস্ট, দেন লেট মি ফিল ইয়ু উইদ সাম ডিটেইল। আপনি যাকে খুঁজছেন তিনি আসলে এই ব্যাংক এর ওনার। আর মালিকের নিরাপত্তার দিকটা আমাদেরই দেখতে হয়।
পিছনের দরজা খুলে তিনজন বডিবিল্ডার ঢুকলো। কোট এর নিচে লুকোনো অস্ত্রের অস্তিত্ব গোপন করার কোন চেস্টাই তারা করলোনা। ম্যানেজার বললো আবার,
-আই এম এফ্রেইড, আপনি ভুল করে বাঘের খাচায় ঢুকে পরেছেন মি. রায়ান।
পিছন থেকে বডিগার্ড দুজন এগিয়ে এল। তৃতীয়জন পেছন থেকে কভার দিচ্ছে। দুজন একদম পেছনে চলে আসতেই হাত দুটো সামান্য ঝাকি দিল রায়ান। দুই কবজি থেকে দুটো ৪ ইঞ্চি ফলার ছুরি বেরিয়ে আসতেই লুফে নিল। কি থেকে কি হল বোঝার আগেই রক্তাক্ত গলা নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লো বডিগার্ড দুজন। তৃতীয়জন হচকচিয়ে গেলেও পিস্তল বের করার জন্য হোলস্টারে হাত দিল। দুই লাফে তার সামনে পৌঁছে হোলস্টার এ পিস্তল ধরা হাতটা চেপে ধরলো রায়ান। অপর হাতে একটা ছুরি ওর পাজরে গেঁথে দিল। ঘটনার আকস্মিকতায় চেঁচাতেই ভুলে গিয়েছিল ম্যানেজার । এখন হা করতেই বডিগার্ড এর পিস্তলটা বের করে তার দিকে তাক করলো রায়ান। স্রেফ বোবা বনে গেল সে। ঘুরে ডেস্কের পিছনে এসে ফোনের রিসিভার তুলে নিল রায়ান। ম্যানেজার এর গলা নকল করে ওর সেক্রেটারি কে বললো এক ঘন্টার মধ্যে যেন ওকে বিরক্ত করা না হয়। ম্যানেজার তার নিজের গলা হুবহু শুনে খাবি খেতে লাগলো। রুম এর দরজা লক করে এবার একটা চেয়ার নিয়ে এসে ম্যানেজার এর মুখোমুখি বসলো রায়ান।
-যা জানতে চাই ঠিক তার জবাব দেবে। নইলে....
একটা ছুরি ম্যানেজার এর আঙ্গুল এ চেপে ধরলো রায়ান। ভয়ে সাদা হয়ে গেলো ম্যানেজার এর মুখ। দ্রুত মাথা ঝাকাল সে। রায়ান জানতে চাইল,
-কে এই ব্যাংক এর মালিক?
-জেনেরাল ভ্লাদিমোভিচ।
-আমি আসছি তা তুমি তাকে জানিয়েছ?
মাথা ঝাকাল সে। রায়ান জানতে চাইল,
-আমাকে খুন করার আদেশ দিয়েছে সে?
-না, কেবল বন্দি করতে বলেছে।
-কোথায় আছে সে?
-আমি জানি না।
ঘ্যাচ করে আঙ্গুলটা কেটে নিল রায়ান।সাউন্ডপ্রুফ ঘরে চিৎকার করতে লাগলো ম্যানেজার। তাকে দুমিনিট সময় দিল রায়ান। তারপর অপর হাতের আঙ্গুলে ছুরি রাখলো
-কোথায় আছে সে?
ভয়ে মুখ খুললো না ম্যানেজার। আঙ্গুলে ছুরির চাপ বাড়তেই জোরে কেঁদে উঠে বললো
-আমি সত্যি জানি না।
-তাহলে আমাকে বন্দি করে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছিলে?
-এখানেই বন্দি করে রাখা হত আপনাকে। দুদিন পরে ওর লোক এসে আপনাকে নিয়ে যেত।
-ওর লোক কারা, চেনো?
-সাবমেরিন ক্রু।
আনমনে বললো,
-সাবমেরিন ক্রু! ও তাহলে সাবমেরিনটা ছাড়েনি এখনো।
-যেটা হাইজ্যাক করেছে ওটা ছাড়াও আরেকটা সাবমেরিন চুরি করার ধান্দায় আছে সে।
-কেন?
-আমি জানি না। আমি আর কিছুই জানি না।
দুমিনিট ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল রায়ান। সত্যি বলছে বুঝতে পেরে ছুরি সরিয়ে উঠে বসলো। বললো
-আরেকবার আমাকে এখানে আসতে হলে শুধু একটা আঙ্গুল নয়, আরও অনেক কিছুই হারাবে। কথাটা মনে রেখো।
দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ছিল রায়ান। ইতস্তত করে বললো ম্যানেজার
-আর একটা ব্যাপার, মাঝেমধ্যে মনে হয় জেনারেল এর উপরে যেনো কারো নিয়ন্ত্রন আছে।
থমকে দাড়ালো রায়ান,
-মানে?
-অদ্ভুত কিছু সিদ্ধান্ত, যেমন প্রথমে আপনাকে মারতে অর্ডার দেয়া, আবার তারপরেই আপনাকে না মেরে বন্দি করার অর্ডার দেয়া! কেমন অদ্ভুত না। হয়তো গভার্নমেন্টালি তাকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে।
আনমনে মাথা ঝাকিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো রায়ান। সেফ হাউজে এ ফিরে দেখলো শায়খ আর সাঈদ চুপচাপ বসে দাবা খেলছে। বার থেকে একটা মার্টিনির বোতল খুলে গ্লাস এ ঢেলে নিল রায়ান। কাউন্টার এ হেলান দিয়ে ওদের খেলা দেখতে দেখতে বললো,
-কিছু এগুতে পারলি তোরা?
-শুনলাম ভ্লাদিমের জাহাজ আর জাহাজি দুটোই দরকার।
-বাহ! আমিতো কেবল জাহাজের কথা শুনলাম। তুই দেখি আমার থেকে এগিয়ে।
-কেমন হয় আমরা দুটোই তার হাতে তুলে দিলে?
-সোনার চাঁদ হাতে পেয়ে তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারে।
হঠাৎ জানতে চাইলো শায়খ,
-দুটো সাব কেন দরকার তার?
নিজের গ্লাস এ চুমুক দিয়ে বললো সাঈদ,
-ডাইভারশন। রয়াল নেভির সাবটা চোখের সামনে আমার এই কুঈন এর মত দেখাবে। আর তুমি যখন মহা উৎসাহে আমার কুঈন কে খেতে আগাবে তখন আমার নাইট চুপিসারে চেকমেট করে ফেলবে।
বলেই নাইট কে নির্দিষ্ট ঘরে নিয়ে রাখলো সাঈদ।
-চেক এন্ড মেট।
রায়ানের কাছে জানতে চাইলো সাঈদ,
-কিন্তু সাব এখন কিভাবে জোগাড় করবি?
-কেমন সাব চাইছে?
-নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড। টাইফুন।
-টাইফুন কেন? বোরেই তো আরো বেটার।
-বোরেই একটা গায়েব করা অসম্ভব তাই।
এক মুহুর্ত চুপচাপ ভাবলো রায়ান। তারপর শায়খের দিকে চাইল,
-টাইম টু ইয়ুজ ইয়ুর এক্সপার্টিজ।
কিভাবে হারলো সেটা কৌতূহলের সাথে মনোযোগ দিয়ে দেখছিল শায়খ। রায়ানের কথা শুনে মুখ তুলে হাসলো,
-হুইচ ওয়ান ডু ইয়ু ওয়ান্ট ফ্রম দ্য নেভাল বেস?

দুদিন পর। নেভাল বেস এর গেট এর চেক পোস্ট এ থামলো একটা সরকারি গাড়ি। এমপি এডমিরালের গাড়ি চিনতে পেরে ভেতরে একবার উঁকি দিয়েই দ্রুত ব্যারিকেড তুলে দিল। এডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিং এর সামনে থামলো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে নেভাল বেজ এর কমান্ডার এডমিরাল আনাতলি রুস্তভ হনহন করে এগিয়ে গেল। নিজের অফিসে এ ঢুকে কাজে মগ্ন হয়ে পড়লো। মাঝেমধ্যেই অধিনস্ত অফিসারদের ডেকে ধমকেধামকে চললো প্রতিদিনের মত। তবে আজ যেন মেজাজ তার একটু বেশী গরম। ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকলো অফিসের সবাই। এডমিরাল এর মেয়ে এসেছিল একটা কাজে পাপার কাছে। কিন্তু তার সেক্রেটারির কাছে পাপা খেপে আছে শুনে ভয়ে পালিয়েছে। মধ্য দুপুরের দিকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ভিকটর এর কমান্ডার ক্যাপ্টেন চেকোমাস্কি কে ডেকে পাঠালো এডমিরাল। বিশালদেহী কমান্ডার চেকোমাস্কি ঘরে ঢুকলো মাথা নুইয়ে। এডমিরালকে ছাড়িয়ে সে আরো আধ হাত উচুঁ। চওড়ায় ও সেইরকম। কিন্তু এডমিরালের মেজাজ খারাপ আজকে শুনে বিশালদেহী দানব কাঁপতে লাগলো। সাবমেরিন ভিকটর এর যাবতীয় রিপোর্ট সামনে নিয়ে বসে আছে দেখতে পেয়ে মনে মনে খোদাকে ডাকতে লাগলো চেকোমাস্কি, যেন ভুলেও কোন ভুল না হয়ে থাকে। হঠাৎ মেঘস্বরে কথা বলে উঠলো এডমিরাল, -ক্রু আর অফিসার দের হেলথ চেকাপ শেষ কবে করা হয়েছে? জিভ কামড়ালো কমান্ডার। হেলথ চেকাপ এ সব নাবিকেরই অনিহা থাকে। গতমাসেই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এডমিরাল। কিন্তু ভুলে গেছে সে আবার। চুপ করে রইল সে। গর্জে উঠলো এডমিরাল,
-সবগুলোকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হল। তোমার পুরো ক্রু কে নিয়ে এক্ষুনি বেস ত্যাগ কর। এক সপ্তাহ পরে ফুল মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে জয়েন করবে। গেট আউট!
প্রায় দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল চেকোমাস্কি। চাকরি যায়নি সেইটাই বড় ভেবে নিয়ে দ্রুত তার ক্রু দের ঘটনা বলে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে গেল বেজ থেকে। তারা বের হতেই নতুন এক কমান্ডার এডমিরাল এর সই করা কাগজপত্র দেখিয়ে বুঝে নিল সাবমেরিনের দায়িত্ব। বিকেলের দিকে তা চলে গেল বেজ ছেড়ে। রাতে এক সপ্তাহের ছুটিতে যাচ্ছে জানিয়ে সেকেন্ড ইন কমান্ড কে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল এডমিরাল রুস্তভ। হাফ ছেড়ে বাঁচল অফিসের কুকুর বেড়ালরাও। এক সপ্তাহ কমপক্ষে নির্বিঘ্নে অফিস করা যাবে। বেজ ছেড়ে বেরিয়ে গেল এডমিরালের গাড়ি। বেশ কিছুদুর এসে সরকারি গাড়িটা ছেড়ে অন্য একটা গাড়িতে চড়লো এডমিরাল। চলে এলো সেদিনের সেই অফিসার্স ক্লাবে। ভোল পালটে গেছে ততক্ষনে তার। বয়সের ভাঁজ সরে গিয়ে বেরিয়ে পরেছে এক তরুনের হাসিমুখ। সাঈদ এক টেবিলে বসে রয়েছে সেদিনের সেই লোকটার সাথে। কিছু না বলে বার এ গিয়ে একটা বিয়ার নিল শায়খ। কিছুক্ষন পর কথা শেষ করে সাঈদ বেরিয়ে যেতেই সেও বেরিয়ে এল। গাড়িতে উঠতেই বললো সাঈদ,
-ভালো কাজ দেখিয়েছেন স্যার এডমিরাল। কিছু না বলে হাসলো শায়খ রায়ান।
-এখন প্ল্যান কি?
জানতে চাইল রায়ান খেতে খেতে।
-সাবমেরিন ক্রু সাপ্লাই দিচ্ছে ওরা। ক্যাপ্টেন আমি। ফার্স্ট-মেট হিসেবে তুই। অবশ্যই ছদ্মবেশে যেতে হবে তোর। এরপর জাহাজের নেভিগেটর পথ বাতলে নিয়ে যাবে আমাদের পরবর্তী ডেসটিনেশন এ।
-ব্লাইন্ড খেলতে হচ্ছে তাহলে আমাদের।
-আর কোন উপায় আছে?
-নাহ, আমি আর কোন উপায় দেখছি না।
-কাল সকালেই ওদের সাথে রঁদেভু পয়েন্ট এ দেখা করতে হবে।
-হুম।
আর কোন কথা না বলে চুপচাপ খেলো ওরা।


খোলা সাগরে ভেসে থাকা সাবমেরিনে উঠল সাঈদ আর রায়ান। ভ্লাদিমভিচ এর দলের লিডার রিসিভ করল ওদের, সাব এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিল সাঈদকে। কিছুক্ষণ পরেই জাপানের দিকে রওনা হল ডুবজাহাজ। সাবমেরিনে প্ল্যানিং এর কোন উপায় নেই, সবসময়ই ক্রুদের কেউ না কেউ আশেপাশে থাকছে। তাছারা ওরাও চেষ্টা করল না। অন্ধকারে খেলায় ওরা অভ্যস্ত।
ইকুইপমেন্টস চেক করছিল রায়ান যখন ন্যাভিগেটর ঘোষণা করল,
-পৌঁছে গেছি আমরা।
সাঈদ জানতে চাইল,
-আমরা কোথায় আছি জাপানের?
-ইওচি মাউন্টেইন্স এর শিরিপা কেপ এ। সিলেভেল এর দশ ফুট নিচে একটা গুহামুখ আছে, ওখান দিয়ে সাবমেশিনটা ঢোকাতে হবে।
-জায়গা হবে তো?
-ভেতরে আরেকটা সাবমেরিন আছে, আরও দুটো রাখার মত জায়গা করা হয়েছে। কোন ঝামেলা ছাড়াই রাখা যাবে, শুধু এন্ট্রান্স এর ক্ষেত্রে একটু সাবধানে যেতে হবে।
মাথা ঝাঁকাল সাঈদ।
সাবমেরিনের স্পীড একদম কমিয়ে আনল রায়ান, ব্যালাস্ট ট্যাঙ্ক থেকে পানি ছেড়ে প্রবেশমুখের গর্তের লেভেলে নিয়ে আসা হল। সাঈদ আর রায়ানের দক্ষ হাতে পরে মসৃণভাবে গর্ত দিয়ে ঢুকে পড়ল সাবমেরিন। গুহার ভেতর পজিশনে নিয়ে ভেসে উঠল। সাবমেরিন থেকে বেরিয়ে লাইফবোটে করে প্লাটফর্ম এ উঠল ওরা। বিশাল এক গুহা। দেয়াল আর ছাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল ওরা যে প্রাকৃতিক গুহাকে কেটে আরও বড় করা হয়েছে। ক্রুদের লিডার ওদের ওর সাথে আসতে বলল। ওদেরকে নিয়ে লিভিং কোয়ার্টার টাইপের একটা ঘরে পৌঁছে দিল সে, বিশ্রাম নিতে অনুরধ করল। আরও জানাল জেনারেল এখনও পৌঁছেনি। উনি এসে দেখা করার জন্য খবর পাঠাবেন। ব্যাকপ্যাক মেঝেতে ছুড়ে ফেলে সাইডবারের দিকে এগিয়ে গেল সাঈদ। আর ছারপোকার খোঁজ শুরু করল রায়ান।
ছারপোকার খোঁজ না পেয়ে নিশ্চিন্ত হল রায়ান। সাঈদকে বলল,
-ক্লিয়ার।
হাতের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বলল সাঈদ,
-তুই থাক। আমি একটু ঘুরে আসছি।
-ওকে।
বেরিয়ে গেল সাঈদ। এদিকসেদিক ঘুরে আরমোরিতে এসে পৌঁছল। শার্টের ভেতর লুকনো এক্সপ্লোসিভ বের করে গুঁজে দিল আরমোরির গোলাবারুদের মাঝে। এরপর ওয়াশরুম থেকে ঘুরে রুমে চলে গেল।
সাঈদ পৌঁছনোর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই লোক এসে খবর দিল জেনারেল ওদের নিতে পাঠিয়েছে বলে। ওদের সাথে রওনা হল রায়ানরা। অস্থায়ী লিফটে চরে উপরে উঠতে লাগলো ওরা। পাহারের একটা ধাপে বারান্দার মত হয়ে আছে। সেখানে উঠে এল ওরা। জেনারেল ভ্লাদিমভিচ দাঁড়িয়ে আছে ওখানে।
ওদেরকে দেখে বলল সে,
-ওয়েল ওয়েল, লং টাইম।
হাত বাড়াল সে হ্যান্ডশেক এর জন্য, সাঈদ হাত ধরে ঝাকিয়ে দিতে রায়ানের দিকে বাড়াল হাত। রায়ান স্মিত হেসে হাতটা ঝাকিয়ে দিল। বলল,
-হ্যালো জেনারেল।
-মি. রায়ান, আপনি আমাদের সাথে জয়েন করেছেন দেখে আমি খুশি। আই গটা কনফেস, মি. আহসান এর আমাদের সাথে যোগ দেয়ায় আমি যতটা না অবাক হয়েছি, তারচেয়েও বেশি হয়েছি সে আপনাকেও সাথে নিয়ে এসেছে বলে।
জবাব না দিয়ে হাসল রায়ান। জানতে চাইল,
-তো জেনারেল, দুটো সাব জোগাড় করলেন কেন? একটা ডিকয়?
-আপনি প্রায় ঠিক। প্ল্যান তাই ছিল, ব্রিটিশ সাবমেরিনটা বেশিই গরম। তাই ওটা ডিকয় হিসেবে ব্যবহার করতাম। কিন্তু লাস্ট মিনিট পরিবর্তন আনা হয়েছে কিছু।
-কেমন পরিবর্তন?
-এখন সাবমেরিন দুটোই ডিকয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
ধক করে উঠল রায়ানের ভেতরে। জানতে চাইল,
-তাহলে নুক কিভাবে ব্যবহার করবেন?
-দেখে যান।
বারান্দার কিনারে এসে ডাকল জেনারেল। কিনারায় ওর পাশে এসে দাঁড়াল রায়ান আর সাঈদ। নিচে তাকিয়ে একটা সম্প্রতি তৈরি করা এয়ারস্ট্রিপ দেখল। এক মাথায় বিভীষিকার মত দাঁড়িয়ে আছে একটা মডিফায়েড রাশিয়ান মিগ।
কিনারা থেকে সরে আসতে আসতে জেনারেল বলল,
-ওটাকেই ডেলিভারির জন্য ব্যবহার করা হবে।
সাঈদ জানতে চাইল,
-বোমা লোড করা হয়ে গেছে প্লেনে?
-হ্যাঁ, কাজ শেষ করেই আপনাদের সাথে দেখা করতে এলাম।
-গুড।
গাল চুলকালো সাঈদ,
-জেনারেল, একটা ব্যাপার একটু পরিস্কার করুন। কি ধরনের বাবা তার নিজের মেয়েকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় জেনেশুনে শুধু একজনকে হাত করার জন্য?
চমকে ওর দিকে চাইল ভ্লাদিমভিচ।
-কে বলেছে তোমাকে এই কথা? এই রায়ান?
-সত্যিটা জানতে চাইছি আমি, আপনি জানেন আমার সাথে মিথ্যে বলে পার পাবেন না।
রায়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হানল জেনারেল,
-আমি তাই করেছি যা এই মিশনের জন্য প্রয়োজন ছিল।
মুচকি হাসল সাঈদ। শীতল স্বরে বলল,
-তবে এই মিশনের জন্য তোমার আর কোন প্রয়োজন নেই।
ভোজবাজির মত ওর হাতে একটা পিস্তল উদয় হল। গর্জে উঠল ওটার নল জেনারেলের দিকে ফিরে।
সাঈদের পিস্তল দেখেই জেনারেলের বডিগার্ডের দিকে লাফ দিয়েছিল রায়ান। জেনারেলের দেহ মাটিতে পরতেই গার্ডকে এক মোক্ষম ঘুষিতে অজ্ঞান করে উঠে দাঁড়াল রায়ান। ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল সাঈদ।
-সরি রে, ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না।
লাফ দিল ও বারান্দা থেকে। রায়ান গার্ডের পিস্তলটা বেল্টে গুঁজে সাঈদ এর পেছন পেছন লাফ দিল।
পাহাড় থেকে কিছু দূরে সরতেই সাঈদের জ্যাকেট এর নিচে ভাঁজ করে রাখা প্যারাসুট খুলে দিল সাঈদ। রায়ান সাঈদের কাছে ভেসে এসে ওর কাঁধ ধরে ঝুলে পড়ল।
সাঈদ বাতাসের কারনে চিৎকার করে বলল,
-আমাকে ছেড়ে থাকতে পারলি না নাকিরে?
-কথা না বলে দড়িগুলো শক্ত করে ধরে রাখ।
-চিন্তা করিস না, মরলে একসাথেই মরবো।
অট্টহাসি হাসল দুজনেই।
শক্ত ঝাঁকুনি খেয়ে এয়ারস্ট্রিপের মাটিতে নামলো ওরা। নামার আগেই প্যারাসুট ছেড়ে দিয়েছে সাঈদ, আর সাঈদকে ছেড়ে দিয়েছে রায়ান। তাই কেউ আহত হল না। গুহা থেকে পিলপিল করে জেনারেলের সৈন্যরা বের হচ্ছে। দৌড় দিল ওরা প্লেনের দিকে।
পাইলটের সিটে চরে বসল সাঈদ, পেছনের সিটে রায়ান। ইঞ্জিন গরম করতে দিয়ে ইনস্ট্রুমেন্টস চেক করা শুরু করল ওরা। মাথার উপর দিয়ে গুলি উড়ে যেতেই পিস্তল বের করে পেছনে কয়েকটা গুলি ছুঁড়ল রায়ান। সাঈদ চেঁচাল,
-চেক কমপ্লিট। ক্যানোপি আটকা।
বসে পরে ক্যানোপি আঁটকালো রায়ান। সিটবেল্ট বাঁধার আগেই ছুঁটতে শুরু করল প্লেন। রানওয়ে ধরে ছুটে এগিয়ে গেল প্লেন। পেছন থেকে গুলি করছে সৈন্যরা। রানওয়ে ছাড়ার সাথে সাথে পকেট থেকে ট্রান্সমিটার বের করল সাঈদ, টিপে দিল বোতাম। চাপা গুড়গুড় শব্দ শোনা গেল। পেছনের পাহাড়টা ধ্বসে পরতে শুরু করল। এয়ারস্ট্রিপের দিকের গুহাটা দিয়ে আগুনের বন্যা বেড়িয়ে গ্রাস করল সৈন্যদের।
রায়ান হেলমেট মাইকে জানতে চাইল,
-ব্যাপারটা কিরে?
কন্টিঞ্জেন্সি প্ল্যান। যদি আর কোন উপায় না থাকত আর কি। তোর কন্টিঞ্জেন্সি কি ছিল?
-পাহাড়ি এলাকার শেষের জাপানী মিলিটারি বেজ এ সিগন্যাল পাঠাতাম।
-দ্যাট ওয়ার্কস টু।
শ্রাগ করল সাঈদ। রায়ান জানতে চাইল,
-কিন্তু তোর প্ল্যান কীভাবে কাজ করত যদি বোমা সাবমেরিনেই থাকত, বা পাহাড়ের ভেতরে? নিউক্লিয়ার ব্লাস্ট তো এখানেই হয়ে যেত।
-বেটার হিয়ার ইন মাউন্টেইন্স দ্যান ইন লন্ডন। তাই না?
ভ্রু কুঁচকে গেল রায়ানের,
-আমরা সেভাবে জাস্টিফাই করতে পারিনা, নট এনিমোর।
-পৃথিবী থেকে কিছু মানুষ কমে গেলে কারও কিছু যায় আসেনা।
-বাজে বকছিস সাঈদ।
হাসল সাঈদ। বলল,
-একটা ব্যাপারে তোর খটকা লাগেনি রায়ান? ভ্লাদিমভিচ কি করে ব্রিটিশ সাবমেরিন এর খোঁজ পেল?
-ধারনা করা হচ্ছে এমআইসিক্স এর থেকে প্রটোকল ব্রিচ করেছে কেউ।
মুচকি হাসল সাঈদ,
-আর ওর মত ক্ষ্যাপা এরকম একটা সফিস্টিকেটেড অপারেশন কীভাবে ম্যানেজ করল?
সম্বিত ফিরল রায়ানের, চকিতের মত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কথা মাথায় আসল ওর।
কঠিন স্বরে বলল সাঈদ,
-এমআইসিক্সএর প্রটোকলস অতিরিক্ত সেকেলে রয়ে গেছে এখনও। সত্যিই নতুনত্ব দরকার।
-তারমানে?
নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না রায়ান।
কো-পাইলটের সিট ইজেক্ট করল সাঈদ। বলল,
-গুডবাই ওল্ডফ্রেন্ড, সি ইউ সুন।
মাথার উপর থেকে ক্যানোপি সরে গেল রায়ানের। সিট আলগা হয়ে বেরিয়ে যাবা শুরু করতেই একটানে পিস্তলটা বের করে আনল বেল্ট থেকে। ককপিট থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় ম্যাগাজিনের অবশিষ্ট বুলেটগুলো শেষ করল ও মিগের পাইলট কনসোলে। ওর সিটের প্যারাসুট খুলে গেল। আর বেসামাল হয়ে নিচ দিয়ে ছুটে গেল মিগ।
নিচে তাকিয়ে জঙ্গল দেখতে পেল রায়ান। গাছপালার সাথে বাড়ি খেয়ে খেয়ে এসে নামল ও জঙ্গলের ভেতর। স্যাটফোন বের করে ডায়াল করল ও শায়খের নাম্বারে।
-শায়খ, আমি।
-ভাইয়া? কোথায় তুই? আমি এমআইসিক্স এর অপারেশন্স রুমে। পাহাড়ে বিস্ফোরণ দেখছি আমরা, কি ব্যাপার?
-জেনারেল অপারেশনের হেড ছিল না, সাঈদ ছিল।
-হোয়াট?
-হ্যাঁ, ও একটা মিগে করে বোমাগুলো নিয়ে উড়ে গেছে। আমার পজিশন থেকে নর্থসাউথে চেক কর। ওর মিগ প্রায় অকেজো, খুব বেশি দূরে যেতে পারবে না।
-রায়ান, এম বলছি।
-ইয়েস স্যার।
-তুমি কি বলতে চাইছ সাঈদ আহসান এই অপারেশনের ব্রেইন?
-ইয়েস। জেনারেল ভ্লাদিমভিচ এর বেজ ধ্বংস হয়েছে জেনারেল সহ। মিসাইলগুলো সাঈদের মিগে।
আক্রোশ শোনা গেল এডমিরালের গলায়,
-ড্যাম ইট রায়ান! হাউ কুড ইউ লেট দিস হ্যাপেন? নাউ ইউ আর টেলিং মি হি ইজ ইন পজেশন অফ থ্রি লিটারেল ওয়েপন্স অব মাস ডিস্ট্রাকশন? দ্যাট ম্যান ইজ কন্সিডারড টু বি আ ডব্লিউএমডি হিমসেলফ!
শীতল স্বরে জবাব দিল রায়ান,
-উইথ রেস্পেক্ট স্যার, সো এম আই। আই সাজেস্ট ইউ স্টে আউট অফ মাই ওয়ে। গুডবাই।
লাইন কেটে গেল। ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে রওনা হল রায়ান। সাঈদের সাথে ওর কিছু হিসেব বাকি রয়ে গেছে। সময় হয়েছে হিসেব ব্যালেন্স করার। এগিয়ে চলল রায়ান ঘন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে...

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩০
৯৬ বার পঠিত
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের কাছে প্রথম চিঠি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:২৩

১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪

সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......


ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৮


চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২


গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×