অন্ধকারে হেঁটে আসছে সাবমেশিনধারী গার্ড। কাটাতারের বেড়ার এক কোনায় পৌঁছে অভ্যাসবশত দাঁড়িয়ে পড়ল, কিন্তু টেরও পেল না নিকটবর্তী মৃত্যুর আভাস! অন্ধকারে ভূতের মত এগিয়ে এল একটি মানুষ। হাতটা একবার উঠল নামল তার। পর মূহুর্তে লাশটা ধরে নিঃশব্দে যত্নের সাথে শুইয়ে দিল নরম ঘাসে। মৃত মানুষের সাথে সাধারণত শত্রুতা থাকে না আগন্তুকের। লাশটাকে রেখে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকালো। দ্বিতীয় গার্ড ছুটে এসেছে প্রথম গার্ড ফিরে না আসায়। অন্ধকারে ঝাড়ু দেয়ার মত টর্চের আলো ফেলল। আগন্তুকের ঝোপ পেরিয়ে প্রথম গার্ডের লাশের উপর থামল আলো। এক মুহুর্ত লাশটা দেখে নিয়ে ওয়াকিটকি তুলে কম্পাউন্ডের ভেতরে যোগাযোগ করে গার্ড পাঠাতে বলল। ১০ জন গার্ড বেরিয়ে এল। পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে নিয়মমাফিক এরিয়াটা রেইড শুরু করল তারা। যদিও আগন্তুক টের পেল সে ধরা পড়তে যাচ্ছে তবুও সে উদ্দিগ্ন হল না। রহস্যময় হাসি হাসল সে। গার্ডেরা দুই মিনিটের মধ্যেই ঝোপ থেকে টেনে বের করে আনল তাকে। ছোট একটি ছুড়ি ছাড়া আর কিছুই তার কাছ থেকে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হল অন্যেরা। প্রশ্ন করেও কোন জবাব পেল না। তাই তাকে ইনচার্জের কাছে নিয়ে চলল। ওদিকে কম্পাউন্ডের ভিতরে সিকিউরিটি মনিটরিং রুমে ইনচার্জ রেমিল রিভলবিং চেয়ারে আধশোয়া হয়ে ছাদের দিকে চেয়ে আছে। আর একজন ডিউটি অফিসার বসে বসে কফি খাচ্ছে। তাদের পিছনে পিঠ ফিরিয়ে বিরতিহীনভাবে সিকিউরিটি ক্যামেরার আউটপুট দেখছে আনিস। বাহিরের দূর কোনের এক জায়গায় গার্ডদের দেখল একজনকে নিয়ে আসছে। ব্যাপারটা ইনচার্জ এবং ডিউটি অফিসারকে জানানর জন্য মুখ খুলেছিল সে। কিন্তু ওর হা করা মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হল না অন্য একটি ক্যামেরার আউটপুট দেখে। বিদ্যুত গতিতে একটা মানুষকে সরে যেতে দেখল। চোখের পলকে ঘটল ব্যপারটা কিন্তু আনিসের তীক্ষ্ন চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না। চেঁচিয়ে উঠল সে অন্যদের উদ্দেশ্যে,
-স্যার! সিকিউরিটি ব্রীচ! মেইন কম্পাউন্ডে!
আকস্মিক চিত্কারে ডিউটি অফিসারের হাতের মগ থেকে কফি ছিটকে পড়ে ইউনিফর্ম ভিজিয়ে দিল। কটমট করে চাইল সে অপারেটরের দিকে। তবে ইনচার্জের কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। আধশোয়া থেকেই বলল,
-চোখে পানি দিয়ে এসো আনিস। কেউ মেইন কম্পাউন্ডে ঢুকা তো দূরে থাক, বাহিরের গার্ডদেরই এড়াতে পারবে না। অনেক্ষণ ধরে বসে থেকে ঝিমাচ্ছ। চোখেমুখে পানি দিয়ে এসে আবার বস।
বিরক্ত হল আনিস। আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভার্সিটি থেকে পাস করার পরও সামান্য একটা ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন। সামান্য সার্ভেইলেন্স এক্সপার্টের কাজ করতে হচ্ছে যেখানে তার ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। রেমিলের কথায় ভীষণ বিরক্ত হলেও প্রকাশ না করে বলল,
-আপনার বিশ্বাস না হলে রেকর্ড দেখুন স্যার।
আনিসকে রাগানোর জন্য
আড়মোড়া ভেঙে অলসভাবে সময় নিয়ে হেঁটে আসল ইনচার্জ। আনিস রেকর্ড দেখানোর জন্য প্রিভিয়াস রেকর্ড প্লে করতে গেল। কিন্তু কোন ভিডিও ওপেন হল না। অবাক হয়ে ড্রাইভে ঢুকে দেখতে গেল। এমন সময় ভিডিওটি প্লে হল। কিন্তু স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেল সেখানে। ইনচার্জ বিরক্ত হয়ে আনিসকে একটা রূঢ় টিটকারি দিল। কিন্তু আনিস তখন এতটাই অবাক এবং ভাবনায় মশগুল যে সে কিছুই শুনতে পেল না। ডিউটি অফিসার এবং ইনচার্জ যার যার সিটে ফিরে গেল। হঠাত্ কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল কিছু ব্যাটলড্রেস পড়া লোক। কাউকে টুঁ শব্দ করার সুযোগ দিল না। ইনচার্জ দ্রুত হাত বাড়াল এলার্মের বোতামের দিকে কিন্তু একজন সৈন্যের গুলিতে প্রাণটা হারাল। ডিউটি অফিসার এই দৃশ্য দেখে পিছনের জানালা দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লাফ দিল কিন্তু একটা গুলি
তাকেও দুনিয়া থেকে বিদায় করল।
আনিস ভয়ে নড়তেও ভুলে গেল। দু'জন কমান্ডো এগিয়ে এসে ওকে দু'হাতে প্রায় চ্যাংদোলা করে নিয়ে ফ্যাসিলিটি থেকে বের হতে ছুটল। বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে আসতে যেতেই হঠাত্ দূর থেকে বেশ কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ডকে আসতে দেখা গেল। তাদের সাথে একজন বন্দিও রয়েছে। ফ্যাসিলিটির ভেতরে তেমন কোন গার্ড কেন ছিল না সেটা বোঝা গেল।
গার্ডদের দেখে দ্রুত পিছিয়ে এসে বিল্ডিঙের এক কোনে লুকাল ওরা। একজন কমান্ডো আনিসের মুখ চেপে ধরে রাখল। দরজা দিয়ে করিডোরে প্রবেশ করতেই হঠাৎ ধূসর ধোঁয়া ছেয়ে ফেলল চারিদিক। ধোঁয়ার ভেতর ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু ট্রেইন্ড কমান্ডোরা একচুল নড়ল না। হঠাৎ একটা সাবমেশিন গর্জে উঠল। করিডোরের এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করল বুলেট। এরপর চাপা একটা চিৎকার। তারপর সব চুপ।
দূরীভূত হতে থাকা ধোঁয়ার ভেতর থেকে একটা ছায়া বেরিয়ে এল। করিডোরের এ কনে পৌঁছতেই চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল তাকে কমান্ডোরা। হঠাৎ আগন্তুকের চেহারা দেখে অস্ফুটে কথা বলে উঠল কমান্ডো লিডার,
-ওয়েল ওয়েল ওয়েল! দেখ আমাদের ফাঁদে কে আটকেছেন! ওয়ান এন্ড অনলি মেজর জেসন স্ট্যালিওন! তা আপনাকে তো ফাঁদে আশা করিনি মেজর সাহেব!
চারদিকে হালকা বিদ্রুপের দৃষ্টিতে চেয়ে পেছনের লাশগুলোকে ইঙ্গিত করে রসিকতা করল জেসন,
-হাহ! কি ফাঁদ পাতলেন? মাস তো সব হাঙ্গরে খেয়ে ফেলল।
রসিকতাটা নীরবে হজম করল লিডার। জেসন আবার বলল,
-তবে যাই বলুন! আপনাকে কিন্তু এ জঙ্গলে আশা করিনি মেজর আরমান। ব্যাপার কি হে?
-বলছি হে! উপর থেকে অর্ডার এসেছে। এই আনিস মশাইকে দেশে নিয়ে এর সিকিউরিটি কনফার্ম করতে হবে। কমপ্লিকেটেড কেস। তা আপনার কি খবর? হঠাৎ? আমার মুখের গ্রাস কাড়তে আসেননি তো?
মৃদু হেসে জবাব দিল জেসন,
-তা এক প্রকার ঠিকই বলেছেন। আমিও একই কাজেই এসেছি। তবে আমার উপর অর্ডার আছে ওকে আমাদের নিজস্ব প্রটেকশনে নিয়ে নিরুদ্দেশ করে দিতে হবে।
-এ কাজে আপনাদের কি প্রয়োজন? আমরা তো ঘাস খাইনা! এসব কাজে আমাদের অনেক এক্সপার্ট আছে!
-দেখুন আরমান সাহেব, আমি অস্বীকার করছি না যে আপনাদের এসব কাজে অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আমার উপর অর্ডার আছে একে নিয়ে যাওয়ার, যে কোন মুল্যে।
শেষ শব্দগুলো থেমেথেমে বলল জেসন।
রাগের হালকা ছাপ ফুটে উঠল আরমানের চোখে। চাপা ক্রোধের সাথে বলল,
-আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন মেজর? আপনার হয়ত জানা নেই যে আমাদের চেয়ে ট্রেইন্ড কমান্ডো দেশের আর কোথাও নেই! আর আপনি আমাদের টেক্কা দিয়ে একে নিয়ে যেতে চাইছেন?
-টেক ইট ইজি! আমি জাস্ট আমার অর্ডারের কথা বললাম। ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, এখানে একা যেহেতু ঢুকেছিই তার মানে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথটাও পরিস্কার করতে জানা আছে আমার।
দুই মেজরের বাকযুদ্ধে পুরো বিভ্রান্ত বোধ করছে কমান্ডোরা, সেই সাথে আনিসও। হঠাৎ আনিস কথা বলে উঠল,
-ওয়েট এ মিনিট! আপনারা কারা? এভাবে আমাকে নিয়ে লুফোলুফি করছেন কেন? আমাকে কি টেনিস বল পেয়েছেন? কারা আপনারা?
দুই মেজর এক সাথে হুংকার ছাড়ল,
-শাট আপ!
সিঁটিয়ে গেল আনিস। আরমানের দিকে ফিরল জেসন,
-মেজর, আমার মনে হয়না আমাদের মারামারি করার কোন কারণ আছে। আপনি আমাকে আনিস সাহেবকে নিতে দেবেন কি না?
-অবশ্যই না। আমরা ওনাকে দেশে নিয়ে আমাদের দায়িত্বে রাখার অর্ডার পেয়েছি। সেহানে কোথাও আপনার হাতে প্যাকেজ তুলে দেওয়ার কথা লেখা নেই। সুতরাং ওকে আপনি পাচ্ছেন না।
-ওকে, ফাইন!
ঝট করে সামনে এগিয়ে মেজরকে ধাক্কা দিয়ে তার পিছনের কমান্ডোর গায়ে ফেলে দিল। আরমান আর তার পেছনের কমান্ডো ভূপাতিত হওয়ার আগেই টান দিয়ে আনিসকে সামনে এনে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করল জেসন। এরপর ছোট একটা স্মোক গ্রেনেড ছুঁড়ে দিল কমান্ডোদের দিকে। আনিসকে টানতে টানতে বিল্ডিঙের বাহিরে নিয়ে গেল। পিছনের কমান্ডোদের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল জেসন। দ্রুত কার পারকিং থেকে একটা সেডান গাড়িতে উঠল ওরা। তার ছিঁড়ে গাড়ি স্টার্ট দিল জেসন। কমান্ডোরা দুজন গাড়ির চাকা লক্ষ করে গুলি করল। কিন্তু গাড়ি চলতে শুরু করায় মিস করল। ঝড়ের গতিতে ফ্যাসিলিটির কাঁটাতারের বেড়ার উপর চড়াও হল সেডান। বেড়া মাটিতে মিশিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে ছুটে চলল। কিছুক্ষণ পর পিছনের একটা জীপে কমান্ডোদের পয়েন্ট করল আনিস। বেচারা ভয়ে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাক আপের জন্য রায়ানকে কল করল জেসন।
-স্যার। আমি আনিসকে নিয়ে স্যান ফ্রান্সিসকোর পথে।
রায়ানের গম্ভীর গলা ভেসে এল,
-প্ল্যান চেঞ্জ হয়েছে জেসন।
-কিরকম চেঞ্জ স্যার? কোথায় যেতে হবে?
-সেরকম কিছু না। তোমার সাথে মেজর আরমানের দেখা হয়েছে?
-জি স্যার। বর্তমানে আমাকে আরমান ও তার টিম জিপ নিয়ে তাড়া করছে।
-আনিসকে ওদের হাতে ছেড়ে দাও।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল জেসন।
-কিন্তু কেন স্যার?
-জেনারেলের নির্দেশ। আমাদেরকে ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করেছেন তিনি।
ভিউ মিররে জীপটাকে কাছিয়ে আসতে দেখছে জেসন।
-আপনিও কি তাই চান স্যার?
-ব্যাপারটা আমাদের হাতে নেই জেসন। কেন জানি না, তবে এখন কিছু করার নেই। আমি পরে আনিসের সাথে যোগাযোগ করব। তুমি এখন ওকে আরমানের হাতে ছেড়ে দাও।
-ওকে স্যার।
আনিসকে উদ্দেশ্য করে বলল জেসন,
-দেখা যাচ্ছে ওদের লাঞ্চ প্লেটেই যাচ্ছেন আপনি। চিন্তা করবেন না। মি. রায়ান আপনার সাথে পরে দেখা করবে।
অবাক হয়ে বলল আনিস,
-আপনি সৌরভ ভাইয়ের লোক?
-হুম।
-কিন্তু আমি তো সৌরভ ভাইয়ের কাছেই যেতে চেয়েছিলাম।
-আপাতত সেটা করা যাচ্ছে না। আপনাকে মেজর আরমান দেশে তাঁদের হাই সিকিউরিটিতে নিয়ে যাচ্ছে। তবে যা বললাম, মি. রায়ান আপনার সাথে পরে দেখা করবে। চিন্তা করবেন না। যান।
গাড়ি থেকে নেমে গেল আনিস। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করল জেসন। পিছনে আনিসকে তুলে নিল আরমানের জীপ। মনেমনে আরমানের বিদ্রূপাত্মক হাসিটা কল্পনা করে বলে উঠল জেসন,
-নেক্সট টাইম মেজর, নেক্সট টাইম।
৩ বছর পর, এইচকিউ, ব্ল্যাক ফাইটারস।
নিজের চেম্বারে বসে ফাইলওয়ার্ক করছিল জেসন। এমন সময় দরজায় নক করে ঢুকল জিসান। জেসনকে বলল,
-বস আপনাকে চেম্বারে ডেকেছেন, আর্জেন্ট।
-তুমি যাও। আসছি।
ফাইলগুলো দ্রুত সরিয়ে রেখে বেরিয়ে এল জেসন। সোজা গিয়ে হাজির হল রায়ানের চেম্বারের দরজায়। নক করতেই আওয়াজ ভেসে এল,
-কাম ইন।
মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে না সরিয়ে বলল রায়ান,
-ও, মেজর। আসো, বস।
জেসন বসতেই ওর দিকে ল্যাপটপ এগিয়ে দিল রায়ান। উইন্ডোতে একটা মেইল ওপেন করা। পড়ল জেসন,
প্রিয় সৌরভ ভাই,
যখন আপনি এই মেইলটি পড়ছেন তখন আমি বেঁচে নেই, অথবা এর থেকেও খারাপ কিছু ঘটেছে। এই মেসেজটা আমার প্রোগ্রাম করে রাখা একটি কম্পিউটার থেকে পাঠানো হয়েছে। কেউ এটা জোর করে খুলতে চাইলেই এই মেসেজ পাওয়ার কথা আপনার। যাই হোক, সম্প্রতি আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ, দামী, ভয়াবহ একটি কাজে জড়িয়ে পড়েছিলাম। এখানে সব বলতে চাচ্ছি না। শুধু জেনে নেবেন যে করে হোক আমার কম্পিউটারটি অথবা তার হার্ডডিস্কটি সাতদিনের মধ্যে আপনাদের উদ্ধার করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাল থাকবেন।
আপনার গুণগ্রাহী
আনিসুল আহমেদ।
মেইলটা পড়া শেষ করে প্রশ্ন করল জেসন,
-এটা কোন আনিস? সেই যে আমেরিকান আর্মির সিক্রেট ফ্যাসিলিটিতে উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম সেই আনিস?
-হুম।
-তারমানে স্পেশাল ফোর্সের সিকিউরিটির মাঝে ঢুকে আনিসকে মেরে রেখে গেছে?
-আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে আনিস নিরুদ্দেশ হয়েছে। আর এই মেইলটা পেয়েছি আমি সকালে।
-এখন স্যার আমাদের কি করা উচিত? আসলে কে এই আনিস?
-আনিস একজন ভয়ঙ্কর রকমের জিনিয়াস। বাংলাদেশী। স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় এসে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পায় সেই ভার্সিটিতেই। কাজের ফাঁকেফাঁকে বিভিন্ন ভাইরাস নিয়ে রিসার্চ করা ছিল ওর শখ। হঠাৎ একদিন ব্যাপারটা লক্ষ করে ওর এক কলিগ। ঐ কলিগ ছিল সি.আই.এর আন্ডারকভার। নতুন ট্যালেন্টেড স্টুডেন্টের লোকেট করাই ছিল এর কাজ। ব্যাপারটা আগাগোঁড়া চিন্তা করে সে আনিসকে উপরমহলের সাহায্যে কলকাঠি নাড়িয়ে ওদের এক রিসার্চ ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে প্রায় বন্দি করে রাখে। সি.আই.এ আনিসকে চাপ দিতে থাকে তাঁদের হয়ে বিভিন্ন ভাইরাস তৈরির কাজ করতে। কিন্তু ব্যাপারটির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আনিস কাজটি করতে রাজি হয়না। তখন আনিসকে কিছুদিন সময় দেওয়া হয় ভেবে দেখার জন্য। এরপরও রাজি নাহলে কি করা হবে তা আনিসের কল্পনা করতে কষ্ট হয় না। ওর ভাই একসময় আমাদের হয়ে কাজ করত। ছেলেটা একটা অপারেশনে মারা যায়। আনিস ছাড়া আর কেউ ছিল না ওর। আনিসের বয়সও তখন বেশী না। আমার সাধ্যমত তখন থেকে আমি ওর টেককেয়ার শুরু করি। তখন থেকে আমার নাম আর সামান্য পরিচয় জানে ও। বিপদে পরে প্রথমেই তাই আমার কথা মনে পড়ল। কিন্তু আমার কোন ঠিকানায় যোগাযোগ করে আমাকে বিপদে ফেলতে চায়নি। তাই এক ফাঁকে ও সাহায্যের আবেদন পাঠায় বাংলাদেশের দূতাবাসে। ওখানে আমার নাম থাকায় একটা কপি আমাদের অফিসে পাঠিয়ে দেয় দায়িত্তপ্রাপ্ত অফিসার। কিন্তু নিয়ম অনুসারে আরেক কপি স্পেশাল ফোর্সের কাছে পাঠায়। এধরনের কাজে আমাদের নাক গলানো রেওয়াজে পরে না তাই স্পেশাল ফোর্সের পক্ষ থেকে মেজর আরমানকে একটা টীমসহ রেস্কিউ মিশনে পাঠায়। সিস্টেমের দুরবস্থার কারনে আমার কাছে এই খবর পৌঁছতে দেরি হয়। ইতোমধ্যে আমি তোমাকে আনঅফিশিয়ালি ওকে উদ্ধার করতে পাঠাই। এরপরের ঘটনা তুমি জানই। স্পেশাল ফোর্সের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে একটা তিক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপারটা এড়াতে হাই অফিশিয়ালি আমাকে অনেক অনুরধ করে তোমাকে মিশনটা থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ওদের দায়িত্বেই ছিল আনিস। ডিফেন্সের সাইবার স্পেশালিষ্ট টীমের লিডারদের একজন ও। ২৪ঘণ্টা ওর উপর নজর রাখার ব্যাবস্থা ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ ওরা দেখে আনিস গায়েব। কিভাবে কি হল তা এখনও বুঝতে পারছে না কেউ। এই একঘণ্টা আগে আমি এই মেইলটা পেলাম।
সময় নিয়ে কথাগুলো বলে থামল রায়ান।
-তাহলে স্যার এখন আমরা কি করব?
-স্পেশাল ফোর্সের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওরা নিজেদের ভুল নিজেরাই শুধরে নিতে চাইছে, আমাদের এড়িয়ে। কিন্তু আমি আরেকবার ওদের উপর ভরশা করে ঠকতে চাই না। তুমি যাচ্ছ।
-কোথায় স্যার?
-শিকাগো।
-কিন্তু কেন স্যার?
-আনিস দেশে ফেরার পর আমার সাথে নিরাপদে যোগাযোগ রাখার জন্য একটি এনক্রিপ্টার তৈরি করে দেয় আমাকে। আপাতদৃষ্টিতে সাধারন “হাই-হ্যালো” মেইলের ভিতরে ঐ সফটওয়্যারের সাহায্যে মেসেজ পাঠানো যায়। তবে এই মেইল এনক্রিপ্ট করে আমি একটা কম্বিনেশন নাম্বার ছাড়া আর কিছুই পাইনি। নাম্বারটি শিকাগোর একটি ব্যাংকের লকারের কম্বিনেশন। এই ব্যাপারে আমি আর কাউকে ভরশা করতে পারছি না। এই মুহূর্তে আমি নিজেও যেতে পারছি না, তবে তেমন ইমারজেন্সি কিছু হলে আমাকে জানাবে, আমি যেভাবেই হোক হাজির হব। অল ওকে?
-ইয়েস স্যার।
উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে রওনা হল জেসন। পেছন থেকে রায়ান কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও কি ভেবে থেমে গেল। বেরিয়ে গেল জেসন।
নিজের সেক্রেটারিকে শিকাগোর টিকেট কাটতে বলে বাসায় ফিরে এল জেসন। দ্রুত সব গুছিয়ে নিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে এল এয়ারপোর্টে। সেখান থেকে উড়ে পৌঁছে গেল শিকাগো এয়ারপোর্ট।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে চেপে বসে ভাল একটা হোটেলে যেতে বলল জেসন। আর নিজে ভাবতে লাগল পরবর্তী কাজের ধারা নিয়ে। হোটেলে পৌঁছে একটা স্যুইট ভাড়া নিল। স্যুইটে এসে কাপড় ছেড়ে শাওয়ারের পানিতে ভাসিয়ে দিল জার্নির ক্লান্তি। এরপর নরম বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে যাবতীয় কাজ সেরে রেন্ট এ কার থেকে টয়োটা র্যাভ৪ ভাড়া নিল। এরপর শহরের এদিকওদিক ঘুরে পিছনে ফেউ লাগেনি নিশ্চিত হয়ে অক্ষ্যাত সেই পুরনো ব্যাঙ্কে চলে এল। ব্যাংকের রিসেপ্সনিস্টকে লকারে যেতে চায় বলতেই ওকে কিছু প্রশ্নের পর নিয়ে গেল এক লকার রুমে। নির্দিষ্ট লকারটি খুঁজে নিয়ে পাসওয়ার্ড দিতেই খুলে যায় লকার। একটা চিঠি আর একটা মিনি জিপিএস ট্র্যাকিং ট্যাবলেট ছাড়া আর কিছু পেল না। জিনিসগুলো নিয়ে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে উঠল জেসন। প্রথমে চিঠিটা বের করে খুলল। রায়ানের জন্য লেখা আনিসের চিঠি। পড়ল জেসন,
-মেইলে সবকথা কিছু কারনে বলা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মেইলও সেফ ছিল না। তাই এই ব্যাবস্থা করলাম। যাই হোক, আমার সেই হার্ডডিস্কে আমি একটা খুবই সূক্ষ্ম জিপিএস ট্র্যাকার ফিট করে রেখেছি। এই মিনি ট্যাবলেটে সেটার পজিশন বের করা যাবে। আশা করব আপনার এতে সামান্য হলেও উপকার হবে।
চিঠিটা পকেটে রেখে দিল জেসন। এরপর জিপিএস অন করল। মনিটরের এক জায়গায় একটা লাল বাতি জ্বলতে দেখা গেল। কোওরডিনেটস দেখে বুঝতে পারল হার্ডডিস্কটি এই শহরেই আছে। জিপিএস ফলো করে ওটার দিকে রওনা হল জেসন। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হঠাৎ লাল আলোটা জীবিত হয়ে উঠল। নড়তে শুরু হল। ট্যাবলেটে ব্যাপারটা দেখে স্পীড বাড়াল জেসন। লাল আলোটার স্থির হবার কোন নাম নেই। প্রথমে ঠিক জেসনের সোজাসুজি আসছিল। মুভমেন্ট দেখে ওটা যে কোন গাড়ি তা বুঝে নিয়েছে জেসন। হঠাৎ দিক পাল্টে জেসনের বিপরীত দিকে যেতে লাগলো। ঘুরপথে ওটার সামনে যাওয়ার জন্য অন্যপথ ধরল জেসন, কিছুদূর এগোতেই গাড়িটা কিছুক্ষণ আগে ওর ফেলে আসা রাস্তায় চলে গেল। নির্দিষ্ট কোন রুত না ম্যানে এদিকওদিক ঘুরছে সেই সাথে জেসনের ধৈর্যের বাধ ভাঙ্গছে। তখন মাত্র এক ব্লক ধুরে ছিল দুটো গাড়ি। দুটো গাড়ির মাঝখানে বাড়ির সারি। হঠাৎ সামনের একটা গলি দিয়ে সাত করে বেরিয়ে এল সাদা রঙের ফোর্ড গাড়িটা। এক্সিডেন্ট এড়াতে বামে কাটল জেসন। সোজা গিয়ে একটা রোডসাইড রেস্টুরেন্টের বেঞ্চে গুঁতো লাগাল টয়োটা। ততক্ষনে সাদা গাড়ি অন্য আরেকটা রাস্তায় চলে গেছে। ঝাকি খেয়ে জেসনের মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে গালি গিয়ে গাড়ি পিছিয়ে নিয়ে এল। ট্যাবলেটে সাদা গাড়ির অবস্থান দেখে নিয়ে গাড়ি ছুটাল। মৃদু আওয়াজ করে দ্রুত সাড়া দিল টয়োটা। কিছুক্ষণ পর একটা বাঁক নিতেই সাদা গাড়িটিকে দেখা গেল। ততক্ষনে জেসনের উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক হয়ে গেছে সাদা গাড়ির ড্রাইভার। রাস্তার অপর দিক থেকে ছুটে আসল টয়োটার দিকে। জেসনও এগোতে শুরু করল। পালাদিয়ে স্পীড বাড়াচ্ছে দুটো গাড়ি। হঠাৎ এক্সিলারেটর প্রায় মেঝের সাথে চেপে ধরল জেসন। শেষ মুহূর্তে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়িয়ে গেল স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই আবার গাড়ির মুখ হালকা ঘুরিয়ে সাদা গাড়ির পিছন দিকে ভয়ানক একটা গুঁতো মারল সামনের বাম্পার দিয়ে। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে চরকির মতো ঘুরতে লাগলো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে এল জেসন। হাতে শোভা পাচ্ছে ওর ওয়ালথার পিপিকে। গাড়িটার দিকে এগুলো। ড্রাইভারের সিটে নিথর শুয়ে আছে একটা লাশ। মুখ দেখে সায়ানাইডের কাজ বুঝতে অসুবিধা হয় না। হার্ডডিস্কটার খোঁজে তন্ন তন্ন করে খোঁজ করল গাড়ি কিন্তু পেল না। গাড়ির গায়ে লাথি মেরে রাগ কমানর বৃথা চেষ্টা করল। পকেট থেকে ফোন বের করে রায়ানের অফিসে কল করল।
-স্যার, আমি।
-কি খবর?
-একটা ট্র্যাকার লোকেটর পেয়েছিলাম লকারে। হার্ডডিস্কে লাগানো ছিল বিপারটা। ফলো করে একটা গাড়ি পেলাম। থামাতে গেলাম কিন্তু চালক সায়ানাইড খেয়ে নিয়েছে। কোন হার্ডডিস্ক পাইনি।
-কিসের শব্দ ওটা?
-কিসের শব্দ স্যার?
-চুপ কর তো!
জেসন চুপ হয়ে গেল। সাথে সাথেই শুনতে পেল বহুপরিচিত শব্দটা! বোমের টাইমার!
-শিট!
নিজের গাড়ির দিকে ছুটল জেসন। কিছুদূর এগোতেই বোমাটা ফাটল। শক-ওয়েভের ধাক্কায় ছিটকে গিয়ে গাড়ির উপর পড়ল জেসন। সেখানেই পরে রইল জ্ঞান হারিয়ে।
জ্ঞান ফিরল এক হাসপাতালে। চোখ খুলার পর চোখ পড়ল এক সুন্দরী নার্সের উপর। অন্যান্য সময় হলে এর সাথে আলাপ জমানর চেষ্টা করত। কিন্তু এখন প্রথম প্রশ্ন করল,
-আজ কত তারিখ? কয়টা বাজে?
মৃদু হেসে উত্তর দিল নার্স,
-সকাল ১১টা, ৩০জুলাই।
মনে মনে গুনল জেসন। ৩দিন কেটে গেছে একসপ্তাহের। হাতে আর চারদিনও পুরো নেই।
-আমাকে কে এনেছে এখানে?
-একজন মহিলা কার ব্লাস্টের আওয়াজ পেয়ে দেখতে যায়। তারপর আপনাকে এখানে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যায়।
-আমার ক্ষয়ক্ষতি কি হয়েছে?
-প্রায় কিছুই না। আমরাও বেশ অবাক হয়েছি! তবে পিঠে বেশ কিছুটা জায়গা কেটে গিয়েছিল। সেলাই করে দিয়েছি। এখন অবস্থা অনেক ভাল।
-ওকে। আমার জিনিসপত্রগুলো যদি এনে দেন ভাল হয়।
-কেন? কোথাও যাওয়া চলবে না আপনার এখন।
-ব্যাপারটা জরুরি। আমার সময় নষ্ট করা যাবে না। আপনাদের ফর্মালিটিজ কি কি করতে হবে আমাকে বলুন। আর আমাকে আপনারা যেতে না দিলে আমি জোর করে বের হতে বাধ্য হব।
এক মুহূর্ত জেসনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল নার্স। বুঝা চেষ্টা করল সত্যিই এই লোক যা বলছে তা করবে কিনা। শেষে হার মেনে চোখ সরাল। কাগজপত্র আর জেসনের কাপড়চোপড় আনতে রওনা হল।
ঘণ্টাখানেক পর ব্ল্যাক ফাইটারসের শিকাগো ব্রাঞ্চে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের জন্য বরাদ্দ অফিসে বসে আছে জেসন। ঘরে ঢুকল শিকাগো শাখার ডিরেক্টর ওসমান।
-কি ব্যাপার ওসমান সাহেব? কোন খোঁজ পেলেন?
-না স্যার। সব পুরো ক্লিন। কোন লিড নেই স্যার। লা গাড়ির, না লাশের।
-ঠিক আছে। আপনি যান।
ওসমান বেরিয়ে যেতে টেবিলে ধপ করে মাথা ফেলল জেসন। কোন লিড নেই! কিভাবে বের করবে এখন সেই হার্ডডিস্ক! রাগের বসে ধুম করে এক কিল বসাল ডেস্কে। সাথে সাথেই ফোনটা বেজে উঠল।
-হ্যালো স্যার।
-কি খবর তোমার? কোন অগ্রগতি?
-না স্যার। সব কিছু পরিস্কার করা। কোন লিড পাইনি। আমার মনে হয় এই কেসে আর এগোন যাবে না স্যার।
-এতো সহজে ভেঙ্গে পড়া আমি তোমাকে শিখিয়েছি বলে তো মনে পরছে না।
মনে মনে রায়ানের গুষ্টি উদ্ধারে নেমে পড়ল জেসন, কিন্তু মুখে বলল,
-কিন্তু স্যার আর কিভাবে এগোন সম্ভব?
-ওয়েল। আমার হাতে একটা লিড আছে এখন। শক্ত লিড।
সচেতন হল জেসন। নড়েচড়ে বসল,
-কি লিড স্যার? কিভাবে পেলেন?
-ওয়েল, সেজন্য তোমার আনিসকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। ও ঐ হাড্ডিতে কি যেন করেছে যার কারনে কিভাবে কিভাবে ওয়েবক্যাম ব্যাবহার করে একটা ছবি তলা হয়েছে হ্যাকারের এবং সেই ছবি আমার কাছে মেইলে এসেছে একটু আগে। মেইলে আনিস জানিয়েছে হ্যাকার সাহেব হার্ডডিস্ক ধরার সাথে সাথে এই ছবিটা পাঠানো হয়েছে এবং দুনিয়ার সবচেয়ে টাফ হ্যাকারের পক্ষে এই হার্ডডিস্কের সিকিউরিটি ব্রেক করতে জাস্ট ৪ দিন লাগবে। সো আমাদের যা করার দ্রুত করতে হবে। তোমাকে এমি ছবিটা ইতোমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর একটা কথা আবারও মনে করিয়ে দেই,“সবসময়ই তোমার হাতে একটা না একটা পথ থাকবেই।।”
লাইন কেটে গেল।
ওসমানকে ডেকে ওর হাতে ছবিটা ধরিয়ে দিল জেসন।
-একে চাই আমার। ধরে বেঁধে আনতে হবে না। শুধু একে লোকেট করে আমাকে জানালেই হবে।
ওসমান বেড়িয়ে যেতেই ৭তলার টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টে চলে এল জেসন। এখানকার ডিপার্টমেন্ট হেড হল মেরিয়াস স্টুয়ার্ড। খুবই মজার লোক। হেন্স অব হিউমার অদ্ভুত। জেসনকে দেখে এগিয়ে এল,
-আরেহ! বিনা মেঘেই জল দেখছি। তোমাকেই দরকার ছিল।
ঘাবড়ে গেল জেসন! ড. স্টুয়ার্ডের দরকার মানেই কোন অসমাপ্ত/ঝুঁকিপূর্ণ টেক টেস্ট করা। সবাই এই ভয়ে তার ধারেকাছে তেমন ঘেঁষতে চায়না। নিজেরা টিকেট কেটে বাছাই করে কে স্টুয়ার্ডের ডাকে সাড়া দেবে। জেসনকে পাকড়াও করতে দেখে সেদিনের লটারি বিজয়ী দুর্ভাগ্যবান অ্যাসিস্ট্যান্ট হাফ ছেড়ে বাঁচল, কিন্তু ওর পরবর্তী কথা শুনে সেই স্বস্তির হাসি মুছে গেল তার।
-নিশ্চয়ই। তবে সেসব পরে হবে। আগে আমার গাড়ির কি অবস্থা সেটা জানাবে?
-ও। নিশ্চয়ই। আসলে তোমার চেয়ে তোমার গাড়ির ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। তাই কিছুই করতে হয়নি তেমন। কিছু গোপন জায়গা বানিয়ে অস্ত্র রেখে দিয়েছি আর ট্র্যাকার বসিয়েছি।
-ওকে। তাতেই চলবে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল ওর। রিসিভ করতে অপর প্রান্ত থেকে ওসমানের গলা ভেসে এল।
-স্যার, আমি।
-হ্যা, বল। ওকে পেয়েছ?
-জি স্যার। ডাউনটাউনের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে মাত্র। আমি বাইরেই আছি।
-ঠিক আছে। তুমি থাকো। আমি আসছি।
নিচ থেকে টয়োটাটা নিয়ে সোজা ডাউনটাউনে নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের কাছে চলে এল জেসন। রেস্টুরেন্টের অপরপাশের একটা মলের পারকিং লটে গাড়ি ঢুকিয়ে বসে রইল জেসন। ফোন করে ওসমানকে চলে যেতে বলল। কিছুক্ষণ পর লাঞ্চ শেষ করে বেড়িয়ে এল মেয়েটি।
হেঁটে রওনা হল। গাড়ি লক করে বেড়িয়ে এল জেসন। এদিকওদিক ঘোরার পর হঠাৎ জায়গাটাকে পরিচিত লাগলো জেসনের কাছে। মেয়েটা একটা বিল্ডিঙের পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে যেতেই ব্যাপারটা আর বুঝতে অসুবিধা হল না জেসনের। বিল্ডিঙটা আর কিছু নয়, বরং সিআইএ ব্রাঞ্চ অফিস, শিকাগো।
অফিসে ফিরে আসল জেসন। ফোন করল সাইবার ডিপার্টমেন্টের হেড রবিনের কাছে।
-রবিন, আমি জেস।
-সেটা তো স্যার বুঝতেই পারছি। এরপর বল।
-শোন, আমার একটা একটা কাজ করে দিতে হবে।
-সেটাও স্যার বুঝতে পারছি। নাহলে তো এমনি এমনি ফোন করে বন্ধুর খোঁজ নেওয়া আপনার পোষায় না।
-ছ্যাঁচড়ামো রাখ! যা বলছি কর।
-ও। কি করতে বলছিস?
-ইয়ে, মানে সিআইএ-এর সাইবার নেটওয়ার্কের প্রোটোকল কেমন টাফ?
-আমার জানামতে এখনও ভার্জিন। কেউ ব্রেক করতে পারেনি।
-তোর দ্বারা কততুকু এগোনো পসিবল?
-কিছুই না। তবে ওদের ব্রাঞ্চ অফিসের লোকাল নেটওয়ার্কে ট্রাই করে দেখতে পারি।
-ওকে। আমি চাই তুই ওদেরকে নতুন একজন এজেন্টের ডাটা এন্ট্রি করিয়ে দিস।
-হুম। তা করা যেতে পারে। সেই এজেন্ট এক ঘণ্টা পরে জয়েন করবে। তাহলে কাজটা তুই এখনই করে ফেল?
-হবে না।
-হবে না মানে কি?
-হবে না মানে হবে না। কাজ সারতে এক হপ্তা লাগবে।
-দেখ তুই আমাকে গাধা বানাচ্ছিস!
-তোর তা মনে হলে তাই!
-কি চাস?
-নিউ মডেলের প্রসেসরের একটা ল্যাপটপ এসেছে এইচপির...
-ডান। পেয়ে যাবি। এখন বল কতক্ষন লাগবে?
-১ দিন।
-আর কি লাগবে?
-আর কিছু লাগবে না দোস্ত। আমি সত্যিই দুঃখিত কিন্তু আগামীকাল সকালের আগে আমি কাজটা শেষ করতে পারব না। তোর হয়ত জানা নেই যে শিকাগো ব্রাঞ্চেই সিআইএ-র সবচেয়ে ভাল সাইবার ফ্যাসিলিটিজ আছে। আমি যে কাজটা এতো দ্রুত করতে পারব তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এখন তুই গিয়ে বোমা মেরে ঢুকতে চাইলে ঢুক...
-ঠিক আছে। কাজ হলে আমাকে কল দিস।
আরও কিছু দাবী করে বসার আগেই খট করে লাইন কেটে দিল জেসন।
পরদিন। ডেডলাইনের বাকি ৭২ ঘণ্টা।
সিআইএ, শিকাগো ব্রাঞ্চ।
সদ্য আগত এজেন্টের আইডি নিয়ে চেক করে দেখল অফিসার। এরপর আইডি ফেরত দিয়ে স্বাগতম জানাল,
-ওয়েলকাম টু শিকাগো, এজেন্ট মরিসন। কন্টাক্ট উইথ এজেন্ট হ্যারল। হি ইজ ইউর পার্টনার।
-থ্যাংকস।
মৃদু হেসে নড করে হ্যারলের খোঁজে ঘুরতে শুরু করল জেসন। হঠাৎ পেছন থেকে একটা পরিচিত গলার আওয়াজ ভেসে এল,
-এজেন্ট মরিসন?
ধীরে ধীরে ঘুরল জেসন,
-হ্যালো এজেন্ট হ্যারল। দুনিয়াটা সত্যিই গোল।
-তাইতো দেখছি।
জেসনের বাড়ান হাতটা ঝাঁকিয়ে দিল এজেন্ট হ্যারল-রূপী মেজর আরমান।
কিছুক্ষণ পর দুজনে বেড়িয়ে এল বাহিরে।
-কার গাড়ি নিচ্ছি আমরা?
আরমানের প্রশ্ন।
-আমারটাতেই উঠি, চলুন।
টয়োটায় উঠে বসল দুই মেজর। কিছুক্ষণ চুপচাপ ড্রাইভ করল জেসন। এরপর প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
-তা হঠাৎ স্পেশাল ফোর্স ছেড়ে সিআইএ এত পছন্দ করলেন কবে থেকে?
-বেশী না। কালই ঢুকলাম।
-ও। উদ্দেশ্য?
-উদ্দেশতেমন মহৎ কিছু না। ভুল সংশোধন আরকি!
-ভুল করেছেন সেটা তাহলে শিকার করছেন?
-যা সত্যি সেটা স্বীকার করতে আমার বাধে না।
-ভাল অভ্যাস। তা এবার একটু ঝেড়ে কাশবেন?
কথা চলতে লাগল, সেই সাথে গাড়ি।
ফোনটা দুবার বেজে উঠতে তুলে নিল রায়ান,
-কি ব্যাপার?
-গরম খবর স্যার! আনিস বেঁচে আছে?
-সিউর জান?
-জি স্যার।
গড়গড় করে মেজর আরমানের সাথে দেখা হওয়া এবং তারপরের ঘটনা জানাল জেসন,
-মেজর আরমান আনিসের গায়েব হওয়ার পেছনে সিআইএ-এর হাত আছে তার ট্রেস পায়। এরপর মেজর ছদ্মবেশে খোঁজ খবর নিতেনিতে শিকাগোতে এসে হাজির হয়েছে। কাল প্রথমেই আমাদের এক জায়গায় দুজন এজেন্টকে রিলিফ দিতে পাঠানো হয়েছিলো। তাদের কাছ থেকে জানা গেল ওখানে এক বাড়িতে একজন বাংলাদেশীকে আটকে রাখার কথা। আরও জানাগেছে জায়গাটি ডেলটা ফোর্সের কিছু সদস্যও পাহারা দিচ্ছে। দুর্ভেদ্যই মনে হচ্ছে জায়গাটা। এছাড়া আসেপাশে ঘিরে আছে সিআইএ এজেন্ট।
-ও। হার্ডডিস্কের কি হল?
-সেটা এদের ব্রাঞ্চ অফিসেই আছে। জাস্ট তুলে নেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু সমস্যা হল এখন আমাদের দুটো কাজ এক সাথে করতে হবে, তা নাহলে এক জায়গায় হামলা হলে অপর জায়গায় দুর্গ তৈরি হয়ে যাবে। আমি আর আরমান সাহেব হাড্ডি সামলাতে পারব আশা রাখি। আর আপনি যদি...
-সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে। খোদা হাফেজ।
সন্ধ্যায়, এয়ারপোর্টের বাহিরের একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছে জেসন, আরমান। কাস্টমসের ঝামেলা শেষে সোজা এসে ওদের সিটে বসল রায়ান। জেসন, আরমান দাঁড়িয়ে যাওয়ায় বসতে ইঙ্গিত করল। নির্দিষ্ট এরিয়ার ম্যাপ আর ছবি দেখিয়ে সিকিউরিটি সম্পর্কে ওকে ব্রিফ করল জেসন, মাঝে মাঝে সাহায্য করল আরমান। কথা শেষ হতে বলল রায়ান,
-ঢুকার কোন পথ রাখেনি দেখা যাচ্ছে।
আপত্তি জানাল আরমান,
-কিন্তু স্যার, আমাদের সোলজাররা এই বাঁধা সহজেই ভাঙতে পারবে।
এক হাত তুলে ওকে থামাল রায়ান। বলল,
-তোমাদের কমান্ডোদের ব্যাপারে আমাকে ব্রিফ না করলেও চলবে। তোমরা সেরা ট্রেনিং প্রাপ্ত হলেও তোমাদেরকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে ডেলটা ফোর্সের ট্রেইনার আর এক্স ডেলটাদের দিয়ে। তাহলে ওদের নিজেদের লোকের বিরুদ্ধে তোমাদের জিতার চান্স কতটুকু তা না বললেও চলে।
খুক করে হেসে ফেলল জেসন। কিন্তু রায়ানের চোখে আগুন দেখে চুপ হয়ে গেল। রায়ান আবার বলল,
-তাছাড়া ওদেরকে এমনভাবে অ্যাটাক করতে হবে যে ঘটনা শেষ হবার আগে ওরা কিছুই করতে পারবে না। সরাসরি অ্যাটাকে ওরা অনেক চান্স পাবে। তাছাড়া টার্গেটের কাছে পৌছতে এতো বাঁধা পাব আমরা ততক্ষনে ওরা রিইনফোর্সমেন্ট পেয়ে যাবে। এছাড়াও এরই মাঝে ওরা বুঝে যাবে ওদের মাঝে ঘাপলা আছে। তখন তুমি আর জেসন হার্ডডিস্কের উদ্ধার কাজ চালাতে পারবে না। তাই আমাদের কাজটা খুব কৌশলে করতে হবে।
-সে আর বলতে! তা আপনার নিশ্চয়ই কোন প্ল্যান আছে। তাই নয় কি?
মেঝে থেকে ব্রিফকেস তুলল রায়ান। সেখান থেকে একটা ম্যাপ বের করে টেবিলে বিছাল। ম্যাপের একটা লাইন দেখিয়ে বলল,
-এটা তোমাদের সেই এলাকার ম্যাপ। একটু ডিটেইল দেওয়া আছে এখানে। তাই আসার পথে কিছু কাজ করে আনলাম। এই দাগটা হচ্ছে ওখানকার সুয়ারেজ লাইন। লাকিলি ঠিক ঐ বাড়ির নিচ দিয়েই গেছে এটা। অন্যান্য যেকোনো একটা সুয়ারেজে ঢুকেই আমরা ঐ লাইনে চলে যেতে পারব।
-বাহ! বেশ ভাল।
-আমরা ঠিক ১০টায় কাজটা সারব। আরমান, তোমার লোক পাচ্ছি কয়জন?
-৩জন স্যার।
-ফাইন। তুমি আর জেসন তোমাদের কাজ সেরে ঠিক ১২টায় মিট করবে আমাকে এই জায়গায়।
ম্যাপের আরেক জায়গায় দেখাল রায়ান। এরপর বলল,
-এবার চল, তোমার কমান্ডোদের সাথে দেখা করে নিই।
-চলুন।
চলতে চলতে হঠাৎ থেমে জেসনকে বলল রায়ান,
-কাজটাতে যাওয়ার আগে একবার স্টুয়ার্ডের সাথে দেখা করে যেও। তোমাদের জন্য কিছু জিনিস রেডি রেখেছেন উনি।
-ওকে বস।
নড করল জেসন।
রাত ১০টা বাজতে ৫মিনিট।
সুয়ারেজ লাইনে বসে মাছি মারছে রায়ান আর ৩ কমান্ডো। ঘড়িতে দশটা বাজতেই উঠে দাঁড়াল সবাই। ছাদের চৌকোণ একটা জায়গায় মার্ক করে সিফোর এক্সপ্লোসিভ ফিট করা হল। জায়গাটা ঠিক এলিভেটর শ্যাফটের নিচে হওয়ায় আওয়াজটা একেকটা ফ্লোরে ছড়িয়ে গেল। ফলে ত্রীব্যতা অনেক কমে যায়। মৃদু একটা শব্দই শুধু শুনতে পাবে গার্ডেরা। কোন কাঁপুনি অনুভব করতে পারবে না। বিস্ফোরণে সিমেন্টের স্লাভের মতো অংশটা খসে পড়তেই উপরে উঠে গেল ৪জন। ছোট লিফটটাকে চারতলায় দেখা গেল। একজন কমান্ডোকে শ্যাফটের ভিতর থাকতে বলে মেইনটেনেন্স ল্যাডার ব্যাবহার করে দোতালা, তিনতলায় দুজন কমান্ডোকে পাঠাল রায়ান। নিজে চলল চারতলায়। লিফটের উপরের হ্যাপ দিয়ে ঢুকে দরজা খুলল রায়ান। সাবধানে চারতলায় পা রাখল। থার্মাল গগলসের ইমেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে শত্রুপক্ষ আর আনিসকে খুঁজতে লাগলো। কোথাও কাউকে না পেয়ে তিনতলায় যাচ্ছিল রায়ান এমন সময় বাথরুমের দরজা খুলে গেল। একজন সিআইএ এজেন্ট বেরিয়ে এল। রায়ানকে দেখে চিৎকার করতে হা করল। কিন্তু দ্রুত রায়ান একটা থ্রোইং নাইফ ওর মুখে ছুঁড়ে মারল। নিঃশব্দে ঢলে পড়ল এজেন্ট। সিঁড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় নেমে এল রায়ান। শেষ ধাপে পাদেওয়ার আগেই রেইলিঙ্গের ফাঁক দিয়ে একটা পা এসে ওকে ল্যাং মেরে ফেলে দিল। মাটিতে পরেই এক গরান দিয়ে সরে উঠে দাঁড়াল রায়ান। যে জায়গাতে ও পরেছিল সেখানে হামলাকারীর ভয়ঙ্কর লাথিতা পড়ল। সামলে নিয়ে আরেকটা কিক ছুরল ওর উদ্দেশে হামলাকারী। পা-টা ধরে ফেলল রায়ান। কিন্তু এক মোচরে ছাড়িয়ে নিল হামলাকারী। এরপর পিছিয়ে গেল। রায়ানকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগলো সে। ওর হাঁটার মধ্যে কোন প্যাটার্ন পেল না রায়ান। তাই কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ হামলাকারী প্রচণ্ড এক ঘুসি ছুরল রায়ানের মাথা সই করে। ওটা লাগলে এই ফাইটের ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেল রায়ান। বাম হাতে প্রতিপক্ষের হাতটা ধরে ফেলল। হাত ধরতেই পা দিয়ে কিক মারতে গেল লোকটা। পিছলে লোকটার পিছনে গিয়ে হাত হাত ধরে টান দিল রায়ান। শূন্যে তুলে একপাক ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে দিল। মাথা দেয়ালের সাথে বাড়ি খেতেই জ্ঞান হারাল সে। ঘুরে ভেতরে ঢুকার জন্য এগুলো রায়ান কিন্তু আরেক লোক হাজির হল দরজায়। বলা বাহুল্য রায়ানের দিকে তাক করে রাখা রিভলভারে চেপে বসছে তার আঙ্গুল। গুলির শব্দ হল একটা। লোকটার পিছনে পিস্তল হাতে একজন কমান্ডোকে দেখা গেল। রায়ান সামলে উঠতেই সে জানাল,
-টার্গেট লোকেটেড।
এমনসময় দোতালার কমান্ডোও চলে এল। কমান্ডো দুজনকে নিচতলা সিকিউর করতে পাঠিয়ে দিল রায়ান। বেডরুমে শুয়ে আছে জ্ঞানহীন আনিস। পাঁচমিনিটের বেশী সময় নষ্ট না করে পাঁজাকোলা করে ওকে তুলে নিল। এরপর ছুটল নিচ তলায়। ততক্ষনে বাকি গার্ডদের কাবু করে অপেক্ষা করছে অন্যরা। রায়ানকে দেখে দ্রুত নিচতলার লিফটের একসেস ডোর খুলে ফেলল। শ্যাফটের ভেতর অপেক্কমান এজেন্ট সাবমেশিন নামিয়ে নিল। দ্রুত সবাইকে নিচে নামিয়ে দিয়ে একসেস ডোর আগের মতো লাগিয়ে দিল রায়ান। এরপর অন্যদের নিয়ে সোজা রওনা হল মিটিং প্লেসে।
রাত ১০টা। সিআইএ ব্রাঞ্চ অফিস, শিকাগো।
দরজায় নক শুনে ভরাট গলায় বলল ব্রাঞ্চ ডিরেক্টর মেনন,
-কাম ইন।
জেসন, আরমান ঢুকল।
-ও আপনারা? টা কেমন লাগছে শিকাগো?
জবাবটা হাতে দিল জেসন। ঠাস করে এক চড় পড়ল চীফের গালে। হতভম্ব হয়ে তড়াক করে এক লাফে দাঁড়িয়ে গেল সে। পিছন থেকে ঘারের উপর কারাতের একটা চপ মারতেই জ্ঞান হারাল। এরপর বাথরুমে বেধে রেখে এল তাকে। ডিরেক্টরের প্যাডে একটা অনুমুতি পত্র লিখে নিল আরমান। হাতের লেখা নকলে ওর জুরি মেলা কঠিন। এরপর ফোনে ডিরেক্টরের গলা নকল করে টেকনিক্যাল ল্যাবে জানাল যে এজেন্ট মরিসন আর হ্যারল এসে হার্ডডিস্কটা অন্য এক ব্রাঞ্চে নিয়ে যাবে জরুরু প্রয়োজনে। ফোন রেখে দুজনে টেকনিক্যাল ল্যাবে চলে এল। কেউ কোন সন্দেহ করল না। ল্যাব হেডের কাছে অনুমুতিপত্রটা দিয়ে হার্ডডিস্ক নিয়ে সোজা বেড়িয়ে গাড়িতে উঠল ওরা। রওনা হল মিটিং প্লেসে।
গাড়ি ড্রাইভ করছে জেসন। ২০ মিনিটের মতো এগিয়েছে এমন সময় পিছনে হাজির হল দুটো সেডান। ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে। জেসনও স্পীড বারাল। হ্যান্ডমাইকে ওদের থামার নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে স্পীড আরও বাড়িয়ে দিল জেসন। কিন্তু পাল্লা দিয়ে সেডানও স্পীড বারাতে লাগলো। রায়ানকে ফোন করল আরমান,
-স্যার ওরা আমাদের পিছনে আসছে। এখনও দুটো গাড়ি। আমরা কি করব?
-সোজা এক্সিট পয়েন্টে যেতে থাক। বাকিটা আমি দেখছি।
পিছনে নতুন আরেকটা গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। রিয়ারভিউ মিররে এজেন্সির নতুন কেনা ডজ চার্জার এসআরটিএইট চিনতে ভুল হল না জেসনের। সাত করে একটা মোড় ঘুরে বেরিয়ে এসেই পিছনের সেডানের উপর চড়াও হল। চার্জারের শক্ত বডির ধাক্কায় রাস্তা পেড়িয়ে ফুটপাথে নেমে গেল সেডান। সেডানকে সামলে উঠার বিন্দুমাত্র সুযোগ দিল না। জানালা দিয়ে হাত বের হয়ে গুলি করে চাকা ফুটো করে দিল। নিস্ফল আক্রশে বাতাসে মুঠো নাড়ল সিআইএ এজেন্টরা। ওদিকে অন্য সেডানটা প্রায় ধরে ফেলেছে টয়োটাকে। এমন সময় খেল দেখাল টয়োটা। গাড়ির পেছনের সিটের নিচ থেকে বাজুকা বের করল আরমান। ছাদের হুড সরিয়ে বাজুকাসহ দাঁড়িয়ে গেল। জায়গাটা অন্ধকার থাকায় সেডানের আরোহীরা ওদের দেখতে পেল না। দেখল একদম শেষ মুহূর্তে। ফায়ার করল আরমান। মুহূর্তে কমলা আগুনের গোলায় পরিণত হল সেডান।
ঝামেলা দূর করে এগিয়ে চলল টয়োটা আর চার্জারের মিছিল।
সামনের আরেকটা মোড় ঘুরতে আবার হাজির হল দুটো টয়োটা। ফোনে জানতে চাইল জেসন,
-এবার কি করব স্যার?
-কিছু না। যা করছিলে কর আর দেখে যাও কি হয়।
হঠাৎ আবছাভাবে একটা ছায়া দেখা গেল সামনের একটা বিল্ডিঙের উপর। লোকটার হাতে একটা স্নাইপার রাইফেল। দ্রুত লাইন অব ফায়ার থেকে সরে যেতে চাইল কিন্তু মনে পড়ল রায়ান দেখে যেতে বলেছে। চুপচাপ চালিয়ে গেল জেসন। স্নাইপারের বুলেট গিয়ে ঢুকল পিছনের টয়োটায়। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি আটকে গেল। ২য় টয়োটাও আর আগাতে পারল না। ঘুরে অন্য রাস্তায় চলে গেল সেটা। এক্সিট পয়েন্টে পৌঁছে গেছে তখন জেসনের টয়োটা আর চার্জার। চার্জার থেকে নামল কমান্ডো টিমের এক সদস্য। ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করল জেসন,
-বস কই?
-কি জানি! আমাকে এই গাড়ি দিয়ে আপনাদের কাভার দিতে পাঠালেন। নিজে রয়ে গেছেন বোধহয় পিছনে।
এইবার প্রশ্ন করল আরমান,
-আনিস কোথায়?
-আনিস সাহেব আর বাকিদের উনি আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। ওরা প্লেনে উঠে অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য।
দ্রুত ব্যাপারটা ভেবে দেখল জেসন। বস নিশ্চয়ই নিজের জন্য অন্যকিছু ভেবে রেখেছেন। এখন ওদের হাতে আনিস, হার্ডডিস্ক দুটোই আছে। অপেক্ষা করার কোন মানে হয় না। ব্যপারটা আরমানও বুঝতে পেরেছে। চোখে চোখে কথা হয়ে গেল ওদের।
গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে এল ওরা মাঠের শেষ মাথায়। সেখানে একটা সেসনা নিয়ে অপেক্ষা করছে বাকি সবাই। আনিসের জ্ঞান ফিরেনি তখনও।
পাইলটের সিটে উঠে পড়ল জেসন। কো-পাইলটের সিটে বসলো আরমান। তৈরি করা রানওয়ের শেষ প্রান্তে নিয়ে এল সেসনা। প্রিফ্লাইট চেক সেরে ইঞ্জিন চালু করল। বাতাস অনুকুলেই আছে। ইঞ্জিন গরম হতে কিছু সময় দিয়ে রান শুরু করল জেসন। হঠাৎ রানওয়ের অপর প্রান্তে উদয় হল ফেলে আসা সিআইএ-এর অপর টয়োটা। রানওয়ে ব্লক করে ছুটে আসতে লাগলো। আর কোন উপায় না দেখে সেসনা থামিয়ে দিতে যাচ্ছিল জেসন। কিন্তু এমন সময় গর্জন করে হাজির হল কালো রঙের আরেকটা ডজ চার্জার। জানালা দিয়ে হাত বের হয়ে এল। হাতে শোভা পাচ্ছে একটা এফএন৫৭। টয়োটার গ্যাস ট্যাঙ্কে গুলি করল রায়ান এক নাগারে। জায়গামত লাগলেও কোন ক্ষতি হল না। অনেক পুরু করে তৈরি করা হয়েছে জায়গাটা। ওদিকে ক্রমেই কাছিয়ে আসছে সেসনা। মাঠের অপর পাশ ত্থেকে আরও কয়েকটা গারিকে আসতে দেখা গেল। আর কোন উপায় না পেয়ে এক্সিলারেটর চেপে ধরল রায়ান। সবটুকু স্পীড দিয়ে পৌঁছে গেল টয়োটার পাশে। ঠেলে রানওয়ে থেকে সরিয়ে দিল টয়োটাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে ওদের পাশ কাঁটালো সেসনা। টয়োটার গা থেকে নিজেকে ছুতিয়ে নিয়ে সেসনার দিকে গাড়ি ছোটাল রায়ান। যখন মনে হোল আর পসিবল না এমন সময় সেসনার দরজায় উদয় হল আরমান। ওর হাতে একটা ক্রসবো দেখতে পেল রায়ান। দ্রুত ফায়ার করল ও। গাড়ির উইন্ডশিল্ড ভেঙ্গে দিয়ে পাসেঞ্জার সিটে গাঁথল তীরটা। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে ছুরি চলে এল রায়ানের হাতে। সেসনা রানওয়ে ত্যাগ করল। পিছনের গারিগ্যল থেকে অঝরে গুলি শুরু হল রায়ানের গাড়ি আর সেসনার উদ্দেশে। এসব খেয়াল না করে দড়িটা এক হাতে আঁকরে ধরে একপোঁচে দড়িটা কেটে দিল রায়ান। হ্যাঁচকা টানে গাড়ি থেকে বের হয়ে এল ও। গাড়িটা রানওয়ে পেড়িয়ে খাদে পরে গেল। সেসনায় টেনে তোলা হল ওকে। কিছুক্ষণ দম নিয়ে প্রথম যে মুখটা চোখের সামনে দেখল তা আর কেউ নয়, আনিস।
-কি খবর আনিস? এইবার বল যায় এতো কিছু কি নিয়ে হল?
-বলছি। আগে হাতের কাজটা শেষ করে নেই। হার্ডডিস্কটা কেউ দেবেন?
আরমান বাড়িয়ে দিল হার্ডডিস্কটা। সেটা কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে একটা ট্র্যাকিং ট্রান্সমিটার বের করল আনিস। বলল,
-আমি যেতা লাগিয়েছিলাম সেটা এরা খুঁজে পেয়েছিল। আমারতা খুলে নিজেদের একটা লাগিয়ে দিয়েছিল ইমারজেন্সির জন্য।
হতাশ মাথা নাড়ল জেসন,
-এটা এক্সপ্লেইন করছে কিভাবে আমাদের পিছনে বারবার আসছিল এরা।
-হুম।
রায়ান আবার বলল,
-বহু দৌড় করিয়েছ, এবার তাহলে ঝেড়ে কাশ ভাই।
-বলছি। কিছুদিন আগে কাজ করতে করতে হঠাৎ সিআইএ সিকিউরিটি প্রোটকলে ফাঁক পাই আমি। কোন সময় নষ্ট না করে ঢুকে পরি। কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটির পর ভীষণ অবাক হই আমি। ওরা কিভাবে কিভাবে যেন হ্যাকিং করে পুরো বিশ্বের প্রায় সকল ডিপকাভার এসপিওনাজ এজেন্টদের আইডেন্টিটি যোগাড় করে ফেলেছিল। তারা সবাইকে ব্ল্যাকমেইল করার প্ল্যান করছিল। আমি ব্যপারটা বুঝতে পেরে হ্যাক করে সিআইএ-র সব এজেন্টদের তথ্য এই হার্ডডিস্কে সংগ্রহ করি। সিআইএ এ ব্যাপারটা বুঝে ফেলে। তাই তারা প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে পারছিলো না। আমি জানতাম এরা আমাএ ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলবে। তাই আমি আপনার সাথে হার্ডডিস্ক নিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তখনই এরা আমাকে এক রেস্টুরেন্ট থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। ব্যাকআপ প্ল্যান আমি আগেই সাজিয়ে রেখেছিলাম। সেইভাবেই আপনি ইমেলগুলো পান, ট্র্যাকার পান। এখন আর ভয় নেই। বিপদমুক্ত।
-হুম। ওয়েলডান।
হঠাৎ রায়ানের ফোন বেজে উঠল। রিসিভ করল। ওর প্রাইভেট সেক্রেটারি জিসানের গলা ভেসে এল,
-স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে! আমাদের বেশ কয়েকজন এজেন্টের কাভার আউট করে দিয়েছে সিআইএ।
-সম্ভব হয়েছে স্যার। যেসব এজেন্টদের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ থাকতো তাঁদের কাভার জেনে গেছে সিআইএ। এছাড়া সাইবার ডিপার্টমেন্টের প্রায় সবারই কাভার ফাঁস হয়ে গেছে। এখন কি করব স্যার?
চুপ করে ভাবতে লাগলো রায়ান। অপরপ্রান্ত থেকে আবার জিসানের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে এল,
-অর্ডার, স্যার?
-নোট কর। ৮৪৫৬২৭৫২৪*******
বলে গেল রায়ান। দীর্ঘ এক মুহূর্ত পরে থামল। বলল,
-এটা প্রত্যেকটি ব্রাঞ্চ ডিরেক্টরের কাছে ছড়িয়ে দাও।
হা করে তাকিয়ে রয়েছে জেসন। সে ছাড়া আর কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। আরমান প্রশ্ন করল,
-এটা কিসের কোড স্যার, জানতে পারি?
-ব্ল্যাক ফাইটার্সের শাট ডাউন কোড।
জেসন ছাড়া আর প্রত্যেকে হা হয়ে গেল।
-হোয়াট?
জেসন বলল,
-তাহলে এখন কি হবে স্যার?
-আবার ফিনিক্স জাগবে।
-মানে?!?
যেন ধ্যান থেকে ফিরেছে, এমনভাবে আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল রায়ান,
-ফিনিক্স হল ব্ল্যাক ফাইটার্সের ব্যাক আপ প্ল্যান। ব্ল্যাক ফাইটার্সের দ্বারা কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নতুনভাবে শুরু করার জন্য রাখা হয়েছিলো ফিনিক্স। দেখা যাচ্ছে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না।
সেসনার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল রায়ান। বলল,
-আজ ব্ল্যাক ফাইটার্সের যাত্রা শেষ আর ফিনিক্সের যাত্রা শুরু।
ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। নীল আকাশে ডানা মেলে জ্বলন্ত আগুনের মতো লাল সেসনা বাংলাদেশের আকাশে উড়ে চলল...

আলোচিত ব্লগ
মায়ের কাছে প্রথম চিঠি
Ex-Cadets Literary Society নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, আমি যার সদস্য। এই গ্রুপে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বনামধন্য লেখক ও এক্স-ক্যাডেট শাকুর মজিদ একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে ক্যাডেট কলেজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রানশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশ কী করতে পারে!
১.০
আমি তখন সাউথ কেরিয়ার কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড পলিসিতে মাস্টার্স করছি। আমার একটা কোর্সের নাম ছিল থিওরি অ্যান্ড প্রকটিসেস অব গ্লোবাল ট্রেড গভর্নেন্স। কোর্সটি পড়াতেন প্রফেসর Wook Chae... ...বাকিটুকু পড়ুন
সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......
সময় থাকতে মনা হুশিয়ার......
ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনকালে সময়ের চলমান প্রক্রিয়ায়, নাগরিক দ্বায়িত্ব পালনে দেশের প্রয়োজনে রাজপথে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। কীবোর্ডকে অস্র বানিয়ে স্বৈরশাসকের হৃদয় ফালাফালা করে দিয়েছি। ফলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
চৈত্র সংক্রান্তি থেকে পহেলা বৈশাখ বহমান আনন্দধারা।
চৈত্র মাসের বাতাসে যে সুগন্ধা হওয়ার দোলন সে ব্যাপারটার প্রশান্তি অনন্য! মাঝ দুপুরের তপ্ততা, নুয়ে আসা বিকেলে আচমকা দুরন্ত দুষ্ট ঝড়, অথবা সন্ধ্যার আজানের ঘরে ফেরার ব্যস্ত ধ্বনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
গাজা, ওসামা, পাকিস্তান, নাজি : বাংলাদেশে মাল্টিভার্স পতাকা বিপ্লব !
গত একসপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু এই প্রতিবাদের মিছিলে এমন সব পতাকা, সিম্বল ও ছবি হাতে প্রতিবাদীরা মিছিল করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন