
[শিল্পীর চোখে প্রফেট জরুথুষ্ট্র এর ছবি]
১. পারসিক ধর্মঃ
পারসিক ধর্মের প্রবর্তকের নাম মহাপুরুষ জোরথুষ্ট্র । তার আর্বিভাবকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে । অনুমিত হয় যে, খৃষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দ হতে ৫০০ অব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে পারস্য অন্চলে তার আর্বিভাব ঘটে । অনেকে মনে করেন যে, তার সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ থেকে ৫৮০ অব্দ পর্যন্ত ছিলো । কেউ কেউ বলেন, তিনি ইরান বা মেডিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।
জরাথুষ্ট্রীয় ধর্মে ঈশ্বরকে ডাকা হয় "আহুরা মাযদা " নামে । 'আহুরা ' অর্থ প্রভু এবং 'মাযদা' অর্থ প্রজ্ঞাময় । অতএব, "আহুরা মাযদা" অর্থ প্রজ্ঞাময় মহাপ্রভু । অথবা প্রজ্ঞাময় ঈশ্বর । এই ধর্ম বিশ্বাস মতে "আহুরা মাযদা" কঠোরভাবে এক ঈশ্বর বা এক প্রভুর সমার্থক ।
তিনি শ্রমের মর্যাদা দান করতেন । তার অনুসারীদের পার্থিব সকল কাজকর্ম করতে বলতেন । শস্য, ফুল, ফল উৎপাদনে তিনি উৎসাহ দিতেন । কাজকর্মকে তিনি দু-ভাগে বিভক্ত করেন । (১) সৎকর্ম (২) অসৎ কর্ম । মহান সৃষ্টিকর্তাকে তিনি নিরাকার বলেন । জোরথুষ্ট্র মহান সৃষ্টিকর্তাকে "আলোক শক্তি" রূপে অভিহিত করেন । উল্লেখ্য যে, আলোকে উৎস অগ্নি । এ কারণে লক্ষ্য করা যায় যে, পরবর্তীকালে তার অনুসারীগণ ক্রমে "অগ্নি উপাসক" হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ।
তিনি সৃষ্টিকর্তাকে "আহুরা মাজদা" নামে অভিহিত করেন আর শয়তান কে বলেন "আহরিমান" । তিনি বলেন যে, মানুষের মাঝে ভালো-মন্দ দুই-ইর প্রভাব আছে । এ কারণে তিনি তার অনুসারীদের সুস্হ মনে সৎ চিন্তা করে কাজ কর্ম করতে পরামর্শ দিতেন । তিনি বলেন যে, মৃত্যুর পর মানবাত্নাকে "চিনভাত সেতু" অতিক্রম করতে হবে । পৃথিবীতে জীবিতকালে মানুষ সৎ কর্ম করলে ঐ সেতু প্রশস্তর হবে এবং সহজেই অতিক্রম করে মানবাত্না শান্তির ধামে পৌছতে পারবে । অপরপক্ষে জীবিতকালে মানুষ অসৎ কাজকর্ম করলে এ সেতু সংকীর্ণ হয়ে পড়বে । ফলে মৃত্যুর পরে পাপাত্না সেতু অতিক্রমকালে তার পতন ঘটবে এবং অশান্তি এবং কষ্টের মধ্যে নিপতিত হবে । Regarding angels, Zoroaster said "Angels are countless." (Dasatir,p.6.) । ফেরেশ্তাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ওরা অগণিত ।
প্রফেট জোরথুষ্ট্র তার মতবাদে কোন ধর্মবিধান, আচার আনুষ্ঠানাদি, রীতিনীতি দান করেন নি । তিনি হিন্দু ধর্মের প্রচলিত উপাসনা, তপস্যা, অনশন, যাগজজ্ঞ, পশবলি ইত্যাদি পরিহার করতে বলেন ।
পার্সীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্হ দাসাতির এবং আভেস্তা । তিনি মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন । তিনি তার অনুসারীদের সৎকর্ম, সৎচিন্তা ও সত্যবাদিতা অবলম্বণ করতে বলেন ।

পার্সীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্হ দাসাতির এবং আভেস্তা । প্রধান প্রধান শ্লোকগুলোকে "গাঁথা" বলে । এ শ্লোকগুলো ইহুদী ধর্মের ধর্মগ্রন্হ "পবিত্র দিশাম" এর প্রায় অনুরূপ । এ কারণে অনেকে মনে করেন যে, প্রফেট জোরথুষ্ট্র ইহুদী মতবাদ দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন । যদিও এটা সঠিক নয় ইসলামকেও একই দোষে দুষ্ট করা হয় । প্রকৃত সত্য সব সময়-ই অনুরূপ তা যেখানে-ই পাওয়া যায় না কেন ।
পারস্য সম্রাটগণ এ মতবাদ গ্রহণ করেন, ফলে পারস্য অন্চলে এর বহু প্রসার ঘটে । ইসলাম ধর্মের আর্বিভাবের ফলে আরব, ইরাক, ইরান অন্চল থেকে পার্সি ধর্ম তিরোহিত হয় । বর্তমানে শুধু ভারতের বোম্বাই অন্চলে কিছু পার্সি ধর্মাবলম্বীদের দেখা যায় ।
২. পারসিক ধর্মে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণীঃ
পার্সী ধর্মগ্রন্হ দুটিতেও ইসলামে মহানবী (সাঃ) এর আগমণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে । যেমনঃ
'আমি ঘোষণা করিতেছি, হে স্পিতাস জরথুষ্ট্র ! পবিত্র আহমদ নিশ্চই আসিবেন, যাহার নিকট হইতে তোমরা সৎচিন্তা, সৎবাক্য, সৎকর্ম এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করিবে ।"
[জিন্দ আভেস্তা; ১ম ম্যাক্সমূলার কর্তৃক অনূদিত, পৃঃ-২৬০]
উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে 'আহমদ' নাম উল্লেখিত হয়েছে । এ 'আহমদ' যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত । কেননা, মোহাম্মদ (সাঃ) এর অপর নাম-ই আহমদ, যা তার মাতা গর্ভের সময় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রেখেছিলেন ।
পারসিকদের অপর ধর্মগ্রন্হ 'দাসাতির' এর ভবিষ্যদ্বাণী এরূপঃ
'যখন পার্সীরা নিজেদের ধর্ম ভূলে গিয়ে নৈতিক অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হবে, তখন আরব দেশে এক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিবেন । যাহার শিষ্যেরা পারস্যদেশ এবং দুর্ধর্ষ পারসিক জাতিকে পরাজিত করিবে । নিজেদের মন্দিরে অগ্নিপূজা না করিয়া তাহারা ইব্রাহীমের কাবা ঘরের দিকে মুখ করিয়া প্রার্থনা করিবে । সে সময় কাবা প্রতিমামূক্ত করা হইবে । সেই মহাপুরুষের শিষ্যরা বিশ্ববাসীর পক্ষে আর্শীবাদস্বরূপ হইবে । তাহারা পারস্য, মাদায়েন, তুষ, বলখ প্রভৃতি পারস্যবাসীদের যাবতীয় পবিত্র স্হান অধিকার করিবে । তাহাদের পয়গম্বর একজন বাগ্মী পুরুষ হইবেন এবং তিনি অনেক অলৈাকিক কথা (ভবিষ্যদ্বাণী) বলিবেন ।' [বিশ্বধর্মগ্রন্হসমূহে মোহাম্মদ; আবদুল হক বিদ্যাতীর্থ; পৃঃ-৪৭]
It is mentioned in Bundahish chapter 30 verses 6 to 27 that Soeshyant will be the last Prophet implying that Muhammad (pbuh) will be the last Prophet.
৩.
মহানবী (সাঃ) তার জীবিতকালে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করে গিয়েছিলেন , তার আলোকে বলা যায় মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পরেও মুসলিমদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে । ফলে পারস্য ও রোমের প্রায় সব স্হানগুলোই মুসলমানদের করতলগত হয় খোলাফায়ে রাশীদীনের আমলে অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পর । খলিফা হযরত আবু-বকর (রাঃ) থেকে হযরত আলী (রাঃ) পর্যন্ত সময়ে এ স্হানগুলো বিজিত হয়েছিল । মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার কথায় সকল এ বিজয়ের-ই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-
"কিসরা মারা গেলে আর কিসরা হবে না , তেমনি কায়সার ধ্বংস হলে আর কায়সার হবেনা । ঐ সত্তার শপথ! যার (কুদরতী) হাতে আমার জীবন, তোমরা কিসরা ও কায়সার উভয়ের কোষাগার দখল করিবে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করিয়া দিবে ।" [সহীহ মুসলিম]
নবী করীম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পারস্যের কিসরা তথা দ্বিতীয় খসরু পারভেজকে পত্র দিয়েছিলেন । পারভেজ মহানবীর পবিত্র পত্রকে টুকরা টুকরা করে ছিড়ে ফেলে দূতকে অপমান করে এক টুকরি মাটি মাথায় দিয়ে বিদায় করেছিলেন । দূত সে মাটিসহ মহানবী (সাঃ) এর দরবারে ফিরে এলে সমস্ত বিবরণ শুনে তিনি নিম্নোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেনঃ
১. " উদ্ধত পারস্য সম্রাট কর্তৃক আমার পত্র ছিন্ন করার পরিণতিতে আল্লাহ পাক তার সম্রাজ্য ও শক্তির উৎস চিরকালের জন্য ছিন্নবিন্ন করে দিবেন । [সহীহ বুখারী]
২. ওরা তো নিজের হাতেই নিজেদের দেশের মাটি তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছে । সে দিন আর বেশি দুরে নয়, যে দিন সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্য তোমাদের পদতলে চলে আসবে । (তাবারী)
বস্তুত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) উপযুক্তভাবে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন, যা পরবর্তী সময়গুলোতে যথাযথভাবে সফল হয়েছে এবং হচ্ছে । ফলে পার্সীদের ধর্মগ্রন্হ 'দাসতীর' এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সফল করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আর্বিভূত হয়েছিলেন ।
আরো জানতে দেখূন-
১. পারসিয়ান ধর্ম এর বর্ণনা সুন্দভাবে দেয়া আছে এখানে
২. পার্সীদের ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী
৩..একটি জোরথুষ্ট্র পরিবারের কথা
সুত্রঃ
১. বেদ - পুরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) - ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, ইসলামী সাহিত্য প্রকাশনালয়, ৪৫, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০.
২. মহানবী (সাঃ) এর হাদিস সমূহ ।