বাংলাদেশের বর্তমান পুলিশের যে ধারা, এর ইতিহাস খুব পুরানো নয়। আমাদের ব্রিটিশ কলোনিয়াল প্রভুরা ১৮৬১ সালে the commission of the Police Act (Act V of 1861) নামের আইন বৃটিশ পার্লামেন্টে পাশ করে। এই আইনের অধীনে ভারতের প্রতিটি প্রদেশে একটি করে পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়। প্রদেশ পুলিশ প্রধান হিসাবে একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং জেলা পুলিশ প্রধান হিসাবে সুপারিটেনটেন্ড অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করা হয়। বৃটিশদের তৈরীকৃত এই ব্যবস্থা এখনও বাংলাদেশ পুলিশে প্রবর্তিত আছে।
‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ করতে ব্রিটিশরা এদেশে পুলিশ বাহিনীর প্রচলন করেছিল এটা ভাবার কোন যৌক্তিক কারন নাই। কলোনিয়াল প্রভুদের উদ্দেশ্যই ছিল এমন একটা বাহিনী বানানো যাদের ডাণ্ডার ভয়ে জনগণ তটস্থ থাকবে এবং ব্রিটিশদের এই উদ্দেশ্য একশ ভাগ সফলও হয়।
ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর ডান্ডামার্কা লেগ্যাসি পরে কন্টিনিউ করে পাকিস্তান আর ভারত। কলোনিয়াল পাওয়াররা পুলিশদেরকে যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, পরে দেখা গেলো দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পুলিশ আবারো সেই রাবণের ভূমিকায়। বছরের পর বছর পুলিশের এহেন আচরণে দেশের জনগণ কখনো পুলিশকে বন্ধু ভাবতে পারে নাই। এর একটা উৎকৃষ্ট উদাহারন পাই বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমদের বিখ্যাত উপন্যাস জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প বইয়ে। গল্পের পুলিশ ইনস্পেক্টর বলে,”বাঙ্গালি জাতির যত রাগ খাকী পোশাকের উপর। পুলিশের উপর ঢিল মারতে পারলে তারা আর কিছু চায় না।“
খাকী পোশাকের উপর বাঙালি জাতির এই ক্ষোভ কিন্তু একদিনে তৈরি হয় নি। বছরের পর বছর এই খাকী পোশাকের নির্যাতনে মানুষের এই রাগ তৈরি হয়েছে। খাকী পোশাকের রংটা বদলে গেসে কিন্তু কলোনিয়াল প্রভুদের শেখানো ব্যবহার তারা আজও সযত্নে লালন করে যাচ্ছে। আশেপাশে তাকালেই এদের তান্ডাবলীলা দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশে; যেখানে এখনো অধিকাংশ মানুষ দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল সেখানে পনের মাস ধরে আংশিক কিংবা পুরোপুরি লকডাউন দেয়াটা কতটা যৌক্তিক? এইযে বিশাল সংখ্যক মানুষ কি করে বেঁচে আছে সরকার কি খবর নিসে? অথচ লকডাউনের চায়ের দোকান খোলা রাখায় দেখলাম পুলিশ চায়ের কেটলি জব্দ করে হাস্যজ্বল ভঙ্গিতে পোজ দিসে যেনো কোটি টাকার জিনিস উদ্ধার করে নিয়ে আসছে।
শেষ করছি বড় ভাই সাইদুর রহমানের লেখা দিয়ে,”পরাধীন ভারতবর্ষে পুলিশ হাফ প্যান্ট পরত, কিন্তু মানুষ তাদের ফুল সম্মান করত ৷ স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ ফুল প্যান্ট পরে, কিন্তু মানুষ তাদের হাফ সম্মানও করে না৷”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১৪