মূল টার্গেট প্রবাসী
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু
প্রবাসীরা এক অর্থে সুবিধা বঞ্চিত। যদিও তারা দেশ ও পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসেন। শূন্য হাহাকার হৃদয়ে বিশ্বাস করে সবাইকে। কিন্তু প্রতারিত হন হরহামেশা। তারা জীবনের অপূর্ণতাকে পূর্ণ করতে চান। চান সুনাম ও সমৃদ্ধি। তাদের মাঝে কাজ করে সৃষ্টির উন্মাদনা। কারও কারও মধ্যে অমরত্বের লোভও পেয়ে বসে। আর সে সুযোগে একশ্রেণির মানুষ নানা সংগঠন ও সংস্থার নামে প্রতারিত করে তাদের। কিছু প্রবাসীও অতি মাত্রায় উত্সাহী হয়ে নিজেকে জড়িয়ে নেন তার সঙ্গে। নারী সঙ্গও বাদ যায় না। টেলিফোনে একটু উষ্ণ বাক্যালাপের জন্য তাদের কাছে টাকা পাঠাতেও দ্বিধা করেন না।
বাংলাদেশে মানবতার নামে নামসর্বস্ব সাহায্য দানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে অনেক। হাতে গোনা কিছু ভালো সংগঠনও রয়েছে। এই সব কাজ সাধারণত ধনী শ্রেণি করে থাকেন নিজেদের জাহির করতে। তাদের অনেকে আসলেই দানবীর। অন্যদিকে আরও কিছু সীমিত সাধ্যের মানুষও চান মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে। অনেকেই সেটা করতে পারেন না নিজেদের সীমবদ্ধতার কারণে। তখন তারা সাহায্য নেন নানা সংগঠন বা ব্যক্তির। কিন্তু তাদের ভালো আকাঙ্ক্ষা সফল হয় না প্রতারকদের জন্য। এই সব প্রতারকেরা কলুষিত করে দিয়েছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্র। প্রতারক সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িতরা অভিনব কায়দায় চাঁদা তুলে সংগঠন পরিচালনার পাশাপাশি নিজের জীবিকা নির্বাহ করেন। এতে দোষের দেখি না। তবে তারা যে ভাবে মানুষকে বাধ্য করেন তাতে অনেককেই বিব্রত হতে হয়। সামাজিক আন্দোলনগুলোতে প্রবাসীরা একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রবাসীরা ব্যবসায়ী নন। তারা চাকরি করেন মানে মজুরি করেন। কিন্তু তাদের কষ্টার্জিত টাকা লুটতে একশ্রেণির মানুষ মসজিদ-মাদ্রাসা উন্নয়ন বা শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি নানা ধরনের সেবার মোড়ক ব্যবহার করছেন।
এ ছাড়া প্রবাসীদের নিয়ে সাহিত্য সভা, সেমিনার, কবিতার আড্ডা, কবিতানুষ্ঠানে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন কেউ কেউ। প্রবাসী অল্প কয়েকজন হয়তো শিল্প–সাহিত্য বোঝেন। বেশিরভাগই সাহিত্য বোঝেন না, বানান ও ব্যাকরণ ইত্যাদিও বোঝেন না। কিন্তু তাদের কারও কারও কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক হওয়ার সাধ। তাদের বই ও সংকলন প্রকাশ করতে অনেকে উৎসাহ দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় এমন প্রবাসী রয়েছেন, জীবনে ভাবেওনি একটি বই বের করবেন। এই সব প্রতারক প্রকাশকের মিথ্যা স্বপ্নের জালে তারা নিজেকে গল্পকার, কবি ও লেখক ভাবতে শুরু করেন। এর জন্য দায়ী ওইসব নবীন কবি ও লেখক, নাকি যারা প্রকাশনায় যুক্ত।
নবীন লেখক, যাদের জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ নিঃসন্দেহে করা যায়, তাদের বই প্রকাশের জন্য অনেকে বসে থাকেন। আবার অনেক ভালো মানুষ কিছু ভালো কাজ করছেন। যাচাই বাছাই করে গল্প কবিতা ছাপাচ্ছেন। এতে সাহিত্যের ভান্ডার পূর্ণই হচ্ছে। মন্দ লোকের জন্য সমাজের ভালো মানুষগুলোর গড়পড়তায় বদনাম হচ্ছে। প্রবাসীদের মধ্যে সামাজিক, সাহিত্যিক, মানবিক কাজের জন্য রয়েছে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। কিন্তু তারা ধোঁকা ও প্রতারণার শিকার হয়ে বিমুখ হচ্ছেন ভালো কাজ থেকে। নিজেকে দুরে সরিয়ে নিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে প্রবাসীদের অনেকে দেখতে পারেন না। নানা ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে প্রবাসীদের হেনস্থা করা হয়। যদিও বিয়ের সময় আজকাল সরকারি চাকরি বা শিক্ষিত বংশীয় নয়, প্রবাসী চাই। পরকীয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পরিবার এগিয়ে। প্রবাসী পরিবারে সন্তান পড়াশোনায় বা শিক্ষার হার খুবই কম। অভিভাবকহীন হয়ে সন্তানগুলো মানুষ হওয়ার বদলে ভিন্নপথে ধাবিত হয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশ ও পরিবার সচল থাকলেও প্রবাসী যখন দেশে আসে এবং ফেরত যায় প্রতি ক্ষেত্রে লাঞ্ছনা ও প্রবঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
ফেসবুকে আইডি হ্যাক যাদের হচ্ছে তাদের মধ্যে প্রবাসী বেশি। দেশে বাড়িঘর বা কোনো কিছু করতে গেলে জুনিয়র, সিনিয়রসহ পাড়াপ্রতিবেশী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকানদার এমন কোনো স্থান বা ক্ষেত্র নেই যেখানে প্রবাসীরা টার্গেট হচ্ছেন না।
সিঙ্গাপুর থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩