গত এক মাসে আমরা সবাই কমবেশি প্রোপাগান্ডা শব্দটি সম্পর্কে শুনেছি। সাধারনত প্রোপাগান্ডা বলতে বোঝায় কোন তথ্যকে পক্ষপাতমূলক ও বিভ্রান্তিকর উপায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজের কোন একটি নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সকে আবেগ তাড়িত করে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেয়াকে। উদহারন হিসাবে বলা যায়, জনাব সাঈদী সাহেবকে চাঁদে দেখা দাবি এবং বর্তমানে ভারতীয় মিডিয়া এবং একটি নির্দিষ্ট শ্রেনীর ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমনের ঘটনা।
রাজনৈতিক ও বিভিন্ন ধরনের আইডেন্টিকাল আইডোলজি বা ক্ষেত্র বিশেষে বানিজ্যিক বিভিন্ন এজেন্ডাকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রোপাগান্ডার সাহায্য নেয়া হয়।
প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে জার্মান নাৎসি বাহিনীর জেনারেল গোয়েবলসের একটি বিখ্যাত বানী আছে। তিনি বলেছেন, কোন একটি মিথ্যাকে বার বার বললে তা সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এই উক্তিটির দারুন তাৎপর্য ও গভীরতা রয়েছে। মিথ্যেকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে কি না, সেটা নির্ভর করে বিজয়ী পক্ষের উপর। কারণ বিজয়ীরাই ইতিহাস লিখে, সব কিছু তাদের প্রেক্ষাপট থেকেই দেখে। তাই সত্য মিথ্যের ব্যাপারটি অনেক সময় ক্ষেত্র বিশেষে আপেক্ষিক হয়ে দাঁড়ায়। তবে, যারা বিজয়ের পর সত্য চাপা দিয়ে বিপুল বিজয়ের দাপটে মিথ্যে বয়ান প্রতিষ্ঠিত করে, তারাও এক ধরনের প্রোপাগান্ডা প্রতিষ্ঠিত করে যা কালের আবর্তনে ধ্বংস হয়ে যায়। যারা এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারে, তারা ইতিহাসে সম্মানের সাথে স্মরণ হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যে দল পেয়েছে, তারা পরবর্তীতে উক্ত জনসমর্থন ধরে রাখতে পারে নি বরং সেটা তাদের দীর্ঘ মেয়াদী পতনের অন্যতম কারন হিসাবে কাজ করেছে। যেমন ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পর সুপ্রিম কোর্টের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানে পরিবর্তন এনেছিলো। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো পছন্দের বিচারপতিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের কব্জায় রেখে নির্বাচনের সময় সুবিধা আদায় করা।
বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনকে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পুরো তত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে এই ফ্যাসিস্ট দানব সরকারের উত্থান হয়।
২০১১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এই দেশের মানুষের রাজনৈতিক আদর্শ এবং দেশপ্রেমের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্য নানা ধরনের ফিল্টার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামক একটি কার্যকরী প্রোপাগান্ডা প্রতিষ্ঠিত করে।দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের এই প্রোপাগান্ডার বলি হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ফলে আমরা দেখেছি রাষ্ট্রের প্রতিটা স্তরে কিভাবে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের কথিত শক্তির কথা বার বার করে প্রচার করা হয়েছে।
২০১১ সাল পর্যন্ত আমি শতভাগ দাবি করে বলতে পারি, কট্টর রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তি ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে এই দেশের অধিকাংশ মানুষই জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হিসাবেই সম্মান দিয়েছে, জাতীয় শোক দিবসকে পালন করেছে। কিন্তু এক সময় মানুষ এই প্রোপাগান্ডার বিষয়টি বুঝতে পারে এবং দিন শেষে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যক্তি মুজিবের আবারও দ্বিতীয় মৃত্যু হয়। পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিনত হয় একটি হাস্যরস ও বিদ্রুপের বিষয়ে। ফলে, এটা স্পষ্টত বোঝা যায় যে, প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে অর্জিত যে কোন কিছু কখনও স্থায়ী হয় না।
প্রোপাগান্ডার একটা সত্য ও একটা মিথ্যে অংশ থাকে। যাকে ইলিউশন অব ট্রুথ বলা যায়। অর্থাৎ সত্যের সাথে মিথ্যের মিশ্রনকে চাইলে দুটো প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যায়। যেমন কেউ যদি বলে, কিসমিস একটি ফল। তাহলে অনেকেই সেটা মেনে নিতে দ্বিধা বোধ করবে। আবার অনেকেই মেনে নিবে কারন তারা মনে করেন, আঙুর শুকিয়েই কিসমিস বানানো হয়। কারন আঙুর তো ফল। এই যে দেখার চোখের ভিন্নতা, এই ভিন্নতাকেই পুঁজি করে প্রোপাগান্ডা বানানোর চেষ্টা চলে।
ফলে, ভবিষ্যতেও যারা সংখ্যাগরিষ্টভাবে ক্ষমতায় আসবেন, তারা যদি ইতিহাসের সঠিক তথ্য প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে শ্রেফ তথ্য গোপন করে, তাহলে তারাও আবার এক সময় ইতিহাসের আড়ালে চলে যাবেন। এই প্রক্রিয়া থামানোর একটাই উপায় নির্মোহ হয়ে সত্য ইতিহাস তুলে ধরা। যদি কারো সম্মান প্রাপ্য থাকে, তাঁকে সেটা প্রদান করা যারা সম্মান পায় নি, তাদেরকে উপযুক্ত সম্মানের ব্যবস্থা করা। এই কাজটি করা গেলে – ইতিহাসই তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিবে। কোন প্রোপাগান্ডা আর এই দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না।
এখন আসুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিভাবে প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করবেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। বিশেষ করে সমাজে যারা সচেতন নন (শিক্ষিত অশিক্ষত উভয় অংশে) তাদের জন্য প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারন এই সকল তথ্য নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সের মানুষকে উদ্দেশ্য করেই বানানো হয়। প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে আপনার বিরোধী মতের দর্শনকে জানা ও বোঝার চেষ্টা করা, তাদের গৌরব ও ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা। এর জন্য আপনাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত না আপনি পড়াশোনা করবেন ততদিন আপনি শ্রেফ প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ জানিয়ে আসবেন, প্রোপাগান্ডা যারা ছড়ায় তাদের মুখ বন্ধ করার দাবি জানাবেন যা আদতে তাদের প্রোপাগান্ডাকেই সত্য হিসাবে প্রমানিত করতে পারে। প্রোপাগান্ডা বন্ধ করার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমান সহ কথা বলা। এইভাবেই আপনি প্রোপাগান্ডাকে প্রতিরোধ করতে পারবেন, অন্য কোনভাবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যকে প্রশ্নের ব্যাপারে লজ্জা পাবেন না। যে কোন খবরের সোর্স জানতে চাওয়া আপনার অধিকার। কমেন্ট করার আগে দেখুন সেখানে কোন সোর্স প্রদান করা হয়েছে কি না। যদি কোন সোর্স প্রদান করা হয়, তাহলে সেই সোর্সের অথেনটিসিটি চেক করুন। চালাইয়াদেনডটকম বা আমারসোর্সবলছে টাইপ সংবাদ আপনার শত্রুর সম্পর্কে হলেও তা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
যখন কেউ কোন সংবাদ বা তথ্য ( আপনার বিরোধী মতের হলেও) যাই শেয়ার করুক না কেন সেটার সোর্স সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন। যিনি খবরটি শেয়ার করেছেন তাকে সংবাদের সোর্স দিতে বলবেন। বিশ্লেষণ আর খবরের মধ্যে একটি পার্থক্য আছে। সেটা তাকে নিশ্চিত করতে বলুন।
ইমোশন্যাল ম্যানুপুলেশন করা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করুন। আমরা অধিকাংশ মানুষই এই ফাঁদে পা দিয়ে থাকি। আমাদের মধ্যে ভয় বা আতংক, ক্ষোভ ইত্যাদি সৃষ্টি করার জন্য এই ধরনের ইমোশন্যাল ম্যানুপুলেশন করা হয়। এই সকল পোস্টের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এত সামগ্রিক ঘটনা সম্পর্কে আপনি স্বচ্ছ কোন ধারনা পাবেন না বা কল্পিত কিছু ক্যারেক্টার সৃষ্টি করে তাদের রেফারেন্স টানা হয়।
যেমন, “আমার এলাকার একটি ছেলে অমুক কাজ করেছে। তাকে অমুক দলের সবাই মিলে মেরেছে। আপনার এর প্রতিরোধে আসুন।”
এই ক্ষেত্রে আপনি প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধ করতে চাইলে কোন এলাকা, ছেলের কি নাম, কি করেছে, ঘটনা কখন ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, তাদের নাম পরিচয় ইত্যাদি প্রশ্ন পোস্ট দাতাকে করলেই আসল চিত্র দেখতে পাবেন। সহজ কথায়, চেরি পিক ফ্যাক্টস বা স্পট মিসলিডিং ইনফরমেশন সম্পর্কে সর্তক থাকতে হবে।
সাধারনত প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর একটি গুরুত্বপুর্ন টুলস হলো কোন বিষয়কে ওভার সিপ্ললিফায়েড বা সরলিকরন করা। যেমন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই খবরটি যাচাই করলে দেখবেন, এখানে বিষয়টি এত সরল নয়। কিন্তু লাইক, শেয়ার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এই ধরনের সংবাদ ছড়ানো হয়।
যে কোন ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে বা আপনারা বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেক ওয়েব সাইট যেমন Snopes, FactCheck.org এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। তদন্তে মিথ্যে প্রমানিত হলে সেই সকল বিষয়ে আপনার সচেতনতামুলক পোস্ট বা কমেন্ট প্রোপাগান্ডা ছড়াতে বাঁধা দেয়।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয় মিথ্যে ভিডিও বা মিমের মাধ্যমে। তাই বিষয়গুলো সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করে, সত্যটি প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনি প্রোপাগান্ডাকে রুখে দিতে পারেন। যে সকল সংবাদ আপনাকে খুব দ্রুত কোন এ্যাকশন (কল টু এ্যাকশন বা সিটিএ) নিতে বলে সেই সকল সংবাদ প্রোপাগান্ডা হবার সম্ভবনা অনেক বেশি।
আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার বিরোধী মত সম্পর্কে প্রোপাগান্ডা চালু থাকলে আপনার কি ক্ষতি? আপনার ক্ষতির জায়গা হচ্ছে হচ্ছে, আপনি যখন একই মাধ্যম থেকে প্রোপাগান্ডার শিকার হবেন, তখন আপনি প্রতিবাদ করতে পারবেন না। বরং আপনার চুপ থাকাকেই তারা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।
প্রোপাগান্ডা কি বাকস্বাধীনতা?
সত্যি বলতে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বিধা এবং বিতর্ক আছে। সমাজের একটা অংশ মনে করেন, সত্য মিথ্যে যা কিছু হোক কথা বলার অধিকার যে কারো আছে। বিশেষ করে যারা সমর্থনহীন, ক্ষুদ্র তারা ভাবে এই প্রোপাগান্ডা তাদের অধিকার। এটা তাদের দাবি আদায়ে তাদের প্রতি অনুপস্থিত জনসমর্থনের কাজ করে।
আবার একটা বড় অংশ মনে করেন, মিথ্যে সংবাদ প্রচার, মানুষকে ইচ্ছেকৃতভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা বাক স্বাধীনতার অংশ নয়। এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রন করা উচিত।
আমি বিশ্বাস করি, বাকস্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি, যা মানুষের চিন্তা, মতামত, এবং অনুভূতিকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা দেয়। তবে, এটি সম্পূর্ণ সীমাহীন নয়। আমরা বাকস্বাধীনতার ইতিবাচক ভূমিকা নিশ্চিত করতে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারি, তবে তা অবশ্যই সংবিধানিক ও নৈতিক সীমার মধ্যে থাকতে হবে। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ, সামাজিক শান্তি, এবং মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যা বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার ঠেকাতে সহায়ক হবে।
বাকস্বাধীনতার নিয়ন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সব মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করা। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি তাদের স্বাধীনতার মাধ্যমে অন্যদের ক্ষতি করে, তাহলে সেই স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা ন্যায্য হতে পারে। এটি মানুষের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি, এবং সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।
তবে আমাদের সমাজে, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা দাবিটি বেশ প্রকট। গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক মতামতের বহুমুখিতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জনগণকে তাদের মতামত প্রকাশ করতে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করতে সহায়তা করে। তবে, অপছন্দের কারণে বা কেবলমাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বিপরীতমুখী মতামত নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সঠিক নয়, যতই সে মতাদর্শ খারাপ বলে মনে হোক না কেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪৩