somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাদিদ
তুমি আমার রাতবন্দিনী। ধূসর স্বপ্নের অমসৃণ সুউচ্চ দেয়াল তুলে তোমাকে আমি বন্দী করেছি আমার প্রিয় কালোর রাজত্বে। ঘুটঘুটে কালোর এই রাজত্বে কোন আলো নেই। তোমার চোখ থেকে বের হওয়া তীব্র আলো, আমার হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব জ্যোৎস্না।

প্রতিক্রিয়া: কোটা আন্দোলন, ধ্বংসযজ্ঞ, হুন্ডি।

২৭ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সরকার যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং আন্দোলন পরবর্তী পরিস্থিতিকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা তাদের দলীয় নেতৃত্বহীনতা, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার উদহারণ হিসাবে ইতিহাস সাক্ষী দিবে। আওয়ামী লীগ দল হিসাবে নিজে এককভাবে শক্তিশালী হতে গিয়ে নিজেরাই দিন দিন দুর্বল হয়েছে, শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন তেমন কোন নেতৃত্ব গড়ে উঠে নি। ফলে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল হিসাবে তারা ক্রমাগত নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে একটি মাফিয়া দলে পরিণত হয়েছে।

সরকার এখন দুই শ্রেণীতে মানুষকে দেখে, এক - যারা আওয়ামীলীগ করে, দুই - বিএনপি জামাত শিবির জোট।

ফলে, এখানে জনগণের চাহিদা বা দাবির তেমন কোন বাস্তবিক মূল্য নেই। সরকারের বিরোধিতা মানেই জামাত শিবির। আমি একটা ছোট উদহারন টানছি। স্টেপ ডাউন হাসিনা হ্যাশট্যাগ পোস্ট নির্বাচিত পাতায় নেয়ার জন্য ব্লগের একজন আওয়ামীপন্থী ব্লগার, ব্লগ মডারেটরকে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করেন, মারখোর বলেন।




একটা প্রায় গুরুত্বহীন সামান্য একটা ব্লগ প্ল্যাটফর্মে কোন মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে তার মত প্রকাশ করছে, সেটাকে মূল্যায়ন করার জন্য যখন মডারেটরকে গালি শুনতে হয় বা ক্রমাগত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তখন আরো বড় বা গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে যারা বিরোধিতা করেন তাদের এবং তাদেরকে সমর্থন জানানো মানুষদের কি হয়, সেটা সহজেই অনুমেয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের অন্যায় কাজ জাস্টিফাই করার জন্যও এক ধরনের প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়। প্রথম যাকে টার্গেট করা হয়, তার কিছু ছোটখাটো দোষ ত্রুটি আগে বের করা হয়, তারপর এই সকল ভুল ত্রুটিকে সেখানে ক্ষেত্রে বিশেষে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিশাল মহীরুহ বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের মডারেটর সম্ভবত ভাগ্যবান, তার বিরুদ্ধে অতি সামান্যই অভিযোগ এসেছে। ভবিষ্যতে উনাকে যদি রাজাকার বা জামাত শিবিরের সমর্থক বা কর্মীও বানিয়ে দেয়া হয়, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ আওয়ামীলীগ এক ধরনের ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যে, তাদের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ মানেই হলো রাষ্ট্রদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, স্বাধীনতা বিরোধী।

মুল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। আগেই উল্লেখ্য করেছিলাম যে, কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের বর্তমান রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্যাটা আরো আন্তরিকভাবে, ছাত্র তথা তরুণ প্রজন্মের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে সমাধান করা যেত। এই আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডাকলেই পারতেন। গণভবনে এত এত সার্কাসের চরিত্র আশা যাওয়া করে সেখানে এই ছাত্ররা গেলে তেমন কোন ভুল না, আওয়ামীলীগের কোন নৈতিক পরাজয় হতো না। বরং শেখ হাসিনাই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এতে এগিয়ে থাকতেন। এটা আবার প্রমাণ করে শেখ হাসিনা সম্ভবত তার পরিবার, শুভানুধ্যায়ী থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। অথবা তিনি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন সেখানে তাঁর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। যারা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছে তাঁরা তার দুইটি বিশেষ দুর্বলতা অহংকার আর জেদ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানেন।

গত ১৫ দিনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যা হারিয়েছে, সেটা আগামী ৫০ বছরেও উদ্ধার হবে না। এই তরুণ প্রজন্ম এবং তার পরবর্তী তরুণ প্রজন্ম যে ঘৃণা নিয়ে আওয়ামীলীগকে দেখবে, সেটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের ভারসাম্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এই আন্দোলন থেকে আওয়ামী লীগ তেমন কোন শিক্ষা অর্জন করেছে কি না তা এখনও বুঝা যাচ্ছে না তবে তাদের নেতৃবৃন্দ তৃনমূলের নেতাকর্মীদের একটি ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছে যে, ক্ষমতা থেকে চলে গেলে ঘরে ঢুকে তাদেরকে হত্যা করা হবে (মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম)। ফলে এটা বলা যায়, তাঁরা বুঝেছে জনরোষ কি হতে পারে! চট্টগ্রামে ছাত্র শিবির দেখিয়েছে ক্ষমতার পালা পরিবর্তন হলে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেদের কি বীভৎসভাবে হত্যা করা হবে।

ধ্বংসযজ্ঞের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কান্না করলেন, ঠিক আছে মেনে নিলাম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে অযাচিত গোঁয়ারতুমি আর অদূরদর্শিতার কারণে যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ গেলো, সেটার দায় কে নিবে? টাকা দিয়ে আমরা হয়ত ধ্বংসযজ্ঞ পুনরায় ঠিক করা যাবে কিন্তু মানুষের প্রাণ? সেটা কিভাবে ফেরত দিবেন?

কাজী পাড়া মেট্রো স্টেশন, কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশন এবং সংলগ্ন ফুট ওভার ব্রিজ থেকে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের ছেলেপেলে আর পুলিশ যৌথভাবে আন্দোলনকারীদের গুলি ছুড়েছে। ভাগ্য ভালো যে কারওয়ান বাজারে মেট্রো স্টেশন নিরাপদ ছিলো কিন্তু কাজী পাড়া স্টেশন এর উপর থেকে ছাত্রদের উপর গুলো ছোড়া হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ফলে আন্দোলনকারীদের একটা অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে মেট্রোরেল স্টেশনে উঠতে চায়। আনসার গেট খুলতে অপারগতা জানানোর পর সেখানে ভাংচুর চলে। এই ভাংচুর গ্রহণযোগ্য নয় এটা কেউ সমর্থন করে না। কিন্তু আপনি বলুন, কেন মেট্রো স্টেশনে বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে পুলিশ আর ছাত্রলীগের ছেলেপেলেদের গুলি করতে হবে? এটার ব্যাখ্যা কি?


এছাড়া অনেকেই বুঝতে পারছে না, কোটা আন্দোলনের সাথে দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবনের কি সম্পর্ক? অনেকেই বলছেন আগারগাঁওতে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের নতুন বিল্ডিং তৈরী হয়েছে এবং বনানীর জ্যামের কথা বিবেচনা করে সেতু ভবন সরিয়ে নেয়ারও চিন্তা হচ্ছিলো। ফলে কোটা আন্দোলনের সাথে সম্পর্ক-বিহীন এই সব স্থাপনায় আগুন নতুন করে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে?

এই গুলো কি কোন ধরনের ডাইভারশন ছিলো? নাকি ঘটনা জাস্টিফিকেশন করতে এই সকল উপাদান প্রয়োজন ছিলো?
আমরা সাধারণ মানুষ এই সব জানি না।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিটেন্স না পাঠানোর জন্য প্রবাসীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামগ্রিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে এটা একটি আবেগী সিদ্ধান্ত। এই মুহূর্তে আপনি একে সঠিক না ভুল স্ট্র্যাটেজি দিয়ে জাস্টিফাই করতে পারবেন না। দুই একবার করতে দিন, মানুষজন ক্রমেই ব্যাপারটা থেকে ফিরে আসবে। এইভাবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর অনেক সমস্যা আছে। মোটা-দাগে বলা যায় হুন্ডি মূলত দেশের টাকা পাচারের একটি অন্যতম সহজ মাধ্যম। এছাড়া এলসির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস এর ব্যাপার তো আছেই।

এছাড়া সরকার থেকে এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে মনিটর করবে তা বলা যায়। প্রবাসীদের একটা অংশের ডাটা বেইজ সরকারের হাতে আছে। সরকার এই ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যাংক এবং প্রশাসনের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবে কারা কারা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। হুন্ডিতে সহায়তা করার জন্য প্রবাসীদের পরিবারগুলো বিপদে পড়তে পারে বা ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ এখন খুব নাজুক অবস্থায় আছে, এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, অর্থনৈতিক কারণে সরকারের পতন ঘটলে নতুন সরকার আসার পর আপনি রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশকে উদ্ধার করতে পারবেন।

অতএব এই বিষয়ে আপনি বুঝে শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। অনুগ্রহ করে যে কোন প্রোপ্যাগান্ডার পা দেবেন না।

সম্ভবত ভৌগলিক রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের আশু পতন সম্ভব নয়। তবে জনগণের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি, আস্থা করি। যে কোন পরিবর্তন তো হয়ে যেতেই পারে। এমন যদি একটা রাজনৈতিক দল থাকত, যারা শুধু আমাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করত, আমাদের জন্য ভাবত! আহা!।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৩
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×