somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাদিদ
তুমি আমার রাতবন্দিনী। ধূসর স্বপ্নের অমসৃণ সুউচ্চ দেয়াল তুলে তোমাকে আমি বন্দী করেছি আমার প্রিয় কালোর রাজত্বে। ঘুটঘুটে কালোর এই রাজত্বে কোন আলো নেই। তোমার চোখ থেকে বের হওয়া তীব্র আলো, আমার হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব জ্যোৎস্না।

যাপিত জীবনঃ ব্লগিং এর সমাপ্তি।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ব্লগের কথা আমি সর্বপ্রথম শুনি ২০০৯ সালে। তখন ইন্টারনেটে বাংলা লেখার খুব একটা সুবিধা ছিলো না ফলে এই সাইটিতে তখন হাজারো মানুষের পদচারনা। কি দুর্দান্ত সব লেখনি! ফিচার, গল্প কবিতা, রম্য নিয়ে এক হুলুস্থুল অবস্থা। রাত জেগে মন্তব্য পড়তে পড়তে কেটে যেত। কি অসাধারন সব যুক্তি পাল্টা যুক্তি। আস্তিক, নাস্তিক, সুশীল ( আমি একটু সুশীল টাইপ ছিলাম), ভাদা, পাদা, ছাগু ইত্যাদি নিয়ে দারুন ফাইট আর তর্ক হতো। সেই সময় এত পোস্ট আসত যে, মডারেশনকে সাহায্য করার জন্য ব্লগারদের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কিছু 'নির্বাচক' ছিলেন। যারা যে কোন ভালো পোস্টকে চাইলে নির্বাচিত পাতায় নিতে পারতেন। সাধারন ব্লগারদের মধ্যে যে সকল ব্লগার তাদের ব্লগিং এর গুনগত মান, মেধা, সততা, প্রজ্ঞা দিয়ে ব্লগ টিমের দৃষ্টি আকর্ষন করতেন তাদের মধ্য থেকে অনেক যাচাই বাছাই করে একজন নির্বাচককে নির্বাচন করা হতো। এই পর্যবেক্ষন প্রক্রিয়াটি অতি সর্তকতা এবং গোপনীয়তার সাথে করা হতো। সাধারন ব্লগাররা অবশ্য জানতেন না কে নির্বাচক। বিষয়টা গোপন রাখার শর্তেই কেবল একজন নির্বাচক কাজ করার সুযোগ পেতেন।

আমি ব্লগের সাথে কাজ করা শুরু করি সেই ২০১২ সাল থেকে। প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা সাধারন ব্লগারদের মধ্যে কেউ জানতেন না। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের শেষের দিকে ব্লগ টিমের পক্ষ থেকে আমি প্রকাশ্যে এসে বক্তব্য দেই এবং ব্লগারদের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ব্লগারদের যে কোন সমস্যার দ্রুত সমাধান করা, তাদেরকে সাহায্য করা।


ছবিঃ সামহোয়্যারইন ব্লগ অফিস। ছবিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে।

সেই ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবাই আমাকে মডারেটর জেনেই আমার সাথে গুণী সকল ব্লগার ব্লগিং করেছেন, বিভিন্ন পোষ্টে আমি একজন ব্লগার হিসাবে আমার নিজস্ব দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ করেছি, যৌক্তিক বিতর্ক করেছি। ব্যক্তিগত আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিল না থাকলেও বা সমর্থন না থাকলেও মডারেটর হিসাবে কোন অন্যায় কারো সাথে করা হয় নি। তবে আমি অবশ্যই সবাইকে খুশি করতে পারি নি, কারন এটা সম্ভবও না।

আমি আমার দুটো স্বত্তাকে স্বতন্ত্র রাখার চেষ্টা করেছি। উদহারন হিসাবে বলা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে একজন নারী মডেল অতীতে বাংলাদেশের গ্রামের মেয়েরা কেমন পোষাক পড়ত সেইভাবে সেজে একটি ছবি তুলেছিলেন, যা ব্লগে একজন ব্লগার পোস্ট করেছিলেন। আমি উক্ত পোষাক (ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী) কে কেন অশালীন হিসাবে বিবেচনা করলাম না দেখে কয়েকজন ব্লগার আমার উপর নাখোস হয়েছে। কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করতেন, যে পোস্টের কন্টেন্টের সাথে এই ছবির কি সম্পর্ক তাহলে আমি সেই বিষয়ে উক্ত ব্লগারকে জবাবদিহীতার আওতায় আনতে পারতাম, যা আমি নিজে স্বপ্রণোদিত হয়ে করেছি। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, পোস্টের সাথে ছবির সম্পর্ক খোঁজার প্রশ্নের চাইতে তারা প্রশ্ন করেছেন ছবির শালীনতা নিয়ে। যে প্রেক্ষাপট থেকে সেই ছবিটি তোলা হয়েছিলো, সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আনলে ছবিটি মোটেও অশালীন কিছু নয়। এখন আপনাকে যদি আইয়ামে জাহিল্যিয়াত যুগের কোন নারীর সাজে সাজতে হয় - আপনি নিশ্চয় বোরকা পড়ে তা পোট্রে করবে না। কিংবা আপনাকে যদি একজন আফ্রিকান আদিবাসী তরুনীর সাজ নিতে বলা হয়, তাহলে আপনি নিশ্চয় শাড়ী চুড়ি পরে তা সাজবেন না। আমি সিম্পলি সেই ব্যাপারটিই বিবেচনা করেছি।

এই সামান্য বিষয়টি না বুঝে আমাদের কতিপয় ব্লগার এখানে ধর্ম টেনেছেন এবং অবান্তর সব লজিক দেখিয়েছেন। সব কিছুতে ধর্ম টেনে আনা ইদানিং একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। এটা ধর্মভীরুতা নয় বরং এক ধরনের লোক দেখানো ধর্মীয় আচরন। অবশ্য এখন শো অফ এবং এই ধরনের দ্বিচারিতা দেখানোরই যুগ। ফলে অনেকেই অন্যের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে ধর্মের প্রতি আহবান করার নামে নাক গলায় এবং একধরনের বিকৃত শান্তি পায়।সবচেয়ে আফসোস হচ্ছে, যিনি ধর্মের ব্যাপারে এত স্পর্শকাতর বা ধর্মকে যিনি এত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তার ব্যক্তিগত জীবনে হাজারো উদহারন আছে ধর্মের বিরুদ্ধে যাবার। কিন্তু যেখানে নিজের শখ আর ইচ্ছার ব্যাপার আছে সেখানে ধর্মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো যায়। এই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যে পাপ হয় তা মোছা যায় অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে ধর্মকে ঠেলে দিয়ে। যেমন, কি ব্যাপার! আপনার বুকে কাপড় নাই কেন? মাথায় কাপড় নাই কেন?

ব্যক্তি আমি তো আর শতভাগ দোষত্রুটি মুক্ত নয়! তা স্বত্তেও আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি যতই কাউকে অপছন্দ করি না কেন ব্লগে আমি একজন ব্লগার হিসাবেই বিবেচনা করেছি। ফলে তার প্রকাশিত পোস্টের মধ্যে যা নির্বাচিত পাতায় যাওয়ার যোগ্য সেটা নির্বাচিত পাতায়ও গেছে।

এত সব ঘটনা এই কারনে ব্যাখ্যা করলাম যে, এত বছর পর এসে আমি জানতে পারলাম আমার এই ব্যক্তিগত মত প্রকাশকে অনেকেই ব্লগের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হিসাবে গ্রহন করছেন। নতুন ভাবে শিখলাম, নিজের নামে ব্লগিং করলে নানারকম অদ্ভুত ও অনাকাংখিত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাকে আমার ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে বলতে বাধ্য করা হয়েছে। কারন মডারেটর কোন ধর্মের বিশ্বাসী এটা না জানলে ধর্মীয় পোস্ট দিয়ে শান্তি পাওয়া যাবে না। মডারেটর কোন যৌক্তিক তর্কে অংশ নিতে পারবে না। মডারেটরের কাজ শ্রেফ বিভিন্ন ক্যাচালে অফিসিয়াল বক্তব্য দেয়া তাও তা হতে হবে ধর্মীয় প্রেক্ষাপট কে মাথায় রেখে। নইলে আপনি বিশ্বাস করবেন - সামহোয়্যারইন ব্লগ ইসলাম ধর্মের পক্ষে লেখালেখির করার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক স্থান না।

দিন শেষে আমি কোনভাবেই চাই না মডারেটরের ব্লগিং করার কারনে প্রিয় ব্লগাররা বিব্রত হোক বা নিজেকে অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত করুক। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমার ব্যক্তিগত ব্লগিং এর ইতি টানলাম। আজ থেকে আমার যাপিত জীবন সিরিজটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করছি। ব্লগার জাদিদ হিসাবে আর কোন মন্তব্য বা পোস্ট করা হবে না। ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা নিক থেকে শুধুমাত্র ব্লগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নোটিস বা জানানো হবে। আশা করছি এতে অনেকের ব্লগিং এ সুবিধা হবে। যদি ভবিষ্যতে কখনও মডারেটর হিসাবে অন্য কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করি, তখন না হয় আবার এই নামে ব্লগিং করব।

বাংলা ব্লগ থেকে ব্লগার হিসাবে বিদায় নেয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই কষ্টকর এবং হতাশাজনক। বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এবং বাংলাদেশের সমাজে যে অন্ধকারের হাতছানি দেখা যাচ্ছে, তা দ্রুত কেটে যাক, এই প্রত্যাশা রইল।

সবার প্রতি শুভেচ্ছা!
শুভ ব্লগিং!

বিঃদ্রঃ এই পোষ্টে মন্তব্য সুবিধাটি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। কারিগরী কোন সমস্যার কারনে এই মুহুর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি ঠিক করার চেষ্টা করছি। এই সময়ের মধ্যে অনুগ্রহ করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে সহ ব্লগারদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ১:০৫
৪৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×