প্রথম কথা,What makes us human এর বাংলা হচ্ছে এটার টাইটেল...হাহাহাহা...কিন্তু কিছুতেই কিছু মনঃপুত হচ্ছে না...এবার আসল কথায় আসি।
দীর্ঘদিন যাবৎ এই প্রশ্নটি বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছেন,কেন আমরা এরকম হই যেমনটা আমরা সচরাচর দেখে থাকি।মানুষ মানেই কি কেবল দু'পায়ে সোজা হয়ে হাটা প্রাণী নাকি আরো কিছু ব্যাপার আছে?এর কি কোন সময়সীমা আছে নাকি যে কোন সময়ই টারজান থেকে আপনি মিঃ টারজান হয়ে যেতে পারবেন?এখানে পুরো বিষয়টা নিয়ে কথা টানবো না কেবল শিশুদের গুরুত্ব এবং সমাজের অবস্থানগত কিছু ধারণাকে তুলে আনার চেষ্টা করব।
শিশু,খুবই পরিচিত এবং আদুরে একটি শব্দ,যার সাথে মানুষের ভবিষ্যতের নানা আশা, আকাঙ্ক্ষা জড়িত। যদিও প্রতি মিনিটে পৃথিবীতে ২৫০ শিশু জন্মগ্রহণ করে,(মানুষ মারা যায় ১৫০জন) এবং আমরা সবাই এই শিশুগোষ্ঠীর সাথে অতি পরিচিত কিন্তু কতটুকু অবাক বা বিস্ময় আমাদের মাঝে কাজ করে যখন আজকের আমাকে শিশু হিসাবে কল্পণা করি।নানা আবেগী কথা বলা যেতেই পারে কিন্তু আসল প্রশ্নটা আর করা হয় না,কিসের দ্বারা এই শিশুটি আজকের আমিতে রূপান্তর হলো বা মানুষ আসলে কিভাবে তৈরী হচ্ছে একটি শিশুর ভেতরে।এখনি ভ্রু কুচকাবেন না,আসুন দেখি।
"ফেরাল চিল্ড্রেন" বা জংলী শিশু (হাহাহাহা) বা যেসব শিশু মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী দ্বারা লালিত হয়,যেমন-আমাদের চিরচেনা টারজান,তারা জন্মগ্রহণ করে মানবশিশু হিসাবে কিন্তু মনুষত্যের কিছুই তো তাদের ভেতরে আর থাকে না পরে।তাহলে কি আমরা বলতে পারি না প্রতিটা শিশুই আসলে খালি কলসী?জন্মগ্রহণের পর থেকে ইহা ভরা শুরু হয় আর তা থেকেই আমি বা টারজানের উৎপত্তি।তাহলে আমরা মানুষ প্রথমে দল বেধেছিলাম বা সমাজ গড়েছিলাম ভবিষ্যতের মানুষ নিশ্চিত করতে,আর কোনকিছুর জন্যই না।এই সমাজ ও সামাজিকতার ব্যাপারটা একটু গোলমেলে হলেও এর প্রয়োজনীয়তার মূল উৎস হচ্ছে,মানব প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সাথে।
এবার আসুন কলসী ভরানো শুরু করি।কিভাবে একটি খোলস আজকের আমি বা আপনাতে পরিণত হয়েছে?অনেক মাতাপিতায় নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় একটি শিশুকে নিজের মনের মত করে গড়ে তুলতে চান,আর সেই কারণেই হয়ত একটি পরিবারের অধিকাংশ মানুষই একই রকমের হয়ে থাকে,এটা যেমন সত্য তেমনি আরেকটি ব্যাপার থাকে তা হচ্ছে সংস্পর্শ বা ফিজিকাল কনটাক্ট।১৯৩০-৪০এর মাঝে একজন বৈজ্ঞানিক তার (১-২বছর) বাচ্চার সাথে একটি শিম্পাঞ্জির বাচ্চাকে সাথী হিসাবে নিয়ে আসেন।উদ্দেশ্য,এই ফিজিকালিটিকে পরীক্ষা করা।ওনার গিনিপিগ ছিল এখানে শিম্পাঞ্জির বাচ্চাটি।তিনি দেখেন যে শিম্পাঞ্জিটি নানা কিছু রপ্ত করছে তার নিজের বাচ্চাটি যেমন করছে।কিন্তু তিনি যা খেয়াল করেননি তা হচ্ছে,পরীক্ষাটিতে তার নিজের সন্তানো গিনিপিগ হয়ে গেছে পরোক্ষভাবে।আর তিনি তা বুঝলেন কিভাবে?যখন তার সন্তান ভাষা জ্ঞানের পরিবর্তে শিম্পাঞ্জির নানা ডাক দেয়া শুরু করল।হাহাহাহা...হুমম একটু বাড়িয়ে বললাম।আসল কথা,অর্থবোধক শব্দ না বলে,শিম্পাঞ্জির মত শব্দ করার প্রবণতা।তাহলে বলা যায়,মানুষ হবার একটা অংশ হচ্ছে ভাষাজ্ঞান।আরেকটু পরিষ্কার করে বললে,ব্যাকরণ জ্ঞান অর্থাৎ অর্থবোধক বাক্য তৈরী করতে পারা যা মানবশিশু কিভাবে যেন শিখে যায়।যেমন "আঁই কিচ্ছি" নোয়াখালীর শিশু শিখবে,একই বয়সী আপনার সন্তান বলছে,"আমি কি করছি"?যাই হোক,আসল কথা,অর্থোবোধক বাক্য তৈরী করতে পারা মানুষের একটি অন্যতম দিক।
১৮০০সালের দিকে ফ্রান্সে একটি শিশুকে জঙ্গলে পাওয়া যায়,সোজা কথা,জংলী শিশু।হাহাহা...তার বয়স ৬-৮এর ভেতরে,কোন ভাষাজ্ঞান নাই এবং একদমই শো অফ যাকে বলে,মানে,দেখতেই যা মানুষ আর সবই প্রানীদের মত।একজন চিকিৎসক ছেলেটিকে নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং বেশ সফল হন।তিনিই প্রথম এই ভাষাজ্ঞানের কথা বলেন এবং ইম্পেথি বা "সহানুভূতি"র কথা বলেন।ছেলেটি যদিও সময়ের সাথে সাথে সহানুভূতি এবং মানুষের নানা আচার ব্যবহার রপ্ত করে নেয় কিন্তু ভাষাজ্ঞান তার আর আনা সম্ভব হয়নি। অদ্ভূত কিন্তু সত্য।তার মানে,ব্যাকরণ জ্ঞান ও সহানুভূতি আপনাকে, আমাকে তথা পুরো মানুষ প্রজাতীকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে।
প্রশ্ন, ছেলেটির ভাষাজ্ঞান আসলো না কেন যেখানে বাকি মোটামুটি সবই হয়েছিল?যা অনেকদিন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও,আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে দেখা গেছে,আমাদের মস্তিষ্কের বাম পাশের কিছু নার্ভ এই ভাষাজ্ঞান ও যোগাযোগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় শৈশবে বা শিশু অবস্থায় এবং এটা একটি বাচ্চা তার সাথে যার ফিজিকাল কন্টাক্ট বেশি হয় তার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।সমস্যা হচ্ছে,একটা বয়সের মধ্যে যদি এই ক্ষমতা নার্ভ না পায়,তাহলে তা ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে এক সময় একদমই অসম্ভব হয়ে যায়।আর এই সময়সীমাগুলোকে ক্রিটিকাল পয়েন্ট বলে।যে সমস্ত শিশু মানুষের দ্বারা লালিত হবার পরো,শৈশবে অবহেলা,অবজ্ঞা,এবিউসের স্বীকার হয়,তাদের মস্তিষ্কের গঠণ খুবই ব্যাহত হয় এবং তারা নানা দিক দিয়ে স্বাভাবিক গড় মানুষের তুলনায় দূর্বল মানসিকতার হয়ে থাকে।এটা যে কোন কারণে যে কারো শৈশবেই হতে পারে আর তাই ধারণা করা হয়,আমরা সবাই-ই কম বেশি মানসিক প্রতিবন্ধী।
কেন?
আজকে আপনি নিজেই হয় রাগ করে বাচ্চাটিকে কিছু বলেছেন বা বকেছেন যা তার মানসিকতা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি আর খালি কলসীর মাঝে এসেছে একটি বাবল।কাল হয়ত (অন্যান্য ব্যাপার যাকে আপাতত আমরা বোঝার সুবিধার্থে মাটি বলব) মাটির নিচে বাবল চাপা পড়ে গেছে আর কোনদিন তা সমস্যা করেনি কিন্তু পৃথিবীতে যেমন আচমকা গর্ত তৈরী হয়ে যায় মাটি ধসে তেমন যে আমার বা আপনার মানসিকতার ক্ষেত্রে হবে না তা নিশ্চিত বলা যায় না।তবে যা নিশ্চিত করা যেতে পারে তা হচ্ছে, এমন কিছু যেন আপনি আপনার শিশুর সাথে না করেন।মনে রাখবেন,ক্রিটিকাল পয়েন্ট।
যাই হোক,শিশুরা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু মানবিক দিক রপ্ত করে। আর তা কেবল মানুষের দ্বারা লালিত পালিত হলেই হবে না,আপনাকে জ্ঞানত তাকে প্রপার ওয়েতে বেড়ে ওঠাতে হবে যদি প্রকৃত মানুষ করতে চান।নিজের মত না, প্রকৃত মানুষ যেমন হওয়া উচিত। আর সেজন্য আপনাকে আগে জানতে হবে,শিশুদের মানসিক গড়ন আর সময়সীমা সম্পর্কে যেন আপনি নিজে প্রস্তুত থাকতে পারেন।যেমন ১০ মাস ১০দিন পরে শিশু ভূমিষ্ট হবার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি বলেই আজকাল শিশু মৃত্যুর হার কমেছে তেমনি এর পরের ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের সচেতন হবার সময় হয়েছে যাতে খালি কলসীটি প্রকৃত মানুষে পরিণত হতে পারে।
আমি নব্য মা-বাবাদের অনুরোধ করব, আগে জানুন আর জেনেশুনে বাচ্চাটির যত্ন নিন।সমাজের চাপে, বাচ্চা নিতে হবে বলেই নেবেন না যদি নিজেরা প্রস্তুত না থাকেন যদিও সময়সীমা এখানেও আছে। বাচ্চা জন্ম দেয়াতেই দায়িত্ব শেষ নয়, বাচ্চাটিকে প্রকৃত মানুষের পরিণত করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব বহাল থাকে।মনে রাখবেন,নির্দিষ্ট সময়ে কাজগুলো না করলে পরে অনেক চেষ্টা করেও কিছু করা যায় না। তাই কেবল ভাল স্কুল, পরিবেশ ভাল মানুষ তৈরী করে না...বাচ্চাটির সাথে একটি কুকুর বা বিড়াল বা পাখি না দিয়ে নিজেরা সময় দিন অনেক বেশি, খেয়াল রাখুন তার মানসিক গ্রোতের দিকে।এই খালি থাকা অবস্থাটাই খুবই ঝুকি পূর্ণ, তখনই নিজের অজান্তেই আপনি নিজে বাচ্চাটির ক্ষতি করতে পারেন কারণ এই অবস্থাটাতের প্রতিটি শিশু যে কোন সময় যে কোন কিছুর প্রভাবে মানসিকভাবে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।আপনি কেবল নিশ্চিত করতে পারেন যেন আপনার সন্তানটি প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে খালি কলসীটি পূর্ণ করে, বাকিটা তার নিজের চয়েজ বা পছন্দ বা সীদ্ধান্ত।তাই তার মাঝে এই প্রশ্নটি যেন সজাগ থাকে, কি আমাদেরকে মানুষে পরিণত করে, যা আপনাকে বাধ্য করছে নিজেকে বিচার করতে প্রতিনিয়ত এবং নিজেকে শুদ্ধ মানুষে পরিণত করতে।
কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেলেও আশা করি বুঝতে পারছেন যা প্রথমে বলব বলে বলেছিলাম। সমাজ দরকার মানুষ তৈরী করতে। শিশু হচ্ছে একটি খালি পাত্র আর তা প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে মাতাপিতা।এখানে মুরগী আগে না আন্ডা আগে ওভাবে ভাববেন না প্লিজ।হাহাহাহা...ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৪৯