somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ The Past (2013) by Asghar Farhadi

২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

The Past (2013)
একটা মুভি যে কতটা গভীরভাবে জীবনমুখী হতে পারে এটা আসগার ফারহাদি'র মুভি দেখলে খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। ২০১১ তে A Separation মুভির মাধ্যমে উনি খুব ভালভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন উনি ঠিক কোন লেভেলের ডিরেক্টর যেই মুভি কিনা অস্কার বিজয় ছাড়াও দীর্ঘদিন rotten tomatoes এ ১০০% ফ্রেস স্কোর বজায় রেখে অতি সম্প্রতি ৯৯% এ নেমে এসেছে এবং IMDB তেও টপ ২৫০ লিস্টে খুব দ্রুত জায়গা করে নিয়েছিল।
সম্প্রতি দেখলাম তারই পরবর্তী চমক The Past (original title "Le passé") এবং ঠিক সমানভাবেই তার স্বভাবসুলভ পরিচালকিয় গভীরতায় আরেকবার বিমুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। আসগার ফারহাদি'র মুভির সবথেকে বড় বিশিষ্ট হলো একদম সহজ এবং সাবলীলভাবে কোন সমাজের বা কোন পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে ওই সমাজ বা সংস্কৃতির কিছু বৈরি দিক ঠিক এমনভাবে তুলে ধরে যে মুভি দেখার সময় দর্শক টেরই পাবে না সে একটা মুভি দেখছে। মনে হবে একদম স্বাভাবিক জীবনের কোন কাহিনীই তার সামনে ভিডিও করে তুলে ধরা হয়েছে। Le passéও তার ব্যাতিক্রম নয়। বরং আমার মনে হয়েছে এটা A Separation এর চেয়ে আরও বেশি উপভোগ্য কারণ আসগার ফারহাদি'র অন্য মুভির তুলনায় এটায় কাহিনির প্রগাঢ়তা ও সাসপেন্স, ক্যারেক্টারগুলোর পাওয়ার এবং ঘটনার টুইস্ট অনেক বেশি।
এটাকে বলা হচ্ছে ২০১৩ এর একমাত্র French Pure Drama Film.
যদিও আসগার একজন ইরানী পরিচালক কিন্তু এই মুভিটা মূলত ফ্রেঞ্চ মুভি। ভাষাও প্রায় পুরোটাই ফরাসী; সামান্য কিছু ফারসি আছে।



--------------কাহিনীসংক্ষেপঃ স্পয়লার আছে --------------

মুভির মুখ্যচরিত্র বলা যায় আহমাদ নামক এক ইরানীকে যাকে হঠাত তার ex-wife যে তার ২ সন্তান নিয়ে ফ্রান্সেই বসবাস করছে তার ডাক পেয়ে ফ্রান্স এ আসতে হয় এবং যার সাথে কিনা তার প্রায় ৪ বছর হলো ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সে ডাকার কারণ হিসেবে তাকে জানানো হয় তার স্ত্রী (নাম মারি) এখন অফিসিয়ালি তাদের মধ্যে ডিভোর্স চায় যেটা দেয়ার জন্য আহমাদ এর আগেই একবার আসার কথা ছিল কিন্তু অনিবার্য কারণে সে তখন আসতে পারেনি। এসে তার ex-wife মারি'র বাড়িতেই থাকতে গিয়ে সে উধঘাতন করে হঠাত ডিভোর্স এর জন্য জরুরি তলবের কারণ। তার স্ত্রী এখন অন্য একজনের সাথে লিভ টুগেদার করছে যাকে সে শীঘ্রই বিয়ে করবে, সেজন্যই ডিভর্সটা এইমুহুর্তে জরুরি। জানতে পেরে, এই কথা তাকে এখানে আসার আগে কেন জানানো হয়নি এটা নিয়ে তার ও মারির মাঝে একটু মৌনমালিন্যের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘটনায় আহমাদ কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়। তারপরেও ঘটনার প্রবাহে তাকে সেটা মেনে নিতেই হয়। এর পরেও হয়ত সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হয়ে জেতে পারতো, কিন্তু ঝামেলা বাধে তাদের ২ মেয়ের মাঝে বড় মেয়ে লুসিকে নিয়ে। স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারে বড় মেয়ে কোন কারণে ইদানিং মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত; মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করে, বাড়িতে সময় মতো আসেনা, প্রতিদিন কলেজ থেকে ফিরতে দেড়ি করে, মাকে খুলে কিছু বলেও না, মন খারাপ করে থাকে, ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেনা। এই ব্যাপারে স্ত্রী মারি তার উদ্বিগ্নতার কথা আহমেদকে জানায় এবং আহমেদকে মেয়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে বলে। মেয়ের সাথে কথা বলেই বেরিয়ে আসে অদ্ভুত কিছু তথ্য, জানা যায় মেয়ে কোনোভাবেই তার মায়ের বর্তমান প্রেমিককে মেনে নিতে পারছে না। কারণ হিসেবে জানা যায় তার স্ত্রীর বর্তমান প্রেমিক (নাম সামির) এর স্ত্রী এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে যে কিনা তাদের এই রিলেসনের কথা জানতে পেরে সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছিল। এটা জানার পর লুসি তার মা এবং তার মায়ের প্রেমিক ২জনের কাউকেই দেখতে পারেনা। এর মাঝে আহমেদকে কেন আবার মারি তার নিজের বাড়িতে এনেই উঠিয়েছে এটা নিয়ে সামিরের সাথে মারির একটা দণ্ডের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে আহমেদ তার মেয়ে লুসিকে এইরকম মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রেখে চলে জেতেও পারছে না যদিও এর মাঝে মারি আর তার ডিভোর্স এর সকল কাজ শেষ হয়ে গেছে। তখন তার মেয়েকে শান্ত করার জন্যে আহমেদ বের হয় এই ঘটনার সত্যতা খুঁজতে যে আসলেই সামিরের স্ত্রী কেন সুইসাইড করতে গিয়েছেলো। এটা বের করতে গিয়ে খুজে পায় একটার পর একটা টুইস্ট। সব মিলিয়ে এভাবেই এই মাত্র কয়েকটি চরিত্রেরই মানসিক দ্বন্দ্ব, কাহিনী, সম্পর্কে টিকে থাকার লড়াই এবং অদ্ভুত কিছু টুইস্ট এর মধ্য দিয়ে চলতে থাকে মুভির কাহিনী এবং শেষ পর্যন্ত এই কাহিনী কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে সেটা মুভি না দেখলে কল্পনাও করতে পারবেন না। বাকিটুকু বললে মুভি দেখার আর কিছু থাকবে না।
সব মিলিয়ে যারা ডায়লগ বেইসড পিওর ড্রামার ভক্ত তারা মরার আগে এই জিনিস দেইখা মইরেন, নাইলে বিশাল জিনিস মিস। :D
খারাপ লাগার চান্স নাই গ্যারান্টি দিলাম।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×