somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাগ্যরজনী বা শবে বরাত; ফজীলত ও আমল।

২৩ শে মে, ২০১৬ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন-রাত-মাস-বছর সবই আল্লাহর সৃষ্টি। এরপরও কিছু দিন ও রাতের মর্যাদার মধ্যে বিশেষ বিশেষ তারতম্য আছে। তেমনি একটি রাত "শবেবরাত" এমনি এক বরকতময় ও মহিমান্বিত, সওয়াবপূর্ণ রজনী। এ সময় ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব অনেক বেশি। শব ফারসি শব্দ-এর অর্থ রজনী বা রাত। আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা সৌভাগ্য, শব্দটির অন্য অর্থও আছে। শবে বরাতকে আরবীতে বলে লাইলাতুল বারায়াত। লাইলা অর্থ রাত বা রজনী, আর বারায়াত অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি অর্থ লাইলাতুল বারায়াত মানে মুক্তি রজনী বা নিষ্কৃতি রজনী। শবে বরাত আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনার রাত। পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপ কাজ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রাত।

এই রাতে নামাজ-কালাম, তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার এবং কুরয়ান তিলাওয়াত ইত্যাদি পুর্ণের কাজগুলি বেশী করিয়া আদায় করিতে হয়। যত বেশী ইবাদত করা যায় ততই উত্তম।

শবেবরাতের ফযীলতঃ –হুজুরে পাক (সঃ) বলেন, “আমি জিবরাঈল (আঃ)-এর নিকট শুনেছি, যারা শাবানের চাঁদের ১৫ই তারিখের রাত্রিতে জেগে ইবাদত করবে, তারা শবে কদরের ইবাদতের সমতুল্য ছওয়াব পাবে।”

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, “আমি এক রাতে হযরতের (সাঃ) কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি সেজদায় পড়ে কাঁদছেন। কিছুক্ষণ পড়ে মাথা তুলে বললেন, ও আয়েশা! তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, না। হযরত (সাঃ) বললেন, এটা শাবানের চাঁদের ১৫ই তারিখের রাত। এই রাতে যারা যত ইবাদত করে আল্লাহর কাছে গুনাহর জন্য মাফ চাইবে, আল্লাহ তা’লা ততই মাফ করবে। যদিও তাদের গুনাহ পাহাড় সমান হবে।”

হাদীসে আছে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন:- যারা এই রাতে ইবাদত বন্দেগী করিবে অর্থাৎ নফল নামাজ, পবিত্র কুরআন তেলওয়াত, যিকির-আযকার ইত্যাদি করিবে- আল্লাহ পাক নিজ রহমতে তাহাদের শরীরের জন্য জাহান্নাম হারাম করিয়া দিবেন।
হযরত আবু বকর(রাঃ) হতে বর্নিত হযরত রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন:- তোমরা শা‘বান মাসের ১৫ তারিখের রাতে জাগরিত থেকে এবাদতে মগ্ন হও। যেহেতু ঐ রাতটি বরকতময় ও ফযীলতর্পূন। ঐ রাতে আল্লাহ্ তা-আলা ডেকে বলেন:- “ তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমা প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব”।
অন্য এক হাদীসে বর্নিত আছে, হযরত রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন:- শবে বরাতের রাতে এবাদতের নিয়্যতে সন্ধ্যার পরে যে ব্যক্তি ভালভাবে গোসল করবে, তার গোসলের পানির প্রত্যেকটি ফোটার পরির্বতে ৭০০ রাক‘আত নামাযের সমান ছওয়াব লাভ হবে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যখন শাবান চাঁদের ১৫-এর রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে। আর পরদিন রোজা রাখবে। কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দেব। আছো কোন বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো কোন তওবাকারী? আমি তোমার তওবা কবুল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহবান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন- শবে বরাতে আল্লাহ স্বীয় রহমতের তিনশত দ্বার খুলে দিয়ে প্রথম আসমানে আসেন এবং সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত তাঁর বান্দাহদেরকে এ বলে আহবান করতে থাকেন, হে আমার বান্দাহগণ আজ তোমরা কে কি চাও? কে রোগ মুক্তি চাও? কে মনোবাসনা পূর্ণ করতে চাও? কে সারা জীবনের গুনাহর ক্ষমা চাও? কে অফুরন্ত সুখের জান্নাত চাও? আজ যে-যা চাও তা পাবে।

শবে বরাতের নামাযঃ- এই রাত্রে নামাযের রাকাত সংখ্যার কোন সুনির্দিষ্ট দলীল প্রমান নাই। এ সম্পর্কে যে সকল বর্ণনা রহিয়াছে তাহার মর্মে কেবল এইটুকুই উপলব্ধি করা যায় যে, ইহা যত বেশী আদায় করা যায় ততই লাভ।

শবে বরাতের রাতে এশার নামাযের পর থেকে সুবেহ্ সাদিক অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত নফল নামায ও বিভিন্ন এবাদত পবিত্র কুরআন পাঠ, যিকির-আযকার, তসবিহ-তাহলীল করা যায়। এই রাতে কমপক্ষে ২ রাকাত করে ১২ রাকাত নফল নামায ও ৪ রাকাত ছালাতুত্ তাছবীহ্ নামায পড়া অতি উত্তম।

নামাযের বাংলায় নিয়ত:- “আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু‘রাক‘আত নফল নামায আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

শবে বরাতের নামায দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাযের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ।

আজকের এ ভাগ্য রজনীর বা শবে বরাতের উছিলায় আল্লাহ্‌ আমাদের ঘুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দিন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ রাত ২:২৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×