রক্তে মাখামাখি হয়ে কাতরাচ্ছে ছেলেটি। অনেকগুলো রটের আঘাত ছেলেটার পুরো শরীরটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে বলার চেষ্টা করছে আমি নির্দুষ। ঘটনাটি ঘটছে পরিস্কার দিনের আলোয়, লোকজনের ভীড়ে। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে শুুটিং স্পটের মারামারির দৃশ্য । রটের আঘাতের গতি বৃদ্ধির জন্য নানা ধরণের মনোবল প্রয়োগ করছে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ। প্রচন্ড মার খাওয়া ছেলেটার মুখে অগোছালো কথাগুলো শুনতে বড্ড ভাল লাগছে উপস্থিত দর্শনার্থীদের। কেউ আবার ফেমাস হওয়ার আশায় স্টিল ছবি এবং ভিডিও ধারণ করছেন নিজেদের মোবাইলে। প্রচুর আঘাতে তৃষ্ণায় পাগল প্রান ছেলেটার মুখে অল্প একটু জল দেয়নি কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কোন নরপশুর । কেউ এগিয়ে আসছে না ছেলেটিকে উদ্ধার করতে। শুধু একজনই চেষ্টা করছেন তার পাশে যেতে, মনের ভীতর প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলেন সেই মহান ব্যক্তিটি। বারবার বলছিলেন এবার না হয় ছেড়ে দেন ছেলেটিকে। সমাজের নিম্ন শ্রেণীর এবং নিম্নে পেশার লোক বলে শুধু মুখ দিয়েই করুন স্বরে বলেছিলেন, ভাইয়েরা আপাতত ছেলেটিকে ছেড়ে দেন না। কিন্তু ওরা তখন ছবি তোলায় ব্যস্থ। কোন এঙ্গেল থেকে ছবি তুললে পিঠানোর দৃশ্য ভাল আসে সেই দিক নিবার্চন করে ক্যামেরার ল্যান্সটা সে অনুযায়ী সেট করে ছেলেটার যে কোন যায়গায় আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করার কার্যক্রমে ব্যস্থছিল হিংস্র জানোয়ারগুলো। ছেলেটিও বারবার পানির জন্য আর্তনাদ করেছিল। কিন্তু পানির বদলে আঘাতের পরিমান বৃদ্ধি করল নরপশুটি। ছেলেটির আর্তনাদে পৃথিবীর আকাশ বাতাস একাকার হয়ে যাচ্ছিল। অনেক্ষণ ধৈর্য্য ধারণ করেও শেষ পর্যন্ত গলার স্বর আর ভাড়াতে পারলনা ছেলেটি। আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে ছেলেটির সমস্থ কাকুতীর ভাষা । গলা দিয়ে আর আওয়াজ থেমে যাওয়ায় শুধু চোঁখের জলই বের করে অনেক্ষন ধরে প্রচন্ড জোরে কাঁদছে ছেলেটি । ছেলেটি লোকজনের মধ্যেই মাটিতে লুটে পড়ছে অথচ নরপশুরা মনে করছে ছেলেটি অভিনয় করছে। শেষ পর্যন্ত অভিনয় করেই ছেলেটে এ যাত্রা শেষ করে পরাপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল। দৃশ্যটি দুরুন উপভোগ্য বলে নরপশুরা এটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে নেটে আপলোড করল।
ঘটনাটি দেখে আমার সারা শরীরে নিথর হয়ে যাচ্ছিল। প্রচন্ড তৃষ্ণা অনুভব করলাম। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসেছিলাম । সবকিছু ঝাপসা দেখাচ্ছিল ।চোঁখ বন্ধ করে পুরো অবস্থাটা পর্যবেক্ষন করার চেষ্টা করলাম। এমন মর্মস্পৃর্শী ঘটনা হয়ত এখন প্রতিনিয়তই ঘটে কিন্তু এভাবে লোকজনের জন্য উন্মুক্ত করে ভিডিও ফুটেজ উপহার দেয়ারমত সাহসী ব্যক্তি আসলে আজকাল খুজে পাওয়া দুষ্কর। ওরা আসলেই দারুন একটা ভিডিও ফুটেজ উপহার দিয়েছিল আমাদের সবার মাঝে। সমস্থ শরীর নিথর হয়ে গেল ভিডিও ফুটেজের শুরুর কিছু দৃশ্য দেখে। আমি এতটা সাহসী নই বলে ভিডিও ফুটেজটি পুরোটা দেখতে পারিনি। এমন লোমহর্ষক একটি কর্মকান্ড ঘটিয়ে ও এত সুক্ষভাবে ভিডিও ডাউনলোড করার সাহস দেখে অবাক না হয়ে থাকা যায় না। নিজের স্থায়ী ঠিকানার রাস্থাটি উল্লেখিত স্থানের পাশদিয়ে হওয়ায় ঘটনাটির স্থানের পাশে গেলেই ঘা শিহরীত হয়ে উঠত। হৃদয়টা আরও বেশি ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত ঘটনাটি চোখেঁর সামনে ফুটে উঠলে ।
নানা কাহিনীর জন্মদিয়ে শেষ পর্যন্ত উল্লেখিত নরপশুর অনেকই আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সারাবিশ্বের লোকজনই এই সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলেন । সবার সাথে নিজের মনের কথা মিলে যাওয়ায় একবাক্যে বলেছিলাম, নরপশুর ফাঁসিই হচ্ছে একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি। কিন্তু মনের ভীতর থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল ঘটনাটির দেশের নাম তো বাংলাদেশ । এ দেশে প্রকৃত ঘটনার রদবদল কোন অকল্পনীয় কাজ নয়। উপযুক্ত শাস্তির হাত থেকে হয়তবা মুক্তির দ্বাড় প্রান্তে দাঁড়িয়ে লোমহর্ষক কাহিনীর জন্মদাতা প্রধান আসামী। কিন্তু আজ সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেটের সেই নির্মমভাবে খুন হওয়া "রাজন" হতাকান্ডের বিচারের রায় হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সুশীল সমাজ এ রায়ে আনন্দে আত্মহারা।
উল্লেখিত ঘটনার শাস্তির দাবিদার পৃথীবির সকল সুশিল লোকজনের মাথায় একটা আবদার ঘোরপাক খাচ্ছে, দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হউক।