ফ্রি’তে একটা মিলিয়ন ডলার দামের অফার দিচ্ছি । মহাশূন্য ভ্রমন করে আসুন । দেড় ঘন্টার অভিনব একটি প্যাকেজ । কোন প্রিপারেশনের দরকার নেই । একটি ছোটখাট কম্পিউটার আর ইন্টারনেট নিয়ে বসে যান । ডাউনলোড করে ফেলুন ২০১৩ সালের ‘গ্রাভিটি’ মুভিটি । বিনা বিরতিতে দেখে যান ঘরের সব বাতি নিভিয়ে । কখনোই আপনার মনে হবে না আপনি পৃথিবীতে আছেন । 3D তে দেখলে তো পারফেক্ট, ভাল প্রিন্টের 2D হলেও চলবে ।
আমি এই ছবিটির ব্যাপারে মুগ্ধ । মুগ্ধতার সীমা মহাশূন্য ছাড়িয়ে গেছে । ছবি শেষহওয়া মাত্র আফসোস হয়েছে, ‘এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল ??’ IMDB রেটিং এখন পর্যন্ত আছে ৮.২ । আমার মনে হয়, কিছুদিন পরেই এটি ৯ এর গন্ডি পেরুবে । একশ মিলিয়ন বাজেটের এই ছবিটির কাহিনী লিখেছেন মেক্সিকান পরিচালক আলফন্সো কুয়ারন ও তার ছেলে জোনাস কুয়ারন । পরিচালকও আলফন্সো নিজেই । ২০১৪’র শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কারটি তিনিই জিতেছেন এই চলচ্চিত্রটির জন্য ।
ছবিটি দেখার জন্য আপনার যে খুব একটা ফিজিক্স-কসমোলজি জানতে হবে, তা নয় । তবে জানা থাকলে বেশি মজা পাবেন । আমার কাছে ছবির কিছু দৃশ্য এত অপূর্ব লেগেছে । এক জায়গায় দেখালো বহুদূরের স্পেস স্টেশন থেকে রাতের চিকমিক করা মিশর দেখা যাচ্ছে । কি অসম্ভব সুন্দর !!!
চন্দ্রযাত্রার প্রথম অভিযাত্রীদের একজন বাজ অলড্রিন ‘গ্রাভিটি’ দেখে মুগ্ধতায় বিহ্বল হয়ে বলেছেন,
I was so extravagantly impressed by the portrayal of the reality of zero gravity. Going through the space station was done just the way that I've seen people do it in reality. The spinning is going to happen—maybe not quite that vigorous—but certainly we've been fortunate that people haven't been in those situations yet. I think it reminds us that there really are hazards in the space business, especially in activities outside the spacecraft.
যদিও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুভিটিকে একেবারে পারফেক্ট বলা যাবে না । মুভির শুরুতে যে HST তৈরীর কাজ চলছিল তার কক্ষপথের বক্রতা বলা হয়েছে ২৮.৫ ডিগ্রী এবং লম্বে ৫৫৯ কিলোমিটার । ISS টির উচ্চতা ৪২০ কিলোমিটার, কক্ষপথের বক্রতা ৫১.৬৫ ডিগ্রী । এমন যখন হাবল্ স্পেস টেলিস্কোপ আর স্পেস স্টেশনের বাহ্যিক প্যারামিটারের অবস্থা, দুটির মধ্যে পরিভ্রমণ করার জন্য কি পরিমাণ ফুয়েল দরকার তা ভাবনাতেই আনা যায় না । কিন্তু মুভিতে কোন রকম প্রিপারেশন-প্ল্যানিং ছাড়াই এই দুই যানের মধ্যে স্বচ্ছন্দে ভ্রমন করলেন নায়ক-নায়িকা ।
EVA স্যুট খুলবার সাথে সাথে দেখা গেল নায়িকা সান্দ্রা বুলক সাধারন একটা ফ্যাকাশে সবুজ রঙের টপস এবং কালো শর্টস পড়ে আছে । যদিও মহাকাশচারীরা EVA স্যুটের নীচে সবসময় LCG, স্পেস ডাইপার ইত্যাদি পড়ে থাকেন শরীরের টেম্পারেচার ঠিক রাখবার জন্য । নায়িকার পায়ে কোন ধরনের মোজাও দেখানো হয় নি ।
একটা দৃশ্যে দেখা গেল, মহাশূণ্যে সান্দ্রা কাঁদছেন । তার চোখের জল প্রথমে তার চোখে থেকে গড়ালো, তারপর সেগুলি জলের ফোঁটা হয়ে ভাসতে ভাসতে সরে গেল । মাইক্রো-গ্রাভিটিতে জল বিন্দুগুলির সরে যাওয়ার দৃশ্যটি অসাধারন ছিল । কিন্তু কথা হচ্ছে, শক্তিশালী কোন বল ছাড়া চোখের পানি পৃষ্ঠটানের কারনে তার চোখের নীচেই লেগে থাকা উচিত ছিল । ভাসার কথা ছিল না । কুয়ারনও এসব বিষয়গুলো স্বীকার করে নিয়েছেন । তিনি তার স্বাভাবিক উত্তরটিই দিয়েছেন, ‘আমি কোন ডকুমেন্টারি তৈরী করতে বসিনি । এটা নিতান্তই একটা ফিকশন ।’
ছবিটি সম্পর্কে সব ধরণের দোষত্রুটিকে মার্জনা করার ব্যক্তিগত কারন হচ্ছে চলচ্চিত্রটি আমাকে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে পেরেছে । জর্জ ক্লুনি যখন বাঁধন ছাড়িয়ে শূন্যে পড়ে যাচ্ছিলেন, আমারও মনে হচ্ছিল আমি পড়ে যাচ্ছি । অতলে । গভীর অতলে । দেরী না করে ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়ুন এক্ষুনী । বন ভয়াজ !
পুনশ্চঃ 3D তে না পারলে, নিদেনপক্ষে BluRay-প্রিন্টে মুভিটি দেখুন । ভিভিডি-রিপ বা অভিতে একবার দেখে ফেললে পুরো ছবির আনন্দই মাটি হয়ে যাবে ।
‘গ্রাভিটি’ টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করুনঃ Click This Link