"জামে উমুবী "।দিমাস্কের প্রাচীনতম জামে মসজিদ। বনু উমাইয়ার শাসনামলে নির্মিত হয়েছে বিধায় জামে উমুবী নামে প্রসিদ্ধ।"জামে' দিমাস্ক"ও বলা হয়।
জামে' উমুবী তখন সৌন্দর্য এবং সৃষ্টিশৈলির দিক দিয়ে পৃথিবীর আশ্চার্যতম নির্মাণ ছিল।আজকের আগ্রার 'তাজমহল ' যেমন তেমনই।মুসলিম অমুসলিম অনেক পর্যটক এই মসজিদ ভ্রমন করেছেন। এই মসজিদের প্রশংসা করেছেন।তৎকালীন সময়ে এই মসজিদ ছিল মক্কা মদিনা এবং মসজিদে আকসার পর চতুর্থততম বড় মসজিদ।
'জামে'উমুবী ' নির্মাণের পিছনে রয়েছে চমৎকার ইতিহাস।
বনু উমাইয়ার প্রসিদ্ধ শাসক ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক এই মসজিদের নির্মাতা।
রোমকদের যামানায় এটা খৃস্টানদের গির্জা ছিল।যেটাকে 'ইউহান্নার গির্জা' বলা হত।
হযরত উমরের যামানায় দিমাশক বিজিত হয়।শহরের অর্ধেক অংশ জিহাদের মাধ্যমে আর বাকি অংশ সন্ধির মাধ্যমে(শহরের অর্ধেক অংশ যখন বিজয় হয়ে গেল,নগরবাসী অস্ত্র ফেলে সন্ধির জন্য আহবান করল)বিজিত হয়।
(ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে,লড়াইয়ের মাধ্যমে দুশমনদের যেই এলাকা বিজয় হবে,সেটার ব্যাপারে ইসলামি হকুমতের পরিপূর্ণ অধিকার থাকবে।কিন্তু যে সকল এলাকা সন্ধির মধ্য দিয়ে বিজিত হয়,সন্ধি-চুক্তি'র মধ্যে থেকে শাসন করতে হবে।)
ঘটনাক্রমে এই গির্জার কিছু অংশ যুদ্ধের মাধ্যমে আর কিছু অংশ সন্ধির মাধ্যমে বিজিত হয়।
মুসলমানরা তাঁদের ধর্মীয় অধিকার অনুযায়ী যুদ্ধে বিজিত অংশকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন।আর সন্ধি-চুক্তি অনুযায়ী অপর অংশ গির্জা হিসেবে বহাল থাকে।
দিমাশক বিজয়ের পর থেকে যুগ যুগ পর্যন্ত এভাবে মসজিদ গির্জা একসাথে ছিল।
কিন্তু আস্তে আস্তে দিমাশকে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে লাগল।মুসল্লিদের জন্য মসজিদ সংকীর্ণ হয়ে পড়ল।
ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক(তার যামানায়)মসজিদের সংস্কার এবং গির্জা-কে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু সন্ধি-চুক্তি অনুযায়ী গির্জা-কে আপন অবস্থায় রাখতে হচ্ছে।
তিনি গির্জা কৃর্তপক্ষের সাথে বৈঠক করেন।এই গির্জা-র পরিবর্তে তাদেরকে অন্য স্থানে(যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত অংশে) চারটা গির্জা পুনঃনির্মাণের প্রস্তাব দেন।কিংবা উচিত মূল্যে গির্জা বিক্রি করার প্রস্থাব দেন(উল্লেখ্য,তাদের কাছে গির্জা বিক্রি বৈধ।)
কিন্তু তারা গির্জা সরানোর ব্যাপারে রাজি ছিল না।
এরপরো ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে গেলেন।অনেক চেষ্টার পর চারটা গির্জা পুনঃনির্মাণের শর্তে তারা রাজি হয়।
যাই হোক।
গির্জার অংশটুকু মুসলামানদের হস্তগত হওয়ার পর ওয়ালিদ মসজিদ নির্মাণের জন্য গির্জা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেন।কিন্তু খৃস্টানদের মাঝে এই বিশ্বাস প্রসিদ্ধ ছিল যে,যে কেউ এই গির্জা ধংস করবে, সে পাগল হয়ে যাবে।এই কথা জানার পর ওয়ালিদ নিজেই তা ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুত হলেন।এবং গির্জা-র উপর সর্বপ্রথম ওয়ালিদ-ই কোদাল মারেন।
দুই অংশকে মিলিয়ে ওয়ালিদ অনেক বড় একটা মসজিদ নির্মাণ করেন।নির্মাণক্ষেত্রে যা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সু-উচ্চ আলিশান ইমারাত।সৌন্দর্যের দিকদিয়ে যা ছিল সপ্তম অশ্চার্য।নয়নাভিরাম মসজিদ।
মসজিদের ভিতরে যেই মিহরাব নির্মাণ করা হয়েছে,তা পূর্ব-পশ্চিমে দুইশত ফুট লম্বা এবং একশত ফুট চওড়া।যার কিবলা দিকের দেয়ালে মরমর পাথরের সাথে স্বর্ণ খচিত ছিল।উপরে ছিল শানদার গনবুজ যার নাম কুব্বাতু-ন-নাছার"।
তৎকালীন সময়ে এই মসজিদ শাম-সিরিয়ার সবচেয়ে বড় ইমারাত হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল।তার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য পৃথিবীতে অদ্বিতীয় ছিল।
স্পেনের প্রসিদ্ধ পর্যটক, মুহাম্মাদ বিন জুবাইর(৫৮৭হিঃ)তে এই মসজিদ দেখে লিখেছেন,"আমি পৃথিবীর যে সকল আশ্চার্য এবং দূর্লভ দৃশ্য দেখেছি। এবং দৃষ্টিনন্দন যেসকল ইমারাত দেখেছি,তার মধ্যে দিমাশকের উমুবী জামে মসজিদের গম্বুজে চড়ার তজরবা সবচেয়ে বেশি আশ্চার্যজনক ছিল।"
তিনি আরো লিখেন,"জামে উমুবী-র গম্বুজের একটি বিশেষগুণ ছিল যে,সেটার উপর কোন মাকড়শা জাল বুনতে পারত না।কোন চামচিকা বাসা বাঁধতে পারত না।"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৩৩