আমাকে রাফি বার বার বলছে কি ব্যাপার অনু যাও না ফ্রেশ হয়ে এসো জান ৷ আজ প্রাণখুলে কথা বলবো তারপর দুজনে ৷ আর কোন প্রবলেম নেই আজ থেকে জামাই বউ আমরা ৷
দুবছরের রিলেশন রাফি আর আমার ৷ পরিচয় ফেবু থেকেই ৷ ডিসটেন্স রিলেশন তাই দেখা সাক্ষাত স্বাভাবিকের তুলনায় কম হতো ৷ বিয়ের আগে খুব টেনশানে ছিলাম এতো দুরের সম্পর্ক মানবে তো সবাই? কিন্তু আল্লাহ র রহমতে প্রথমে একটু ঝামেলা হলেও মেনে নিলো সবাই ৷ আজ বিয়ে হয়েছে আমাদের ৷ আমি শুধু রাফির সাথে সেলফিই তুলে যাচ্ছি তখন থেকে ৷ যাক এবার আসলেই ফ্রেশ হতে হবে সারাদিন জার্নি তার ওপর ভারী লেহেঙ্গা মেকআপ ৷
আমি শাওয়ার নিয়ে নিলাম ৷ বের হয়ে চুল মুছছিলাম এর মধ্যে রাফি পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো ৷ আমি ওর দিকে ফিরতেই ও একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ৷ মুখটা কালো হয়ে গেলো ৷ ওকে জিগেস করলাম কিন্তু এড়িয়ে গেলো ৷ এরপর শুয়ে পরলো ৷ আমি কিছুই বুঝলাম না এইতো বললো গল্প করবে কি হলো হঠাৎ? আমি রাফিকে ডাকছিলাম কিন্তু ও একটু বিরক্তি নিয়েই বলছিলো যে ঘুমাও তো অনুপমা ৷
আমার হঠাৎ ই খুব খারাপ লাগলো রাফি আমাকে অনুপমা বলে এই প্রথম ডাকলো ৷ সবসময় অনু বলে ডাকে ৷ এমনকি ফেবুতে পরিচয়ের পর থেকেই অনু বলেই ডেকেছে ৷ কি হলো হঠাৎ ছেলেটার? আমি কি কোনো ভুল করলাম? কিন্তু একটু আগেই জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ৷ শুয়ে পড়লাম জার্নি করে ক্লান্ত ছিলাম তাই একটু পরেই ঘুমিয়ে গেলাম ৷ সকালে উঠে দেখি রাফি সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে ৷ হেসে বললাম গুড মর্নিং রাফু ৷ এটা আমার অভ্যাস বিয়ের আগেও উঠেই আগে ওকে ফোন দিয়ে এভাবে না বললে যেনো দিনই শুরু হতো না আমার ৷ আজ সামনা সামনি বলছি ৷ কি যে ভালো লাগছে ৷
কিন্তু রাফির কথায় আমি অবাক হলাম ৷ ও বললো অনুপমা ফ্রেশ হয়ে একটু মেকআপ লাগিয়ে দ্যান বাইরে আসো বাড়ী ভর্তি মানুষ তো ৷
আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আজব মেকআপ করে বাড়ীর লোকের সামনে যাবো কেনো? প্রোগ্রাম তো দেরী আছে ৷ ওকে জিগেস করার আগেই ও উঠে চলে গেলো ৷ আমি ও ওর কথা মতো একটু মেকআপ করেই রুম থেকে বের হলাম ৷ বৌভাত শেষ হলো বিকেলে ফ্রেশ হতে যাবো রাফি বার বার আটকাচ্ছিলো ৷ বলছিলো আচ্ছা পরে হও না সমস্যা কি এমন করতে করতে রাত ১১ টায় ফ্রেশ হতে পারলাম ৷ আমি রাফির অদ্ভুত আচরণের কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ও খোলসা করে বলছিলোও না কিছু ৷ কিন্তু এবার বলতে হবে ৷ ওর হাত টেনে ধরে চেপে বসলাম বলো কি জন্য এরকম বিহেভ করছো
নরমাল নেই তুমি সব কিছু কেমন যেনো ৷ প্রথমে না করলেও পরে বললো যা বললো তার জন্য আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না ৷ ওর কথা ছিলো,
দেখো তোমাকে যা জানতাম তা পুরেটাই প্রলেপ লাগানো ৷ ছবি + দেখা হবার সবসময় তুমি মেকওভারে থাকতে যার জন্য আমি তোমার ন্যাচরাল ফেইস দেখিই নি কখনো ৷ কাল দেখে হতবাক হয়ে গেলাম তোমার মেকওভার এর সাথে বাস্তব চেহারার ১০% মিলও খুজে পেলাম না আমি ৷ আমাকে এভাবে ঠকালে কেনো অনু? বাসায় সবাই জানে তুমি কতো সুন্দর কিন্তু তোমার মুখ ভর্তি স্পট ৷ হাত পায়ের চেয়ে মুখটা প্রচুর কালো ৷ এভাবে বাসার লোক তোমাকে দেখলে আমার মান সন্মান সব যাবে জাস্ট যার জন্য সকালে মেকাপ করতে বলেছি আর সবার সামনে মেকআপ তুলতে দেইনি ৷
আমি রাফির কথা শুনে মনে হলো শক খেলাম একটা ৷ কি বলছে ও এসব? আমার চেহারাকে ভালোবেসেছিলো ও? আমি মেকআপ করতে ভালোবাসি বাইরে গেলেই করতাম কখনো চেহারা লুকিয়ে ওকে ঠকানোর উদ্দেশ্য তো আমার ছিলো না ৷ হ্যাঁ আমার মুখে স্পট আর মুখটা কালো কিন্তু রিলেশনে যে এটাও ম্যাটার হবে কোনদিন তো ভাবিনি ৷ ওর সাথে দেখাই হতো কম তাই সুন্দর করে সেজে যেতাম আর ওর বাসা থেকে দেখতে আসার দিন পরিপাটি না থাকলে কেমন দেখায় তাই সেজেছিলাম ৷ আর ছবি তে ছবিই ৷ কখনোই ভাবিনি মেকওভারের জন্য রাফি আমার থেকে মন সরাবে ৷ আসলে আমি কখনো ভাবিই নি এই ব্যাপার নিয়ে, আর রাফি কখনো বলেও নি ন্যাচরালি কেমন তুমি বা মেকআপ ছাড়া একদিন দেখবো তোমাকে ৷ আর তাছাড়া আমি বলতাম আমি কালো মানে মুখ কালো হাত পায়ের থেকে কিন্তু ও কখনো পাত্তা দিতোনা ৷ আজ বুঝলাম ও ভাবতো আমি এমনিও সুন্দর কিন্তু তবুও মেকআপ নেই হয়তো ৷
খুব কেঁদেছিলাম সেদিন ৷ আমার মনের কোথাও এতটুকু প্রতারণা ছিলোনা ৷ এরপর আমি নরমাল ভাবেই বাড়ীর সবার সামনে গিয়েছি কই রাফির মতো কেউ তো এতো পার্থক্য করে নি ৷ সবাই সুন্দরভাবেই মেনেছে কিন্তু রাফি পারেনি ওর ধারণা আমি নিজেকে আড়াল করে ধোকা দিয়েছি ওকে ৷
শেষ পর্যন্ত সংসারটাই হলো না ৷ হ্যাঁ সত্যিই হলো না এই মেকআপের জন্যই হলোনা ৷ রাফির সব ফ্রেন্ড নাকি আমার প্রশংসা করতো তারা হুট করে আমাকে মেকওভার ছাড়া দেখে ফেললে ওর মান চলে যাবে আমাকে মেকওভার ছাড়া কোথাও নিলে ওর মান চলে যাবে আরো কতো কথা ৷ আমি বার বার বলেছি রাফি আমি দরকারে সবসময় মেকআপ নিয়ে থাকবো কিন্তু ছেড়ে যেওনা প্লীজ ৷ কিন্তু ওই যে মন একবার উঠে গেলে আর কি ফেরে? ওর বাড়ীর লোকের কথাও না শুনে ডিভোর্স দিয়ে দিলো এই ঠুনকো কারনে ৷ অবশ্য ওর কাছে চেহারা একটা বিরাট ব্যাপার ৷
হায়রে সৌন্দর্য!!
কয়েকমাস পর শুনেছিলাম বিয়ে করেছে সে আবার ৷ বউ অনেক সুন্দর ৷ এবার নিশ্চই রাফি ন্যাচরাল চেহারা দেখেই বিয়ে করেছে ৷
যা হোক এম বি বি এস শেষ করেছি ৷ রাফি বলতো ডাক্তার বউ হবা আমার বউ হয়েছিলাম কিন্তু পূর্নাঙ্গ ডাক্তার হবার আগেই মুছে গেছে নামটা ৷ সিনিয়র ম্যামের সাথে বসে ছিলাম হসপিটালে হঠাৎ এক্সিডেন্ট পেশেন্ট এসেছে খবর পেয়ে ম্যাম আর আমি গেলাম ৷ মহিলার মুখে আঘাতটা লেগেছে; বাইক থেকে উপর হয়ে পড়ে গেছেন খুব খারাপ অবস্থা ৷ ও.টি তে নিতে হলো ৷ আমি চেম্বারে চলে এলাম ওটি শেষে ম্যাম এসে বললো বুঝলে অনুপমা মেয়েটার অবস্থা ভালোনা তবে মুখটার বেশীরভাগই কেটে গেছে অনেক বছর লাগবে সারতে সারলেও মুখে স্পট যাবেনা ৷ চেহারাটা পুরোটাই নস্ট হলো আহারে বেচারী ৷ শুনে দীর্ঘশ্বাষ ফেললাম ৷ ম্যাম বললেন যাও তো এই ফরমটা পুরন করাও বাড়ীর লোক দিয়ে তারাহুড়োয় করানো হয়নি ৷ আমার একটু কাজ আছে তো আসছি এখনই ৷
আমি ফরম হাতে গিয়ে বললাম এখানে সাহরীন হোসেনের বাড়ীর কে আছেন একজন পুরুষ কন্ঠ পেছন থেকে বললেন আমার ওয়াইফ ৷ পেছনে ঘুরে দেখলাম আদনান হোসেন রাফী সামনে দাড়িয়ে ৷ বললাম ফরম পুরণ করুন ৷ তিনি বললেন কেমন আছো অনু?
কি আর বলবো তাকে? বললাম মিঃ রাফী আপনার ওয়াইফের মুখের জখম সারতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু স্পটগুলো কখনো যাবেনা সারা মুখে স্পট পরে যাবে ৷ এক কাজ করুন ডিভোর্স লেটার রেডী করে পাত্রী দেখা শুরু করুন ৷ চেহারা ভালে না হলে তো আপনার মান যাবে ৷
সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিলো চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো হয়তো অনুশোচনা হচ্ছে তার? নাকি বউয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছে? যেটাই হোক আমার দাড়ানোর সময় নেই এক কলিগ কে বললাম ফরমটা নিয়ে আসুন ৷ বলে পেছনে ঘুরলাম ৷ সে ডাকলো একবার ধীরে বললো সরী অনু ৷ আমি চলে এলাম ৷
দীর্ঘশ্বাষ ফেললাম হায়রে সৌন্দর্য!!!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮