আগের পর্বের লিংকঃ Click This Link
একরাশ নিরাশা নিয়ে বাড়ী ফিরলাম আমি ৷ আমার অনেকদিন পর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ৷ আমিই কেন??? এই পৃথিবীতে কেনো আমার জীবনটাই স্বাভাবিক হলোনা? এত কিছু দেখেছি মেনেছি এতো খারাপ কখনো লাগেনি সবসময় শক্ত থেকেছি আজ আর পারছিনা একটা মানুষের জীবনে কতটা প্যাচ লাগতে পারে আমি তার উদহরণ ৷ বাসায় আসার পর দুঘন্টা দরজা বন্ধ করে ছিলাম ৷ নিধী অনেক ডাকাডাকি করেছে শাফিনকে ফোন দিয়ে এনেছে, শিরিন ও অস্থির হয়ে পরেছে কিন্তু আমার মাথায় আমি কিছুই নিতে পারছিলাম না ৷ আমার মতো জীবন যেনো আর কারো না হয় ওপরওয়ালার কাছে এটাই প্রার্থনা ৷
রুম থেকে বের হবার পর সবাই হাজার প্রশ্নের ডালা নিয়ে এলো ৷ আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি সবার দিকে কতো সুন্দর পরিবার আমার কতো ভালোবাসা আন্তরিকতা ৷ কে বলবে এ পরিবারেরই কেউ একজন পিশাচসিদ্ধ? কেউ স্বপ্নেও বিশ্বাষ করবেনা কিন্তু এটাই সত্যি ৷ জ্ঞান হারাচ্ছি-----
কতক্ষন হয়েছে কে জানে? জ্ঞান ফিরে আবছা চোখে শাকিলকে দেখছিলাম কিন্তু পরে বুঝলাম এটা নিছক কল্পনা ৷ আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম কয়েকদিন কথাও বলিনি কারো সাথে ৷
আজ একটু সুস্থ লাগছে ৷ শাফিনকে ডেকে পাঠালাম ৷ শাফিনের সাথে নিধীও এলো ৷ কিন্তু আমি শুধু শাফিনের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম ৷ নিধী অনেক লক্ষী একটা মেয়ে ওকে চলে যেতে বলতেও পারছিলামনা ৷ তাই যে জন্য ডাকলাম শাফিনকে সেটা আর বলা হলো না ৷ আমি শাফিনকে সবটা বলতে চেয়েছিলাম ৷ কারণ ও হয়তো কিছুই জানেনা ৷ কিন্তু এখন বললে নিধীও জেনে যাবে তাই বলা হলোনা ৷ এমনি দু চারটা কথা বললাম ওদের সাথে ৷
কিছুদিন হলো কোন খারাপ সংবাদ কানে আসছেনা ৷ অবশ্য খারাপ খবর তখনি আসে যখন কেউ আমাদের কটুক্তি করে ৷ আজকাল মনে হয় সেরকম হচ্ছেনা এটা ভাবতে গিয়েই নিধী হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো--
-- মা কাল আমরা একটা বিয়েতে গেলামনা? ওখানে শাফিনের বস এসেছিলো লোকটা নাকি খুব নোংরা মানষিকতার ৷ অফিসের মেয়েদের সাথেও অনেক কেলেংকারী আছে ৷ কি বলবো মা কাল পার্টিতে শাফিনকে বলেছিলো তোমার ওয়াইফকে তো দেখতে বেশ আরো খারাপ ইঙ্গিত দিয়েছিলো পরে শাফিন আমাকে নিয়ে চলে আসে ৷ আজ শুনলাম লোকটা মারা গিয়েছে ৷
-- কি বলো??
-- হ্যাঁ মা ৷
নিধী যখন অর্ধেক কথা বলছিলো তখনই বুঝেছিলাম শেষটা এমনি হবে ৷
আমি শেষ একবারের জন্য সারা ডিসুজার কাছে যাবো আর একটা প্রশ্ন করতে ৷ কারণ এটা আমার জানতেই হবে ৷ কিন্তু সূর্যগ্রহন হতে নয় মাসের মতো দেরী হয়তো বা একবছর ৷ মানুষের জীবন এক দিনেই চেন্জ হয়ে যায় আর একবছর কতো কতো দেরী ৷ কি যে হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ৷ কিন্তু অপেক্ষা তো করতেই হবে ৷
শিরিনের জন্য পাত্র দেখতে বলেছিলাম শিরিনকেই ৷ ওর যাকে ভালোলাগবে তার সাথেই ওর বিয়ে দেবো ৷ কারণ আমরা তো দেখে দিয়েছিলাম কিন্তু পরিনাম সবাই জানে তাই এবার মেয়ের পছন্দেই বিয়ে দেবো ৷ কিন্তু শিরিন তাতে নারাজ ৷ ওর কথা আম্মু তোমাকে আমি বিশ্বাষ করি ৷ কি আর করা? আমরাই খোজা শুরু করলাম ৷ শেষমেষ ঠিক হলো নিধীর বড় ভাইয়ের সাথেই সম্পর্কটা গড়বো ৷ নিধী অবশ্য নাকি আগে থেকেই এটা চাইতো কিন্তু কখনো বলতে পারেনি এবার সাহস করে প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছে ৷ আমরা তো সবাই খুশি কারন নিধীর পরিবারকে কাছ থেকে দেখেছি তাদের বিশ্বাস করা যায় ৷
বিয়ের দিন এলো কিন্তু আমি থাকতে পারছিনা কারন গতকাল সূর্যগ্রহন হয়েছে ৷ এরপর এসেছি সারা ডিসুজার বাসায় ৷
-- ম্যাম!!! আমি জানি পিশাচ ধ্বংসের উপায় কি ৷ জানেনতো আমার হাজবেন্ডের ব্যাপারে? সো জানি কিন্তু আমি জানতে চাই এর শেষ কোথায়? পিশাচ ধ্বংসের পর কি আবার কেউ আসবে??
-- নাদিয়া তোমার মতো ইন্টলিজেন্ড মেয়ে সত্যিই অনেক কম দেখেছি আমি ৷ তবে তোমার প্রশ্নের উত্তরটা হলো,
যদি তোমার পরিবারের আর কেউ এ ব্যাপারটা না জানে আর কোন বংশধর আসার আগেই এটা শেষ করতে পারো তবেই আর কখনো এটার রিপিট হবেনা ৷
-- ধন্যবাদ ম্যাম!
-- নাদিয়া শোনো!!
-- জ্বী ম্যাম ৷
-- তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে ৷ সবার কথা ভাবো ৷ জানিনা কেনো ইশ্বর তোমাকেই বাছলেন এতো সাজা দিতে ৷ বড় ইচ্ছে ছিলো কালো গ্লাস সরিয়ে তোমাকে দেখবার কিন্তু তুমি জানো আমি তা পারবোনা!!!
-- ম্যাম আপনার উপকার কখনো ভোলবার মতো নয় ৷ ভালো থাকবেন ৷
পেছনে ঘুরলামনা কারন আমি জানি সারা ডিসুজা কাঁদছেন ৷
মেয়ের বিয়ে শেষ ৷ ছেলেকে বলেছি সব দেখে রাখতে ৷ আমি জানি আমার ছেলে সব পারবে ৷ আমার কাজ শেষ ৷ এবার শাকিলের কাছে যাবার পালা আমার ৷
যেদিন সারা ডিসুজা বলেছিলেন শিরিন নয় এর পেছনে ৷ বাসায় এসে দু ঘন্টা ঘরে বসে এটাই ভেবেছি তাহলে কে? উত্তরটাও পেয়েছি
সে আমি নিজেই!!!!
আমি সব কিছু মিলিয়েছি ঠিক যখন শাকিলের ব্যাপারে জেনেছিলাম সেভাবেই ৷ আর এবার শাকিলের অস্পষ্ট ভয়েস আমাকে সাহায্য করেছে যা আগেরবার করেছিলেন আমার মৃত শ্বাশুড়ী মা ৷
আমি প্রথমেই ভাবছিলাম কে হতে পারে তাহলে শাফিন? তখনি আওয়াজ পেলাম
-- ভু ল ক রো না না দি য়া ভা বো! নী ল চো খ!
কিছুই পাচ্ছিলামনা কি বললো শাকিল?? নীল চোখ?? কার?? কিসের?? ইয়েস সেদিন! সেদিন শাকিল আমাকে বলেছিলো ওর চেখের দিতে যেনো না তাকাই কিন্তু ওর নিথর দেহ দেখে ওর চোখের দিকেই অপলকে তাকিয়ে ছিলাম আমি ৷ তার মানে কি? এর জন্য আমি এ সত্বা পেয়েছি? কিন্তু ওর সাথেই তো সংসার করছিলাম কিছু তো হয়নি তবে সেদিন কেনো???
-- আ গে র ঘ ট না
কোন আগের ঘটনা কি ঘটনা? তার আগে শিরিনকে ফাঁসিতে বেধেছিলো শাকিল ৷
-- ফাঁ সি ন য় ৷ স ত তা ধ্ব ং স
তাহলে???? এবার পরিস্কার হলাম!! পিশাচ সত্বা নিয়ে জন্মেছিলো আমার মেয়েই কিন্তু ওর এই পিশাচ স্বত্তা ধংস করতেই শাকিল সব টা ওর ভেতর ধারন করছিলো? এ জন্যই ওর চোখ নীল বর্নের ছিলো আর তাই আমাকে তাকাতে বাড়ন করেছিলো? কিন্তু আমি তা শুনিনি!!! আর সারা ডিসুজা ঠিক এ কারনেই আমার দিকে তাকাতেননা বা সানগ্লাস পরে থাকতেন ৷ কারন উনি জানতেন আমার ব্যাপারে আর কেউ এটা জানেনা তাই কারোর সমস্যা হবেনা কিন্তু যে জানে সে যদি চোখের দিকে তাকায় তবেই সর্বনাশ ৷ আর শাকিল পিশাচ এটা আমি জানতাম তাই আমার ওপর এর প্রভাব পরেছে ৷
-- ঠি ক প থ
তার মানে ভাবনা ঠিক আমার ৷ কিন্তু আমার অজান্তে এই স্বত্তা কাজ করতো ৷ কিন্তু এতোদিন পর কেনো???? সত্তা পেয়েছিলাম কত বছর আগে তবে এখন কেনো প্রভাব পড়ছে কেন কেন কেন??? আচ্ছা!!!ঘটনাটা ঘটেছিলো শিরিনের জন্মের আঠারো দিন পর, ওর বয়স এখন আঠারো চলছে, আশ্চর্য ও জন্মেছে ছয় মাস আঠারো দিনে ৷ সব কিছু এক সংখ্যা কিভাবে হয়? এটাই তবে যোগ সূত্র??? তার মানে ওর আঠারো হবার পর হয়তো এই সত্তা জেগে উঠতো? কিন্তু এটা আমার মধ্যে আসায় ওর আঠারো বছর হবার পর আমার ওপরই প্রভাবটা পরেছে???
-- বুদ্ধী ম তী ব উ
ইয়েস ধরে ফেলেছি!!! এটাই ছিলো কারণ তবে ৷
ব্যাপারটা জানার পর ভেবেছিলাম ছেলেকে সব বলবো কিন্তু নিধী থাকায় বলা হয়নি যদি বলে দিতাম সর্বনাশ হয়ে যেতো তবে ৷ এর বিস্তার আমি আটকাতে পারতামনা ৷ এখন পৃথিবীতে এই অভিশপ্ত স্বত্বা আর একজনই আছে সে আমি! !!
সেদিন শাকিল আমার মেয়েকে বাঁচাতে চেয়েছিলো কিন্তু তাকে ভরসা করতে পারিনি ৷ যে ভুলের মাশুল আজ আমার সামনে!! আর নয়!!! আমি আসছি শাকিল!! একদিন ভালোবাসার জোড় দিয়ে সুস্থ করেছিলাম তোমাকে আজ সে ভালোবাসা আমাদের পথ এক করে দিয়েছে দেখো!!! কতো সুন্দর পরিবার আমাদের কিন্তু কষ্ট একটাই,
তাদের সাথে তোমার আমার একসাথে সময় কাটানো বাকী, একদিন বাইরে বেড়াতে যাওয়া বাকী,
একদিন তুমি আমি পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে হেটে চলা বাকী,
তোমাকে জরিয়ে সন্তানদের পাশে নিয়ে একটা রাত কাটানো বাকী ৷
যদি আবার জন্ম নেই তোমার জন্যই যেনো পৃথিবীতে আসি ৷ কথা দিচ্ছি শাকিল আর কিছু বাকী রাখবোনা আমি ৷ তোমাকে অনেক ভালোবাসি শাকিল অনেক বেশী ৷
দম আটকে আসছে, বুকটা চেপে আসছে, পৃথিবীর মায়া ছাড়ছি ধীরে ধীরে, লাল মলাটের ভালোবাসার ডায়েরীটা পুড়িয়ে দিয়েছি ৷ চাইনা কেউ জানুক ৷ ধংস হয়ে যাক এই অভিশপ্ত স্বত্তা ৷ সবার অগোচরেই থাকুক এটা ৷
ভালো থাকুক আমার কলিজার টুকরোরা ৷ সুখী জীবন হোক ওদের ৷
সমাপ্ত ৷
(জানিনা কতটুকু ভালোলাগা দিতে পেরেছি গল্পটায় ৷ ভালো খারাপ যাই হোক সবার মতামত আশা করছি)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:১৯