আপনার হাজবেন্ডের সাথে এক বছর ধরে আমার সম্পর্ক এটা জানেন আপনি????
ম্যাসেজটা দেখে কলিজা কাঁপা শুরু করে দিলো ৷ কে এটা? কেন হঠাৎ এমন ম্যাসেজ দিলো? আইডির নাম Ni Ru Po Ma এই নামে আমার পরিচিত কেউ নেই অবশ্য এখন যে কোন নাম দিয়েই ফেসবুকে একাউন্ট খোলা যায় সো নামটা কখনোই ফ্যাক্ট না ৷ আইডিতে ঢুকে একটু নিচেই ফটো পেলাম আরেহ এই মেয়েকে তো চিনি আমি ৷ আসিফের অফিস পিকনিকে দেখেছি কথাও বলেছি আসিফের কলিগ ৷ কি আশ্চর্য উনি কি আমার সাথে মজা করলেন? নাকি সত্যি বললেন? আমি কি রিপ্লে করবো? কিন্তু তাতে করে আসিফকে সন্দেহ করা হবে ৷ চার বছরের বিবাহীত জীবন ঝগড়া তো হয় হতেই পারে তাই বলে আরেকটা সম্পর্ক করবে এটা চিন্তা করাও অপরাধ ৷ না আমি কিছুই বলবোনা আমার সন্দেহ হোক বা যাই হোক অপরিচিত একজনের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে কেনো তাকে বিশ্বাস করাবো যে আমাদের সম্পর্ক দুর্বল বা আমি হাসবেন্ডকে বিশ্বাস করিনা!!! আসিফ বাসায় ফেরার পর বলবো বলবো করে একসময় বলেই ফেললাম যে, আসিফ নিরুপমা কি তোমার কলিগ? আসিফ একটু থতমত খেয়ে গেলো চেহারায় স্পস্ট তা ফুটে উঠলো ৷ ও বললো হুম কেন? নাম জানলে কীভাবে? তখন ম্যাসেজটা ওকে দেখালাম ৷ ও সাথে সাথেই মেজাজ দেখিয়ে আমাকে নানান কথা শুনিয়ে শুতে চলে গেলো বুঝলামনা আমি কি করেছি ম্যাসেজ তো সে দিয়েছে অথচ আমি নাকি সন্দেহ প্রবন সবার কথা বিলিভ করি হাসবেন্ডের প্রতি বিশ্বাস নেই এসব বললো ৷ যেখানে আমি জাস্ট জিগেস করেছি মেয়েটা এমন ম্যাসেজ কেন দিলো মজা করে কিনা? আসিফের ব্যাবহারেই বোঝা গেলো সমস্যা আছে কোথাও ৷ আমি পরদিন মেয়েটাকে রিপ্লে করলাম,
যদি কোন কাজ না থাকে অন্য কাউকে এসব আষাঢ়ে গল্প শোনান ব্লক করে দিচ্ছি আপনাকে ৷
ম্যাসেজটা পাঠিয়ে ব্লক করতে যাবো তখনই আসতে লাগলে একের পর এর ছবি, স্ক্রীনশট, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ক্লোজ ছবি ৷ আমার মাথা বনবন করে ঘোরা শুরু করলো এসব কি দেখছি? কীভাবে সম্ভব??
আমাকে আসিফের ভালো না লাগলে সে বলতে পারতো কেনো এরকম করলো? এরপর টানা দুদিন আসিফের সাথে কথা কাটাকাটি হলো ৷ কিন্তু সে তাকে ছাড়বেনা এটাই নাকি আমাকে মানতে হবে ৷ সংসার আর মান সন্মান বাঁচাতে মেয়েটার কাছে গেলাম রিকুয়েস্ট করতে ওনাকে বললাম, দেখেন আপু আপনি চাইলেই ভালো কাউকে পাবেন আমার হাসবেন্ডকে ছেড়ে দিন ৷ সে আমাকে বললো আমি তো তাকে ডেকে আনিনি সে নিজে এসেছে আমার কি করার? আপনি সামলাতে পারেননি সেটা আপনার ভুল ৷ কথাটা শুনে আর রুচী হলোনা যে তার সাথে কথা বলি ৷
আমার দিনগুলো কীভাবে যাচ্ছিলো আমিই জানতাম ৷ আগে তবুও নরমাল সম্পর্কটা টিকে ছিলো কিন্তু ব্যাপারটা জানার পর আসিফ রীতিমত আমার সামনেই ফোনে কথা, ভিডিও কল সব কন্টিনিউ করতে থাকলো ৷ আর আমি বেহায়ার মতো পড়ে থাকলাম আসিফের সাথে ৷ কি করবো বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম ছেলেটাকে ৷ ভালোবাসা নাকি মানুষকে অন্ধ করে দেয় আমিও সেরকমটাই হয়ে গিয়েছিলাম ৷ আসিফ একটু ভালো করে কথা বললেই বুকের ভেতরের সব কষ্ট চলে যেতো ৷
কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম তাদের সম্পর্ক শুধু দেখা বা কথা বলায় নয় বিছানা পর্যন্ত পৌছে গেছে সেদিন ঠিক করলাম জীবনটাই রাখবোনা ৷ কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি জীবন শেষ করতেও অনেকটা সাহস লাগে যে সাহস আমার ছিলোনা ৷ সেদিন বুঝতে পারলাম আমার চেয়েও বেশী কষ্ট মানুষের আছে আর আছে বলেই কতো মানুষ নিজের জীবন শেষ করে দেয় দু বার ভাবে না ৷ তাহলে আমি এতটুকুতেই ভেঙ্গে পড়ছি কেনো? তার চেয়ে কষ্টের কারণটাকেই সরিয়ে দেই ৷ এরপর আসিফকে ছেড়ে চলে এলাম ৷ আসিফ তো এটাই চাচ্ছিলো আমি যেনো নিজে থেকে সরে যাই ৷ কিন্তু তাকে ডিভোর্স দিতে পারিনি ৷ কেনো পারিনি আমি জানিনা ৷ এরপর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে অনেকদিন পর্যন্ত আসিফের খোঁজ রেখেছিলাম ৷ ওর নতুন সংসার; নতুন অতিথী আসার খবর সবই রেখেছিলাম এরপর আর পারিনি ৷ ছোটখাটো একটা চাকরী পেয়ে গিয়েছিলাম এরপর চলে গিয়েছিলাম ঢাকার বাইরে ৷ নতুন একটা জীবন খুজতে ৷ বিয়ের প্রোপোজাল আসতো বলে এতিমখানা থেকে একটা সদ্যজাত মেয়ে বাবুকে দত্তক নিলাম যেনো বিয়ে বিয়ে করে কেউ কথা না বলতে আসে ৷ মেয়েটাকে মানুষ করছিলাম চাকরী করছিলাম দিন চলে যাচ্ছিলো ভালো ভাবেই ৷
বছর পাঁচেক পর আমার মেয়েটার চোখে সমস্যা দেখা দেয় ৷ ডক্টর দেখালাম কিন্তু ভালোই সমস্যা হচ্ছিলো ৷ এরই মধ্যে প্ল্যান করেছিলাম মা মেয়ে ইন্ডিয়া ঘুরতে যাবো কিন্তু ওর চোখে প্রবলেম হওয়ায় যাওয়া বাতিল করবো ঠিক তখনই মনে হলো ইন্ডিয়াতেই না হয় ডক্টর দেখাবো ৷ শুনেছি ভেলোরে ভালো চিকিৎসা হয় ৷ এরপর চলে গেলাম ইন্ডিয়া ৷ ডক্টর বললো ভয় পাবার কিছুই নেই কিন্তু চশমা ইউজ করতে হবে ৷ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে আমার যেনো বুকের মধ্যে প্রাণটা ফিরে এলো ৷ ভেবেছিলাম বড় কিছু হলো কি না ৷
হসপিটাল থেকে বের হবো এমন সময় একজন মহিলা এসে কাঁদতে শুরু করলো ৷ ঠিক কি কারণে তিনি কাঁদছেন বুঝলামনা ৷ এরপর তিনি বললেন--
আপু আপনি বাঙ্গালী? আপনার মেয়ের সাথে দেখলাম বাংলায় কথা বলছেন ৷ আমার একটু সাহায্য দরকার ৷
আমি অবাক হলাম মহিলার বচনভঙ্গিতে; চেহারা দেখে বোঝা যায়না এতোটা ক্লাসিভাবে সে কথা বলতে পারে ৷ যাহোক জিজ্ঞেস করলাম কি সাহায্য দরকার তার ৷
সে বললো---
তার মেয়ের চোখে ক্যান্সার একচোখ অন্ধ আরেক চোখ অন্ধের পথে এই চিকিৎসা করাতে তাদের সর্বস্ব তারা বিক্রী করেছে ৷ শেষবার শোবার খাটটা বিক্রী করে এসেছে এখানে কিন্তু টাকাটা হারিয়ে গেছে এখন বাড়ী ফেরার উপায়ও তাদের বন্ধ এদিকে কেউ সাহায্য করছেনা ৷ শুনে অবাক হলাম তিনি নাকি গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করা ৷
বললাম আপনিতো চাকরীর চেষ্টা করতে পারতেন কি আজব!
তিনি বললেন চাকরী করতাম পাপের দোষে চলে গিয়েছে আপু অনেক পাপ করেছি জীবনে এটাই তার শাস্তি ৷ আর কোথাও তখনো চাকরী হবেনা ৷
আর কিছু তিনি বলতে পারলেননা অঝোরে কেঁদেই চলেছেন ৷
আমি সব শুনে বললাম আমি হেল্প করবো আপনাদের ৷ উনি খুবই খুশী হলেন বললেন আমার মেয়েটা এখানেই আছে আসেন দেখা করে যান ৷ তার সাথে গিয়ে তার মেয়ের সামনে দাড়িয়েই আমার শরীর হীম ঠান্ডা হয়ে গেলো মেয়ের বাবা আর কেউ নয় আসিফ!
কোনভাবেই চেনার উপায় নেই চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে, কতো ক্ল্যাসি লুক ছিলো সব মিলিয়ে গেছে, বয়সটা যেনো বিশ বছর বেড়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু তাকে চিনতে আমার ভুল হয়নি ৷ সেও আমাকে চিনেছিলো আমার দিকে তাকিয়েই চোখ ছলছল করে উঠেছিলো ওর ৷ কিন্তু ওর ওয়াইফ নিরুপমাকে মাত্র দু একবার দেখেছিলাম বলে তাকে চিনতে পারিনি ৷ কে জানে চাকরী কি দুজনেরই চলে গিয়েছিলো নাকি অন্য কিছু ঘটেছিলো যা আজ তাদের রাস্তায় নামিয়েছে ৷ জানার আগ্রহ ও দেখালামনা ৷ তিনজনের ট্রেনের টিকেটের পরিমাণমত টাকা বাচ্চা মেয়েটার হাতে দিয়ে ঘুরে চলে এলাম ৷
খুব কান্না পাচ্ছে ৷ এরকমটা তো কখনো চাইনি তবুও হয়েছে ৷ জানিনা কি কারণে হয়েছে কিন্তু হয়েছে এটাই সত্যি ৷ সুখ খুজতে সবাই ব্যাস্ত কিন্তু যা আছে তার মধ্যেও যে সুখ খোঁজা যায় বাহিরে যেতে হয় না এটা বোঝে ক জন??
বিঃদ্রঃ আমার খুব ভালো পরিচিত একজনের জীবনের উপর বেস করে লিখেছি ৷ কাহীনিতে হালকা কিছু চেন্জ আছে কিন্তু সারমর্মটা এরকমই ঘটেছিলো ৷ সব কাজ করার আগেই আসলে ভেবে দেখা উচিৎ কি করছি! যা করছি ভালো করছি নাকি কারো জীবন নষ্ট করে করছি? ওপরে যিনি আছেন তিনি কিন্তু সব কিছুরই হিসেব রাখেন ৷
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৪৯