আগের পর্বের লিংকঃ Click This Link
আজ আমি মিসেস সারা ডিসুজার বাসায় যাচ্ছি ৷ কারণ আমি এটা ছাড়া কোনো উপায় দেখছিনা ৷
সারা ডিসুজা একজন খ্রিস্টান গনক ৷ এদের কে কি নামে ডাকে আমি জানিনা সিওর, আমাকে উনি এটাই বলেছিলেন ৷ আমি একবার ছেলে মেয়ে আর মা কে নিয়ে দিনাজপুর যাচ্ছিলাম আত্মীয়ের বাসায় ৷ রাতের ট্রেন ছিলো ৷ দশটার ট্রেন এলো এক ঘন্টা লেটে ৷ আমরা যে সিটে বসেছিলাম আমাদের সামনের মানে মুখোমুখি দিকের সিট টায় একজন মহিলা বসেছিলেন ৷ কপালে বিশাল আকারের একটা টিপ ৷ আর কিছু না হোক তার ওই টিপের জন্য সবাই একবার হলেও তার দিকে তাকাবে ৷
কিন্তু তার টিপ থেকে চেহারায় আমার চোখ গেলো ৷ কতো অমায়িক একটা চেহারা ৷ তার গায়ের রং টা পাকা নয় শ্যামলা বরন ৷ কিন্তু মহিলার সৌন্দর্য বর্ননা করার ভাষা আমার জানা নেই ৷ কালো মেয়েরা এমনিও সুন্দর চেহারার অধিকারিনী হয় কিন্তু ইনি একটু বেশীই সুন্দর ৷ আমার তাকে এতই ভালো লেগেছিলো যে তিনি সেদিন সবুজ রংয়ের একটি শাড়ী, হলুদ রংয়ের হিল, মাথায় হলুদ রংয়ের ব্যান্ড, হাতে সবুজ হলুদ মেশানো বেলোয়াড়ী (কাঁচের) চুড়ি আর কপালের টিপটা সবুজ, সব কিছুর রং মনে আছে এখনো স্পষ্ট ৷
বারবার মনে হচ্ছিলো একটু কথা বলি কিন্তু তিনি কি ভাববেন তা ভেবে আর বলতে পারছিলামনা ৷ সারারাত পার হবার পর ভোরে আমরা কাছাকাছি চলে এলাম গন্তব্যের ৷ সব ব্যাগ ঠিকঠাক করে নিয়ে যাবার সময় আর না পেরে মহিলাকে বলেই দিলাম আপনার নাম কি? উনি হেসে উত্তর দিলেন সারা ডিসুজা ৷ কিন্তু উনি জানালার দিকে তাকিয়ে উত্তরটা দিলেন বলে আমার খারাপ লাগলো ৷ কারণ হয়তো আমাকে উনি পছন্দ করেননি তাই এভাবে ইগনোর করলেন ৷ চলে যাচ্ছি এমন সময় ডাকলেন উনি ৷
-- ম্যাম!
আমি পেছন ঘুরে দেখলাম উনি এখনো জানালার দিকে তাকিয়ে ৷ কিন্তু আমাকে ডাকলেন না অন্য কাউকে বুঝলাম না ৷ তবুও উত্তর দিলাম ৷
-- আমাকে বলছেন?
-- জ্বী ৷
-- বলুন ৷
-- কার্ড টা আমার ৷ আমি একজন গনক বলতে পারেন ৷ রাখুন এটা ৷ কে বলতে পারে হয়তো কখনো কাজে লাগবে ৷
আমি তাকে যে উত্তরে কিছু বলবো সে সুযোগ পেলামনা কারণ উনি উঠে আমার পাশ দিয়ে হনহন করে চলে গেলেন ৷ কার্ডটা সিটের ওপর রেখে গিয়েছিলেন হাত বাড়িয়ে দিলেনও না ৷ আমি খুব একটা অবাক হলাম না ৷ কারণ জীবনের চরম চরম অবাক করা কান্ড যার সাথে জড়ানো সে এইসব ব্যাপারে অবাক হবে কেনো? সে কেনো সেদিন কার্ডটা দিয়েছিলো জানিনা ৷ হয়তো আজকের জন্যই ৷ গনক রা তো অনেক কিছুই বলতে পারেন হয়তো তিনিও তেমন কিছু বুঝেছিলেন ৷
আজ হঠাৎ তার কথা মনে পড়তেই কার্ডটা বের করলাম আমার ড্রয়ারে ছিলো যদিও খুজতে হয়েছে একটু ৷ ঠিকানা ঢাকাতেই কিন্তু গাজীপুর ৷ যেতে যেতে জ্যাম ছাড়া দু ঘন্টা লাগবে আর জ্যাম পড়লে আজ না ও পৌছাতে পারি ৷ কারন ঢাকা শহরের জ্যামের কোন গ্যারান্টি নেই ৷ হাহাহাহাহা ৷
-- আম্মু কেমন আছো?
-- ভালো মা তুই?
-- হুম আছি ৷ আম্মু বাইরে তুমি? সাউন্ড এতো?
-- হ্যা রে একটু এক ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি ৷ বাসায় একা একা ভালো লাগেনা ৷
-- ওহ!
-- কিছু বলবি মা??
-- না আম্মু আসলে
-- শিরি কি রে আমাকে বলতে পারছিস না? কি হয়েছে বল না ৷
ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ এলো ৷ আমার বুকের ভেতর কেমন যেনো করে উঠলো কি হলো মেয়েটার?
আর যাওয়া হলোনা ফেরত এলাম শিরিনকে বললাম তুই আসবি না আমি যাবো তোর বাসায়? ও বললো ও আসছে আর এটা জানাতেই ফোন করেছে ৷ যতক্ষন ওকে না দেখছি শান্তি পাচ্ছিলাম না ৷ আমার মেয়ে বলে নয় শিরি খুব সফট একটা মেয়ে; ওর বন্ধু দুজন ৷ এক শাফিন দুই আমি ৷ ওর এমনি স্কুল কলেজ ফ্রেন্ড আছে কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড আমরাই ৷ যা কিছু হোক সব শেয়ার করে ৷ কিন্তু ও কাঁদবেই বা কেনো? নতুন বিয়ে একমাস ও হয়নি কোনো ঝামেলা হলো কি? কিছু বললোও না ফোনে এসে নাকি বলবে ৷
আবার আমাদের ছাড়া ভালো লাগছেনা ওর এটাও তো হতে পারে ৷ আমার অভ্যাস খারাপ সবসময় নেগেটিভ চিন্তা আগে করি ৷ এটাই হবে ছোট্ট মেয়েটা হয়তো মিস করছে মা আর ভাই কে ৷
আমি বাসায় আসার ৩০ মিনিট পরেই শিরি এলো ৷ কিন্তু মেয়েকে দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম একি অবস্থা মেয়ের আমার চোখের নিচে কালি পরে গেছে চেহারা ফ্যাকাশে ৷ নিধি এসে শিরি কে ঘরে নিয়ে গেলো পেছন পেছন আমিও গেলাম ৷ আমি কি আর জিগেস করবো ওকে? ওর চেহারার দিকেই তাকিয়ে আছি ৷ কি হাল করেছে!!!
-- কি হয়েছে বলো তো ৷ যদি শুধু মা কে বলতে চাও আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু চুপ করে থেকো না শিরিন ৷
-- না ভাবি কি বলো? তুমিও আমার পরিবার আমার আছোই তোমরা ৷ চলে যাবে কেনো? ভাবছি ভাইয়া এলে বলি ৷
-- তোমার ভাইয়াকে টেক্সট করে দিয়েছি চলে আসবে ৷ আমি ততক্ষনে তোমার জন্য মিল্কশেক আনি তোমার ফেবরিট ৷
-- না ভাবি ৷
-- চুপ করো ৷ আমি যা বলবো করতে হবে বুঝলে ৷ হুহ ৷
নিধি চলে গেলো ৷ শিরি কে এখনো কিছু জিগেস করিনি ৷ ভাবছি এত ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে কি ভুল হলো তবে আমার?
এর মধ্যেই শাফিন এলো ৷ ওর অফিস পাশেই বেশী দুরে না ৷
চারজন একসাথে বসে তিনজন শিরির দিকে তাকিয়ে আছি কি হয়েছে শোনার জন্য ৷ যখন শুনলাম তখন মনে হলো কেউ অন্ধকার পথে ছেড়ে দিয়েছে যার দিশা খুজে পাচ্ছি না ৷ কারণ ওর প্রথম কথা ছিলো আমি ডিভোর্স চাই!!!
ফয়সাল আমার দেখা মতে অনেক ভদ্র একটা ছেলে ৷ কিন্তু বুঝলাম সবার ভেতর বাহির এক না ৷ শিরি যা বললো তা হলো--
"আমি প্রথমে কিছু বুঝিনি কাল রাতে তিনটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখলাম ফয়সাল পাশে নেই ৷ ভাবলাম ওয়াশ রুমে গেছে হয়তো ৷ কিন্তু আমার আর ঘুম এলোনা ১৫ মিনিট পরেও ও এলোনা তখন উঠে দেখি বাথরুমের লাইটটাই জ্বালানো আর দরজা চাপানো কিন্তু ও নেই আর রুমের দরজাও খোলা ৷ রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম ডাইনিং এও সে নেই ৷ রুমে এসে দরজা চাপাবো এমন সময় ফয়সাল রুমা ভাবীর ঘর থেকে বের হলো ৷ এতো রাতে এটা দেখে যতটা অবাক হলাম তার চেয়ে বেশী হলাম যখন রুমা ভাবীকে ফয়সাল জড়িয়ে ধরলো ৷
ফয়সাল এসে বুঝতে পারলো আমি দেখেছি কারণ আমি ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু সে একটুও না ঘাবড়ে বললো; এটা নরমাল ব্যাপার ৷ ভাইয়া থাকেনা ভাবিকে একটু সময় দেই ৷ আর বাসার সবাই সেটা জানে ৷ আমি আর কি বলবো তোমরাই বলো আমার কি করা বা বলা উচিত এটা শোনার পর? আজ তাই চলে এলাম ৷"
আমি অবাক হয়ে আছি এরকম জঘন্য হতে পারে মানুষ? শিরিকে বললাম তুই ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস ৷ শাফিন কালই উকিলের সাথে কথা বলবি ৷ শাফিন মাথা নাড়লো ৷
কিন্তু উকিলের সাথে কথা আর বলা হলো না ৷
কারণ ফয়সালের ডেডবডি পাওয়া গেলো পরদিন ৷
আমার সব চিন্তা বাদ দিয়ে শিরিনকে নিয়ে চিন্তা শুরু হলো কারণ আমি এটার পর নিশ্চিত হলাম আর কেউ নয় শিরিন ই সব কিছুর পেছনে ৷
কিন্তু আমার মেয়েটা হঠাৎ কেনো এমন হলো? আগে তো ছিলো না ৷ তাহলে কি এটার কারন????????
চলবে.....
পরের পর্বের লিংকঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫