১ : বানু কাইনুকা
বানু কাইনুকা ছিলো স্বর্ণকার গোত্র । বদর যুদ্ধের কিছুদিন পরেই তাদের বাজারে এক মুসলিম মেয়ের সাথে এক দোকান কর্মচারীর বান্দরামি থেকে ঘটনার শুরু । গহনার জন্য অপেক্ষার সময় ঐ কর্মচারী মুসলিম মেয়েটির পোশাককে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দিলে, উঠতে গিয়ে তার জামা ছিঁড়ে যায় । এক মুসলিম পথচারী এটা দেখে খেপে গিয়ে ঐ কর্মচারীকে কতল করলে, তার পক্ষের লোকেরা ঐ মুসলিমকে কতল করে । এখান থেকে কতল পাল্টা কতলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু । পরে মোহাম্মদ তার দলবল নিয়া হাজির হৈলে বানু কাইনুকা যুদ্ধে হেরে যায় । তাদের সমস্ত সম্পত্তি গণিমতের মাল হিসেবে মুসলিমরা ভাগ করে নেয় । তাদের অভাবী অবস্থা কেটে যাওয়া শুরু হয় । মোহাম্মদ নিজের জন্য মোট গণিমতের পাঁচ ভাগের একভাগ রাখে ।
এপোলোজেটিক ভার্শন : বানি কাইনুকা অনেকদিন থেকেই মুসলিমদের অপমান এবং উস্কানি দিয়ে আসছিলো । বাজারে ঘটনাটা তারই একটা উদাহরণ মাত্র । তাদের এই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো ।
এটাকিং ভার্শন : অপমান এবং উস্কানি দেয়ার অন্যকোন বর্ণনা নাই । বাজারের ঘটনার পর মোহাম্মদের উচিৎ ছিলো পরিস্থিতি কিভাবে শান্ত করা যায় প্রথমে সেই চিন্তা করা । তা না করে অল-আউট যুদ্ধে নেমে যাওয়াটা তার লোভের পরিচায়ক ।
২ : বানু নাদের
বানু নাদের ছিলো মদীনার বাইরের দিকে বসবাসকারী গোত্র । তাদের মূল ব্যবসা ছিলো খেজুর উৎপাদন । একটা সংঘর্ষে মুসলিম এবং ইহুদি(বানু নাদের গোত্রের) উভয়পক্ষের লোকজনের দ্বারা অন্য গোত্রের দুইজনের খুন হওয়ার ঘটনায় , ক্ষতিপূরণের একটা অংশ বানু নাদেরেরও বহন করা উচিৎ এই দাবী নিয়া মোহাম্মদ তাদের কাছে গেলে ঘটনার সূত্রপাত । বানু নাদের গোত্রের লোকজন মোহাম্মদকে বাইরে রেখে ভিতরে আলোচনা করার জন্য সময় নিয়ে যায় । এমন সময় জীব্রাঈল এসে মোহাম্মদকে খবর দেয়, বানু নাদেরের লোকরা বাড়ির ছাদ থেকে পাথর ফেলে মোহাম্মদকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে । জীব্রাঈল এর বাণী পাওয়ার পর মোহাম্মদ বানু নাদেরের লোকজনের সাথে আর কোন কথা না বলে , নিজের অঞ্চলে ফিরে এসে সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করে । অবরোধের সময়ে বানু নাদেরের খাদ্য সরবরাহের উৎস তাদের খেজুর গাছগুলিকে জ্বালিয়ে দেয় মোহাম্মদের বাহিনী । ফলে চৌদ্দ দিনের মাথায় তারা আত্মসমর্পণ করে । তাদেরকে মদিনা থেকে বিতাড়ণ করা হয়, এবং শর্ত দিয়ে দেয়া হয়, তারা তাদের গায়ে এবং উঠের পিঠে যতটুকু বোঝাই করা যায় এর বেশি কিছু সঙ্গে নিতে পারবে না ।
এপোলোজেটিক ভার্শন : নবীরে হত্যাপ্রচেষ্টা, আর জিব্রাঈলের খবরেতো ভুল হওনের কোন সম্ভাবনা নাই । অতএব ঠিকই আছে , বানু নাদের তাদের প্রাপ্য শাস্তিই পাইছে ।
এটাকিং ভার্শন : যেকেউইতো তাইলে একটা কাল্পনিক দূতের নাম দিয়া যে কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনতে পারে । স্বতঃসিদ্ধই যদি হয় , তাইলে......
৩ : বানু কুরাইজা
বানু কুরাইজার অবস্থান ছিলো খন্দকের যুদ্ধে কাটা খালের পাশে, মদীনার বাইরে । তাদের সাহায্য পাইলেই কুরাইশদের পক্ষে সম্ভব হৈত খাল পার হয়ে মদীনায় ঢুকা । কুরাইশরা তাদের প্রতিনিধি পাঠায় কুরাইজা গোত্রের লোকজনের কাছে, তাদেরকে খাল অতিক্রমে সাহায্য করার জন্য । কিন্তু কুরাইজার লোকেরা এক অদ্ভূত প্রস্তাব দিয়ে বসে । তারা বলে যদি কুরাইশদের দশজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে জিম্মি হিসাবে বানু কুরাইজার কাছে হস্তান্তর করা হয় তবেই তারা কুরাইশদের সাহায্য করবে । কুরাইশরা এটা মেনে নিতে অস্বীকার করে । ফলঃত খাল অতিক্রম না করতে পেরে তাদের ফিরে যেতে হয় ।
কিন্তু কুরাইশরা ফিরে যাবার পর মোহাম্মদ জিব্রাঈলের মারফতে আল্লার নির্দেশে বানু কুরাইজাকে আক্রমণ করে , বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ দিয়ে । পরে তাদের বন্দী করে , বিচারের ভার দেয়া হয়, তাদেরই গোত্র থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়া একজনকে । তার রায় হয়, সকল গুপ্তকেশ গজানো পর্যন্ত বয়সের পুরুষকে হত্যা করা হোক, এবং নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হোক । মোহাম্মদ তার এই বিচারে খুশি হয়ে সম্মতি দেয় । মদিনার বাজারে গর্ত খুড়ে একদিনে প্রায় সাতশ লোককে কতল করা হয় এবং তাদের নারী ও শিশুদের দাস/দাসী হিসাবে মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করা হয় ।
এপোলোজেটিক ভার্শন : বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাওয়ার জন্য এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য । আর তাছাড়া বিচারতো মোহাম্মদ নিজে করেন্নাই । তাদের গোত্রেরই একজনকে দেয়া হৈছিলো বিচারের ভার ।
এটাকিং ভার্শন : বিশ্বাসঘাতকতা করলেওতো এত বিশাল শাস্তি তাদের প্রাপ্য হৈতে পারে না । সেইখানে কেবল প্রচেষ্টার জন্য ... । আর বিচারক নাইলে নিষ্ঠুর রায় দিলোই, সেইখানে মোহাম্মদের দয়া কোথায় গেলো । আর অন্যের কাছে বিচার তুলে দেয়ার ঢংটাই বা কেনো ।
তথ্যসূত্র : ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুল্লাহ এবং তারিখ-আল-তাবারি
-----------------------------------------------------------------------------
বানু নাদেরের ঘটনা > ইবনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , (অনুবাদ এ.গুলিওম) পৃষ্টা ৪৩৭-৪৩৮
বানু কুরাইজার ঘটনা > বনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , (অনুবাদ এ.গুলিওম) পৃষ্টা ৪৬৪
রেফারেন্স দিলাম ।
বানু কাইনুকার ঘটনাডা ইবনে ইসহাকে বিস্তারিত নাই, ঐটা তাবারিতে আছে । হাতের কাছে তাবারি নাই এখন ।