প্রিয় একজন ব্লগার নাস্তিকের ধর্মকথার আহ্বানে সাড়া দিয়া এই পুস্ট লেখলাম ।
নিজের কিছু ব্যক্তিগত কপচানি আসতে পারে সেইজন্য আগে থাইকা পাঠকদের ক্ষমা চাইয়া নিচ্ছি । তারপরও সেইগুলা দেয়ার কারণ হৈল তাইলে ঘটনার পরম্পরাটা ভালোভাবে বুঝা যাইতে পারে সেইগুলা থাইকা ।
আমার পরিবার তেমন ধার্মিক না । আম্মাজান ধর্মে আছেন কিন্তু মুল্লাগিরীতে নাই । নামায-রোযার জন্য তাগাদা দিলেও খুবই কম, কালেভদ্রে তাও আব্বাজানেরটা রিলে কৈরা । নিজে থাইকা না ।
আব্বা ব্যাপক ধার্মিক । দিনদিন আরও বাড়তাছে । ছুডকাল থাইকা দেখতাছি পাঁচ ওয়াক্ত পিলাস টুকটাক নফল নামায(এশরাক, আওয়াবিন) আর সক্কালে কুরান-পাঠ নিয়মিত আছে তার । তয় পুলাপানরে মাদরাছায় পাঠাইয়া দেয়ার লেভেলের না ।
ধর্ম শিক্ষা পরিবার থাইকাই শুরু আমরার সব-ভাইবইনের । তাও ছুডকালে যেই কমন আইলসামি সেইটা কাটাইয়া যায় নাই । নামায পড়তাম তয় সব ওয়াক্ত না । আবার সবদিনও না । রোযায় বাড়ে রোযার পরে কমে এই টাইপের ।
আমাগো আত্নীয়গো মাঝে আবার মুল্লা পাব্লিক বেশি । দুয়েকটা পরিবার আছে পুরাটাই মাদরাছা যাওইন্যা টাইপের তাবলিগী । তাগো সংস্পর্শে থাইকা ধর্ম , মূলত ইসলাম সংক্রান্ত জানাশোনা এম্নিতেই মোটামুটি যদ্দুর হয় তার চাইতে কিঞ্চিৎ বেশি ছিল । যদ্দুর মনে পড়ে কিলাশ সেভেনে পড়ার সময় ধর্ম নিয়া সিরিয়াসলি চিন্তা শুরু করি । তারপর একদিন থাইকা নিয়মিত নামায পড়া , রোযা রাখা , কোরান-পাঠ সবই শুরু করি । তাবলিগে কখনো না গেলেও এলাকার মসজিদে যেই তালিমের আসর বা গাশত হৈত সেইগুলাতে অংশ নিতাম মোটামুটি নিয়মিত । উল্টাপাল্টা বই পড়তাম না । শামসুর রহমান, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ , কবির চৌধরিরে ঘৃণা করতাম । অথচ শেষের দুইজনের কুনো লেখা আইজ পর্যন্ত পড়া হয় নাই আমার । বড় মুল্লা কাজিন যারা ছিলো তাগো থাইকা শুইনা শুইনা রিলে করা ঘৃণা ।
তিন গোয়েন্দা বা সেবা রোমান্টিক এর বাইরে প্রথম উল্টাপাল্টা বই পড়ি আমি কিলাশ টেনে থাকার সময় । তসলিমা নাসরিনের নির্বাচিত কলাম । কিছু কিছু কথা তখন মনে ধরছিল, তয় বেশির-ভাগ কথাই মনে হৈল উল্টাপাল্টা । নারীর পর্দা কত গুরুত্বপূর্ণ অথচ হারামজাদি কয় কি এইগুলা , এইধরণের আছিল পরথম প্রতিক্রিয়া । তারপর অনেকদিন সেইভাবেই পইড়া ছিলাম । ধর্মকর্মে একটু আইলসামি চৈলা আইছিল কিন্তু বিশ্বাস ছিল অটল । আইলসামিটা আসলে প্রথম যৌবনের নিঃসঙতা থাইকা মূলত । ধর্মবিশ্বাসের ঘাটতি বা ক্রিটিকাল থিংকিং থাইকা না ।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর শুরু হৈল মূল সমস্যা । উল্টাপাল্টা বই গোগ্রাসে গিলা শুরু করলাম । কারণ বোধহয় প্রচুর খালি সময় হাতে পাওয়া । ইশকুলের বন্ধুবান্ধব সব লুকাল কলেজে পড়ে , নতরদামে আমি একা । ইশকুলে দিনের ছয়-সাত ঘন্টাই কাটত বন্ধু-বান্ধবগো লগে বিটলামি কৈরা, টাংকি মাইরা । এখন ঐ সময়ের পুরাটাই অবসর ।
আমার চিন্তাজগতে প্রথম ড্রামাটিক পরিবর্তন আসে একটা বই থাইকাই । হুমায়ুন আজাদের 'নারী' । এইচএসসির জন্য পড়ালেখা সব শেষ হৈয়া গেছিল টেস্টের প্রস্তুতি নিতে গিয়াই । টেস্টের পরে দেখি আরো ছয়মাস সময় প্রায় কিছুই নাই করার । প্রথম দুইমাস খালি উল্টাপাল্টা বই পড়ছি । নারী বইটা তৃতীয়বার পইড়া শেষ করনের পর মনে হৈল ব্যাটার কথায়তো যুক্তি আছে । ইসলামের বিশ্বাসে প্রথম চিড় আমার এই নারী ইস্যু নিয়াই । শুধু ইসলাম কেন যেকোন ধর্মেই নারীর অবস্থানটা এমন জায়গায় ঠিক করা , যেইটা কোনোভাবেই একজন সকলের সৃষ্টিকর্তার ধারণার সাথে খাপ খায় না । বরং মানুষই ধর্মগুলা বানাইছে এইটা ধৈরা আগাইলেই ব্যাপারগুলা একটা ফরম্যাটে পড়ে । নারীবাদ নিয়া এরপরে আমার ধারণা অনেক বিবর্তিত হৈছে । নারীর অধিকার কিভাবে কে কখন ফিরাইয়া দিব এইগুলা তখনকার ধারণার সাথে এখন অনেক পার্থক্য আছে , কিন্তু এইটা এখনো বদলায় নাই যে ধর্মের কাঠামোর ভিতরে সেইটা অসম্ভব । এবং ইসলাম মূলত নারীকে সম্মানিত যৌনদাসি বানাইয়া রাখার একটা সিস্টেম ছাড়া আর কিছু না ।
এইসময়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়াও একটু ঘাঁটাঘাটি শুরু করি । ক্লু সম্ভবত এইরকমই কোনো উল্টাপাল্টা বইয়ে এই ঘটনার উল্লেখ থাইকাই । আমাগো বায়োলজি বই থাইকা ঐ চ্যাপ্টারটা সরাইয়া নেয়া হৈছিল আমাগো বছর থাইকাই । পুরান কিছু বায়োলজির বই, কিছু আংরেজি পুস্তক থাইকা , ডারউইনের মতবাদ নিয়া টুকটাক ধারণা পাই । মজার ব্যাপার হৈল ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়া এখনো আমার সুনির্দিষ্ট নিশ্চিতি নাই । তার বড় কারণ হৈল, এই ফিল্ডে আমার জানাশোনাই নাই তেমন । কিন্তু যেই দিকটা আমার ধর্মবিশ্বাসরে কচুকাটা করছে সেইটা হৈল, আমাগো অস্তিত্বের ব্যাপারে একটা থিওরি দাঁড় করাইতে হৈলে হাতে যেইসব উপাত্ত আছে সেইসব নিয়াই শুরু করতে হৈব । ডারউইনের থিওরি একটু বেশি ফার-ফেচড মনে হৈছে তখন কিন্তু আমাগো হাতে যদ্দুর নিশ্চিত জ্ঞান আছে সেইটুক থাইকা এর চে ভালো আর কোনো ব্যাখ্যা নাই । একটা স্রষ্টারে দিয়া একটা হাইপোথেসিস দাঁড় করানো যায় । সেইটা দেখতে সুন্দর এবং আশা-জাগানিয়া হয় সেইটাও ঠিকাছে । কিন্তু প্রমাণ, তথ্য, উপাত্ত শূণ্য যেইখানে সেইখানে খালি সৌন্দর্যের গুণেতো কুনো থিওরি পার পায় না ।
এইসময়ে আরেকটা ব্যাপার মাথার মইধ্যে চুলকাইতে থাকে আমার, আরজ আলীর নাম শুনারও আগে থাইকা । সেইটা হৈল, দুইন্যাইডা কত বড়, কত রকমের মানুষ, কত রকমের সভ্যতা, কিন্তু নবী-রাসুল সব খালি আরবের কথাই শুনা যায় । চীনের সভ্যতা নাকি লাখ-বছরের পুরান কিন্তু সেইখানের একটা নবীর কথাওতো শুনা যায় না । সেইখানে এখনো কোটি কোটি মানুষ আছে যারা ইস্লাম বৈলা কুনো ধর্মের কথাই শুনে নাই পুরা জীবনে । তাইলে তাগোরে কিয়ের ভিত্তিতে বিচার করা । তাগোর যদি বিচার না হয়, এবং বেশত-দুযখ কিছুই না পায় বা দুযখে যায় তাইলে তাগো উপর ফেয়ার প্লে হয় না । আবার তারা যদি বেশতে যায়, তাইলে তুই হারামজাদা আমারে ইস্লামের কথা শুনাইলি ক্যান, আমি অগো মত থাকলেই তো ভালো হৈত । হিসাব-নিকাশ ছাড়াই বেশতে যাইতে পারতাম । দুইটা সম্ভাব্য সমাধানের কুনোটাই গ্রহণযোগ্য না । তাইকে সবচে সহজে অনুমানযোগ্য তৃতীয় সমাধানটাই হয়ত সঠিক । সেইটা হৈল আরব অঞ্চলের কিছু প্রচলিত রুপকথারে কাটপেস্ট কইরা মোহাম্মদ একটা গল্প ফাঁদছে । তাইলে সবকিছু এখন ব্যখ্যাযোগ্য হয় ।
উপরের তিনটা হৈল আমার মূল কারণ ইসলামে বিশ্বাস থাইকা সইরা আসনের । মুসলিম থাকনের সময় অন্য-ধর্মগুলার বিপক্ষে যেইসব যুক্তি শুইনা আসছি সেইগুলা ঐভাবেই রাখলে তাইলে সবগুলা ধর্মই বাতিল হৈয়া যায় ।
তারপরে ইনতারনেত দুনিয়ায় ঢুকার পর পড়াশোনা করছি ম্যালা । হাদিস-কোরান-সিরাত-তাফসির-ইস্লামি ইতিহাস । সবগুলা থাইকা এই ধারণাই হৈল, মোহাম্মদ নিজের খ্যাতির তীব্র মোহ এবং মানসিক অসুস্থতা থাইকা কোরান নামক জিনিসটা নিজে পয়দা করছে বা এইজাতীয় হাবিজাবি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৬