মুর্ছা যাইবার ঠিক পুর্বে কল্যানী চিনচিন স্বরে বলিয়া উঠিল-
“আমায় ক্ষমা করো।”
উপস্থিত সকলে তাহাকে সমস্বরে ক্ষমা করিবার প্রতিজ্ঞা করিল।
শুধু দক্ষিণ পাড়ার কানা সবুর মা দীর্ঘস্বাস ফেলিয়া কহিল-
“আমার পাওনা ষোল টাকা হারাইলাম।“
চিৎকার চেচামেচির মাঝে কল্যানীর নিথর দেহ ঘরের বাহিরের মাটিতে পড়িয়া রহিল।
কল্যাণীর স্বামী দিবাশংকর তাহার নিজ মাথায় থাবড়াইয়া যথা সম্ভব সবাইকে জানাইতে লাগিল কি ভালোইনা সে তাহার বউকে বাসিত।
অথচ: ভালো করিয়া লক্ষ করিলে ঠিকই গোচর হইবে যে তাহার চক্ষুতে একটি আনন্দের ছটা অতি সংগোপনে প্রস্ফুটিত হইতেছে। যাহা তাহার অনাগত আনন্দময় দিনের বারতা বহন করিতেছে। বিগত কয়েক মাস ঠাকুর পাড়ার বিধবা ও আকর্ষনীয়া প্রেমবালার সহিত তাহার যে অবৈধ লিলা-খেলা চলিতেছিল তাহা কল্যাণীর মৃত্যুর সাথে সাথে একটি অপুর্ব পরিনতি এবং প্রাপ্তির দোড়ে পৌছাইল।
দিবাশংকরের মুহুর্মুহু আর্ত চিৎকারে আকাশ- বাতাস প্রকম্পিত হইলো। পাড়ার সকলে তাহাকে সান্তনা দেবার প্রয়াস পাইল কিন্তু তাহার কান্না তথা আর্ত চিৎকার থামার সহসা কোন সম্ভাবনা দেখা গেলনা। থামিবেইবা কিভাবে, পাছে তাহার নাকাঁদা মুখ দেখিয়া কেউ আচ করিয়া ফেলে যে কিটনাষক খাইয়া কল্যানী মরিল তাহা দিবাশংকরেরই কেনা এবং তাহার প্রচেষ্টাই কল্যানী মারা গিয়াছে।
দিবাশংকর কল্যানীকে এমনভাবে জাবড়াইয়া ধরিয়া রহিয়াছে যে দেখিলে মনে হয় এ যেন দুটি দেহ কিন্তু একটি প্রান। অথচ দিবাশংকর বিরক্তির সহিত মনে মনে এই ভাবিতেছে যে, কেন সকলে মিলিয়া জোর করিয়া কল্যানীর শব দেহটাকে শ্বশান ঘাটে নিয়ে পুড়াইয়া ছাড়খাড় করিয়া দিতেছেনা। বার বার শুধু প্রেমবালার কামনাময় দেহটা চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিতেছে। অতিরিক্ত আবেগের যাতনায় দিবাশংকর উপর্যপরি আছাড় খাইয়া মেঝেতে পড়িল।
তাৎক্ষনিক সুহৃদগণ তাহাকে ধরিয়া হেচড়াইয়া ঘরের ভেতরে নিয়া বিছানায় শোয়াইয়া বাতাস করিতে লাগিল। দিবাশংকর মৃদু মন্থর আবেশে চোখ বন্ধ করিয়া অজ্ঞানের ন্যায় পড়িয়া রহিল এবং দ্রুত আপদ বিদায়ের অপেক্ষায় থাকিল। এবং ঘুমাইয়া পড়িল। ঘুমোর ঘোরে স্বপ্নে সে প্রেমবালার সহিত মধুর মিলনের রতি শিল্প দেখিতে লাগিল।
………. দিবাশংকরের ঘুম ভাংগিল। কানে আসিল, কে যেনো কহিতেছে- “ভগবানের অশেষ কৃপা যে ঔষধে ভেজাল ছিল, এ যাত্রায় কল্যানী মরিলনা।“
দিবাশংকর এবার সত্যই মুর্ছা যাইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১০