আমাদের বর্তমান প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থা আমার এই শিরোনামের মতই অদ্ভূত এবং উদ্ভট। ছোটবেলা বাবা চাচাদের মুখে গল্প শুনতাম ৬০/৭০ দশকে পড়াশোনা করার জন্য এক এক জন কে মাইলের পর মাইল হেটে যেতে হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে আমার গ্রামের বাড়ির পাশেই জেলার পুরোনো স্কুল এবং কলেজের অবস্থান, আর ঢাকার পার্শ্ববর্তি জেলা হওয়ার দরুন খুব একটা বেগ পেতে হয়নি এলাকার তৎকালীন সময়ে যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু দূর দূরান্ত থেকে সে সময় অনেকেই আমাদের এলাকায় এসে গৃহ শিক্ষক থেকে পড়াশোনা করতো। সেই সব গল্প আমরা বাবা চাচা দের মুখে শুনতাম মাঝে মাঝে রুপকথার গল্পের মতই মনে হত যে পড়াশোনা করার জন্য আগে মানুষ এত কষ্ট করতো!!!
২০১৫ সালে আমার এলাকার পুরোনো স্কুলে ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পূণর্মিলনীর আয়োজন করে সেখানে সাবেক এবং বর্তমান মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ছিলেন প্রায় পাঁচ জন এবং দশ থেকে বারো জন ছিলেন সচিব অথবা সচিব পদমর্যাদার যারা আমাদের এলাকার স্থানীয় কেউ না কিন্তু এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ব্যাপারটা একটু অদ্ভূদই লাগলো আমার কাছে কেননা এখন এলাকায় শিক্ষার্থির চেয়ে স্কুলের সখ্যা বেশী। শৃজনশীল পদ্ধতির নামে এ প্লাসের হুজোগ আর অনার্স, মাস্টার্স শেষ করা বেকার সমাজ। অভিশপ্ত বেকার সমাজ।
অবশ্য আমি এত পিছনে না গিয়ে আমাদের সময়ের কথাই ধরি আমি তখন ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ি সময়টা ১৯৯৮ সাল। আমার স্কুলে যাবার পথে একটা ডিগ্রি কলেজ ছিল যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বি,এ, বি,কম, বি,এস,সি পড়তো তখনো সেই কলেজে এম,এ পড়ার সুযোগ ছিল না কিংবা অর্নাস পড়ার সুযোগও ছিল না। সুযোগ না থাকলেও শিক্ষার্থিদের পদচারনায় মুখরিত ছিল কলেজটি তখন মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম এই কলেজেই একদিন আমরাও পড়বো (যদিও পড়িনি)। তখন আমাদের গ্রামের কাউকে মাস্টার্স ডিগ্রি পড়তে হলে আমাদের জেলা সরকারি কলেজে পড়তে হতো। আর এখন আমার এলাকায় অর্নাস পড়ায় এমন কলেজের সংখ্যা প্রায় চারটি। তার মধ্যে সরকারের বিশেষ নীতিমালায় সরকারি হয়েছে উপজেলা সদর কলেজ। আর স্কুলের সংখ্যা নাই বা বললাম।
এখন কথা হচ্ছে এই যে ছোট একটা উপজেলা অথচ অনার্স, মাস্টার্স পড়ায় প্রায় চারটি কলেজ। এই যে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের হিরিক পরেছে এতে দেশের কি লাভ হচ্ছে? এইসব কলেজে আমার এলাকার কিছু ছোট ভাই পড়াশোনা করে যাতের নূন্যতম জ্ঞ্যানের পরিধি জিরো লেভেল। আমি অবাক হয়ে যাই এরা কি করে অনার্স পড়ে? আর তার আগে এরা কিভাবে এস,এস,সি/এইচ,এস,সি পাশ করেছে? এরা কি এই পাশের যোগ্য? এককথায় অবশ্যই না। তবুও এরা পাশ করেছে কারন আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের প্রোফাইল ভাড়ি করার জন্য তথাকথিত শিক্ষার হাড় বাড়ানোর “আই,এম জি,পি,এ ফাইভ” রোগের শিকার এই তথাকথিত অর্নাস পরুয়া ছেলে মেয়ে। তারমানে আমি এই বলছি না যে সেখানে ভালো কেউ নেই। ভালো আছে তবে সেটা ৫% চেয়ে কম।
এই একটা কারনে বর্তমান যুবসমাজ দিবা স্বপ্ন যে পড়াশোনা করলেই চাকুরী করতে হবে নয়ত ইজ্জত থাকবে না। এই যে একটা ইজ্জতের ইস্যু এখন আমাদের যুব সমাজে শুরু হয়েছে এর ফল খুব খারাপ হবে বলেই আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি কারন আজকাল অফিস সহকারি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে মাস্টার্স পাশ ছেলে মেয়েদের আবেদনের নিচে এইট পাশ আবেদন চোখেই পড়ে না। এইভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর বাড়ির কাজের বুয়াদের সিভি তে বি,এ পাস উল্লেখ্ থাকবে কিংবা বাড়ির দাড়োয়ান থাকবে মাস্টার্স পাশ।
এইভাবে গণহাড়ে এ প্লাস, গণহাড়ে অনার্স, মাস্টার্স ডিগ্রি না দিয়ে দেশে কারিগরি শিক্ষার ব্যাবস্থা করতে হবে। সত্যিকার কারিগরি শিক্ষা, যাতে ছেলে মেয়েরা নিজের কাজ নিজে করতে পারে। আর নয়ত অবস্থা যা দারিয়েছে কিছুদিন পর অনার্স মাস্টার্স সার্টিফিকেট কেজি ধরে কিনতে পাওয়া যাবে। যুবসমাজকে বুঝাতে হবে পরিশ্রমের কোন কাজই ছোট না বরং সম্মানের। আমাদের দেশে কয় জন আটো মেকানিক কিংবা সি,এন,জি অটোমেকানিক পড়াশোনা জানা? এইসবে কোন শিক্ষিত ছেলেমেয়ে পাবেন না কারন আমাদের সমাজে এইসব কাজকে ছোট করে দেখা হয়। অথচ এই কাজগুলিতে ইনকাম কোন অংশেই কম না।
আমাদের দেশের জনসংখ্যায় যুব সমাজের পরিধিটা অনেক বেশী তাই হেলা ফেলা না করে কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রোফাইল ভারি করার জন্য সার্টিফিকেটধারি না বানিয়ে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের বাইরে সরকারিভাবে নামে মাত্র মুল্যে কাজের ভিসায় বিদেশ পাঠানো যেতে পারে যার দরুন যুব সমাজ অভিশাপ না হয়ে আমাদের জন্য আর্শিবাদ হতে পারে। তা না হলে আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ সার্টিফিকেট সুনামী হতে পারে যারা সবাই হবে উচ্চ মাধ্যমিক বিশ্ববিদ্যালয় পাশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৫