অবশেষে তোমার নাটকের শেষ ধাপ। নীরব দর্শকের ভূমিকায় আমি একা বোকা মানব। তোমরা ঢাকাবাসি হয়ে গেলে পুরু পরিবার। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বি,বি,এ ভর্তি হয়ে আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে সময়ের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে নতুন পথে হাটা শুরু করলে। আর আমি সবেমাত্র বিলেত ফেরত নব্য স্নাতক। আমাকে এড়িয়ে যাওয়া তোমার শুরু। আমি ব্যাস্ত হয়ে গেলাম ইউরোপে এম,বি,এ ভর্তি নিয়ে। যেহেতু বিলেত ফেরত স্নাতক ছিলাম তাই খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ভর্তির জন্য। তোমাকে ভর্তির ব্যাপারটা বলা হয়নি কেননা তুমি ফোন ধরতে না তখন আমার।
কিছুদিনের মধ্যে আমি ইন্ডিয়া চলে গেলাম ভিসার জন্য। তোমাকে ইন্ডিয়া থেকে ফোন দিলাম, বার বার লাইন কেটে দিয়েছিলে। এসএমএস দিয়েছিলাম তাও উত্তর দাওনি, এ্যাম্বাসিতে পাসপোর্ট জমা দিয়ে শুরু করলাম ইন্ডিয়া আন্তনগর ভ্রমন, দেখতে দেখতে ২৬ দিন পেরিয়ে গেল, আমি বহু কাঙ্ক্ষিত ভিসা নিয়ে রওনা দিলাম বাংলাদেশ। দেশে এলাম তোমাকে ফোন দিলাম, এসএমএস দিলাম কিন্ত কোন সাড়া নেই, তাই বাধ্য হয়ে তোমার বান্ধবী কে ফোন দিলাম, যে ছিল তোমার সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের একজন। সে আমাকে সান্ত্বনা দিল, তোমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে।
তারপর, পরের দিন, তোমার বান্ধবী আমাকে ফোন করল, আমি ভাবলাম আজ বুঝি সমস্ত কষ্টের অবসান হবে। অবসান হয়েছিল তবে সেটা কষ্টের না, তোমার আমার সম্পর্কের অবসান। তুমি জানিয়ে দিলে আমাদের সম্পর্কের এইখানেই ইতি, কারন তুমি কোন এক ধনকুবেরের ছেলের প্রেমের পংখিরাজ হয়ে আকাশে উড়ছ। তুমি বলে দিলে আমি যেন আর কোনদিন তোমাকে ফোন করে বিরক্ত না করি। তোমাকে আমার কিছু বলার সুযোগ দিলে না। আমিও পরাজিত সৈনিকের মত পিছু হেটে ফিরে আসলাম। মনে মনে বললাম তুমি ভালো থেকো।
দুইদিন পর তোমার নব্যজাত ধনকুবের প্রেমিক আমাকে ফেইসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো, আমি এক্সসেপ্ট করলাম কিছুটা কৌতূহল নিয়ে। তার প্রোফাইল ঘেটে দেখলাম তোমার পছন্দ আছে বটে। উত্তরায় নিজেদের বাড়ি, বাবার কোটি টাকার ব্যাবসা, তাও আবার ব্যাক্তিগত বিলাসী গাড়ি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করা ছেলের কাছে আমি নিতান্তই একটা “কিছুই না” ধরনের মানুষ। আমরা থাকি গ্রামে, আমার বাবা কোটিপতি না, আর আমি!!!! গাড়িত দূরের কথা মোটরসাইকেলই নাই। সামান্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছারা তোমার ঐ প্রেমিকের পাশে দারানোর কোন যোগ্যতা আমার ছিল না।
পনের দিন পর, জানুয়ারীর ১১ তারিখ শুক্রবার ২০১৩ দুপুর ১২ টায় আমার বাবা মারা গেলেন। আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তুমি জানতে ঐ দিন আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন তবুও একবার অন্তত একবার একটা ফোন দাওনি। তোমার দুর দুরান্তের বান্ধবীরা আমাকে সমবেদনা জানিয়েছিল এমনকি যাদেরকে আমি কোনদিন দেখিনি, শুধু তোমার খাতিরে দুই একদিন ফোনে কথা হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর সাথে সধ্যপ্রাপ্ত ভিসা আর এম,বি,এ করার স্বপ্নটা আপাতত কবর দিয়ে দিলাম। একদিকে বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব, অন্যদিকে ছোট দুই বোনের পরাশুনার দায়িত্ব সব মিলিয়ে আমি নতুন করে জীবনের অর্থ খুজতে লাগলাম, ২৫ বছর বয়স তখন আমার, মাঝে মাঝে চোখে পানি চলে আসত, আমি বুঝতে পারলাম জীবন অনেক কঠিন। মনে মনে সান্ত্বনা দিলাম নিজেকে এম,বি,এ যেকোন বয়সে করতে পারব কিন্তু এই সময়ে আমার একটা ভূল সিদ্ধান্ত আমার পরো পরিবার পথে বসে যাবে।
বাংলাদেশে কিছু করা তখন আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, বিদেশী ডিগ্রী নিয়েও চাকরির বাজারে ১০ হাজার টাকার বেশী পাওয়া স্বপ্নের ব্যাপার মনে হল, তার উপর মামা, চাচা, খালুর ফোন কলত আছেই। কিছু দিনের মধ্য চলে এলাম মালেয়শিয়া, ভাবলাম নিজে কিছু একটা করব যেহেতু আগেই জানতাম বাংলাদেশের কাপড়ের খুব ভাল একটা চাহিদা এখানে আছে, কিন্তু দেখলাম আমার কিছুদিন সময় নিতে হবে পরিবেশটা বুঝার জন্য, তাই একটা চাইনিজ ট্রাভেল অ্যান্ড টুর কোম্পানির টিকেট রিজারভেশনে কাজ শুরু করে দিলাম, বেতনও ভাল। কিছুদিনের মধ্যেই আন্টির (বস) খুব প্রিয় পাত্র হয়ে গেলাম। দায়িত্ব পড়ল সহকারি হিসাব রক্ষকের। বেতনও বেড়ে গেল। আমি তখন ভালোই আছি। মা ভালো আছেন, আর ছোট বোনদের পরাশুনা এগিয়ে যাচ্ছে ভালোভাবেই।
একবছর কেটে গেল মালেয়শিয়া, ভাবছি এইবার নিজে কিছু করা যাবে। কোম্পানি খুললাম, শোরুম নিলাম, বাংলাদেশে লোকাল ফ্যাক্টরিতে যোগাযোগ বারালাম, মোটামুটি কিছুদিনের মধ্যে নিজের ব্যাবসা চালু করে দিলাম। এত কিছু পরও মনে হত কি যেন নেই আমার, এমন কোনদিন ছিলনা তোমাকে ভূলে ছিলাম। প্রতিদিন ভাবতাম আজকে একটা কল দেই! পরক্ষনে মনে হত না থাক কালকে দিব। দিন যায় কিন্তু সেই “কাল” আর আমার আসে না।
অবশেষে একদিন ফোন দিলাম তোমাকে, নাম্বার বন্ধ। পর পর দুই দিন চেষ্টা করেও যখন পাইনি তখন তোমার বান্ধবীকে ফোন দিলাম, তার কাছ থেকে শুনলাম তোমার নতুন ভালবাসার মানুষ চলে গেছে তোমার জীবন থেকে। সেই সাথে তোমার পুরুনো নাম্বার বদলে নতুন নাম্বার নিয়েছ। অনেক কষ্টে তার কাছ থেকে তোমার নতুন নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম, তুমি ফোন ধরেছিলে। আমি কিছু না বলে শুধু তোমার কন্ঠটা শুনেছিলাম। তারপর আমি ফোন কেটে দিলাম। ( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯