হেমন্তের সকাল।
আবছা কুয়াশা ফাঁড়ি দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। ঘাসের ডগার উপর শিশির বিন্দু চিক চিক করছে। সোনালী ধানের মিষ্টি গন্ধ ও দোয়েলের সুকণ্ঠি সুরে মুখরিত চারিদিক। আমি নিস্তব্ধ প্রকৃতির মায়া জালে দারুন ভাবে প্রকৃতি অবলোকন করতে লাগলাম। মনে অজানা খুশি দোলা দিতে লাগল। নুপূরের শব্দ ভেসে আসছে কানে। আমি সুদৃঢ় ভাবে পশ্চাদ্ধাবন করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে নুপূরের শব্দ আমার খুব নিকটে আসছে। মনে হচ্ছে মেঘলার পদাচারন। ভাবনার অন্তরালে কখন যে মেঘলা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝে উঠতে পারিনি। আমি মেঘলাকে বললাম ধান ক্ষেতের আইলে খালি পায়ে হাঁটবে? মেঘলা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আমি আর মেঘলা একটা চিকন আইল দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। মেঘলা সামনে আর আমি পেছনে। এক পা দু পা করে সামনের দিকে এগোচ্ছি আমরা। বিন্দু বিন্দু শিশির নুপূর ভিজিয়ে দিচ্ছে মেঘলার। নুপূরে শিশির জমা হয়ে পয়ের পাতা বয়ে গড়িয়ে পড়ছে হেমন্তের স্যাঁত স্যেঁতে মাটিতে। আমি মন ভরে উপলব্ধি করছি মেঘলার পায়ে শিশিরের পিছল পিছল খেলা। মাঝে মাঝে পা পিছলে যাচ্ছে-- একে আপরকে ধরে আমরা সামলিয়ে নিচ্ছি নিজেদের। সূর্যের তাপে শিশির গুলো ধানের ডগা থেকে খসে পড়ছে মাটিতে। ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে কুয়াশার চাদর। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ধান ক্ষেত। পাকা ধানের ভ্যাপসা মিষ্টি সুবাস পিঠা পুলির জানান দিচ্ছে। জিভে জল টলমল- আমি মেঘলার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার খুব খুব চেষ্টা করছি।
রোহানের ধাক্কানিতে ঘুম ভাঙলো। ঘুম কিছুটা নেশার মত লাগছিল। ঘর থেকে বের হতেই শীত অনুভূত হল। চোখ মুছতে মুছতে ব্রাশে পেষ্ট নিয়ে উঠানের দিকে গেলাম। পাশ কেটে রোহান খেজুর রসের হাঁড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। আমি উঠানে দাড়িয়ে ব্রাশ করছি। চারিদিকে কুয়শায় আচ্ছাদিত। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মন পুলক দিয়ে উঠলো। উঠন থেকে নিচে নেমে যেতেই দেখি মাঠে কৃষকদের ধান কাটার মহাড়া চলছে। মা'কে জিজ্ঞাসা করলাম এটা বাংলার কোন মাস? মা জানালো কার্তিক। মা বাংলা মাস খুব ভালো মনে রাখতে পারেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তার পরও মোবাইলে বাংলা মাস ঋতুর সাথে মিলিয়ে নিলাম। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্ত ঋতু। ভাবতেই মনে চরম সুখ অনুভুত হল। মনে পড়ে গেল ছোট বেলাই পড়েছিলাম বেগম সুফিয়া কামালের ''হেমন্ত'' কবিতা।
======
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৯