❑ কুহক
ছায়ার গভীরে, এভাবে না ভাঙলেও তো হয়।
নক্ষত্র যেভাবে
পড়ে রইলো অবহেলায়— ময়ূরের ভাষা উড়ে
গেল— চাঁদের সমুদ্র কোনোদিন হবে না বলে
ভেবেছ?
আমার ভাষা এতটা সুন্দর নয়।
যখন জ্বলন্ত গাছের সাথে ফিসফাস করি,
নিজেকে একটা প্রতারক মনে হয়।
❑ ক্রাইসিস
সে যখন দশতলায় তখন আকাশ পরিষ্কার
সে যখন ছয়তলায় তখন চাঁদ কেবল ঝুললো দড়িতে
সে যখন পাঁচতলায় তখন তিনতলায় আগুন লেগেছে
তখন তার স্যান্ডেল খুলে যায়
আর তার মনে হয় তিনতলাতেই তার ঘর
ঘরের ভেতর তার দুটো বাচ্চা
সে তখন দৌড়ায় অথচ সিড়ির কাছে এসে
তার মনে পড়ে- সে পঙ্গু, দৌড়াতে পারবে না
তখন সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নামতে শুরু করে আর
ক্রাইসিস নিয়ে ভাবতে শুরু করে
ভাবতে ভাবতে সে এসে তিনতলায় পৌঁছায়
কিন্তু তিনতলা তখন চলে গেছে সাততলায়
তখন সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে আবার
উঠতে শুরু করে
ছয়তলায় আবার ফাঁসিতে ঝুলছে চাঁদ
কিন্তু সাততলায় চাঁদ তখন জীবিত
সে ভাবে সাততলায় গেলে সে তিনজন বাঁচাতে পারবে
কিন্তু চারতলায় তিনজনই মৃত
সে উঠতে থাকে
আরও উঠতে থাকে
সিঁড়ি বেয়ে
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
আর ক্রাইসিসগুলি ভুলতে থাকে
ভুলতে থাকে যে তার বাচ্চাদুটি তাকে ঘিরে রাখে
ভুলতে থাকে যে চাঁদ গলায় দড়ি দেয়
ভুলতে ভুলতে সে সাততলা বেমালুম পার হয়ে যায়
আর
সাততলা তখন রওয়ানা দিয়েছে স্বর্গের দিকে
আটতলায় এলে প্রচুর বাতাস তাকে ঘিরে রাখে
নয়তলায় এলে তাকে বার্ধক্যে ধরে
দশতলার সিঁড়ি তাকে আকাশের কাছাকাছি কোথাও তুলে নিয়ে যায়।
❑ অগোচর
রাত্রিগুলো আজকাল কবরের মতো লাগে।
পাশ ফিরলেই- ছুঁয়ে দিতে পারি
অন্ধকার।
পিঠ ঠেকে যায় দেয়ালে, ছোট ছোট নিঃশ্বাসে
বনের অগভীর জলাভূমি; ঘ্রাণ পাই—
তবু শুয়ে থাকি পাথরের মতো; চোখ অশ্রুহীন—
শীতল শিলার পাটাতন যেন গলা ঠেসে ধরে।
মুখে ভাষা নেই—
শরীর বেয়ে বেড়ে ওঠে অসংখ্য লতাপাতা,
বিস্তীর্ণভাবে; বেড়ে উঠতে থাকে শেকড়, ও
সময়ের ধারা। নি:শব্দে।
আমার বুকে জন্মাতে থাকে
অজস্র শিরীষ গাছ; নক্ষত্র ঢুকে পড়ে মগজে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৫২