আমার দিন শেষ হয়ে আসছে এই সংসারে
মাঝে মাঝে বুকের মাঝে অচেনা একটা গ্রাম ঢুকে পড়ে
একটা মেঠো পথ, হিজল বন; বাড়ির উঠান, দুপুরের নির্জনতা
চোখে নিয়ে বসে থাকি, দেহে কুয়াশা মেখে বসে থাকি- একটা ঘু ঘু থাকে
গাছে। এভাবে আমার দিন শেষ হয়ে আসছে
জগৎ সংসারে- চারিদিকে আবছা আলো, ঘরের কোনে
ভাঙা তানপুরা, দেয়ালে ঝুলানো একটা কাঠের খোলা
ছাড়া নিজের বলে আর কিছুই মনে হয় না
এতোগুলো বছরের কথাও মনে নেই- মনে হয় না কখনও কাটিয়েছি,
কেউ কেউ ছিলো বুকের কাছে, আশেপাশে;
আমার আর কিছুই মনে পড়ে না। মাঝে মাঝে কিছু ছায়াদের আনাগোনা
টের পাই বাড়ির পিছে- পরিচিত পায়ের শব্দ টের পাই;
আমার ছানি পড়া চোখ অতো ভালো দেখে না আজকাল
অতো ভালো শোনেও না আমার কান- তবু ডাক পাই;
কে যেন ডাকে ফিসফিস করে, খুব করে, ডাকে; বলে-
চলে এসো তল্পিতল্পা ছেড়ে, জোছনার মাঠে ঘোড়া বাঁধা আছে।
সব ছেড়ে তাই যেতে চাই- বৈষয়িক বিষয় সম্পত্তি, কাউকে লেখা চিঠি, আমার
দুই বিঘে জমি, চৈত্রের বাতাস, লাঙল, ভাঙা তানপুরা, বাঁধা গান, এই উঠান
কিছুই নিয়ে যাবো না আমি-
রৌদ্রেরা পায়ের কাছে এসে গড়াগড়ি
দিলেও ওদের নেবো না আমি। নেবো না আমি।
রাত এলে চোখ উদগ্রীব হয়ে ওঠে আমার- ছানি পড়া চোখ;
এই বুঝি সেই জোছনার মাঠ দেখা যায়- এই বুঝি সেই সাদা ঘোড়া
রাখা আছে বাঁধা; উড়াল দেবো তার পিঠ চড়ে এক অচেনা মধ্যরাতে
ডাক পাই; শুধু ডাক পাই- বুকের মধ্যে অন্য এক অপার্থিব গ্রাম হাতছানি দিয়ে ডাকে।