এক জীবনে অনেক কিছু দেখার বাকি ছিল আমার।
গহীন অরণ্যের ভেতর
নির্জন পাতায় বসে থেকে দেখতে চেয়েছিলাম পিঁপড়ের চলন। অন্ধকারে
ব্যাঙের মতন ঘাপটি মেরে বসে ছিলাম কতদিন, বৃষ্টির জল আর কাদা
পানিতে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছিলো শহর। অন্ধকারে আমি সাপের অপেক্ষায়
ছিলাম। আমি দেখেছি, রাত হলে
আমাদের বাবুরাও কীভাবে দো পেয়ে
সাপ হয়ে যায়- রমণীদের জৌলুসমাখা শরীরে ঘোরাফেরা করে।
তারপর ছেড়ে খোলস এবং মদের বোতল- ডানা ভাঙা পাখি হয়ে
ঘরে ফেরে।
এক জীবনে কত কিছু হওয়ার বাকি ছিল আমার। আমি
হতে চেয়েছিলাম একটি লাল ভাঙা ভায়োলিন। কোনো শিল্পীর ব্যক্তিগত
দুঃখ। রিকশাওয়ালার ঘাম। কুলিদের, মাঝির।
দুই দিনের অভুক্ত শিশুদের সামনে একথালা সাদা ভাত।
এ জীবনে তা হয়তো আর হওয়া হল না। আমি হতে চেয়েছিলাম একটা কবিতা, তখন
শুধু আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। আমি আপন মনে আমাকে খুঁজতে যেয়ে দেখি আমার পা-
আর পা নেই, ওগুলো শেকড় হয়ে যাচ্ছে, তারপর গাছ। আমি টেনে হিঁচড়ে
নামাই আমার দেহটা
কিন্তু পথ হতে যেয়ে আর পথ হতে পারি না-
আমি ধু ধু প্রান্তরের মাঝে
ঠিক একটা কাকতাড়ুয়া- হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি অথচ
মাটিতে আমার কোনো ছায়া নেই। আমি কান পেতে শুনতে চেয়েছিলাম
নদী, কিন্তু শুনেছি তপ্ত খরায় মাটির প্রবল চৌচিরধ্বনি। মধ্যরাতে উঠে
একটা রুপালী হ্রদ খোঁজার কথা ছিল, কিন্ত আমার সেই ঘুম কখনও ভাঙে নি।
আমি স্বপ্নের মাঝে জেগে উঠতে পারি নি তাজমহল তৈরির কোনো প্রাচীন রাতে।
ঘুমের ঘোরে হাজার হাজার শ্রমিকের ছেনী হাতুড়ীর শব্দ আমার কানে
এসে বাঁধে।
এক জীবনে আমার কত কিছু পাওয়ার বাকি ছিল। দশটা
সমুদ্র ধরে রাখার কথা ছিল হৃদপিণ্ডে। অথচ
ছোট বুকে জায়গা করে নিলো বিশাল একটা মরুভূমি! ঘোড় সওয়ার হয়ে চলি।
ছোট বেলার মত কোনো বাগানে শুয়ে রাতের পরিষ্কার আকাশ
দেখতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে বালি ঝড় নামে।
কত কিছুর জন্য অপেক্ষা ছিল। ভয়ংকর ঘূর্ণি আর প্রবল বাতাসের মাঝে
এমন একজনের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল-
যাকে দেখে মনে হবে-
এক জীবনে আমি তাকে এত ভালবাসবো কীভাবে?
খুব অদ্ভুত একটা জীবন কাটানোর কথা ছিল তার সাথে!