somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।।---গর্গন দ্বীপের দানবী ও পার্সিউস এর বীরত্ব গাথা---।।

০৫ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রীক মিথ অনুসারে গর্গনরা হল ভয়ংকর দানবী যারা বাস করতো গর্গন দ্বীপে। পুরানে ৩ জন গর্গন সম্পর্কে জানা যায়। এই তিন দানবীই ছিল বোন। তাদের নাম ছিল স্থেনো , মেডুসা এবং ইউরে্ল।তাদের মাথায় চুলের বদলে বাস করতো সাপ। তাদের বাহু ছিল ব্রোঞ্জের , শরীর ছিল দুর্ভেদ্য আঁইশে আবৃত এবং ছিল স্বর্ণময় পাখা।




গর্গন দের দ্বীপ ছিল পশ্চিমে ,পাতালপুরীতে যাবার রাস্তা ছিল সেখানে। তারা দেখতে এতোটাই ভয়ংকর ছিল যে কেউ তাদের দেখামাত্র সে পাথরে পরিনত হতো।



তিন গর্গন বোনের মাঝে দুইজন ছিল অমর। একমাত্র মেডুসাকেই হত্যা করা সম্ভব ছিল। মহাকাব্য অনুসারে মেডুসা ছিল এক অপূর্ব সুন্দরী কুমারী। সমুদ্রের দেবতা পসেডিওন এর চোখ পড়ে একসময় মেডুসার উপরে। তারা অ্যাথেনা দেবীর মন্দিরে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। এতে দেবী অ্যাথেনা ক্রুদ্ধ হয়ে মেডুসাকে দানবীতে রুপান্তর করেন এবং তার আশ্রয় হয় গর্গন দ্বীপে।



গর্গন দানবীদের কথা আসলেই যে গ্রীক বীরের নাম উচ্চারিত হয় , সেটা হল পার্সিউস। এখন অবশ্য পার্সিউস সম্পর্কে কিছু বলা দরকার।

তখন আর্গসের রাজা অ্যাক্রিসিউসের একমাত্র সুন্দরী কন্যা ছিল ড্যানি। অ্যাক্রিসিউসের মনে তবু কোন শান্তি ছিল না কারন তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। আর কোন পুত্রসন্তানের সম্ভাবনা আছে কিনা সেটা জানার জন্য রাজা একদিন গেলেন ডেইফে , এক পুরোহিত এর কাছে। পুরোহিত তাকে বললেন , তার তো পুত্রসন্তান লাভের সম্ভাবনা নেই , উপরন্তু তার কন্যার গর্ভে এমন এক ছেলে সন্তানের নাকি জন্ম হবে যার হাতেই তার মৃত্যু হবে।
রাজা এটা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন এবং তার কন্যা ড্যানিকে একটা দুর্গে আটকে রাখলেন যাতে সে আজীবন কুমারী থাকে।

কিন্তু একদিন যে জানালা থেকে আলো ,বাতাস আসতো ,সেই জানালা থেকে এলো স্বর্ণ বৃষ্টি। আসলে দেবতা জিউস এসেছিলেন স্বর্ণ বৃষ্টি রুপে , ড্যানির কক্ষে। জিউস এবং ড্যানি মিলিত হল। ড্যানির গর্ভে আসলো সন্তান ,নাম তার পার্সিউস। রাজা এই ঘটনা আবিষ্কার করার পর অনেক ক্রুদ্ধ হয়ে মা ও ছেলে দুইজনকেই সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন।

ভাসতে ভাসতে তারা একদিন এসে পড়লো ছোট একটি দ্বীপে যেখানে তাদের খুজে পেলো এক নিরীহ জেলে , নাম তার ডিকটিস । ড্যানি ও পার্সিউস সেই জেলে পরিবারে নিরাপদেই বাস করতে থাকে । পার্সিউস ও ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক হল।

দ্বীপের রাজা পলিডিকটিস ছিল হিংস্র ও কুটিল প্রকৃতির। ড্যানিকে দেখামাত্র সে ড্যানির প্রতি আকৃষ্ট হল। কিন্তু পার্সিউস হয়ে দাঁড়ালো বাঁধা। তখন তিনি পার্সিউস কে হত্যা করার এক ফন্দি আঁটলেন। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে পার্সিউস কে গর্গনদের কথা বললেন। তিনি বললেন , একটি গর্গন মাথা নিঃসন্দেহে উপহার হিসেবে শ্রেষ্ঠ।

এরই মাঝে রাজা কোন এক অনুষ্ঠানে পার্সিউস কে আমন্ত্রন করলেন । আমন্ত্রিত সকলেই উপহার নিয়ে উপস্থিত হল । কিন্তু পার্সিউস এর কাছে দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না । রাজা এই সুযোগে পার্সিউসকে চরমভাবে অপমান করলেন । তখন পার্সিউস মনস্থির করলো , রাজাকে সে একটা গর্গন মাথাই উপহার দিবে ।

পার্সিউস গর্গন দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। এটি অত্যন্ত বিপদজনক হলেও দুইজন দেবতা তার সাথে ছিলেন। একজন হলেন হারমিস , যিনি পার্সিউস কে গর্গন বধ করার জন্য উপহার দিলেন একটি কার্যকরী তলোয়ার , এবং অন্যজন হলেন অ্যাথেনা , যিনি দিলেন তার ব্রোঞ্জের বক্ষবন্ধনীটি । তিনি পার্সিউসকে সাবধান করে দিলেন , যাতে গর্গনদের দিকে সে না তাকায় , বরং তার বক্ষবন্ধনীটির দিকে তাকাতে ,যেটা একটা আয়নার মতো কাজ করবে , এবং তার সাহায্যে সে গর্গন বধে সফল হবে।



পার্সিউস যখন তাদের হত্যা করার জন্য গর্গন দ্বীপে পৌঁছল , তখন দানবীরা ছিল গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন। পার্সিউস দেরী না করে ,আয়নার সাহায্যে মেডুসার গলাকে লক্ষ্য করে আঘাত হানল। মুহূর্তেই তলোয়ারের আঘাতে মেডুসার মাথা গলা থেকে বিচ্ছিন্ন হল। পার্সিউস মাথাটিকে একটি ওয়ালেট এর মাঝে জড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে এলো।




পথিমধ্যে পার্সিউস এক অনিন্দ্য সুন্দরী তরুণীকে এক বিশাল দানবের হাত থেকে বাচায়। দানবকে হত্যা করে , তরুণীকে উদ্ধার করে পার্সিউস। তরুণীর নাম ছিল অ্যান্ড্রোমিডা। পার্সিউস অ্যান্ড্রোমিডার প্রেমে পড়ে , এবং তাকে নিয়েই ফিরে আসে। অ্যান্ড্রোমিডার সাথে পার্সিউস বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।




নিজের দ্বীপে ফিরে সে জানতে পারে ,তার মা আত্মগোপন করেছে শয়তান রাজা পলিডিকটিস এর হাত থেকে বাচার জন্য। ক্রোধে মত্ত হয়ে পার্সিউস রাজপ্রাসাদে যায়। সেখানে একটি ভোজ সভা চলছিলো। পার্সিউস যেয়েই সভার মাঝে মেডুসার মাথাটি উন্মুক্ত করে। মুহূর্তের মাঝেই দুশ্চরিত্র রাজা সহ ওখানে উপস্থিত সবাই পাথরে পরিনত হয়।

এরপর পার্সিউস তার মাকে খুজে বের করে এবং তার হবু পত্নী অ্যান্ড্রোমিডার সাথে বসবাস শুরু করে। তবে কোন এক সময় আর্গসে চাকতি নিক্ষেপের একটা খেলার আয়োজন করা হয়। পার্সিউস সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে একটা ভারী চাকতি উড়ে এসে আর্গসের রাজা অ্যাক্রিসিউসের উপর পতিত হয়। অ্যাক্রিসিউসের মৃত্যু হয় তাই পার্সিউস এর হাতেই , ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে।।




ছবি : ইন্টারনেট ।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ।

http://www.theoi.com/Pontios/Gorgones.htm
Click This Link
Click This Link
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×