somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

০৭ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখ

(৪২)

বুঝলাম কত ছলনাই না করতে পারে এই সেকুরে,তার মনের কথা বোঝা একেবারেই অসম্ভব।সেকুরে তখন হিসেবী ব্যাবসায়ীর মত বেশী কথা না বলে দুই ছেলেকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছি্ল।মন বলছিল সব কিছু ভুলে ঐ জঞ্জাট ছেড়ে চলে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে,কিন্ত কোন উপায় ছিল না বাইরের দরজা তখন প্রায় ভাঙ্গার অবস্থায়।সিয়াহর লোকজন দরজা ভেঙ্গে ঢুকলে অবস্থাটা কি দাড়াবে কে জানে,অবশ্য সিয়াহ ব্যাপারটাকে বেশী দূরে গড়াতে দিবে না এটা জানাই।সেকুরের শ্বশুর একপাশে দাঁড়িয়ে তখন মায়া কান্নায় ব্যাস্ত,তবে লোকটা যে ভঁয়ে থরথর করে কাঁপছিল,এটা বোঝাই যাচ্ছিল।
শেষমেষ আমি দরজার কাছে চীৎকার করে বললাম,‘সবাই থাম,অনেক হয়ে গেছে’।
সব গোলমাল থেমে গেল সেই মুহুর্তেই।
‘অহানের মা,অহানকে দরজা খুলতে দাও,ও তো বাড়ী যেতে চাচ্ছে এটা নিয়ে নিশ্চয় কেউ কিছু বলবে না’।
অহান তখন মায়ের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে পেছনে চলে গেল,বাইরের ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঘরে ঢুকছে,দূরে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করছে।
সেকুরে পাশে আসা অহানকে চুমু খাচ্ছিল,সেভকেত বললো,‘আমি হাসান চাচাকে সব কিছু বলবো’।
দেখলাম সেকুরে বোরখা পরে জিনিষপত্র নিয়ে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে,আমার বুক থেকে বিরাট একটা বোঝা নেমে গেছে,আনন্দে চীৎকার করতে ইচ্ছা করছিল,তবে কোন কিছু না বলে মসুরের ডালের সুপে চুমুক দিচ্ছিলাম।
সিয়াহ অবশ্য চালাকের মত দরজার ধারে কাছে কোথাও আসেনি।সেভকেত তখন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে ছিল,চীৎকার করে সিয়াহ বা তার লোকজন কাউকে পাওয়া গেল না।
অনেক বোঝানোর পরে,সেভকেত হাসানের পাথরের কাজ করা চাকুটা সাথে নিয়ে সেকুরের সাথে যেতে রাজী হলো,সেকুরের অমত করার কোন উপায় ছিল না।
‘হাসান আর লাল তলোয়ারকে ভঁয় করছো না,দেখ কি হয়’,সেকুরের শ্বশুর কাঁপতে কাঁপতে বললো,তার মনে ভঁয় ছিল,না জানি কি অঘটন ঘটায় হাসান।এক সময় নাতি দুজনের গালে চুমু দিয়ে,ফিসফিস করে সেকুরেকে কিছু একটা বললো বুড়ো।

সেকুরে যখন বের হয়ে যাচ্ছিল,ভাবছিলাম তার জীবনের কত সুখের দিন কেটে গেছে ঐ বাড়িটাতে।কিন্ত সেকুরেকে কি জানে না দুজন নিষ্ঠুর লোক এখন তাকে মৃত্যুর রাস্তায় ঠেলে দেয়ার জন্যে ওখানে বসে আছে?আমি সেকুরের সাথে আর হেঁটে যাইনি,তার ব্যাবহারটা আমার কাছে একেবারেই অবিশ্বাস্য ছিল,তখনও ভাবতে কষ্ট হছিল সেকুরে ঐ বাড়ীতে ঐ ভাবে ফিরে গেল!

না রাতের কনকনে শীতের জন্যে,না অন্ধকারের কারণে,অজানা পাড়া আর হাসানের ভঁয়ে তিন মহিলা আর দুই ছেলে,আমরা জড়সড় হয়ে একসাথে হেঁটে যাচ্ছিলাম।পাশে যদিও সাথে ছিল সিয়াহ আর তার লোকজন।দামী জিনিষপত্র নেয়া কাফেলার মত আমরা যাচ্ছিলাম অলিগলি দিয়ে যাতে পুলিশ,চোর জোচ্চোরদের হাতে না পড়তে হয়।এঁকে অন্যকে জড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম,যেন জিন,অশরীরি আত্মাও সাহস করবে না সেখানে আসতে।বাড়ীতে ঘুমানো লোকজনের নাকের ডাক,বুড়োদের কাশির শব্দ ছুটে আসছিল রাতের নিস্তব্ধ অন্ধকারে।

এমন কি এই এসথার,ইস্তাম্বুলের গরীব,খারাপ এলাকাগুলোও যার নখদর্পনে,তার কাছেও এই অন্ধকার প্যাঁচানো রাস্তাটা তখন মনে হচ্ছিল অজানা,অপরিচিত একটা এলাকা।তবে দিনের বেলায় দেখা আমার চেনা কিছু কিছু অংশ,নামকরা দর্জির বাড়ীর দেয়াল,নুসরাল্লো হোজার আস্তাবলের গোবরের গন্ধ মনে হচ্ছিল দারুচিনির গন্ধের মত।সূর্যের আলোতে আগুনে পোড়া খেলোয়াড়দের আখড়া,বাজপাখীর এলাকা যেটা মিশে যায় কানা হাজীর ফোয়ারায়,এ গুলো দেখে বুখতে পারলাম আমরা সেকুরের বাবার বাসায় যাচ্ছি না।

হাসান না জানি কি করবে যখন সে জানতে পারবে খুনীদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্যে সেকুরে তার ছেলেদের নিয়ে অন্য কোন বাসায় লুকিয়ে আছে।যদি জানতাম জায়গাটা কোথায় তোমাদেরকে এখনই বলতাম,হয়তো হাসানকেও বলে দিতাম আগামীকালকে।আমার কোন সন্দেহ নাই যে সেকুরে হয়তো আবার হাসানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে,চালাক চতুর সিয়াহর কথায় বুঝতে পারলাম সে আমাকেও সম্পুর্ন বিশ্বাস করেনি।

ক্রীতদাস বিক্রির বাজার ছেড়ে যাচ্ছিলাম যখন,দূরের রাস্তা থেকে গোলমালের শব্দ ভেসে আসছিল,কানে আসলো মারামারির শব্দ,তলোয়ারের সাথে তলোয়ারের,কুড়ালের সাথে কুড়ালের,
এমন কি লাঠির সাথে লাঠির যুদ্ধ,হৈচৈ,চীৎকার।

সিয়াহ লম্বা তলোয়ারটা,সেভকেতের কাছ থেকে হাসানের ছোরাটাও জোর করে নিয়ে এক বিশ্বাসী লোকের হাতে তুলে দিল।নাপিতের শিষ্যের সাথে দুজন লোকজন সেকুরে,দুই ছেলে,
হায়রিয়েকে কোন এক নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল।মাদ্রাসার ছাত্রটা অলিগলি দিয়ে আমাকে বাড়ীর দিকে নিয়ে যাচ্ছিল,কি অদ্ভুত ভাবে ধীরে ধীরে আমার কাছে সবকিছু অজানা হয়ে গেল।

রাস্তার একটা কফির দোকানে দেখে মনে হলো,তলোয়ারের যুদ্ধ যে ভাবে হঠাৎ আরম্ভ হয়েছিল সে ভাবেই হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে।তখনও চীৎকার,হৈচৈ করে দল বেঁধে লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছিল,ভাবলাম হয়তো ওরা লুঠপাঠ করে বেড়াচ্ছে,তা না করে ওরা কফির দোকানে ঢুকে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার করে বের হয়ে গেল।ভেতর থেকে কাঁচের কাপ,পেতলের জগ সব কিছু বাতির নীচে জড় লোকজনের সামনে এক এক করে আনন্দের সাথে ভাঙ্গলো।কেউ তাদের থামাতে গেলে তাদের মারধর করতেও ওরা দ্বিধা করেনি,মনে হলো ঐ কফির দোকানের ওপরেই ওদের যত রাগ।লোকজন চীৎকার করে বলছিল,অনেকেই জানে না কফি কি ভাবে মানুষদের বুদ্ধি ভোতা করে,পেটের ক্ষতি করে,মানুষ ভুলে যায় কোরআনের শিক্ষা,কাফেররা এই সব বিষ দিয়ে নষ্ট করছে বিশ্বাসী মুসলমানদের,ইবলিশ ছদ্মবেশে এই সব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।কেন জানি মনে হলো,বাড়ীতে পৌঁছে,নেসিমকে বলতে হবে শয়তানের ঐ কফি বেশী না খাওয়ার জন্যে,না জানি কি ক্ষতি হচ্ছে কে জানে?

আশেপাশে কয়েকটা সরাইখানা,বড় বড় কয়েকটা বাড়ী,গোলমালে লোকজন জড় হতে খুব একটা সময় লাগেনি,আর ভবঘুরে,চোরদের দল তো আছেই।বুঝতে পারলাম ওরা এরজুরামের নুসরাত হোজার গুন্ডাপান্ডার দল।ইস্তাম্বুল শহর থেকে ওরা সব কিছু বিদায় করবে-বেশ্যাবৃত্তি,শুঁড়িখানা,কফির দোকান।শাস্তি দিবে যারা ধর্মের পথে চলে না,যারা সুফী দরবেশের নাম করে নাচ গান করে বেড়ায়।হোজাদের যুদ্ধ কাফেরদের বিরুদ্ধে,যারা শয়তানের সাথে আঁতাত করে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।মনে পড়লো এটা সেই কফির দোকান যার দেয়ালে ছিল নানান ধরনের ছবি,যেখানে ধর্ম আর হোজাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছুই বলা হতো,মাত্রাহীন অসম্মানের গল্পকথা।

কফির দোকানের রক্ত মাখানো এক কর্মচারী যখন বের হলো,ভাবলাম ওখানেই লোকটা পড়ে যাবে,তবে না লোকটা রক্ত মুছে নিয়ে,জড় হওয়া আমাদের সাথে ঐ ভাঙ্গাচুরা দেখছিল,
অবশ্য ভঁয়ে ভঁয়ে অনেকেই সরে গেছে।সিয়াহকে একজন লোককে কেন জানি দেখে বেশ অবাক হয়ে চোখে দেখছিল।ইরুজুরমের গুন্ডাপান্ডারা তখন এক সাথে জড় হয়ে গেছে,বোঝা যাচ্ছিল জানিসারি(পুলিশ) আসছে খুব শীঘ্রিই।জ্বালানো মশালগুলো তখন নিভে গেছে আর ছড়ানো ছিটানো কয়েকজন অযথাই ছিনতাই করে মারধর করছিল।

সিয়াহ আমা্কে মাদ্রাসার ছেলের কাছে নিয়ে বললো,‘পেছনের গলি দিয়ে এসথারকে বাড়ীতে নিয়ে যাও’,মাদ্রাসার ছেলেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল,তাই আর বেশী আলাপ আলোচনা করা গেল না।সিয়াহর জন্যে আমার সদিচ্ছা রেখে গেলাম,কিন্ত এসথার যেহেতু এখান থেকে চলে যাচ্ছে,ওর পক্ষে তো আর কিছু বলা সম্ভব না।


আমি একজন মেয়েমানুষ

তোমাদের আপত্তি আমি বুঝতেই পারছিঃগল্পকথক এফেন্দী অনেক মানুষকেই নকল করতে পারে,তবে জানি একজন মেয়েমানুষকে নকল করতে পারে না!
‘তোমার সাথে একমত হতে পারলাম না,যতক্ষন আমার গলা ভেঙ্গে না যেত,এ শহর ও শহর করে আমি কম জায়গায় যায়নি,কম চরিত্র নকল করিনি রাতের দ্বিপ্রহরে,বিয়ের অনুষ্ঠানে,মেলায়,কফির দোকানে।এ জন্যেই আমার বিয়ে করা হয়নি,তবে মেয়েদের আঁচার ব্যাবহার আমার জানা নাই ভাবলে ভুল করবে’।

মেয়েদের সমন্ধে খুব ভালই জানা আছে আমার,এমন কি কয়েকজনকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি।
১)আমার মা,আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করে।
২)আমার প্রিয় চাচী
৩)আমার ভাই এর বৌ(যদিও ভাই আমাকে সবসময় মারধর করতো আর বলতো, ‘আমার বাড়ী থেকে বের হয়ে যা,বসে বসে খাবি আর কিছু করবি না’),যাকে ঘটনাচক্রে শুধু একবারই দেখার সূযোগ হয় আমার,আর আমি তার প্রেমে পড়ে যাই।
৪)গল্পবলায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সময় কোনিয়ার জানালায় সুন্দরী মহিলা,
কোনদিন যদিও কথা হয়নি,তবু তাকে ভালবাসতাম,আজও ভালবাসি তাকে।জানি না এতদিন সে বেঁচে আছে কি না।

সুন্দরী মেয়ের মুখ,শরীরের অঙ্গভঙ্গী দেখলে পুরুষের মন দু ধরণের আবেগে ভেসে যায়,
কামনার উচ্ছাস আরেকটা আধাত্মিক যোগাযোগ,তাই আমাদের ধর্মে বলে বিয়ে না হলে মেয়েদের দিকে না তাকানোই বুদ্ধিমানের কাজ।অবশ্য কামনার স্রোতে তালমাতাল না হয়ে আরেকটা উপায় হলো সুন্দর ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করা,মেয়েদের জন্যে একটা ভাল বিকল্প,
একসময় ওটাই তোমার পচ্ছন্দসই হয়ে দাঁড়াবে।ইউরোপের মেয়েদের মুখে কাপড় তো থাকেই না,তাদের চুল,গলা সবই দেখা যায়,এমন কি তাদের পাটাও খোলা থাকে।এটা আমার শোনা ওখানকার ছেলেরা উত্তেজনায় স্ফীত লিঙ্গ নিয়ে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকে,আর এই স্ফীত লিঙ্গ,খোলা পা এগুলোর জন্যেই ওদের সমাজ অবুঝ হয়ে গেছে।
এই যে দেখ না প্রতিদিন একটা না একটা দূর্গ ওটোমান সাম্রাজ্যের কাছে আত্মসর্ম্পন করছে।
খুব কম বয়সেই এসব আমার জানা হয়ে গেছে,তাই যদিও আমি মেয়েদের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকতাম,তবে মেয়েদের প্রতি আমার কৌতুহল কোনদিন কমে যায়নি।মা,চাচী ছাড়া,অন্য জাতির মেয়েদের সমন্ধে জানার জন্যে ওরা কি খায়,কি করে,কি ভাবে কথা বলে,ব্যাবহারটা কেমন করে,আর এ জন্যে আমাকে ওদের পোষাক পরতে হবে।এক শুক্রুবারে আমার মা,বাবা,চাচী,বড় ভাই ফাহরেং এর নদীর ধারের গোলাপের বাগানে যখন যাচ্ছিল আমি অসুস্থতার ভান করে গেলাম না।
‘কি হলো তোর হঠাৎ,তুই কুকুর,ঘোড়া,গাছ সবকিছু নকল করতে পারিস,চল ভালই লাগবে আমার।বাড়ীতে একা একা কি করবি বাড়ীতে’,মা বললো,আল্লাহ যেন তার আত্মাকে শান্তি দেয়।
‘এটা তো আর বলতে পারি না ,আমি তোমার কাপড় পরে মেয়েমানুষদের বোঝার চেষ্টা করবো’,তাই বললাম,‘আমার পেট ব্যাথা করচ্ছে’।
‘কি হলো এই অল্পতেই কাইকুই,কি হলো,চল আমরা কুস্তি করবো’,বাবা বললো।
আমার শিল্পী,কালিগ্রাফার বন্ধুরা আমি এখন তোমাদেরকে বলবো,আমার বেহেশত নসীব মায়ের পোষাক,অর্ন্তবাস,চাচীর পোশাক গায়ে দিয়ে,ঠিক কি অনুভব করলাম,কি রহস্য খুঁজে পেলাম,নতুন একটা পৃথিবী খুঁজে পেলাম সে দিন,জানতে পারলাম একটা মেয়ে হওয়ার রহস্য।অত ঢং না করে সোজাসুজি বলছি গল্প,উপন্যাসে পড়া,মোল্লাদের কাছ থেকে শোনা মেয়েমানুষদের শয়তানী চেহারা,একেবারেই বানোয়াট।

হাতের কাজ করা গোলাপ ফুলে সাজানো মায়ের অর্ন্তবাস আমাকে একটা অন্যজগতে নিয়ে গেল,আমি তখন মায়ের মত স্নেহপরায়ন,অনুভুতিশীল আরেকটা চরিত্র।আর চাচীর বাদামী রং এর স্কার্ট,যা চাচী খুব সহজে পরতে পারতো না,পরে বাচ্চাদের প্রতি খুব স্নেহশীল হয়ে গেলাম।আমি তখন সকলের মা,ইচ্ছা হচ্ছিল সবাইকে আদর করতে,রান্নাবান্না করতে সারা পৃথিবির জন্যে।বিশাল স্তনের মেয়েদের কষ্ট বোঝার জন্যে মোজা,তোয়ালে হাতের কাছে যা ছিল সেটা বুকে দিয়ে হাঁটছিলাম,আর ইবলিশের (শয়তান)মতই গর্বে উল্লাসিত হচ্ছিলাম।
বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল না, বিশাল স্তন দেখলে পুরুষেরা কেন অস্থির হয়,ছুটে যায় মুখে দেয়ার জন্যে।বদলে গেলাম শক্তিশালী এক চরিত্রে,কিন্ত ওটাই আমার চাওয়া ছিল।কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে গেছি যদিও,চাচ্ছিলাম বিশাল স্তন আমাকে গর্বিত করবে,আবার আমি যেন করুনার পাত্রীও হয়ে যাই,কিন্ত তা হয়নি।
আমার চাওয়ার পুরুষ হবে অচেনা ধনী,বুদ্ধিমান কেউ,প্রেমে পাগল হয়ে,তবু ভঁয় পাব আমি লোকটাকে।মায়ের লুকানো সোনার বালা হাতে,চাচীর পাউডার মেখে,সবুজ চাদর গায়ে দিয়ে,চুলটা ঠিক করে,মুখের হাল্কা নেকাবে আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে গেলাম।
যদিও চোখে,ভুরুতে আমি কোন কিছুই করিনি তবু চোখ ভুরু কেমন জানি বদলে গেছে শুধু আমার গাল আর চোখ দেখা যাচ্ছিল,আমি তখন একটা সুন্দরী মেয়ে।তবে নিজের পুরুষালী চোয়ালটা দেখে আমার নিজেরই বিরক্তি লাগছিল।
হাতে ধরা আয়নায় কান্নার ফোঁটা দেখে একটা কবিতার কথা মনে পড়লো,ঠিক সে সময়ে আল্লাহর কৃপায় কবিতাটা মনে করে সুর করে গাইলাম,কোনদিন ভুলবো না কবিতাটাঃ
আমার মনটা পূর্বের জন্যে,আমি যখন থাকি পশ্চিমে,
আমার একটা অংশ বলে আমি মেয়ে হতে চাই,যখন আমি পুরুষ,
আরেকটা অংশ বলে পুরুষ হতে যখন আমি মেয়ে,
কতই না কঠিন এই মানুষের জীবন,কতই না কঠিন বেঁচে থাকা,
আমি তো আনন্দ চাই পূর্ব,পশ্চিম,উত্তর,দক্ষিনে।

ভাবছিলাম,‘আমার ইরজুমি ভায়েরা’,যদি এই গানটা শোনে,তা হলে না জানি তারা ক্ষেপে যে কি করবে,সেটা আমি ভাবতেই চাই না’।কেন ভঁয় পাচ্ছি আমি?হয়তো এমনও হতে পারে তারা কেউ রাগ করবে না,ওটা আমার অযথার চিন্তা।আমি কারও নিন্দা করতে চাই না,
আমাদের নাম করা মোল্লা নুসরাত,যাকে এফেন্দী বলে ডাকতে চাই না,বিবাহিত হলেও কচি বয়সের সুন্দর ছেলেরা তার খুব পচ্ছন্দ,যেমন অনেক শিল্পীদেরও পচ্ছন্দ কচি ছেলেদের।তবে আমার কাছে মোল্লা নুসরাত একেবারেই অপচ্ছন্দের মানুষ,একে দেখতে ভাল না তার উপরে আবার বুড়ো।
দাঁত সব কবেই পড়ে গেছে,আর তার কাছের ছেলেরাই বলে ভাল্লুকের পাছার মত প্রচন্ড দূর্গন্ধ তার মুখে।যাকগে এ সব লোক শোনা আজে বাজে কথা ছেড়ে আসল কথায় আসা যাকঃনিজের সৌন্দর্যে অবাক হয়ে আমার আর,কাপড়,থালা ধোঁয়ার রাস্তায় গোলামদের মধ্যে ঘোরার ইচ্ছা হচ্ছিল না।দুঃখ,দারিদ্রতার আয়নাতে চেহার দেখে কান্না ওটাতো দুঃখী আর কুৎসিত মেয়েদের জন্যে।আমার এই সৌন্দর্যে মানায় একজন স্বামী,যে আমাকে রানীর মত বসে খাওয়াবে,কিন্ত কে সেই মানুষটা?
এ জন্যেই আমি পাশার ছেলেদের,ধনী লোকজনের ঘরে উঁকি মেরে দেখতাম,আমার ইচ্ছা ছিল দুই ছেলের মা হওয়ার,ঐ সুন্দর চেহারার মেয়েটা যার ছবিটা শিল্পীরা সব সময় আঁকে। মনে হয় সবচেয়ে ভাল হবে আমি যদি সেকুরের গল্পটাই বলি,তবে আজকে তো আমার অন্য গল্প বলার পালা।


ইবলিশের প্ররোচনায় সাজানো প্রেমের কাহিনী

খুবই সাধারণ একটা গল্প বলছি।রাস্তাটার নাম কেমের,ইস্তাম্বুলের গরীব এলাকার ছোট্ট একটা রাস্তা।ঐ এলাকার নামকরা লোক বলতে চেলেবী আহমেদ,ভাসেব পাশার কর্মচারী,বিবাহিত,
দুটো ছেলে নিয়ে এক সাথেই থাকতো।একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক বাড়ীর জানালায় লম্বা চুল,বড় বড় চোখের এক বসনিয়ান মেয়েকে দেখে সে এমনই পাগল হলো যে আর বলা যায় না।মেয়েটা বিবাহিত আর খুবই স্বামী ভক্ত ছিল,তাই চেলেবীর প্রতি তার কোন আর্কষন ছিল না।অসহায় চেলেবীর কিছুই করার ছিল না,গ্রীক মদে মাতাল হয়ে নিজের হতাশা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতো শুধু,তবে ধীরে ধীরে পাড়াপড়শীদের কাছে আর কিছুই গোপন থাকলো না।পাড়াপড়শীরা চেলেবীর প্রেমের কথা দু একটা হাসিঠাট্টা করতো মাঝে মাঝে,তবে তার চেয়ে বেশী কিছু না আর।হঠাৎ চেলেবী একেবারেই বদলে গেল,মদ খেয়ে প্রতি রাতে বসনিয়ান সুন্দরী মেয়েটার বাড়ীর সামনে বসে অযথাই হাউমাউ করে কাঁদতো।ক্ত আর সহ্য করা যায়,একসময় পাড়াপড়শীরাও বিরক্ত হয়ে গেল,কিন্ত তাদের করার কিইবা ছিল,লোকটাকে মেরে তাড়াতেও পারে না,তা ছাড়া বলে সান্তনা দেওয়ারও কোন উপায়,ভাষা নাই।
চেলেবীরও ঐ হতাশা থেকে বের হয়ে আসার কোন উপায় ছিল না,ভালবাসার যন্ত্রনা কুরে কুরে খাচ্ছিল,তাকে।পাড়াপড়শীরাও নিজেদের অজান্তেই চেলেবীর সাথে সমব্যাথী হওয়া আরম্ভ করলো,সবাই দুঃখী হয়ে ছিল হতাশ ভালবাসায়।ঐ হতাশার রোগ ছড়িয়ে গেল চারপাশে আর আরম্ভ হলো অনেক কিছু,কাজ করার স্পৃহাও হারিয়ে ফেললো অনেকে,হঠাৎ নানান দূর্ভাগ্যের সম্মুখীন হয়ে পাড়া ছাড়লো,অনেকে।এক সময় চেলেবীও পাড়া ছেড়ে গেল অন্য এলাকায়,
ফাঁকা হয়ে গেল পাড়াটা শুধু বসনিয়ান মেয়েটা আর তার স্বামী ছাড়া তেমন কেউ ছিল না আর।যদিও তারা সারা জীবন একসাথে কাটালো,কিন্ত ঐ ছোট্ট একটা ঘটনা তাদের দুজনের জীবন বদলে দিল আর শান্তি খুঁজে পায়নি তারা তাদের জীবনে কখনও।
এই গল্পটা আমার খুবই পচ্ছন্দ ওখানে আছে ভালবাসার হতাশা,মেয়েদের জীবনের লুকোনো দুঃখটা।
আমি তো এখন একজন মেয়ে তাই আমাকে বলতে হবে,
‘যে জানে যে বোঝে তার কাছে ভালবাসা একটা নীল আকাশ’।
দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে ঐ লোকগুলো কে?


আমাকে সবাই ডাকে কেলেবেক বলে

জড় হওয়া লোকজন দেখে বুঝতে পারলাম,ইরজুরুমিরা শিল্পীদের ধরে মারধর করছে।
সিয়াহকেও দেখলাম লোকজনের ভিড়ে চাকু হাতে বিদঘুটে চেহারার কজন লোক,আর ফেরীওয়ালা এসথার যাকে কে না চেনে,দাঁড়িয়ে আছে,একপাশে আরও কজন মহিলা কাপড়ের টোপলা হাতে।
কফির দোকানদার,কর্মচারীদের মারধর দেখে ছুটে পালাচ্ছিলাম,তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই আরেকদল লোক জানিসারি(পুলিশ)আসার পর গুন্ডার দল হাতের মশাল,লাঠি সব ফেলে পালালো।অন্ধকার কফির দোকানে তখন আর কেউ ছিল না,পাশে দাড়িয়ে কেউ মজা দেখছিল না,বাইরে পড়ে ছিল তছনছ হয়ে যাওয়া ভাঙ্গা কাপ,প্লেট,গেলাস,বাটি ছড়ানো ছিটানো দিয়ে,দেয়ালে ঝুলানো বাতির আলোতে দেখা যাচ্ছিল,ছাঁদের ঝুলকালি ভাঙ্গা চেয়ার টেবিল।

জড় করে রাখা লম্বা তোষকে উঠে দেয়ালের বাতিটা হাতে নিলাম,দেখলাম একপাশে কয়েকটা লাশ পড়ে আছে,মুখ রক্তে ঢেকে গেছে,চেনাই যাচ্ছে না আর,সরে গেলাম সেখান থেকে।
আরেক পাশে একটা লোক ব্যাথায় কাইকুই করছিল,একেবারে বাচ্চা ছেলের মত।

দোকানে আরেকজন কেউ ঢুকলো,ভঁয়ে কিছুটা কাতর হয়ে থাকলেও,চোখ তুলে দেখলাম সিয়াহ,আর কেউ না।দুজনেই নীচু হয়ে মেঝে পড়ে থাকা লোকটাকে দেখছিলাম,যা ভাবছিলাম সেটাই ঠিক ওরা গল্পকথককে খুন করে গেছে।

০০০০০০০০০০০


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×