“আমি তো পুরা মাননীয় স্পীকার হয়ে গেলাম” – বলেই ছেলেটি হাসতে হাসতে তার বন্ধুর ঘাড়ে হাত রাখল । তার কথা শেষ হতেই হঠাৎ যেন প্রতিদিনকার হাস্যোজ্জ্বল এই আড্ডাটা স্তব্ধ হয়ে গেলো ।তবুও যেন আড্ডা শেষ হলো না । আবার কথায় মুখরিত হলো আড্ডা । আসল হাসির জোয়ার । কিন্তু কেউ দেখলো না সদা হাস্যোজ্জ্বল এক বালকের মনে হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টের চিত্র । কেউ ধারণা ও করতে পারে না যে এই ছেলেটিও উদাস মনে গাইতে পারে “হাসতে দেখো , গাইতে দেখো্, দেখো না হাসি শেষে নিরবতা” ।
প্রতিদিনের মতো আজও ছেলেটি সবাইকে বিদায় দিয়ে ঘরে ফিরার প্রস্তুতিস্বরূপ শেষবারের মতো কুশল বিনিময় করছে । হঠাৎ পিঠে কারো হাত ঠেকতেই আর্তনাদ করে উঠতে হলো ক্ষতের বেদনায় । শরীরের বিভিন্ন স্থানে আজ ক্ষত । কিন্তু সব ক্ষত উপেক্ষা করছে মনের ক্ষত । শরীরের ক্ষত দেখানোর মত লোকের অভাব নেই , আর মনের ক্ষত দেখানোর লোক একটাও নেই ।
আড্ডার মঞ্চ ত্যাগ করার সময় হতেই যে যার পথে রওনা দিলো । স্ট্রীটলাইটের আলোয় হাটতে হাটতে মনে পড়ে গেলো কিছু রঙ্গিন স্মৃতির কথা ।কোন এক চেহারা রাতের আধারেও ভেসে উঠতে গেলো চোখের সামনে , কিন্তু তা হলো না । এক কর্কশ শব্দ ভেসে আসলো কানে । ঘুরে পিছনে তাকালো সে ।
.
.
.
.
.
.
.
চোখের সামনে সব ঝাপসা । কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে পাশে এক দামি গাড়ি নিয়ে । অনুভব করতে পারল যে সে পিচঢালা পথের পড়ে আছে । কোন এক তরল পদার্থ তার গাল স্পর্শ করে আছে । দেখা উচিৎ কি সেই তরল । হাত উঠাতে চাইল সে। পারল না। এতক্ষণে জানতে ইচ্ছে হলো কেন পড়ে আছে এখানে । উঠে দাড়াতে হবে। চেষ্টা করার শক্তিটুকু ও নেই । পড়ে থাকতে হলো সেখানেই । স্ট্রীটলাইটের সোডিয়াম আলোর দিকে তাকাতেই চাঁদটার কথা মনে পড়ল । কত রাত সে হেঁটে কাটিয়েছে এই চাঁদের আলোয় । হ্যা , তাকে সবসময় একা ই হাঁটতে হয়েছে । কেউ একজন ছিল যার কাছে কথা দিয়েছিল যে সঙ্গিবিহীন এই হাঁটার সমাপ্তি ঘটবে সেই নারীকে সঙ্গী করার মধ্য দিয়ে । হঠাৎ কারো হাটার শব্দ । সেই কেউ একজন তার দিকে এগুচ্ছে । পাশে বসে কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে পিছনে ফিরে তাকাল । বালকটির চোখ ও পিছনে গেল । এক শিশুর বিস্মিত মুখ তার চোখে পড়ল । তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রমণী । লোকটি আর বসে না থেকে উঠে গেল সেই নারী ও শিশুর কাছে । তাদের গাড়িতে বসাল । নিজেও উঠল । মহিলাটি জানালার কাঁচ ফাঁক করে তাকিয়েই আছে পিছনে । নারীটির বিস্মিত ভাব এখনো কাটেনি । এই চেহারা বালকটি দেখেনি কখনো । কিন্তু এরুপ বিস্মিত চোখ সে কোথায় দেখেছে তা কষ্ট করে মনে করতে হলো না । মস্তিষ্ক আজ যেন নিজে থেকেই কাজ করা শুরু করেছে ।
স্থির ট্রেনে দাঁড়িয়ে তার হৃদস্পন্দন যতটা বেড়ে গিয়েছিল সে চোখের মায়ায় পড়ে আজ যেন ততটা ই থেমে যেতে চাইছে । প্রথমবারের মতো একজন মানুষকে দেখলে যতটা বিস্ময় আসা সম্ভব মেয়েটির চোখ তা উপেক্ষা করে নজরকাড়া এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছিল যা আজো হৃদয় থেকে মুছতে পারেনি বালকটি ।তাই যতো ই শরীরের শক্তি কম থাকুক না কেন, চোখ বন্ধ করলেও সেই চেহারাটি ভেসে আসছে ।
সব স্বপ্ন আজ অতীতে রূপান্তরিত হবে । কেউ তার ফোনের জন্য রাতভর অপেক্ষা করবে না । হয়তোবা তার জননী তাকে প্রতিদিন ফোন দিয়ে খবর নিবে না । ছোট ভাইটার ভাইয়া ডাক শোনা হবে না । সন্ধ্যা্র আড্ডায় তাকে আর দেখা যাবে না । চোখ আর খোলা রাখা যাচ্ছে না । সব ঝাপসা হওয়া শুরু হয়েছে । কোন কিছু হারানোর ভয় নিয়ে বাঁচার দিনের সমাপ্তি ঘটবে কি আজ ???????????
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫