নিথর দেহটি বিছানায় পড়ে আছে । সবসময়ের মতো ডান হাতে মোবাইলটি , তবে তা আজ কানে নেই । হাতটি পাশে পড়ে আছে। বাম হাত বুকের উপর সেই স্থানে পড়ে আছে যেখানে মোলায়েম হাতের স্পর্শ পাওয়া মাত্র প্রতিবার দেহটি পুনর্জীবনী লাভ করতো । অন্য হাতের কথা মনে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে আসলো সেই নারীর মায়াবী চোখ, সেই গগনভুলানো চেহারার মাধুর্য । সেই চেহারার নেশায় হারিয়ে যেতে যেতে মনে পড়ে গেলো পাশাপাশি বসে কাটিয়ে দেয়া সময়গুলোর কথা ।
মনে পড়ে গেলো প্রথম যেদিন মেয়েটি তার কাছে এসেছিল সেই দিনের কথা । সেদিন সে বুঝতে পেরেছিল সে কতটা স্বার্থপর । সেদিন যদি সে চলে যেতো অজানার পথে সে রমণীকে সঙ্গী করে তাহলে মনে হয় না আজ একলা ঘরে একা হারিয়ে যেতে হতো । সেই প্রথম দিনটার কথা আজ খুব মনে পড়ছে । মুখ দিয়ে কথা ঠিকই বের হচ্ছিল কিন্তু মেয়েটাকে বুঝতে দেয়নি তার হৃদস্পন্দন তার ভিতর কি অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল । মেয়েটি বুঝতে পেরেছিল কিনা তাও বুঝতে পারলো না সে। এরপর যতবারই সে মেয়েটির দেখা পেয়েছিলো সে তাকেও সঙ্গী করেছিলো এই অনুভূতির । কেনই বা করবে না !!! আর কোন চাওয়া যে কাজ করে না ঐ মায়াবী চোখের একচ্ছত্র অধিকারী হওয়া ছাড়া । যতবার সে ললনা তার হৃদয়ে আসে ততবারই যে সে হয়ে উঠে হিংসুটে , হয়ে যায় স্বার্থপর । আর সব হারানোর ক্ষীণ ভয় তার মনে এনে দেয় ধ্বংসাত্নক মনোভাব।
কিন্তু আজ বন্দী চার দেয়ালে নিথর এই দেহের লুপ্তপ্রায় মন এক প্রশ্নে বিদ্ধ হচ্ছিল “আমি কি তাকে হারাতে চলেছি?” চোখের কোণা যে কখন অশ্রুজলে সিক্ত হয়েছে তা এতক্ষণ টের না পেলেও এখন সেই বোধ ফিরে এসেছে । হাতে রাখা মুঠোফোনের স্পন্দনে সম্বিত ফিরে পেতেই দেখতে পেল সেই চির আকাংক্ষিত নামটি । কতবার মনে হয়েছে যে এই বুঝি হৃদস্পন্দন বাড়তে বাড়তে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবে । মেয়েটি কতবার জানতে চেয়েছিল যে কি এমন ঘটনা যা হঠাৎ ছেলেটির কথা কেড়ে নিয়ে তাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয় । সে বলতে গিয়েও প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছে । মেয়েটিকে চিন্তার সাগরে ডুবাতে চায়নি সে । এই ভয় যদি মেয়েটির ভালবাসা সহানুভূতিতে রুপান্তরিত হয়!! এতদিনে অবশ্য ছেলেটিও অনুভব করতে পেরেছে তাকেও কেউ ভালবাসে ঠিক ততোটাই যতটা সে মেয়েটাকে ভালবাসে । এজন্য অবশ্য কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়নি তাকে । সব উপেক্ষা করে রাতজেগে অপেক্ষা করেছে সে সুমধুর কণ্ঠের মায়ায় নিজেকে হারাতে ।
কিন্তু আজ সবকিছু কি অতীত হয়ে থেকে যাবে?? চোখ বুঝলে রাতের অন্ধকারের মতো যে অন্ধকার নেমে আসবে সেখানে আলো ফুটাতে কোন সূর্য কি উঠবে?? মেয়েটির কাছে দেয়া প্রতিটি ওয়াদা সে রাখতে পারলেও আজ চায় না রাখতে । কেননা সে ওয়াদাভঙ্গের একটি সুযোগ যে আজো পাওনা। তাই পারবে না ওয়াদামতো মেয়েটিকে আগে চলে যেতে দিয়ে মেয়েটির ইচ্ছা পূরণ করতে । নিজেকে আজ কোন প্রেমের গল্পের রোমিও মনে হচ্ছে । প্রতিটি প্রেমের গল্পের মতো করে তারও আজ ইচ্ছে করছে নায়িকার কোলে মাথা রেখে শান্তি খুজতে । কিন্তু লেখকের মতো করে তার মাথায় এ প্রশ্ন ঘুরছে না যে সব প্রেমে কেন একই ঘটনা ঘটে??? সে আজ অতীতে ডুবন্ত । তার মরমে, অবলোকনে কেবল প্রেমের নেশা আজ । প্রতিটি বিয়োগাত্নক কাহিনীর মতো করে নায়িকা নেই আজ পাশে , কেবল তার নাম আর চেহারার অবয়ব দেখতে পারছে তার ঢুলুঢুলু আঁখিদ্বয়। বিজয়ীর হাসি তার মুখে যে হাসি মেয়েটিকে হাজারবার কষ্ট থেকে টেনে এনে হাসিয়েছে। দু নয়নের ক্ষুধা মেটাচ্ছে সেই ললনার হাস্যোজ্জল অবয়ব দেখে । অশ্রু গড়াগড়ি খাচ্ছে তামাটে রংয়ের গালে । হয়তবা সামনে বসে দেখা হবে না আর সেই চেহারা , হয়তবা হবে না স্পন্দিত সেই মুঠোফোনটিকে তুলে আবার সেই কণ্ঠের মায়ায় হারিয়ে যাওয়া । হবে না হয়তো অনেক কিছু যা হলেও হতে পারত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১৮