ছেলেটি উত্তেজনায় শ্বাস নিতে পারছে না, তার সামনে মেয়েটি দাড়ানো। ছেলেটি বিশ্বাস করতে পারছে না তার চোখকে। এই সেই মেয়েটি যার কণ্ঠের মায়ায় পড়ে অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সে। সে যেন এক ঘোরের মাঝে আছে। কারো ধাক্কায় ছেলেটি সম্ভিত ফিরে পেতেই সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যেতে থাকে মেয়েটির কাছে। জ্ঞান হওয়ার পর এর আগে কখনো সে এমনভাবে তার হৃদয়স্পন্দন অনুভব করেছে বলে তার মনে হয় না। সব উপেক্ষা করে অবশেষে সে কথা বলেই ফেলল। নিজেকে তখন কোন মুভির হিরো মনে হতে লাগল। মেয়েটির সাথে তার দেখা হয়েছে এতেই যেন তার হাতে ধরা দিয়েছে অমবস্যার চঁাদ ।কথাপাগল ছেলেটি তার সব কথা হারিয়ে আজ যেন বাকরুদ্ধ।
এই কয়দিন আগেই না এই নামটার সাথে তার পরিচয়! ক’দিন আগেও তো জানত না সে মেয়েটির বুকে কত কষ্ট জমা পড়ে আছে, জমা পড়ে আছে তাকে দেয়ার মতো কতো ভালবাসা। সে তার প্রজন্মের অন্য সকলের মতোই খুব ভাগ্যবান যে সে 12.12.12 এর মতো একটি তারিখের সাক্ষী হতে পেরেছে। জীবনে অনেক ঘটনা কাকতালীয়ভাবে ঘটে। তাইতো তারিখের সাথে তার অনুভূতিও এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছে। ‘না’ যেখানে একটি প্রশ্নের মুখস্থ উত্তরে পরিণত হয়েছিল, সেখানে আজ সকল ভয় উপেক্ষা করে ‘হ্যা’ বলার সিদ্ধান্তের পিছনে তারিখের কোন ভূমিকা যে নেই তা যদি আজ বলা না হয় তবে তা মেয়েটিকে কোনদিনো বলা হবে না। মেয়েটিকে সে ভালবাসার কথা জানিয়ে অবাক করার যে খেলায় সে সফল হয়েছিলো , এরপর প্রতিবার অন্যসকল ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা পর্যবসিত হয়েছে ব্যর্থতায়। কিন্তু এই দিনটিতে মেয়েটির ভালবাসার মানুষে পরিণত হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করতেই পারে সে, সেই সাথে মেয়েটিও যদি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে তবে তাদের কারো আশাই খুব বেশি হয় বলে মনে হয় না।
রাত ১২ টা বাজার সাথে সাথে তারিখটি হলো 12.12.12 ।তার সামনে আছে এক বন্ধু যে হয়তোবা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোট এক কামরায় বন্দি সে হঠাৎ তার বোন বাদে আর একজন মানুষকে ক্ষুদেবার্তা পাঠালো। তার বোন জবাব না দিলেও অন্য মানুষটির মুঠোফোন থেকে আসা ফোনটি সে রিসিভ করতেই অবাক কণ্ঠ শুনতে পেলো। কথা হচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু যে প্রশ্নটি তার কাছে নিত্যনৈমিত্তিক প্রশ্ন ছিল আজ সেটাকেই সে খুব মিস করছিলো। তাই জোর করেই তা শুনতে হল মেয়েটির কাছ থেকে। আজ ভালবাসার ভাণ্ডারটি উৎসর্গ করতে হবে তার মালকিনের কাছে। হ্যা আজ সে পেরেছে তার লুকায়িত ভালবাসা প্রকাশ করতে। প্রকাশ করতে পেরেছে বলেই আজ সে মেয়েটিকে দেখে চোখের ক্ষুধা মেটানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস চালাচ্ছে ।স্টেশনে স্বপ্নের রাজকুমারীর জন্য অপেক্ষা করা, ট্রেন এসে থামা মাত্র চলন্ত অবস্থাতেই সেটাতে উঠে তাকে খুজে বের করা ,এতটুকু করার পর নিজেকে সে রোমান্টিক মুভির হিরো ভাবতেই পারে।
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে দুজন আজ সামনাসামনি দাঁড়িয়ে। মৌনতা ভেংগে কথা বলতে হলো ছেলেটিকে। মাথায় রবীন্দ্রনাথের উক্তি বাজছে “আমি ইহাকে পাইলাম”। সব ছাড়িয়া কোন এক চলমান ট্রেনের স্থির সিটে পাশাপাশি বসিয়া অজানার পথে পাড়ি জমাতে পারলে হয়তো তার শান্তি হতো। আকস্মাৎ পিছনে দাঁড়ানো বন্ধুটি তাকে নেমে যাওয়ার জন্য না বললে হয়তো সেই চোখের মায়া উপেক্ষা করে ফিরে আসা তার পক্ষে সম্ভব হতো না।
ট্রেন মেয়েটিকে নিয়ে গেল শুধু দিয়ে গেল কিছু স্মৃতি। কি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে ছেলেটির এতো ভয় ছিলো ,এটাই তো জানা হলো না,এটাই তো এখন যত জল্পনা, কল্পনার উৎস। অপেক্ষার অবসান ঘটবে এখন, উঠবে যাত্রার পর্দা। “Do You LOVE Me?” –প্রশ্নটির উত্তরের সাথে অনেক Resposibility জড়িয়ে থাকে। থাকে অনেক বিশ্বাসের মিশ্রণ। তাইতো এর উত্তর হাজারবার হ্যা দিতে গিয়েও সাহসের কাছে হার মেনেছে সে। আর হ্যা এরপর আর তাদের কষ্ট পেতে হয়নি। অবশ্য একটা সমস্যা হয়েছে , ছেলেটির প্রতিনিয়ত মেয়েটির কানের কাছে “একটি পাখি,চারটি পাখি,তিনটি পাখি” উক্তিটিতে মেয়েটি যতই বিরক্ত প্রকাশ করুক , ছেলেটি তার প্রেয়সীর প্রতিটি নিশ্বাস কি বলতে চায় তা ঠিকই বুঝে।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:২৪