মূলধারার গল্প বলা একটি সিনেমার কথাই বলছি আজ । যে সিনেমায় নেই কোন ফ্যান্টাসি, নেই কোন তারাকখ্যাত আর্টিস্ট, নেই কোন ভিএফএক্স, গ্রাফিক্স এর অধিক ব্যাবহার। তিনটি গল্পের সংমিশ্রণে তৈরি সিনেমাটি। সিনেমাটিতে ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার মানুষের কুসংস্কার বিশ্বাস এবং পুরুষের ক্ষমতায়নের চিত্র। সিনেমাটির গল্প ছিল - গ্রাম বাংলার দুটি কিশোর-কিশোরীর অপরিপক্ক অবুঝ প্রেমের গল্প নিয়ে। পাশাপাশি একটি সহজ-সরল মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্যকরা এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একটি মেয়ে ও তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাবার সাপোর্ট থাকার গল্পের সংমিশ্রণে।
জহির রায়হান, তারেক মাসুদ সহ আরো অনেক স্বাধীন নির্মাতাদের মতই একজন স্বাধীন নির্মাতা অন্ত আজাদ নির্মান করেছেন সিনেমাটি
সিনেমাটির কেন্দ্রীয় গল্পে শাপলা নামক একটি কিশোরীর সাথে সবুজ নামে তারই গ্রামের একজনের প্রণয়ের সুত্রপাত ঘটে। সবুজ শাপলাকে একটি গিফ্ট দেয়ার সময় গ্রামের মসজিদের ইমাম আলী বিষয়টি দেখে। ইমাম শাপলাকে পছন্দ করতো এবং ঘটনাটি শাপলার বাবাকে জানিয়ে শাপলাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। শাপলার বাবা ইমামের সাথে শাপলার বিয়ে দেয় । কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধ ইমাম শাপলাকে সবকিছু থেকেই দূরে রাখে। বলা চলে, কেড়ে নেয় শাপলার মুখের হাসি। সুবজ শাপলাকে হারিয়ে হতাশায় ডুবে যায়।
অন্যদিকে শাপলার বান্ধবি কামিনী একটি ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। ছেলেটি কামিনীর সরলতার সুযোগ নিয়ে গোপন ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়। তাতে কামিনী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে, মোহিনী একজন আধুনিক শিক্ষিতা প্রতিবাদী মেয়ে। বই পড়তে ভালোবাসে, মানুষকে বই পড়তে উদ্ধুদ্ধ করে। মোহিনীর বাবাও একজন সচেতন নাগরিক। তিনি সর্বদাই মোহিনীর সাথে বন্ধুসুলভ এবং সাপোর্টিভ।
এইটি তিনটি গল্পের সংমিশ্রণে সিনেমাটি তৈরি। সিনেমার নির্মাণশৈলীর কথা বলতে গেলে বলতে হবে - জাস্ট এমাজিং। নির্মাতা কতটা যত্ন এবং ডেডিকেশন দিলে এমন একটি নির্মাণ উপস্থাপন করতে পারে তা কেবল যারা সিনেমাটি দেখেছে বা দেখবেন তারাই বুঝতে পারবেন।
ক্যামেরার শটগুলো, সাউন্ড ইফেক্ট, এবং বাস্তবিক ফ্রেমে গ্রামীন পরিবেশে ফুটে উঠেছে সিনেমাটি। তবে কিছু ফ্রেমে আরেকটু লাইটের দরকার ছিল। হয়তো নির্মাতা ইচ্ছে করেই রাখেননি ।
অভিনয়ের দিক নিয়ে বললে - শাপলা চরিত্রে অভিনয় করা তাহিয়া খান অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তাহিয়া খানের অভিনয় দর্শক মুগ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। বাকী চরিত্রগুলোও সবাই সবার সর্বোচ্চ দিয়ে অভিনয় করেছেন ।
মেকআপএর দিক দিয়ে কিছু সিন একটু দূর্বল ছিল। বিশেষ করে শাপলার বাবা চরিত্রের আলাদা দাড়ি লাগানোর বিষয়টা একটু কৃত্রিমই মনে হয়েছে।
তবে সিনেমাটির গল্প, সংলাপ, অভিনয় এবং দৃশ্যগুলো দর্শকের মনছুঁয়ে যাবে। যা ছোটখাট মিসটেকগুলোকে আড়ালে রাখার জন্য যথেষ্ট।
সিনেমাটি বানিয়েছেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা অন্ত আজাদ। আশা করা যায় এমন মৌলিক গল্পের সিনেমাটি দর্শক মনে স্থান করে নিবে।
ভিন্নধারার প্রদর্শনীতে শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো এবং দর্শক শো হয়েছে। আশা করা যায় আগামী বছরের শুরুতেই সিনেমা হলে মুক্তি পাবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বেঁচে উঠুক বাংলার চলচ্চিত্র, সিনেমা হলে গিয়ে আমরা বাঁচাই আমাদের চলচ্চিত্রকে।
মুভির নাম- আহত ফুলের গল্প
নির্মাতা - অন্ত আজাদ
প্রযোজনা - ওশান মাইন্ড এন্টারটেইনমেন্ট
সাউন্ড - শৈব তালুকদার
আবহ সঙ্গীত- পিন্টু ঘোষ ও রোকন ইমন
কেন্দ্রীয় চরিত্র- তাহিয়া খান ও সুজন মাহাবুব
ব্যাক্তিগত রেটিং - 8.5/10
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২২