শৈশব শুরু হয় আমাদের বাবাকে ঘিরেই, বেড়ে উঠা বাবার হাত ধরে।
কখনো কেউ আইডল হিসেবে নেয় জন্মদাতা বাবাকে।
প্রতিটি বাবাই তার সন্তানের নিকট শ্রেষ্ঠ মানব, সেই বাবা হউক না কেন ভিক্ষুক কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান।
পৃথিবীর মাঝে কিছু পিতা রয়েছে ভিন্ন, তারা হয়ে থাকে বহুমানুষের পিতাও যেমন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা মহাত্মা গান্ধী ।
সবাই লাইমলাইটে পিতা হতে না পারলেও কেউ কেউ অন্তরে বুনে যান সহস্রমানুষের পিতা।
তেমনই একজন পিতা তাজউদ্দীন আহমেদ, যিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং অসীম সাহসিকতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ৭১ এর স্বাধীনতার যুদ্ধে।
গল্পটি আজ তাকে ঘিরেই। যদিও আজ আমি উনাকে নিয়ে কোনো গল্প লিখবো না শুধু চেষ্টা করবো উনাকে নিয়ে রচিত বিখ্যাত একটি গ্রন্থ “ তাজউদ্দীন আহমেদ নেতা ও পিতা” নামক ঐতিহাসিক বইটি নিয়ে একটু পর্যালোচনা করতে।
বইটি লিখেছিলেন তাজউদ্দীন স্বকন্যা শারমিন আহমদ।
কাঁচা হাতে লিখতে যাচ্ছি, যদিও এই বইটির পরিপূর্ণ পর্যালোচনা করার ক্ষমতা এবং সাহস আমার নেই, তবুও প্রথমেই তাজউদ্দীন কন্যার কিছু লিখা দিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি .....
“ শৈশবে আব্বুকে ঘিরে আমার স্মৃতি উজ্জ্বল নীলাকাশে খণ্ড খণ্ড শারদ মেঘের মতোই ভাসমান। তিনি ছিলেন এক ব্যতিক্রমধর্মী জীবন ও সময়ের অগ্রপথিক। তাঁকে ভালোভাবে জানার আগেই তিনি চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। তিনি চলে গেলেন আমার কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে। তারপরও তাঁকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত ঐ শৈশবের স্মৃতির মেঘমালার সাথি হয়ে। তার মধ্য দিয়েই বিশ্বকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করি, কখনো বিশ্বের অসীম রহস্যের মধ্যে খুঁজি তাঁকে।"
প্রতিটি সন্তানই জানতে চায় তার পিতাকে, বুঝতে চায়, এবং মানিয়ে নিতে চায় পিতার আদর্শ নিজের সাথে। এক্ষেত্রে কেউ সফল হয়, আবার কেউ সফলতা পাওয়ার পূর্বেই পিতা হয়ে যান গত, সাড়া দিতে হয় তাকে প্রকৃতির ডাকে।
শারমিন আহমদ এর কথাতেও তেমন কিছুই ফুটে উঠেছে - তাজউদ্দীনকে ভালোভাবে জানার পূর্বেই তাজউদ্দীনকেও সাড়া দিতে হয়েছিল প্রকৃতির ডাকে।
"তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা" বইটি
তাজউদ্দীন আহমদ এর রাজনৈতিক-পারিবারিক জীবন ও নানা অজানা অধ্যায় নিয়ে তাঁরই কন্যা শারমিন আহমদ লিখেছেন ।
বইটিতে শারমিন আহমদ- যাত্রা হলো শুরু, অন্তর্দৃষ্টি, দুর্বার প্রতিরোধ, সেতুবন্ধন, সূর্যবার্তা,ঘরে ফেরা, অমর্ত্যলোকের যাত্রী ইত্যাদি পরিচ্ছেদের পাশাপাশি স্থান করে দিয়েছেন পরিবারের অন্যান্যদের সাক্ষাৎকার, ওনার রাজনৈতিক সহকর্মী সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন না জানা চাঞ্চল্যকর অভিজ্ঞতার কথা।
এবার বইটির একটু পরিচয় দেওয়া যাক -
বইয়ের নাম - তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা
লেখক - শারমিন আহমদ
প্রকাশনী - ঐতিহ্য
ভাষা - বাংলা
প্রচ্ছদ - এ আর নাইম
বইয়ের ধরণ - জীবনী, স্মৃতিকথা ও সাক্ষাৎকার
সংস্করণ- পেপার ব্যাক সংস্করণ ( ডিসেম্বর- ২০১৫)
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৩৫২
মুদ্রিত মূল্য - ৪২৫ টাকা।
বইয়ের পরিচয়ের সাথে লেখকের পরিচয়ও জেনে নেওয়া যাক -
তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের জ্যৈষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদের জন্ম ঢাকা শহরে।
১৯৮৪ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী।
তিনি ১৯৯০ সালে ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ ও উইমেন্স স্টাডিজ ল্কলারস অ্যাওয়ার্ডসহ উইমেন্স সন্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি শিশু শিক্ষার ওপরেও মাসটার্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
বিশ্বের পেশাজীবী নারীদের অন্যতম বৃহত্তম মানব উন্নয়ন সংগঠন “দ্য সোরপটিমিস্ট ইন্টারন্যাশনাল অব দ্য আমেরিকাস ও ওয়াশিংটন ডিসি”,
“আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছা ও পারস্পরিক সমঝোতা রচনার ক্ষেত্রে “ডিস্টিংশন” অ্যাওয়ার্ড প্ৰদান করে।
স্কুলের জন্য কাউনটির মিডিয়া বিশেষজ্ঞ তার প্রথম প্রকাশিত দ্বিভাষিক বই “হৃদয়ে রংধনু-দ্য রেইনবো ইন এ হার্ট” কে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ আর্টস কারিকুলামের জন্য উচ্চ অনুমোদনসহ বইটিকে “অসামান্য” ও “ভাল সম্পদ” অভিহিত করেন।
সমাজে বিশেষত শিশুকিশোরদের মধ্যে শান্তি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যম হিসেবে বইটি বর্তমানে নৃত্যনাট্যে রূপান্তরিত হয়েছে যার নাট্য সংলাপ রচনা এবং সহপ্ৰযোজনা তিনি করেছেন।
এই নৃত্যনাট্যটি, ম্যারল্যান্ডের অভিজাত এফ. স্কট ফিটজজেরাল্ড থিয়েটার ও বাংলাদেশের জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীতে মঞ্চস্থ হয়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এছাড়াও তার রচিত “৩ নভেম্বর : জেল হত্যার পূর্বাপর বইটিও পাঠকদের দৃষ্টি কেড়েছে।
বই এবং লেখক পরিচয় যখন দুটাই জানা হলো তখন একটু চেষ্টা করি বইটির পর্যালোচনা করতে।
লেখিকা বইটি বিভিন্ন পরিচ্ছেদ অনুযায়ী বইটি সাজিয়েছেন -
স্বাভাবিকতার সহিত ভুমিকা থেকেই শুরু করেই লেখিকা প্রথম অংশ ভাগ করেছেন সাতটি ভাগে।
ভুমিকাতে লেখিকা তুলে ধরেছেন বইটির পেছনের গল্প ,কিভাবে সংগ্রহ করেছিলেন তথ্যাবলী, এবং বইয়ে উল্লেখিত সাক্ষাতকার গুলো নেওয়ার গল্প।
পাশাপাশি বইটি মুদ্রণের পেছনের গল্পও লেখিকা বলেছেন ।
ভুমিকার পরেই বইয়ের ১ম অংশে বিভক্ত হওয়া ৭টি পর্ব যথাক্রমে - যাত্রা হলো শুরু, অন্তর্দৃষ্টি, দূর্বার প্রতিরোধ, সেতুবন্ধন, সূর্য-বার্তা, ঘরে ফেরা এবং অমর্ত্যলোকের যাত্রী নামক শিরোনামে পর্বগুলো লিখেছেন।
এরপর সাজিয়েছেন তাজউদ্দীনকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী কিছু বিশেষ ব্যাক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাতকারের মাধ্যমে।
এরই সাথে বইটিতে আরো যোগ করেছেন-
এতিমখানায় বোমাবর্ষণ, ১৫ আগষ্ট মুজিব হত্যার কাহিনী, তাজউদ্দীনের ডায়েরী, তাজউদ্দীনের ভাষণ, ছয় দফা সহ আরো বিশেষ কিছু ইতিহাস সংবলিত তথ্য।
তাজউদ্দীন কন্যার লেখনশৈলী ভালোই এবং বোধগম্য।
তাজউদ্দীন কন্যা বইটির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের কিছু ইতিহাস।
আমার মতে এই বইটি আমার খুব প্রেডিক্টেবল একটা বই, ইতিহাস সচেতন প্রত্যেকটা মানুষের কাছে একটা দলিলের মতো জিনিস এটা ।
বইটি পড়ে আমার নিকট মনে হয়েছে বইটির প্রতিটি পরিচ্ছেদ ও প্রতিটি সাক্ষাতকারই অতি তাৎপর্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও প্রতিটি পরিচ্ছেদ এবং প্রতিটি সাক্ষাতকারই গুরুত্বপূর্ণ তবুও আমি সবগুলো পরিচ্ছেদ কিংবা সাক্ষাতকার উল্লেখ না করে কিছু পরিচ্ছেদের সংক্ষেপ লিখার চেষ্টা করবো।
যাত্রা হলো শুরু শিরোনামের পর্ব থেকেই শুরু করি সার-সংক্ষেপ -
★ যাত্রা হলো শুরু :
সাধারণ, অসাধারণ, ছোট, বড় কোনো অভিজ্ঞতাই ফেলে দেবার নয়। সব অভিজ্ঞতাই জীবনের বিভিন্ন ফুলে গাঁথা মালা।
জীবনের শুরু থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষকে অগ্রগতির একেকটি স্তর পার হতে যেয়ে বিভিন্ন সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে হয় । প্রতিটি স্তরে সে যেভাবে এই সংঘর্ষকে মোকাবিলা করে তারউপর নির্ভর করে হয় তার পরবর্তী সময়ের অগ্রগতি ও ব্যাক্তিত্বের বিকাশ।
এই পর্বে লেখিকা তার শৈশব বেড়ে উঠা পিতার সাথে তার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক।
লেখিকার শৈশব স্মৃতি এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমেদ এর রাজনীতিতে জড়ানোর গল্প।
আইয়ুব খানের শাসনামল, আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা সময়কালীন গল্প, শেখ মুজিব এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সহিত তাজউদ্দীনের সম্পর্ক, তৎকালীন হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা এবং মুজিব ও তাজউদ্দীনের দাঙ্গা নিরসনে সেচ্ছাসেবীর ভুমিকা, ভাই বোনদের জন্ম এবং বেড়ে উঠার গল্প, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি, তাজউদ্দীন , মুজিব সহ আওয়ামী নেতাদের জেলে যাওয়ার গল্প, এবং তাজউদ্দীন স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীনের সর্বপ্রথম প্রকাশ্য সভা করে ১৯৭৭ সালের ১৫ আগষ্ট এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সম্মুখে শোকসভা পালনের গল্প সহ বিভিন্ন কিছুরই বর্ণনা করেন।
এই পর্বে তাজউদ্দীনের দেশ প্রেম সম্পর্কে বলতে গেলে লেখিকার কিছু লিখার অংশ উল্ল্যেখ না করলেই নয় -
কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোরে আব্বুর হাত ধরে আমার ছোট বোন রিমিসহ আমরা বের হতাম বকুল ফুল কুড়াতে। আমরা মনের আনন্দে বকুল ফুল কুড়াতাম ।
আব্বু রাস্তায় যদি কোনো আবর্জনা, ফলমুলের খোসা পড়ে থাকতে দেখতেন তিনি সেগুলো নিজ তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে রাস্তাটিকে জঞ্জালমুক্ত করতেন। জনহিতকর কোনো কাজই তার কাছে ক্ষুদ্র ছিল না।
★ অন্তর্দৃষ্টি :
বাবা স্বপ্ন দেখেছেন যে পিপি এক অন্ধগলির মাঝে দাড়িয়ে রয়েছে। ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছে না সে। ওর একটি চোখ যেন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে নিরব ভাষায় কাকুতিমিনতি করছে যাতে আমরা তাকে অন্ধকার গলিতে রেখে কোথাও চলে না যাই।
আমি আর আম্মা বারান্দায় দাড়িয়ে সেই চিঠি পড়ছিলাম এমন পিপি হাপাতে হাপাতে বারান্দায় এসে দাড়াল। তার একটি চোখ রক্তাত ও অন্য চোখটিতে ভয় ও বেদনা মিশ্রিত আকুতি।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের মুক্তি এবং ছাত্রনেতা আসাদ হত্যার দাবিতে রাস্তায় রাস্তায় তখন বিক্ষোভ ও হরতাল চলছিল।
সংগ্রামী জনতা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখতো। পাকিস্তানি কোনো জিপ দেখলেই ইট-পাটকেল ছুড়ে মারত। তেমনই একটি পাটকেল হয়তো পিপির চোখে এসে লেগেছে।
কারাগারের অন্তরাল থেকে আব্বু কেমন করে দেখলেন এই ভবিষৎকে, কে জানে! তবে ভালোবাসার চোখ যে অন্তর্ভেদী এবং স্রষ্টার সকল সৃষ্টির সঙ্গেই যে হতে পারে আত্মিক যোগাযোগ, এই ধারনাটি ঐ ঘটনা থেকেই আমার মনে গেঁথে যায়।
লেখিকা এই পরিচ্ছেদটিতে তাজউদ্দীন ও শেখ মুজিবের কারামুক্তি, গোলটেবিল বৈঠক, ৭ই মার্চের ভাষণ এবং তার পূর্বপরিকল্পনা সহ বিশেষ কিছু ঘটনা উল্লেখ করেন।
শেখ মুজিবের নিকট তাজউদ্দীন এর গুরুত্ব কেমন ছিল তা মুজিবের একটি কথাতেই বুঝা যায়। বাক্যটি উল্লেখ না করলেই নয় -
তাজউদ্দীনের দলের জন্য খাটুনি দেখে শেখ মুজিব তাজউদ্দীন পত্নীকে বলতেন - “ লিলি তাজউদ্দীনের খেয়াল রেখো, ওকে ছাড়া কিন্তু সব অচল " ।
★দূর্বার প্রতিরোধ :
২৩ ই মার্চ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে, মুজিব কাকুর বাড়ির সামনে ছাত্ররা বাংলার পতাকা উত্তোলন করল। ২৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করলেন। আলোচনার আবরণে অপারেশন সার্চলাইট গনহত্যার নীল নকশা তখন সম্পন্ন। দুবছর আগে ইয়াহিয়ার ক্ষমতা গ্রহনের দিনকে বেছে নেওয়া হলো বাঙ্গালির ওপর মরণ আঘাত হানার জন্য।
এই পরিচ্ছেদে লেখিকা লিখেছেন ৭১ এর সেই নীল নকশা, ২৫ এর গনহত্যা, শেখ মুজিবের সেচ্ছায় মিলিটারির নিকট বন্ধী হওয়া, তাজউদ্দীনের অন্তরালে গিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করা, স্বাধীনতার ঘোষণা , মন্ত্রীপরিষদ গঠন, ৭১ এর দূর্বার আন্দোলন,তাজউদ্দীন পরিবারের কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়া সহ বিভিন্ন ঘটনাবলী ।
★ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সাক্ষাতকার :
২৫ই মার্চ সারাদিন ধরেই নানারকমের আশংকাপূর্ণ খবর আসছিল। ইয়াহিয়া খানের সাথে সমঝোতাপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা আর নেই। ৬ দফা ভিত্তিক সাংবিধানিক সমাধানের জন্য যে আলোচনা চলছিল তা কতটুকু সদিচ্ছাপূর্ণ ছিল সেটা নিয়েই সন্দেহ।
কথাগুলো ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম লেখিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
উনার দেওয়া সাক্ষাতকারে উনি বর্ণনা করেছিলেন ৭১ এর সেই ঘটনাগুলো, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী।
★ কন্যার ডায়েরি : রক্তঝরা নভেম্বর
কিশোর বয়সের আবেগ আপ্লুত উচ্ছসিত ভাবনা। ভোগবাদী যুগের তখনও বিস্ফোরণ ঘটেনি। ২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫, সেদিন আমার জীবনের প্রথম ডায়েরিটি পেয়ে আমি আনন্দিত। গর্বিত। তখন কে জানতো, যে এক স্বপ্ন পিয়াসী কিশোরী ওই একই ডায়েরিতে ধারণ করবে তার জীবনের সবচেয়ে বেদনার স্মৃতিকে!
মুক্তিযুদ্ধের কান্ডারী-দিশারী, আপসহীন সংগ্রামী নেতা তাজউদ্দীন আহমদ এর অকাল - মৃত্যুকে তার কন্যা গেঁথে রাখবে রক্তাক্ষরে তার প্রথম পাওয়া ডায়েরিতে।
ডায়েরির কিছু অংশ -
৫ নভেম্বর - ১৯৭৫
আমার জীবনে একি ঘটে গেল ? কেন এমন ঘটলো ? আব্বু আর নেই। এ পৃথিবী ছেগে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই শুনেছিলাম আব্বুকে নাকি রোববার রাতে জেলে ঢুকে গুলী করে মেরেছে। আমি বিশ্বাস করিনি, হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। ভেবেছি আব্বুকে মারবে কেন? মারবে কেন..?
ডায়েরিতে এইভাবেই নভেম্বর ১৯৭৫ এর ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো লিখেছিলেন লেখিকা এবং হুবহু তাই উল্লেখ করেছিলেন বইটিতে।
★ ৩ নভেম্বর : কালরাতের অগ্নিশিখা -
রাত ৩:১৭ মিনিটে শুনতে পাওয়া যায় পাগলাঘন্টির আওয়াজ। কাঁসার ঘন্টি গম্ভীর শব্দে ঢং ঢং করে বাজছিল। একই সাথে করুণ সূরে বিউগল ও ক্ষণ ক্ষণ হুইসেলের শব্দে রাতটা কেমন যেন আতঙ্কপূর্ন হয়ে উঠেছিল।
জেলখানায় এক নং রুম খোলার শব্দ পাচ্ছিল, সেখান থেকে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে রেখে বাকী ছয় জন কে তিন নং কক্ষে নিয়ে যান। তিন নং কক্ষ থেকে মনসুর আলী এবং দুই নং কক্ষ থেকে কামরুজ্জামান কে ডেকে এক নং কক্ষে নিয়ে যান।
কিছুক্ষণ পরেই স্টেনগান আর ৫ টা সিঙ্গেল রাউন্ড গোলার শব্দ।
রচিত হয়ে যায় ইতিহাসের এক ভয়ংকর কালো ইতিহাস।
বইয়ে উল্লেখিত প্রতিটি পরিচ্ছেদই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেখানে কিছু অংশেরই সার-সংক্ষেপ আমি উল্লেখ করেছি।
বইটি পড়ে যতটুকু মনে হলো, বইটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি যথার্থ দলিল-নামা ।
বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হলে, এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কে জানতে হলে বাংলাদেশী প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাসভিত্তিক বইগুলোর পাশাপাশি এই বইটিও পড়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৪