somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুবোধ তুই পালিয়ে যা; বিস্তারিত পড়ুন, 'সুবোধ’ কেন পালাচ্ছে?

২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খাঁচাবন্দী কমলা রঙের সূর্য হাতে পলায়নপর ‘সুবোধ’। গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে

সময়টা ‘পক্ষে’ যাচ্ছে না সুবোধের। তাই সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তার চিহ্ন রেখে যাচ্ছে নগরের দেয়ালে দেয়ালে। তবে কে এই সুবোধ? কে তাকে পালাতে বলছে? সে কোথায় পালাচ্ছে? এসবের কোনো উত্তর নেই। জানা যায়নি কোনো হেতু। তবে ‘সুবোধ’ আলোচনা ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।


এখানে ‘সুবোধ’-এর সূর্যের রং লাল। ভাগ্যবিড়ম্বিত সুবোধ এখানেও পালাচ্ছেন

এখানে ‘সুবোধ’-এর সূর্যের রং লাল। ভাগ্যবিড়ম্বিত সুবোধ এখানেও পালাচ্ছেন
এই শহরের দেয়ালে আঁকা সুবোধ কখনো হাতে বাক্সবন্দী সূর্য নিয়ে পালাতে উদ্যত, কখনো জেলে বন্দী, কখনো হতাশায় ঝুঁকে পড়া এক মানুষের প্রতিমূর্তি।


আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডে পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে ঝুলছে ‘সুবোধ’-এর বাক্সবন্দী সূর্য

আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডে পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে ঝুলছে ‘সুবোধ’-এর বাক্সবন্দী সূর্য
‘সুবোধ’-এর এই গ্রাফিতির বিষয়ে শিল্পী ও চিত্র সমালোচক মোস্তাফা জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটা শিল্পিত মাধ্যম হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্রাফিতি খুবই জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশে আগে এর তেমন ব্যবহার দেখা যায়নি।


আগারগাঁও থেকে শিশুমেলায় যেতে সড়কের ডান পাশে ‘সুবোধ’


বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোতে গ্রাফিতি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। নিকট অতীতে দিল্লির ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন, ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন কিংবা সম্প্রতি যাদবপুরে শিক্ষার্থী নিগ্রহের প্রতিবাদে ‘হোক কলরব’ আন্দোলনেও ছিল গ্রাফিতির জোরালো উপস্থাপন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ব্রাজিল বিশ্বকাপে পথশিল্পী পাওলো ইতোর আঁকা একটি গ্রাফিতিতে ক্ষুধার্ত শিশুর সামনে ফুটবলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। এটি আঁকা হয়েছিল আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের অমিতব্যয়ী আচরণের প্রতিবাদ হিসেবে।

এর আগে নব্বইয়ের দশকে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকায় ‘কষ্টে আছি—আইজুদ্দিন’—দেয়াল লেখাটি বেশ নজর কেড়েছিল। পরের দশকে দেখা গেল আরেকটি দেয়াল লিখন—‘অপেক্ষায়...নাজির’। তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে এগুলোকে ব্যাখ্যা করতেন।


জেলবন্দী সুবোধ। শেরেবাংলা নগর বালক উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন পাওয়ার হাউসের দেয়ালে।


জেলবন্দী সুবোধ। শেরেবাংলা নগর বালক উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন পাওয়ার হাউসের দেয়ালে। ছবি: লেখক
কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর আগারগাঁও এবং মিরপুরের কয়েকটি দেয়ালে ‘সুবোধ’-এর গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র পথচলতি মানুষের নজর কাড়ছে। এই দেয়ালচিত্রগুলোর একমাত্র চরিত্র ‘সুবোধ’। এর সব কটিতে লেখা: ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না।’ ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে।’ ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই’, কিংবা ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’। আর এই প্রতিটি দেয়ালচিত্রের লোগো আকারে ব্যবহার করা হয়েছে একটি শব্দ: ‘হবেকি’ (HOBEKI?)।

‘সুবোধ’-এর এই দেয়ালচিত্র অনেক পথচলতি মানুষের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে এই চিত্রগুলো। সেখানে অনেকেই সুবোধ এবং এর আঁকিয়ে কিংবা আঁকিয়েদের পরিচয় জানতে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন। এই দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তা জানতেও কৌতূহলী হয়ে উঠছেন তাঁরা। কেউ কেউ এই দেয়ালচিত্রগুলো দিয়ে অ্যালবাম সাজিয়েছেন। কেউ তাঁদের প্রোফাইল ছবি ও কাভার ছবি বানিয়েছেন এই গ্রাফিতি দিয়ে। তবে এর আঁকিয়ে কে বা কারা, তার হদিস এখনো মেলেনি।

মোস্তাফা জামান বলেন, সুবোধের এই গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে স্টেনসিল (লেখা বা আঁকার জন্য ছিদ্রময় পাত) ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে স্প্রে করে দ্রুত আঁকার কাজ করা যায়। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গ্রাফিতি আঁকিয়ে ব্যাংসি (Bangsy) স্টেনসিল ব্যবহার করে গ্রাফিতি আঁকেন।

কলকাতার মনফকিরা থেকে প্রকাশিত গ্রাফিতি এক অবৈধ শিল্প নামের গ্রন্থে লেখক বীরেন দাশ শর্মা গ্রাফিতিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘এক অর্থে গ্রাফিতি সাহিত্য না হয়েও লেখার শিল্প, চিত্রকলা না হয়েও অঙ্কনশিল্প।’

সুবোধের এই দেয়ালচিত্রগুলোর একটি আঁকা হয়েছে আগারগাঁও থেকে শিশু মেলার দিকে যেতে বাম দিকের একটা দেয়ালে। সেখানে সুবোধ বাক্সবন্দী একটা হলুদ সূর্য হাতে নিয়ে এক পাশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে লেখা, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না।’ রোকেয়া সরণিতে আবহাওয়া অফিসের বিপরীত পাশে পুরোনো বিমানবন্দর দেয়ালে একই ভঙ্গিতে দাঁড়ানো সুবোধ। তবে সেখানে বাক্সবন্দী সূর্যটার রং লাল। পাশে লেখা, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই।’ আর আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডে পুরোনো বিমানবন্দরের দেয়ালে এক সারিতে আঁকা হয়েছে সুবোধের তিনটি গ্রাফিতি। তার একটিতে সুবোধ হতাশায় নতমুখ, একটিতে পালানোর ভঙ্গিতে, আরেকটিতে কেবল বাক্সবন্দী সূর্যটা দড়িতে ঝোলানো।

আর ফেসবুকে ‘সুবোধ’ সিরিজের আরও দুটি গ্রাফিতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে, এর একটি মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের কাছে একটি দেয়ালে আঁকা হয়েছে। আরেকটি শেরেবাংলা নগর বালক উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন পাউয়ার হাউসের দেয়ালে। সেটিতে সুবোধকে জেলে বন্দী থাকতে দেখা যায়। সেখানে লেখা, ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুনিয়াজুড়েই বাজারি শিল্পকলার বাইরে এই গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র এবং নানান ধরনের ‘স্ট্রিট আর্ট’ বা পথশিল্প খুবই জনপ্রিয়। এর ইতিহাস এতই পুরোনো যে প্রাচীন মিসর, গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে এর নিদর্শন আছে। এই শিল্পকর্মগুলোর মূল উপজীব্য সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক ঘটনা। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ভেতর দিয়ে কখনো এগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয় যুদ্ধবিরোধী বক্তব্য কিংবা শান্তির বার্তা। কখনো এটি হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, প্রচলিত নীতি কিংবা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শৈল্পিক রূপ হিসেবে। কখনো হয়ে ওঠে নাগরিক অধিকার আদায়ের হাতিয়ার। গ্রাফিতি-শিল্পীদের কাছে পৃথিবীর সব দেয়ালই একেকটা ক্যানভাস।

তবে চিত্রকলার এই ‘অপ্রথাগত’ মাধ্যমটির সমালোচনাও কম নয়। অনেক দেশে গ্রাফিতি নিষিদ্ধ।
অবশেষে ধন্যবাদ।


দেলোয়ার হোসেন
২০শে জুন, কুমিল্লা।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো, এনটিভি বাংলা, ইস্টিশন ব্লগ, গুগুল ডট কম।




সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২২
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×