জ্বালানির দাম বেড়েছে তাতে আমার কি? আমার তো গাড়ি কিংবা বাইক নেই, এই ধারণা পোষণ করে যারা আড়ালে অট্টহাসি দিচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে -
~সরকার মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে জন প্রতি ৩৫ পয়সা করে বাড়ালেও বাস্তবে সেটা ১ টাকা অতিক্রম করেছে। একই সাথে গতকালকে এবং আজকে স্টুডেন্টদেরকে বাসে উঠাচ্ছে না তারা হাফ ভাড়া দিবে বলে, ছেলেরা জোর করে বাসে উঠলে কিংবা চিল্লাপাল্লা করে হাফ ভাড়া দিলেও মেয়েরা এই ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হচ্ছে বেশি।
~দু'দিন আগে 'বার বি কিউ' করার জন্য মুরগী কিনলাম ১৫৫ টাকা কেজি করে, আজকে মেসের বাজার করলাম মাত্র ১৮০ টাকা কেজি দরে, তাও আবার পরিচিত দোকান বলে কমাইয়া রাখছে।
~৫/৬ বছর ধরে মোহাম্মদপুরের ক্যাম্পের বাজার থেকে রুই মাছ কিনতাম ১৬০-১৮০ টাকা করে কেজি, কখনো ১৮০ টাকার বেশি দিতাম না যত বড় সাইজের মাছ হোক। মাস খানেক ধরে ছোট সাইজের রুই মাছ কেজি প্রতি ২৬০ টাকা করে চলতেছে, ২৫০ টাকা দিবো বললে এমন ভাবে তাকায় মনে হয় যেন পাঙ্গাসের দাম বলে ইলিশ মাছ কিনতে গেছি!
~কাঁচা মরিচের কেজি দু'দিনের ব্যবধানে এখন ২৫০ টাকা। ২০ টাকার নিচে মরিচ দেয় না, তাও আবার গুণে গুণে দেয়!
~পেয়াজের দাম অনেক দিন ধরে ৫০ এর ঘরে থাকলেও আজকে সেটা ৬০ অতিক্রম করেছে, আদা রসুনের দাম মাস দুয়েক আগে প্রায় ডাবল হয়ে যাওয়ার পর সেটা কমার আর কোনো নামগন্ধ নাই।
~সয়াবিন তেলের দাম খরগোশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও দাম কমে কচ্ছপের গতিতে। কিন্তু আমাদের কপাল এতোই খারাপ যে গল্পের খরগোশ দু'লাফ দেওয়ার পর ঝিমালেও আমাদের কচ্ছপ দু'পা বাড়ানোর পর একেবারে মরেই গেছে!
~কৃষি মার্কেটের চালের আড়ৎ থেকে ১৫-১৬ সালে আটাশের যেই বস্তা ১৬০০-১৭০০ করে কিনতাম, ধাপে ধাপে সেই বস্তার দাম উঠে করোনার আগে পরে মিলিয়ে ২৩০০-২৪০০ টাকা। সেই একই বস্তা গত দু'মাস ধরে ২৬০০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।
~পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে প্রতিটি সবজির দাম কেজি প্রতি ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দামাদামি করাটা একজন কাস্টমার হিসেবে অধিকার থাকলেও দামাদামি করতে গেলে এমন ভাবে তাকায় মনে হয় যেন ভিক্ষা চাচ্ছি!
জমানো টাকা দিয়ে মানুষ বাড়ি গাড়ি করার স্বপ্ন দেখে কিংবা বিপদে পরলে সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে। অথচ আমাদের জমানো টাকা দিয়ে নিত্য বাজার সদাইয়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তারপরও সরকারের মন্ত্রী এমপিরা অনবরত বলেই যাচ্ছে যে, "দেশ অস্ট্রেলিয়া সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে।" কথা সত্য তবে আংশিক! খরচের সীমারেখায় আমরা ইউরোপ আমেরিকাকে অতিক্রম করেছি সত্যি কিন্তু আয়ের দিক থেকে ওদের দেশের ভিক্ষুকদের থেকেও পিছিয়ে!
আমাদের এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই, আমরা শুধু পরে আছি ট্রল, হাসি-ঠাট্টা এসব নিয়ে। কোনো বিষয়ে আমাদের মধ্যে সিরিয়াসনেস নেই, সব কিছুকেই মজা করে উড়িয়ে দেওয়ার স্বভাবটা আমাদের মারাত্মক ভুগাবে, চূড়ান্ত ফলাফল দেখতে আর মাত্র ৫ টা বছর হাসি-ঠাট্টা করুন এরপর বেগম রোকেয়ার মতো বলতে হয়-
"ক্ষেতে ক্ষেতে পুইড়া মরি রে ভাই
পাছায় জোটে না ত্যানা।
বৌ এর পৈছা বিকায় তবু
ছেইলা পায় না দানা।"
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৪১