প্রেক্ষাপটঃ ১ আমরা তো আগেই নতুন নির্ধারিত ভাড়া থেকেও বেশি ভাড়া দিতাম।
ঢাকা মহানগরীর জন্য বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়া কিমি প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ কোনো যাত্রী যদি ১১-১২ কিমি দূরত্ব যায় সেক্ষেত্রে ২০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। ৫-৬ কিমি দূরত্বের জন্য ১০ টাকা ভাড়া। কিন্তু ইতোমধ্যেই আমরা দেখতেছি, সিটিং সার্ভিসের নামে চেকের নামে নিজেদের মত করে যত্রতত্র ভাড়া আদায় করতে। কোথাও কোথাও চেকের নাম করে ৪/৫ কিমি দূরত্বের জন্য ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত ও ভাড়া আদায় করতেছে। যেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
শিরোনামে ফিরে যাই-
এটা বুঝতে হলে খুব বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নাই, একদম সহজ কিছু পরিসংখ্যান দেই। হাইওয়ে তে চলা বাসগুলো ৬ সিলিন্ডারের, মাইলেজ দেয় এভারেজ ৩ কিমি। লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিমি প্রতি ৫ টাকা খরচ বৃদ্ধি পাইছে।
সিটিতে যেসব বাস চলে সেগুলো ৪ সিলিন্ডারের, মাইলেজ দেয় ৪.৫-৫ কিমি। শহরে যেহেতু জ্যাম এ বসে থাকতে হয় এজন্য এই সীমা থেকেও কম সীমা ৪ কিমি মাইলেজ প্রতি হিসাব করলে কিমি প্রতি ৩.৭৫ টাকা খরচ বৃদ্ধি পায়। হিসাবের সুবিধার্থে ধরলাম ৪ টাকা খরচ বৃদ্ধি পাইছে। লিটারে ১৫ টাকা ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে, বাসে ৪০ টা সিট থাকলে জনপ্রতি ১০ পয়সা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অথচ
গতকালকের মিটিং এ ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হইছে, কারণ ডিজেলের দাম ২৭% বাড়ছে। নীতিনির্ধারকরা কি কিছু খাইয়া প্রজ্ঞাপন জারি করে? ডিজেলের দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি পাইছে তার সাপেক্ষে আপনি কিমি প্রতি খরচ বাড়ান কিভাবে? আপনি হিসাব করবেন খরচ কি হারে বৃদ্ধি পাইছে, এবং সেই হারে ভাড়া বাড়াইবেন। কিমি প্রতি খরচ বাড়ছে ১০ পয়সা, আপনি ১৫-২০ পয়সা ভাড়া না বাড়ায়ইয়া এক লাফে ৪৫ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করেন, এসব কোন ধরনের ফাইজলামি।
বর্তমানে-
কিমি প্রতি ৪৫ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করার পর ও একজন যাত্রীর গাবতলি থেকে নিউমার্কেট যেতে তার ন্যায্য ভাড়া আসে ১৭.২০ (১.৭০+০.৪৫=২.১৫) টাকা। যেটা পূর্বে দেওয়া ২০ টাকা ভাড়া থেকেও কম। তারপর ও ২০ টাকার সাথে তাকে অতিরিক্ত ১০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আমরা আগেই বেশি ভাড়া দিতাম?
কিভাবে?
নিচের হিসাবটার দিকে তাকান-
গাবতলি থেকে নিউমার্কেট দূরত্ব ৮ কিমি প্রায়। যাত্রীরা ২০ টাকা ভাড়া দেয়। যদিও ন্যায্য ভাড়া ১৪ (১.৭০ হিসেবে) টাকা হওয়া উচিত। যাত্রী প্রতি ছয় টাকা করে আগের থেকেই বেশি নিতেছে। অপরদিকে ৮ কিমি এ ২ লিটার ডিজেল খরচ হয়, ১৫ টাকা করে ২ লিটারের দাম আসে ৩০ টাকা। একজন যাত্রী এক টাকা করে বেশি দিলেও তার ন্যায্য খরচ ৩০ টাকা থেকেও ১০ টাকা বেশি পাইতেছে, অপরদিকে জনপ্রতি ৬ টাকা করে যে বেশি নেওয়ার সেটাতো নিচ্ছেই।
অথচ বর্তমানে-
২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা করে নিতেছে, ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা করে নিতেছে। গাবতলি থেকে নিউমার্কেট ৪০ জন যাত্রী অতিরিক্ত ১০ টাকা করে দিলে আসে ৪০০ টাকা। ৮ কিলোমিটারের যাত্রাপথে ৩০ টাকার গ্যাপ তোলার জন্য অতিরিক্ত ৩৭০ টাকা বেশি আদায়। এতো দিনে দুপুরে চাঁদাবাজি, আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে।
প্রেক্ষাপটঃ২ লিটারে ১৫ টাকা করে ডিজেলের দাম কমলে কি ভাড়া ৪৫ পয়সা করে কমে যাবে?
~১৬ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লা, ডিজেলের দাম ৩ টাকা করে কমে যাওয়ায় প্রতি কিমি এ যাত্রী প্রতি ৩ পয়সা ভাড়া কমাইতে রাজি হয়নাই যেখানে বিআরটিএ ৩ পয়সা করে ভাড়া কমানোর জন্য নির্দেশ দিচ্ছিলো। খন্দকার এনায়েতুল্লা বলছিলেন, ৩ টাকা করে করে ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় উনারা ২ পয়সা হিসেবে ভাড়া কমাবেন, এছাড়া উনারা লোকশানে পরে যাবেন।
কিন্তু এখন ১৫ টাকা বৃদ্ধিতে ১৫ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিক, কিন্তু কোন সেন্সে ৪৫ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হলো?
কাল যদি ডিজেলের দাম ১৫ টাকা করে কমে যায় উনারা তো তখন ১৬ সালের সেই যুক্তি দেখাবে যে, ১৫ টাকা কমে যায় সর্বোচ্চ ১১-১২ পয়সা ভাড়া কমানো ছাড়া উনারা লোকশানে পরে যাবে।
লোকশানে সবাই পরে, শুধু আম জনতার কোন লোকশান নেই, কারণ জীবনের তো কোনো মূল্যই নেই।
ডিজেলের দাম বাড়ে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে, চালের দাম বাড়ে। বাড়েনা শুধু আম জনতার জীবনের মূল্য। গাড়িচাপায় কিংবা লঞ্চ ডুবার ঘটনায় ২০ বছর আগেও লাশপ্রতি ২০ হাজার করে ক্ষতিপূরণ দিতো, এখনো ২০ হাজার করেই দেয়!
প্রেক্ষাপটঃ৩ আইন প্রয়োগ করার সঠিক উপায়।
বিআরটিএ রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর মাত্র ৫% পাবলিক পরিবহন ডিজেলে চলে (যদিওবা বিআরটিএ এবং বাস মালিক পক্ষের এই নিয়ে দ্বিমত আছে) বাকিগুলো হয় গ্যাসে চলে কিংবা অকটেন বা পেট্রোলে। (তবে বাস সচরাচর গ্যাস অথবা ডিজেলে চলে।) অকটেন, পেট্রোল আর ডিজেল কিন্তু এক জিনিস না। তিনটা তিন জিনিস। ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু ডিজেলের। সুতরাং অকটেন, পেট্রোল আর গ্যাস চালিত যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই।
কোন গাড়ি কিসে চলে এটা বুঝার উপায় কি?
সোজা সাপ্টা হিসাব, গাড়ির ফ্রন্ট সাইটে বড় করে লেখা থাকতে হবে বাস কিসে চলে। যাতে যাত্রী বাসে উঠার পূর্বেই এটা বুঝতে পারে যে, এই বাস ডিজেলে চলে সুতরাং আমাকে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হবে। আর যেসব বাসে এটা লেখা থাকবে না সেসব বাসে পূর্ব নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করবে।
এখন কথা হলো, সব বাসই যদি লিখে রাখে "ডিজেল চালিত" তখন কি করার?
সমস্যা যেখানে সমাধান ও সেখানেই। বিআরটিএ কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলো সকালে এবং রাতে যখন বাস গুলো জ্বালানি নেয় তখন রিপোর্ট করবে কোন গাড়ির সামনে "ডিজেল চালিত" লেখার পর ও গ্যাস নিতেছে। প্রতারণার প্রমাণ পাইলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এখন কথা হলো, ঘরেন ইন্দুর যদি বেঁড়া কাটে তাইলে আপনি যতই বেঁড়া মেরামত করেন না কেন, বেঁড়া টিকাইতে পারবেন না।
ঘরের চিপাচাপায় প্রথম থেকেই অনেক ইন্দুরের গন্ধ পাওয়া যাইতেছে কিন্তু পোষা বিড়ালের অভাবে ধরা যাইতেছে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৮