বুয়েটের দুই ছেলে বুয়েটেরই এক মেয়ের সাথে ভার্চুয়ালি কি আচরণ করেছে সেই ঘটনায় অনেকেই বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলছে যে, বুয়েটের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা কিভাবে এতো হীনমন্য হতে পারে, কিভাবে এতোটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, এতোটা বিকৃত মানসিকতার হতে পারে!
বুয়েট কখনো নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার প্রাণকেন্দ্র নয়। একটা ছেলে-মেয়ে নৈতিকতা শিক্ষা পায় পারিবার থেকে। শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে যৌবনে পদার্পনের পূর্ব পর্যন্ত নৈতিকতা অর্জনের সময়। জীবনচালনার জন্য মৌলিক শিক্ষা কখনো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠান থেকে যা পাওয়া যায় সেটা হলো অর্থনৈতিক শিক্ষা। দেশসেরা প্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সোহবতে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে শিক্ষা পাওয়া যায় সেটা কখনো কখনো জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট নয়।
বিচ্ছিন্ন কিছু কিটের কর্মকাণ্ডের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান কখনো দায়ী হতে পারে না। যখন একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উশৃংখল আচরণ করবে তখন সাময়িক ভাবে সেটা পরিশুদ্ধ করার দায়িত্ব সেই প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তাবে এটা ভিন্ন এটার জন্য তাকে দায়ী করা সমীচীন নয়। কেননা, তার সৃষ্টি মানুষকে সৃষ্টিশীল করে গড়ে তোলার জন্য, তার সৃষ্টি উদ্ভাবনী শক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তার সৃষ্টি কাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য, তার সৃষ্টি মানুষের বাহ্যিক প্রশান্তি নিশ্চিত করার জন্য। তার সৃষ্টি এজন্য হয় নি যে, বুয়ার কোলে ফিডার খেয়ে পাবজি খেলতে খেলতে অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠা কোনো নবজাতকের সদ্য যৌবনে পা দিয়ে নব্য সংঘটিত অসৎ কর্মকাণ্ড ঘটানোর পূর্বে তাকে নৈতিকতা শিক্ষা দিবে।
জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে পশুত্বের বীজ বপন করা থাকে। পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমেই সেটাকে উপড়ে ফেলতে হয়। কখনো কখনো উপযুক্ত পরিবেশে উপড়ে ফেলা বীজ থেকেও চারা জন্মাতে পারে। এজন্যই নৈতিকতার জ্ঞান অচেতন মনে অবুঝ থাকতেই দিয়ে দেওয়া উচিত।
জীবনের প্রত্যেকটা স্টেজে মানুষ প্রধান কিছু দায়িত্ব পালন করে। যেমন ছোট বেলায় খুব ঘুমায়, বড় হয়ে চাকরি/ব্যবসা করে, বৃদ্ধ হলে অধিকাংশ সময়ই অসুস্থ দিন পার করে তেমনি কৈশর থেকে প্রথম যৌবনের এই সময়টায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় বেশি সময় দেয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে বন্দী দশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। এদের সুস্থ মানসিক বিকাশ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক/অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো সংস্থা কোনো কাজ করছে না। ফ্রাস্ট্রেশন, এংজাইটি, ডিপ্রেশন এসব এখন একটা জাতির স্বর্ণমানুষদের কাঁধে চড়ে বসেছে। অথচ তাদেরকে কাঁচা লোহার মতো পিটিয়ে পিটিয়ে চকচকে, উৎফুল্ল মেজাজে ফিরিয়ে আনার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।
জারিফ আজকে যায়া করেছে সেই ঘটনায় খুব খুশি হয়ে নটরডেম আর বুয়েটকে মনের মাধুরি মিশিয়ে গালমন্দ করাতে কোনো হিরোইজম দেখছি না। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের, প্রত্যেকটা ফ্রেন্ডসার্কেলেরই এমন সিক্রেট গ্রুপ থাকে যেখানে পছন্দ অপছন্দের নারীকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়। যেগুলো পশুত্বকে জাগিয়ে তোলার উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে কাজ করে। যেখানে এক একটা দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা গোবর দ্বারা নিজেকে আচ্ছাদিত করে। যেখানে নৈতিকতাকে পার্ভার্টিজম দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।
আজ আপনার খোলস মুক্ত হয় নি বলে অট্টহাসি হাসছেন কাল যখন আপনার অতীত সম্মুখে প্রকাশিত হবে তখন মাথা গুজার জায়গা থাকবে না। তার থেকে বরং অতীত এবং বর্তমান থেকে
শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:১৯