আমার বন্ধু রাশেদ একটা নষ্ট ঘড়ি পড়ে ঘুরে বেড়ায়। ঘড়ির কাটা নড়েও না, চড়েও না, সবসময় সাতটা বাজে। আমি মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করি 'তুই ঘড়ি ঠিক করিস না।কেন? ব্যাটারি লাগা! নষ্ট ঘড়ি পড়ে থাকে কেউ?!' রাশেদ উত্তর দেয় না, মুচকি হাসে। এই ছেলে পারেই খালি মুচকি হাসতে। সবকিছুতে ব্যাটার ঢং। কথা বলে কম,কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না, হাসে।
সেদিন, অনেকদিন পর রাশেদের বাসায় গেলাম। ওদের বিয়ের পর খুব একটা যাওয়া হয়নি। নিরু বলতো, 'রুমি ভাই, বাসায় আসেন না কেন? আগে নাকি আপনারা সারাদিন বাসায় আড্ডা দিতেন, কার্ড খেলতেন, এখন কি আমার ভয়ে আসেন না?' আমি কিছু বলি না। আসলে নিরুর ভয়েই যেতাম না। বিয়ের পর বন্ধুরা বাসায় ঘুরঘুর করছে, এটা কোন বউ নিশ্চয়ই ভালভাবে দেখবে না।
রাশেদ বাসায় ছিল না। খালাম্মা বসতে বললেন। বাসাটা কেমন নীরব হয়ে গেছে। আমি লিভিংরুমে যেয়ে বসলাম। নিরু রাশেদকে ছেড়ে চলে যাবার পর এ বাসায় আর আসা হয় নি। আমি ইতিস্তত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎ ছবিটার দিকে আমার চোখ গেলো।
১৪"*১০" ফ্রেমে বাধানো একটা ফটোগ্রাফ। একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরে আছে। ছবিতে শুধু দুজনের হাত দেখা যাচ্ছে। হাতে ঘড়ি পড়া, ঘড়িতে সাতটা বাজে। কোন এক সন্ধ্যায় ছবিটা তোলা। পাশে একটা মোমবাতি জ্বলছে। লিভিংরুমের লাল দেয়ালের উপর ছবিটা ঝোলানো।
ফটোগ্রাফে সময় থেমে থাকে। রাশেদ নিরুর হাত ধরে আছে। ওদের ঘড়ির কাটায় সাতটা বাজে। নিরু চলে গেছে। কিন্তু রাশেদ নিরুকে আটকে রাখতে চেষ্টা করছে। ছবির ফ্রেমে। সময়ের ফ্রেমে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০২