বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির দিনে আমার রাশেদের কথা মনে হয়। রাশেদ ছিল বৃষ্টি পাগল ছেলে। মেঘ দেখলেই সে অস্থির হয়ে যেত। চোখ মুখে তার আনন্দ ঠিকরে বের হত 'দোস্ত! বৃষ্টি হবে মনে হয়!
অদ্ভুত ছেলে। বৃষ্টি তো ভালোবাসতোই, বৃষ্টির পর প্যাচপ্যাচে কাদাও তার পছন্দ। নিরা বলতো 'রুমি ভাই! আপনার বন্ধু একটা পাগল। বৃষ্টি পড়লে তার মাথা ঠিক থাকে না। জানালা খুলে বসে থাকে, বৃষ্টির ছাটে ভিজে, সাথে আমার তোষক বালিশ গুলো ভিজায়। বলে- চলো রিকশায় ঘুরে আসি, না হয় ক্যাম্পাসে যেয়ে বৃষ্টি দেখি'
রাশেদ আর নিরা ঢাকার ছোট একটা ঘরে ভাড়া থাকতো। দোতলা বাসার দুই রুমের একটা ঘরে। রাশেদ বাসায় ফিরলে নিরা নিচে নেমে আসতো। এরপর রাশেদ নিরাকে কোলে নিয়ে সিড়ি ভেংগে উঠতো। নিরা বলতো 'পাগলটা একটা! পাগলটা আমাকে এত ভালবাসে কেন?! রাশেদ ভালবাসতো নিরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে। নিরা তখন তার নাক ডলে দিত। তার চুলে তেল দিয়ে দিত।
রাশেদ ঘন্টার পর ঘন্টা নিরার দিকে তাকিয়ে থাকতো। তাকিয়ে মাঝে মাঝে সে হতভম্ব হয়ে যেত। তার কাছে মনে হত তার সামনে একটা দেবী বসে আছে! দেবীর টানা টানা চোখ, সেই চোখে টানা করে কাজল আঁকা, দেবীর মুখে তিনটা তিল "ট্রায়াংগল!" দেবীর চিবুকেট কাছটা কাটা, নাকে নাকফুল- যেন সত্যিকারের ফুল।
রাশেদ সুযোগ পেলেই নিরার চোখে কাজল একে দিত। আহা! সেই চোখ, কি গভীর! অতল! সেই জলে ডুব দিত সে প্রতিদিন। ভালবাসার জলে।
নিরা বলতো 'আমার আংগুল গুলো একটু টেনে দিবে?' রাশেদ নিরার আংগুল গুলো টেনে দিত। ভালবাসার স্পর্শ। একটা এক্সিডেন্টের কারণে নিরার দুইটা আংগুল ছোটবেলায় কেটে ফেলতে হয়েছিল। রাশেদ ঐ আংগুল ধরে বসে থাকতো। বলতো 'আহারে! আমার বাবুটা!'
নিরাকে রাশেদ ডাকতো 'হোয়াংহো নদী'। বলতো 'চিনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী, তেমনি আমার দুঃখ তুমি, আমার কেন জানি মনে হয় একদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তুমি! নিরা তখন রাশেদকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলতো 'আমার বাবুটা! আমি কি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি! কোথায় যাবো আমি?!'
নিরা কথা দিয়েছিল রাশেদের সাথে রাতের শহরে হেটে বেড়াবে। যখন শহর নীরব হয়ে যায়, যখন কেবল সোডিয়াম বাতি আলো ছড়ায়, ফুটপাতের মানুষ, নিশাচর কুকুরগুলো ছাড়া পথে কেউ থাকে না। তখন রাশেদ নিরার হাত ধরে থাকবে, যেমনটা সে সারাক্ষণ ধরে থাকে। সোডিয়াম বাতির হলুদ আলো তাদের গা ঠিকরে পড়বে। ভালবাসার আলো।
তীব্র ভালবাসার গল্পগুলো কেন জানি পূর্ণতা পায় না।
নিরা একদিন রাশেদকে ছেড়ে চলে গেল। কেন চলে গেল তার রাশেদ জানে না। কিংবা রাশেদ জানে, কখনো বলেনি আমাকে।
রাশেদ কাপুরুষ টাইপ ছেলে। পকেটে ৩০টা ঘুমের ওষুধ নিয়ে ঘুরে। কিন্তু কখনো খাওয়ার সাহস করে না। আমি মনে মনে বলি 'খেয়ে ফেল ব্যাটা! একটা আবর্জনা কমুক!'
পাগলের মত ভালবাসা ছাড়া আর পারিস কি তুই!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪০