মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এক মহিলা এসে বললো "আপনি হোমিওপ্যাথ ওষুধ দেন?"
আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। সে আবার বললো "আগের ওষুধটা ভালো কাজ করছিল না, ওইটা কয়দিন খেতে হবে বলেন নাই তো?"
আমি চিন্তায় পরে গেলাম। ঘটনা কি বুঝতে পারছি না। তখনই পাঞ্জাবি পড়া এক লোক এসে আমাকে উদ্ধার করলো "আপা, এদিকে আসেন, আপনার ওষুধ এইখানে" বলে মহিলাকে নিয়ে গেল। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, মহিলা চিনতে ভুল করছে। কিন্তু ভুল করার কারণ কি? ঐ লোকের সাথে চেহারার আমার কোন মিল নাই। তার পাঞ্জাবি সাদা কালারের, আমারটা নীলচে। তাহলে কি আমার চেহারায় হোমিও ডাক্তারের ভাব আছে? নাকি হানিম্যানের মত দেখায় আমাকে?
চিন্তা করতে করতে বাসায় ফিরছি। হাতে মসুরের ডালের প্যাকেট। অন্যমনস্তার কারণে কিনা, বাসার কাছে আসতে ডালের প্যাকেট হাত থেকে পড়ে গেল। পলিথিন ফেটে রাস্তা ডালে সয়লাব। উঠানোর কোন উপায় নাই। আমি সাধারণত হাত থেকে কিছু পড়ে গেলে পা দিয়ে সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করি। রিফ্লেক্স। একদিন হাত থেকে তালা পড়ে গেল, সেটাও রিফ্লেক্স পা দিয়ে ঠেকাতে গেলাম...।
আজকে রিফ্লেক্স কাজ করে নাই। এখন ডাল কি করবো? বাসা থেকে বেলচা আনবো? বেলচা দিয়ে তুলতে গেলে সাথে দুনিয়ার বালি উঠে আসবে।
আবার ডাল কিনতে গেলাম। দোকানদার মজা পেয়ে হাসি দিয়ে বললো "এই না নিলেন?!" আমি বললাম "আবার দেন, ঘরে যে মেহমান আসছে তার ডালের নেশা। কাঁচা ডাল খায়। পাঁচ মিনিটে আগের ডাল শেষ। এখন আবার খাইতে চায়"। দোকানদার সরু চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমার রসিকতা তার পছন্দ হয় নাই। আমি আবার ডাল কিনে বাসায় ফিরলাম।
দিনটা ভালো যাচ্ছে না। আজকে বিশেষ ছুটির দিন।সকাল থেকে পাশের স্কুলে গান হচ্ছে। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের স্বকন্ঠে গাওয়া গান। "একদিন বাংগালি ছিলাম রে" গানটা এই নিয়ে ছয়বার গাইলো। সবাই মনে হয় একটা গানই প্র্যাক্টিস করে আসছে। এই গান মাথায় ঢুকে গেলে সমস্যা। সারাদিন মাথার ভেতর বাজতে থাকবে। একটা লাইন অলরেডি ঢুকে গেসে। কেমন গা গুলাচ্ছে। গানের লাইন বমি করে ফেলতে পারলে কেবল এই গা গুলানি কমবে।
আজকে বাংগালি হিসাবে নিজেকে খুঁজে পাবার দিন। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। খটমটে রোদ বাইরে। গরমে বের হবার জন্য এখন বিরক্ত লাগছে। এর থেকে ঘরে বসে থাকা ভালো ছিল। যাই হোক, শহরের একটা বড় সড়ক জুড়ে আল্পনা আঁকা হয়। সেখানে দাড়িয়ে আছি। বলা নেই কওয়া নেই সূর্য হঠাৎ মেঘে ঢেকে গেল। মুহুর্তেই শুরু হলো বৃষ্টি। সেকি বৃষ্টি! এলসেশিয়ান কুকুর- সিকিমিজ বিড়াল অবস্থা। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। তুমুল বর্ষণে সেই চেষ্টা বৃথা গেল। ভিজে চুপচুপা অবস্থা।
মাথার ভেতর গানের লাইনটা ঘুরছে এখনো "প্যান্ট আর ম্যাক্সি পড়ো রে!" বাতাস বারছে। বেশ শীত শীত ভাব। এর মধ্যে শিলা বৃষ্টি পড়ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। শিলার আঘাতে মূর্ছা যাবো না তো!
ঠান্ডা লেগে গেলেও সমস্যা।
তখন হোমিওপ্যাথ খেতে হবে। সে কথা রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় বলে গেছেন-
"ঠান্ডা, কাশি যায় নিপাত
যদি বা খাও হোমিওপ্যাথ"