ঝাঁকড়া চুলের লোকটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার চেহারা খুবই পরিচিত। একজন সেলিব্রিটির মত। আমি কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম "ভাই, আপনি কি...?"
লোকটা হেসে বলল, "না, আমি অমুক না! আপনার মত অনেকেই এই ভুল করে"।
আশেপাশের অনেকেই তাকাচ্ছে, একটা ছবি তুলে ফেলবো নাকি এর সাথে? ফেসবুকে দিয়ে দিলাম, ক্যাপশন "গুরুর সাথে হঠাৎ একদিন...", কেউ চট করে বুঝবে না, সাথে সাথে লাইক আর কমেন্টস!
লুঙ্গি কিনতে বের হয়েছি। বিশেষ মূল্যছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। একটা কিনলে একটা ফ্রি। সবকিছুতে এখন ফ্রি দেয়া হয়। লুঙ্গি বাদ যায়নি। আমার খুব প্রিয় পোশাক লুংগি। আমি যদি কোন কারণে বিখ্যাত হয়ে যাই এবং সেই সুবাদে পত্রিকায় ইন্টারভিউ ছাপা হয়, প্রশ্নকর্তা নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে
"অবসরে আপনি কি করেন? আপনার প্রিয় পোশাক কি?"
আমি বলবো " পোশাক লুঙ্গি, আর অবসরে খালি গায়ে লুঙ্গি পড়ে বসে থাকা"।
প্রশ্নকর্তা বলবে "গায়ে কিছু পড়বেন না?!"
আমি রসিকতা করে বলবো "নিচেও কিছু পড়বো না, হা হা হা"
প্রশ্নকর্তা বলবে "স্যার, এই লাইন পত্রিকায় দিব?' আমি বলবো "দেন, আমি কি ডরাই সখী ভিখিরি রাঘবে? Am I afraid of the beggars?!"
এই লুঙ্গির কাপড়টা কেমন পিচ্ছিল টাইপ। সাপের মত। গায়ে থাকতে চায় না। পথে ঘাটে সাপ খোলস ফেলে দিতে চাইলে সমস্যা হবে। যাই হোক নতুন লুঙ্গি পরেই জুম্মার নামাযে গেলাম। কিঞ্চিত টেনশনে আছি। হঠাৎ করে ঝামেলায় না পড়ে যাই। আশেপাশে লোকজন আছে, এরা ইজ্জত বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হয়। একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, এক দৃশ্যে নায়ক ভিলেনের পিটাপিটি চলছে। সেই মুহুর্তে নায়িকার ডেলিভারি পেইন উঠে গেল। নায়ক পিটাপিটিতে ব্যস্ত। নায়িকা চিৎকার করে যাচ্ছে। তখন আশেপাশের মহিলারা সব এগিয়ে এলো। গোল হয়ে নায়িকাকে ঘিরে দাঁড়ালো। আব্রু রক্ষা হলো। গোলমালে গোলগাল একটা বাচ্চা পয়দা হলো।
আমার আব্রু রক্ষার্তে কি মুসলিম ভাই সকল এগিয়ে আসবে?
জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। আমার পাশেই বাবার সাথে এক ছোট বাচ্চা এসেছে। নামাজ শুরুর পর পিচ্চি মেঝেতে গড়াগড়ি শুরু করে দিল। আমার চোখ ওদিকে চলে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে মনযোগ ধরে রাখছি। এমনিতেই নামাজের সময় দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা ঘুরঘুর করে। তার উপর এইসব কান্ড কারখানা। শয়তান মনযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। পিচ্চি এখন হাঁটা শুরু করেছে। নামাজের সামনে দিয়ে হেঁটে একবার এমাথা আবার ওমাথা যাচ্ছে। অন্য সময় হলে ভেংচি দিতাম। এখন দেয়া যাচ্ছে না। মাথার মধ্যে এখন অন্য চিন্তা ঘুরছে। ম্যাক্স ওয়েলের তাড়িত চুম্বকীয় তত্ত্ব মিলিয়ে ফেলা যাবে, শয়তান এখন সাহায্য করবে। অলস মস্তিষ্ককে কারখানা বানিয়ে ফেলবে। রবীন্দ্রনাথ অলস মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। সারাজীবন সে ঝিম মেরে, বিছানায় গড়াগড়ি করে পাতার পর পাতা সাহিত্য লিখে গেছে।
সংসারের চিন্তা ভাবনা থাকলে, ডাক্তারি পড়লে তার গীতাঞ্জলী ্ বের হতো না।
কাজেই আমি ডরাই না সখী, ভিখারি, পাওনাদার, প্রফেসর অফ মেডিসিন কাউকেই না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪১